ইতালীয় রেনেসাঁর কালজয়ী শিল্পী, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নাম শোনা হয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু, পৃথিবীর সর্বপ্রথম স্ট্যান্ড-অ্যালন স্মার্ট ইয়ারফোন দ্য ভিঞ্চি এর নাম কি শুনেছেন? যদি এখনো না শুনে থাকেন, তবে আজকের পোস্টটা আপনার জন্যই।
অসাধারণ সব ফিচারে পূর্ণ মূলত ওয়ার্ক আউটের উদ্দেশ্যে বানানো এই স্মার্ট ইয়ারফোনটা ডিজাইন করেছে নিউ-ইয়র্কের একটি প্রতিষ্ঠান ইন্সপেরো (Inspero.inc)। আপাতত ৪৭% ডিসকাউন্টে সর্বনিম্ন ১৪৯ ডলারে দা ভিঞ্চি বাজারে ছাড়ছে ইন্সপেরো। ইন্সপেরোর অফিসিয়াল সাইটে গিয়ে অনলাইন অর্ডার দিলেই ওরা আপনার কাছে পৌঁছে দিবে তাদের স্মার্ট ইয়ারফোন দ্য ভিঞ্চি।
স্মার্ট ইয়ারফোন দ্য ভিঞ্চি
মূলত জগিং-এর সময় মোবাইল ফোন বহন করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতেই ডিজাইন করা হয়েছে দা ভিঞ্চিকে। কিন্তু, এর পাশাপাশি এতে সংযোজন করা হয়েছে অসংখ্য মজার মজার আর খুব গুরুত্বপূর্ণ সব ফিচার, যা এই ডিভাইসটিকে করে তুলেছে ইউনিক।
তো চলুন, আর দেরি না করে এক ঝলকে দেখে নেই দা ভিঞ্চির এই অসাধারণ ফিচারগুলো।
১) কল করা এবং ম্যাসেজ পাঠানো
ভিঞ্চি ২.০ নিজেই একটা স্ট্যান্ড-আলোন কম্পিউটিং ডিভাইস। এতে কোয়াড কোর প্রোসেসর, ওয়াইফাই, থ্রিজি সেলুলার এবং ব্লু-টুথ কানেক্টিভিটি আছে। আপনি চাইলে ভয়েস অর্ডারিং-এর মাধ্যমেই একে আপনার প্রয়োজনমত যে কাউকে কল করার নির্দেশনা দিতে পারেন। আর এর পাশাপাশি চাইলে টেক্সট ম্যাসেজও পাঠাতে পারবেন ভিঞ্চি ২.০ থেকে।
আপনার মোবাইলে আসা ম্যাসেজ পড়েও দিতে পারবে ভিঞ্চি। এছাড়াও, ডু নট ডিস্টার্ব মোডও আছে দ্য ভিঞ্চির।
২) শুনতে পারবেন ৪২ মিলিয়ন গান
ভিঞ্চি ২.০ স্পটিফাই, সাউন্ড ক্লাউড, অ্যামাজন মিউজিক, কেকেবক্স-এর সাথে ইন্টিগ্রেটেড। তাই ভিঞ্চি সাথে নিয়ে ওয়ার্ক আউটে বের হওয়া মানে ৪২ মিলিয়ন গানের কালেকশন সাথে নিয়ে ওয়ার্ক আউটে বের হওয়া। আর আপনি চাইলেই ভয়েস কমান্ডের সাহায্যে আপনার ইচ্ছামত যেকোন গান প্লে করতে বলতে পারবেন দ্য ভিঞ্চিকে।
এমন কি চাইলে হাতের ইশারায় গান চেইঞ্জও করতে বলতে পারবেন একে। সঙ্গে আপনি চাইলে আপনাকে গান রিকমেন্ডও করতে পারবে দ্য ভিঞ্চি। আপনার শোনা গানগুলো এনালাইজ করে আপনাকে গান রিকমেন্ড করতে পারবে দ্য ভিঞ্চি। আপনার পছন্দের একাধিক প্লে-লিস্টও তৈরি করতে পারবেন দ্য ভিঞ্চিতে। আর সেই প্লে-লিস্টও ডিরেক্ট প্লে করার ভিয়েস কমান্ড দিতে পারবেন দ্য ভিঞ্চিকে।
৩) আপনার ফোনের নোটিফিকেশন আপনাকে জানানো
স্মার্ট ইয়ারফোন দ্য ভিঞ্চি কিন্তু একই সাথে কানেক্টেড থাকবে আপনার বাসায় রেখে আসা স্মার্ট ফোনের সাথেও। যত দূরেই চলে আসুন না কেন, আপনার বাসায় রেখে আসা স্মার্ট ফোনে আসা যে কোন পুশ নোটিফিকেশনকেই রিসিভ করে দ্য ভিঞ্চি জানিয়ে দিবে আপনাকে।
আবার পুশ নোটিফিকেশন যদি আপনার ওয়ার্ক আউটে ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে আপনি চাইলে ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে, দূরে বসেই আপনার কাছে পুশ নোটিফিকেশন আসা বন্ধও করে দিতে পারেন।
৪) ক্লিয়ার ভয়েস রিকগনিশন
এতক্ষন তো এটা দেখলেনই যে ভিঞ্চিকে ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে যে কোন কমান্ড দেয়া যায়। কিন্তু, সমস্যা হল, ভিঞ্চি তো ওয়ার্ক আউটের জন্য বানানো। অর্থাৎ, আপনি তো জগিং-এর সময় ব্যবহার করবেন ভিঞ্চি। আর সেই সময় রাস্তায় প্রচুর পরিমাণ শব্দও থাকতে পারে। এর মধ্যে কি আপনার ভয়েস রিকগনাইজ করতে পারবে ভিঞ্চি?
