কম্পিউটার ব্যবহার করছি, কিন্তু ম্যালওয়ার বা ভাইরাস এর ক্ষতির ব্যাপারে একটুও মাথা ব্যাথা নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া সত্যিই খুব দুষ্কর। এছাড়া, কম্পিউটার সিকিউরিটি নিয়ে জানার আগ্রহ থাকলেও আপনার পিসিতে ভাইরাস আক্রমণের রিস্ক থাকুক আর না থাকুক, আজকের আলোচনা করা এই কমন ৫টি ম্যালওয়ার নিয়ে আগ্রহ থাকতেই পারে আপনার।
যারা উইন্ডোজ চালান, তাদের তো সিকিউরিটি রিস্ক অনেক বেশি। রেগুলার আপডেটেড এন্টি-ভাইরাস ব্যবহার করা ছাড়া তাদের মোটামোটি কোন উপায়ই নাই। তবে, যারা ম্যাক বা লিনাক্স চালান, তারা এদিক দিয়ে একটু শান্তিতে থাকলেও একেবারেই যে কোনই রিস্ক নেই, তাও বলা যায় না।
কমন ৫টি ম্যালওয়ার
যাই হোক, জিপ বোম্ব, ফ্যানসমিটার ছাড়াও হাজার হাজার রকম ম্যালওয়ার আছে, যা আপনার কম্পিউটারের বিশাল ক্ষতি সাধন করতে পারে। আজকে এমনই ৮টি ম্যালওয়ার নিয়ে আলোচনা করব।
১) ট্রোজান হর্সঃ
ট্রোজান হর্স ম্যালওয়ারগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে কমন ম্যালওয়ার। গ্রিক মিথে ট্রয় নগরী ধ্বংসের জন্য একটি কাঠের ঘোড়ায় করে সৈন্যরা পালিয়ে ছিল। কিন্তু, ট্রয়ের অধিবাসীরা তাকে সামান্য একটা কাঠের ঘোড়া ভেবে পাত্তা দেয়নি। কিন্তু পরে রাত নেমে এলে যখন তাদের সতর্কতা কমে যায়, তখনই কাঠের ঘোড়া থেকে সৈন্যরা বেরিয়ে এসে ধ্বংস করে দেয় ট্রয় নগরী।
একইভাবে, ট্রোজান হর্সও কম্পিউটারে খুব সাধারণ একটা সফটওয়ারের মোড়কে লুকিয়ে থাকে। ট্রোজান নিজের থেকে কোন ফাইলে নিজেকে ইনজেক্ট করে না। বরং, কোন ট্যাক্টিস ইউজ করে আপনার থেকে আনঅথোরাইজ এক্সেসের পারমিশন নেয়। যেমন অনলাইন গেইমিং-এর জন্য কোন একটা প্লাগিনস অনেক ইম্পরটেন্ট কিন্তু আপনার ভাইরাস পার্মিশন দিচ্ছে না- এমন ম্যাসেজ পাঠিয়ে পারমিশন নিয়ে এরপর আপনার পিসির সিকিউরিটি ডাউন হলে সে এটাক করে।
২) ওয়ার্মঃ
ওয়ার্ম-এর বাংলা অর্থ যে কেঁচো তা আমরা প্রায় সবাই জানি। ওয়ার্ম হল এমন একটা ম্যালওয়ার যা কেঁচোর মত বংশবৃদ্ধি করে অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। এরা সাধারণত একটা সিকিউরিটি হোল সম্পন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করে তার মাধ্যমে অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে যায়।
ওয়ার্ম-রা নিজের রেপ্লিকা তৈরি করে “বংশবৃদ্ধি” করতে পারে। আর প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন নেটওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে কেঁচোর মত রাস্তা খুঁড়ে যে কোন ড্রাইভ খুঁজে বের করে নিয়ে এটাক করতে পারে। আর শুধু তাই নয়, কেঁচো কিন্তু কোন পরজীবী নয়। একইভাবে, ওয়ার্মও পরজীবি নয়, এদের অন্য কোন ফাইলের সাথে এটাচ থাকা বাধ্যতামূলক না।
৩) স্পাই ওয়ার বা কি-লগারঃ
