ক্রিকেট ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে খেলা লেগ-স্পিনারদের থেকে সেরা ১০ লেগ-স্পিনার বাছাই করা অনেক কঠিন একটি কাজ। এই লেখায় বেছে নেয়া হয়েছে এমন ১০ জন লেগ-স্পিনারকে যারা লেগ-স্পিনকে শিল্প হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সবার কাছে। আসুন, সর্বকালের সেরা লেগ-স্পিনার হিসেবে বাছাইকৃত ১০জন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
লেগ-স্পিন হলো ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। আর এই কারণেই ক্রিকেটের প্রায় ১৪০ বছরের ইতিহাসে খুব কমসংখ্যক মানসম্পন্ন লেগ স্পিনার দেখা গেছে। লেগ-স্পিনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হল বলের উপর নিঁখুত নিয়ন্ত্রণ। কারণ লাইন-লেন্থ একটু এদিক সেদিক হলেই বোলারকে সর্ষেফুল দেখিয়ে দেবেন ব্যাটসম্যান।
কিন্তু একজন উচ্চ মানের লেগ স্পিনার যেকোন দলের জন্য পরম আরাধ্য। কারণ উচ্চ মানের একজন লেগস্পিনার যেকোন ব্যাটিং লাইন-আপকে একাই ধসিয়ে দিতে পারেন, এমনকি নিখাদ ব্যাটিং পীচেও এর ব্যতিক্রম হয় না।
লেগ-স্পিনারদের বরাবরই “রিস্কি অপশন” বা “ঝুঁকিপূর্ণ বাজি” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ নিঁখুত লাইন-লেন্থে বল করতে পারলে যেকোন বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন-আপও গুড়িয়ে যায় আর লাইন-লেন্থ এদিক সেদিক হলে দেদার রান করতে থাকে ব্যাটসম্যানরা। এই কারণেই লেগস্পিনারদের অপর নাম “খরুচে”।
বিশ্বক্রিকেট ইতিহাসে বেশ কয়েকজন উচ্চমানের লেগ-স্পিনার ছিলেন যারা এই লেগ-স্পিনকে নিয়ে গিয়েছিলেন শিল্পের কাতারে। এমনই সেরা ১০ জন লেগ-স্পিনার নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন। আপনি যদি ফাস্ট বোলিং লাভার হয়ে থাকেন, তবে এ আয়োজনে যোগ দেয়ার আগে বিখ্যাত বোলারদের দেয়া সেরা ১০টি ফাস্ট বোলিং টিপস জেনে নিতে পারেন।
সর্বকালের সেরা লেগ-স্পিনার
এ তালিকাটা আরো অনেক বড় করা যেতে পারে। কিন্তু তাতে আর তেমন একটা মজা থাকবে না। কারণ, সেরা তো আছে অনেকেই। আমরা কেবল সেরাদের সেরা সম্পর্কেই জানতে চাই। যাইহোক, ১০ জনের এই তালিকাটা শুরু করেছি শেন ওয়ার্নকে দিয়ে আর শেষ করেছি দানিশ কানেরিয়াকে দিয়ে। আসুন, একজন একজন করে সবার সম্পর্কেই জানা যাক।
১. শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া)
সেরা লেগ-স্পিনারদের তালিকায় প্রথম নামটা কার হবে এটা জানার জন্যে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ক্রিকেট নিয়ে ধারণা থাকা যে কেউই বলতে পারবে সর্বকালের সেরা লেগ-স্পিনারের নাম। জ্বি, তিনি হলেন লেগ-স্পিনের রাজা শেন ওয়ার্ন।
ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে যতজন লেগ-স্পিনার খেলেছেন শেন ওয়ার্ন নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে সেরা। তিনি লেগ-স্পিনের আশ্চর্যজনক প্রতিভা হিসেবে নন্দিত ছিলেন।
ইতিহাসসেরা এই লেগ-স্পিনারের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল খুবই সাদামাটাভাবে। ভারতের বিপক্ষে সিডনিতে ১৫০ রানে মাত্র ১ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন শেন ওয়ার্ন। কিন্তু ধীরে ধীরেই খোলস থেকে বেরিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের ৫ম টেস্টেই নিজের বিরল প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন।
এমসিজিতে ওয়েস্ট ইন্ডিএর বিপক্ষে ৫২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে সেই শুরু তারপর থেকে তার লেগ-স্পিনের জাদু দেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। গুগলি, ফ্লিপার, হাওয়ায় ভাসানো বল, সবদিকেই নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন শেন ওয়ার্ন।
১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট নিয়ে লেগ-স্পিনারদের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার শেন ওয়ার্ন। আপনি যদি একজন লেগ স্পিনার হতে চান, তবে জেনে নিন শেন ওয়ার্নের মত এমন অসাধারণ লেগস্পিন বল করবেন কিভাবে।
২. অনিল কুম্বলে (ভারত)