সমস্যা নাই, এ বিষয় নিয়ে চিন্তার ভারটা ভিঞ্চির ডেভেলপাররাই নিয়েছেন। আর তাই তারা ডেভেলপ করেছেন অসম্ভব ক্লিয়ার ভয়েস রিকগনিশন সিস্টেম। যাতে প্রচন্ড শব্দের মধ্যেও আপনার ভয়েস কমান্ডকে ঠিকই চিনে নিবে ভিঞ্চি। আর এর নয়েজ রিমুভিং টেকনোলজি এতটাই ইফেক্টিভ যে, একটা নয়েজি জিমে আপনি ফিস ফিস করে ভয়েস কমান্ড দিলে, সেটাও রিকগনাইজ করতে পারবে দ্য ভিঞ্চি।
৫) আপনার ওয়ার্ক আউট কোচ
ভিঞ্চি ২.০ এতসব ফিচারের পাশাপাশি কাজ করবে আপনার পার্সোনাল ওয়ার্ক আউট কোচ হিসাবে। আপনার জগিং-এর পুরো রেকর্ড রাখা এবং এনালাইসিসের কাজ করবে। আপনি মোট কত দূর দৌড়ালেন, আপনার দৌড়ের এভারেজ স্পীড কত ছিল, আপনার হার্টরেট সহ আপনার জগিং রিলেটেড সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখা এবং অ্যানালাইজ করার কাজটা করবে ভিঞ্চি।
এমন কি, দৌড়াতে গিয়ে যদি আপনি পথ হারিয়েও ফেলেন, তাহলে আবার আপনাকে বাসায় ফেরার ডিরেকশনও দিতে সক্ষম ভিঞ্চি।
৬) মাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট
ভিঞ্চির ভয়েস কমান্ডের ব্যাপারটার কোন অসুবিধাটা নিয়ে ভাবতে বাদ রেখেছেন এর ডেভেলপাররা, সেটাই একটা ভাবার বিষয়। ভয়েস কমান্ডের জন্য শুধুমাত্র ইংরেজিই যে ব্যবহার করতে হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা রাখছে না স্মার্ট ইয়ারফোন দ্য ভিঞ্চি । ইংরেজি, স্প্যানিশ, জাপানিজ-সহ মোট ২০টি ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্টও কিন্তু দিবে ভিঞ্চি ২.০।
৭) অন্যান্য
এই সব অসাধারণ ফিচার ছাড়াও ভিঞ্চি প্রচন্ড লাইট ওয়েৎ একটা ডিভাইস। এছাড়াও এটা যথেষ্ট কম্ফোর্টেবল, নিরাপদ। আর এর ডিজাইন এই পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কারও কিন্তু জিতেছে। সুতরাং, সব মিলিয়ে বলাই যায়, স্বাস্থ্য সচেতনদের জগিং-এর নিয়মিত সঙ্গী হতে যাচ্ছে।
তো এই ছিল আজকের মত প্রথম স্ট্যান্ড-অ্যালোন স্মার্ট ইয়ারফোন দ্য ভিঞ্চি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে দামটা বাদে বাকি সবই অসাধারণ মনে হয়েছে। আর দামটাও যে খুব বেশি, তাও বলছি না। কারণ, এটাকে আপনি প্রায় একটা স্মার্ট ফোনের সাথেই তুলনা করতে পারেন। যাই হোক, পোস্টটা শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে দ্য ভিঞ্চি ২.০ সম্পর্কে জানাতে ভুলবেন না।
Leave a Reply