ইন্টারনেটের যুগে জ্ঞান আহরণ করা এখন অনেক বেশি সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু এই সহজ জ্ঞান আহরণের মধ্যে অনেক সময় ভুল জ্ঞানের সংমিশ্রণ হয়ে যায়, যা সত্যিকার অর্থে ভয়ংকর ব্যাপার। ইন্টারনেটে বর্তমানে অনেক বিষয়ে গুজব আর মিথ্যার ছড়াছড়ি। তাই সঠিক উৎস থেকে সঠিক জ্ঞান আহরণ করা জরুরি।
ইন্টারনেট দুনিয়া বর্তমানে বেশ প্রচলিত এবং চিত্তাকর্ষক বিষয় হল ডার্ক এবং ডীপ ওয়েব। সারফেস ওয়েব অর্থাৎ আমরা যেসব সাইট সাধারণত ব্রাউজ করি, সেসব ওয়েবসাইটের ডকুমেন্ট যেখানে ১ বিলিয়ন, ডীপ ওয়েবে তার সংখ্যা ৫৫০ বিলিয়ন। সুতরাং এরকম চিত্তাকর্ষক হওয়ায় অনেকেই এই বিষয় নিয়ে অনেক অতিরঞ্জন করে ফেলেছে। ফলে ডীপ ওয়েব নিয়ে অনেকের মধ্যে বেশ কিছু ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে।
আজকের এই লেখায় ডীপ ওয়েব নিয়ে আমাদের মাঝে বহুল প্রচলিত ৪টি মারাত্মক ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা করবো। ও ভাল কথা, যাদের ডীপ ওয়েব নিয়ে ধারণা নেই, তারা হৈচৈ বাংলায় প্রকাশিত সারফেস ওয়েব, ডীপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব কি এই লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।
ডীপ ওয়েব ভুল ধারণা
১. ডীপ ওয়েব সব অপরাধীদের আস্তানা
ডীপ ওয়েব সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী অতিরঞ্জন করা গল্প হল ডীপ ওয়েবে সব সন্ত্রাস, হ্যাকার আর অপরাধীদের আস্তানা। অথচ এটি একটি সিস্টেম যার ক্রিয়াকলাপগুলো সাধারণ মানুষ এবং সার্চ ইঞ্জিনের থেকে লুকিয়ে রাখতে ব্যবহৃত হয়।
বাস্তবতা হল ডীপ ওয়েবের বেশিরভাগই পুরোপুরি বৈধ, বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী, নামি দামি কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
২. ডীপ ওয়েবে প্রবেশ করতে হলে আলাদা ব্রাউজার প্রয়োজন
ডীপ ওয়েবের সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা থেকে থাকে, তবে আশা করি এই ভুল ধারণা আপনার থাকবে না। ডীপ ওয়েব মূলত সেই সব ওয়েব, যেসব সাইটে সার্চ ইঞ্জিন প্রবেশ করতে পারে না অর্থাৎ গুগলে সার্চ করলে যেসব সাইট আপনি খুঁজে পান না।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যেমন আপনি গুগলে ফেসবুক লিখে সার্চ দিলে ফেসবুক ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু আপনার অ্যাকাউন্ট লিখে সার্চ দিলে কিন্তু আপনার অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায় না। এজন্য আপনাকে ফেসবুক ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে আইডি পাসওয়ার্ড দিতে হয়।
ডীপ ওয়েবে সাধারণত:
- ব্যক্তিগত ইমেল অ্যাকাউন্টের তথ্য
- স্যোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য
- অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের তথ্য
- বিভিন্ন কোম্পানির গোপন তথ্য যা গোপন ডাটাবেসের সংরক্ষিত
- রিসার্চ এবং অ্যাকাডেমিক বিষয় যা ডাটাবেসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত
- মেডিকেল রেকর্ড
- বিভিন্ন বৈধ কাগজপত্র
আশা করি এখন বুঝতে পারছেন ডীপ ওয়েবে আমরা সাধারণ ব্রাউজার দিয়েও প্রবেশ করতে পারি। পার্থক্য শুধু সার্চ ইঞ্জিন এসব তথ্য খুঁজে পায় না। তবে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে টর ব্রাউজারের সাহায্য নিতে হবে। তা না হলে ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন না।
৩. ডার্ক ওয়েব এবং ডীপ ওয়েব এক জিনিস
অনেকে মনে করে ডার্ক এবং ডীপ ওয়েব একই জিনিস। এরকম ধারণা যদি আপনার মধ্যে থাকে, তবে এখনই এই ভুল ধারণা পরিহার করুন। আর আপনি যদি উপরের লেখা মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন, তবে নিশ্চয়ই এখন আপনার ধারণা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ডার্ক এবং ডীপ ওয়েব আলাদা বিষয়।
ডীপ ওয়েব এমন ওয়েবসাইট বা সিস্টেম যাতে সার্চ ইঞ্জিন যেমন গুগল, বিং, ডাক ডুক গো প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু ডার্ক ওয়েবে সার্চ ইঞ্জিন যেমন প্রবেশ করতে পারে না, তেমনি সাধারণ কোন ব্রাউজার দিয়েও প্রবেশ করা যায় না। ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের মতে ডীপ ওয়েবের অ্যাকাউন্টের তথ্য ইন্টারনেটের ৯০% হলেও ডার্ক ওয়েবের তুলনায় এর পরিমাণ ০.১%।
৪. ডীপ ওয়েব অনিরাপদ
বাস্তবতা হল ডিপ ওয়েব বেশির ভাগই নিরাপদ। কেননা প্রতিটি তথ্য পাওয়ার জন্য আপনাকে পাসওয়ার্ড কিংবা অন্য কোন সিকিউরিটি কি দিতে হচ্ছে। এছাড়া সকল তথ্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে লুকানো। তাই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কারও দেখার সুযোগ নেই। ফলে তথ্য থাকে নিরাপদ। আর সবচেয়ে বড় কথা, তথ্য নিরাপদ রাখার জন্যই ডীপ ওয়েব ব্যবহার করা হয়।
শেষ কথা
এই ছিল আজকে ডীপ ওয়েব নিয়ে আমাদের ভুল ধারণার তালিকা। আশা করি এখন আমাদের মাঝে ডীপ ওয়েব নিয়ে আর কোন ভুল ধারণা থাকবে না। আর প্রযুক্তি নিয়ে যাদের ভুল ধারণা আছে তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষের ৫টি ভুল ধারনা এই লেখাটিতে একটা ঢুঁ মেরে আসতে পারেন, সকল ভুল ধারণা ভেঙ্গে যাবে।
Leave a Reply