স্পাইওয়ার হল এমন একটি ম্যালওয়ার যা আপনার পিসি থেকে আপনার অজান্তেই তথ্য চুরি করে অন্য নির্দিষ্ট পিসিতে পাঠিয়ে দিতে পারে। এমনকি স্পাইওয়ারকে নির্দিষ্ট সময় পর আনইন্সটল হওয়ার কমান্ডও আগে থেকেই দিয়ে দেয়া যায়। এতে করে তা তথ্য পাঠানোর পর নিজে থেকেই আনইন্সটল হয়ে যেতে পারে।
স্পাই ওয়ার বা কি-লগার হল এমন ধরণের ম্যালওয়ার, যা আপনার পিসিতে প্রেস হওয়া প্রতিটা কি (key) স্পাই এর মতই ট্র্যাক করে। সেই প্রেস হওয়া বাটনগুলোর লগ সেইভ করে রাখে। পরবর্তীতে ইন্টারনেটের কানেকশন পেলে অথবা পূর্বে থেকে সেট করে দেয়া একটা নির্দিষ্ট সময় পর বা একটা নির্দিষ্ট সাইজের লগ ফাইল হয়ে যাওয়ার পর, আগে থেকেই সেট করে রাখা গন্তব্যে পাঠিয়ে দেয়। সাধারণত, আগে থেকেই সেট করে রাখা কোন ইমেইল এড্রেসে পাঠিয়ে দেয় সেই কি-প্রেসের লগ ফাইল।
৪) র্যাম স্ক্র্যাপারসঃ
এটাকে কি-লগারের ইভ্যুলেশন হিসেবে ধরা হয়। র্যাম-এর ব্যাপার তো আমরা সবাই জানি। আমাদের প্রোগ্রাম রান করার সময় র্যাম ঐ প্রোগ্রামের অনেক ডাটাই র্যামে সংরক্ষিত রাখে। আর স্ক্র্যাপ মানে যে বর্জ, তাও আমরা অনেকেই জানি। র্যাম স্ক্র্যাপার্স মূলত আপনার র্যামের বর্জ ডাটাগুলোই চুরি করে।
যাই হোক, র্যাম এই ডাটা ট্রানজেকশনের এক পর্যায়ে কয়েক মিলিসেকেন্ডের জন্য ডাটাগুলো এতে আনএনক্রিপ্টেড অবস্থায় থাকে। র্যাম স্ক্র্যাপার এই সময়টাতেই এটাক করে আর ডাটাগুলো সেইভ করে ফেলে .txt বা টেক্সট ফাইল হিসেবে। পরবর্তীতে সুযোগ পেলে বা পূর্ব থেকে নির্ধারণ করা নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠিয়ে দেয় এই ডাটা।
৫) বট নেটঃ
এটা সবচেয়ে মজার একটা ম্যালওয়ার। এর কাজ অনেকটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত। অর্থাৎ, এ যেই কম্পিউটারে থাকে, সেখানে সে শুধু আশ্রয় নেয়, কিন্তু সেখানে কোন ক্ষতি করে না। ক্ষতি করে অন্য কোন কম্পিউটারে। বট নেট যা করে তা হল, কোন একটা হোস্ট কম্পিউটারে গিয়ে চুপচাপ নির্দেষ আসার আগ পর্যন্ত বসে থাকে। শুধু এই সময়টারে নিজের নামের স্বার্থকতা রক্ষার খাতিরে সে হোস্ট কম্পিউটারকেই বট বানিয়ে ফেলে।
পরবর্তীতে যথাযথ নির্দেশনা আসলে সে তখন হোস্ট কম্পিউটার থেকে অন্য কোন নির্দিষ্ট সার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠায়। এটাকার সাধারণত অন্তত কয়েক অযুত কম্পিউটারে বট নেট এক্সপ্লয়েট করে পরে নির্দেশনা দেয়। এতে করে, একসাথে এত রিকোয়েস্ট হ্যান্ডেল না করতে পেরে ঐ সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। এই এটাকটা ডিডিওএস (Distributed Denial of Service – DdoS) এটাক নামে পরিচিত।
যাই হোক, এই ছিল আজকের মত ৫টি কমন ম্যালওয়ার নিয়ে আলোচনা। আপনার পিসির নিরাপত্তা বজায় রাখতে চাইলে কখনোই আপনার এন্টিভাইরাসটা আপডেটেড রাখতে ভুলবেন না। আর অবশ্যই, আপনার বন্ধুদের মধ্যে সাইবার সিকিউরিটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পোস্টটা শেয়ার করতেও ভুলবেন না।
Leave a Reply