ইসলামে দাবা খেলা হারাম বলে বিবেচিত। ইসলামী শরিয়তে প্রচলিত যেসব খেলাকে হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মাঝে দাবা একটি। যেসব খেলা মূলত মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর সেসব খেলাকেই ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
আমাদের এটা জানতে হবে যে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীনি ব্যবস্থা। ইসলামের কোনো দিক নির্দেশনায় সন্দেহ নেই, সন্দেহ করলে ঈমান থাকবে না। কেননা, ইসলামে যা আছে তা সুস্পষ্ট এবং কল্যাণকর। একজন মানুষের জীবন কিভাবে সুন্দর ও স্বাভাবিক হতে পারে সেটাও ইসলাম বলে দিয়েছে।
সুতরাং, ইসলামে যা ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা কোনো না কোনোভাবে অবশ্যই ক্ষতিকর। বিশেষ করে, যেসব খেলা শরীর ও মনের জন্যে ক্ষতিকর, সেগুলোকে খেলতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি, যেসব খেলা ব্যক্তির আত্মিক ক্ষতি সাধন করে এবং যেগুলো সামগ্রিক সামাজিক শৃংখলা নষ্ট করে, মনুষ্যত্ববোধকে বিলোপিত করে, সে সকল খেলা ইসলামে হারাম।
শরীরের জন্যে ক্ষতি হতে পারে, এমন কিছু খেলার মধ্যে রয়েছে-
- বাস্কেট বল
- ফুটবল
- আইস হকি
- সসার
- বেস বল
- স্নো বোর্ডিং
- রেসলিং, ইত্যাদি।
এসব খেলার আবার অনেক উপকারি দিকও রয়েছে। তাই, এগুলোর ক্ষেত্রে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। কিন্তু দাবার খেলার ক্ষেত্রে কোনও মতবেধ নেই। ইসলামে যেসব খেলাকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে আলোচিত ও জনপ্রিয় একটি খেলা হচ্ছে শতরঞ্জি বা দাবা। যদিও দাবা খেলার ৫টি প্রধান উপকারিতা রয়েছে যেগুলো শরীর ও মনের সাথে সম্পর্কিত, তবু এটির অনেক ক্ষতিকর দিক আছে। তাই এটি খেলা সুষ্পষ্ট হারাম।
সহীহ মুসলিম হাদীসে আছে, রাসূল (সা) বলেছেন,
যে ব্যাক্তি পাশা বা দাবা খেলল সে যেন তার হাত শুকরের মাংশ ও রক্তে ডুবালো।
দাবা খেলাকে হারাম ঘোষণা করে ফতোয়া দিয়েছেন সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল শেখ। মূলত, সময়ের অপচয়, জুয়া ও একে অপরের প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়ার আশঙ্কা থেকেই দাবা খেলাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, দাবা খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়া খেলা হয়, সময় ও অর্থের অপচয় হয় এবং খেলোয়াড়দের মাঝে ঘৃণা ও শত্রুতার সৃষ্টি হয়।
জুয়া ইসলামের সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। দাবা খেলাকে কেন্দ্র করে অনেকে জুয়া খেলে থাকে। ইসলামে কোনো কিছুর অপচয় থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। দাবা খেলতে অনেক সময়ের দরকার। এতে আমাদের অহেতুক সময় ও অর্থের অপচয় হয়। এটাও দাবা খেলাকে হারাম ঘোষণা করার অন্যতম কারণ।
মহানবী (স) বলেছেন,
যে মুসলিম ব্যাক্তির হাত ও মুখ থেকে অপর একজন মুসলিম নিরাপদ নয় সে আমার উম্মত নয়।
আমরা অনেক সময় শত্রুতা বশত: অনেককে গালি দিয়ে ফেলি কিংবা মারতে উদ্যাত হই। মূলত, খেলায় হার-জিত থেকে আমরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হই। দাবা খেললে এরকম নেতিবাচক দিকগুলো দুনিয়া ও আখিরাতের আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১৯৭৯ সালে ইসলামিক রেভ্যুলেশনের পরে ইরানে দাবা খেলা হারাম বলে উল্লেখ করে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা খোমেনি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। তিনি বলেন, ‘জুয়া কেন্দ্রিক দাবা না খেলা হলে দাবা খেলা কোনো সমস্যা নয়’।
উপরের উল্লেখিত দুইটি বক্তব্য থেকে আমরা দুই ধরনের উত্তর পেয়েছি। ইরানে দাবা খেলা সাময়িক সময়ের জন্য নিষিদ্ধ থাকলেও পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এই শর্তে যে , জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে খেলা না হলে দাবা খেলা যাবে।
কিন্তু আরেকটি বক্তব্য স্বয়ং আমাদের রাসূল (স) এর নিজের। যেখানে তিনি দাবা খেলাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং সৌদি গ্র্যান্ড মুফতিও দাবা খেলা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। এ দুটি বক্তব্য থেকে বুঝা যায় দাবা খেলা হারামের ব্যাপারটি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, আমাদের উচিৎ রাসূলের হাদীস ও হাদীস বিশারদদের বক্তব্যকেই গ্রহণযোগ্য হিসেবে নেয়া।
সুতরাং, আমাদেরকে হাদিস থেকেই মেনে নিতে হবে যে, ইসলামে দাবা খেলা হারাম আর তাই এটি থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিৎ।
Shahbaz Sheikh says
রেফারেন্স তো দিলেন না…