লেগ-স্পিনারদের মধ্যে অনিল কুম্বলেই হয়তো একমাত্র বোলার যিনি তার সামর্থ্যের সবটুকুই ব্যবহার করতে পেরেছিলেন।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অনিল কুম্বলে তার বোলিংয়ে বড় টার্ন করানোয় গুরুত্ব দেননি। আর এ কারণেই তিনি প্রথাগত লেগ-স্পিনারদের মত বোলিংয়ে বড় টার্ন পেতেন না। তবে তিনি নিঁখুত লাইন-লেন্থের সাথে বাউন্স যুক্ত করে ব্যাটসম্যানের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ফেলতেন। আর এই ফর্মূলাই তাকে ভারতের ইতিহাসের সেরা স্পিনারে পরিণত করেছে।
অনিল কুম্বলে ১৩২ টেস্টে পেয়েছেন ৬১৯ উইকেট। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে তার থেকে বেশী উইকেট পায়নি আর কোনো বোলার। ২য় স্থানে থাকা কপিল দেব ৪৩৪ উইকেট নিয়ে অনিল কুম্বলে থেকে অনেক পিছিয়ে। নিকট ভবিষ্যতেও কেউ অনিল কুম্বলেকে ছাড়িয়ে যাবে সে সম্ভাবনাও নেই।
অনিল কুম্বলে আরেকটি বিরল রেকর্ডের অধিকারী। তিনি মাত্র ২য় বোলার যিনি এক টেস্টের এক ইনিংসের সবগুলো অর্থ্যাৎ ১০ টি উইকেটই পেয়েছেন। প্রথম এই কীর্তি করেছিলেন ইংলিশ বোলার জিম লেকার। অনিল কুম্বলে ১৯৯৯ সালের চিরপ্রতিদ্বদ্ধী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৪ রানে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। সর্বকালের সেরা ১০ লেগ-স্পিনার এর তালিকায় কুম্বলে ২য়।
৩. আবদুল কাদির (পাকিস্তান)
আবদুল কাদির পাকিস্তানের হয়ে ৬৭ টেস্টে ২৩৬ উইকেট নিয়েছেন। একজন পাকিস্তানি বোলার হিসেবে কোন টেস্টে সেরা বোলিং কীর্তির মালিকও আবদুল কাদির। ১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৬ রানে ৯ উইকেট নেয়ার কীর্তিটাই আজও কোন পাকিস্তানি বোলারের পক্ষে সেরা বোলিং ফিগার হিসেবে রয়ে গেছে।
বোলিং এর ক্ষেত্রে তিনি দারূন সব অস্ত্র ব্যবহার করতেন। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল গুগলি। আবদুল কাদিরের গুগলি ব্যাটসম্যানদের জন্য ভীষণরকম দূর্ভেদ্য, অননুমেয় ও অস্বস্তিকর ছিল। এই একটি অস্ত্রের যথাযথ প্রয়োগেই তিনি ৮০’র দশকে ব্যাটসম্যানদের উপর রাজত্ব করেছেন।
যখন ইমরান খান পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন ঠিক সেই সময়েই আবদুল কাদির নীরবে পাকিস্তানের অনেক জয়ের কারিগর হয়েছিলেন।
৪. বিএস চন্দ্রশেখর (ভারত)
বিএস (ভগবত সুভ্রামানিয়া) চন্দ্রশেখর একজন ভারতীয় লেগ-স্পিন কিংবদন্তী, যিনি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৬৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। চন্দ্রশেখর শিশুবয়সে পোলিও এর শিকার হয়েছিলেন। এর ফলে তার ডান হাত আক্রান্ত হয়। কিন্তু তার এই সীমাবদ্ধতাকেই তিনি দারূনভাবে ব্যবহার করেছিলেন বোলিং করার ক্ষেত্রে।
যদি প্রশ্ন করা হয় কোন ব্যাপারটা চন্দ্রশেখরকে বিখ্যাত বানিয়েছিল? উত্তর হবে অননুমেয়তা। চন্দ্রশেখর প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের জন্য যেমন অননুমেয় ছিলেন তেমনি অননুমেয় ছিলেন খোদ নিজের জন্যও।
চন্দ্রশেখর নিজেই নিজের বোলিং সম্পর্কে জানতেন না যে তিনি কি করতে চলেছেন। আর এই ব্যাপারটাই তাকে বাকি সবার থেকে আলাদা করেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের প্রথম সিরিজ জয় এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মত টেস্ট জয়ে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন চন্দ্রশেখর।
১৯৭৮ সালে মেলবোর্ন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৪ রানে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। ২৯.৭৪ গড়ে ৫৮ টেস্টে ২৪২ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনেছিলেন ভগবত সুভ্রামানিয়া চন্দ্রশেখর।
৫. বিল ও’রেয়ালি (অস্ট্রেলিয়া)
বিল ও’রেয়ালি ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথমদিকের লেগ স্পিনারদের একজন। অসাধারণ একজন লেগ-স্পিনার হিসেবে অভিহিত করা হত বিল ও’রেয়ালিকে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৭ টেস্টে ১৪৪ উইকেট সংগ্রহ করেছেন ২২.৫৯ গড়ে। তার বোলিং সক্ষমতা এতই আশ্চর্যজনক ছিল যে, বিল ও’রেয়ালির যুগের সেরা ব্যাটসম্যান ওয়াল্টার হ্যামন্ডস তার বলে বিভ্রান্ত হতেন। হ্যামন্ডস রেকর্ড ১০ বার বিল ও’রেয়ালির বলে আউট হয়েছিলেন!
শুধু ভাল খেলোয়াড়ই নয়, ক্রিকেটের ভদ্র খেলোয়াড়দেরও একজন বলে মানা হয় তাকে।
৬. রিচি বেনো (অস্ট্রেলিয়া)
১৯৭০ সালের পর থেকে চ্যানেল নাইনের ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন রিচি বেনো। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম ডাকাবুকো ধারাভাষ্যকার ছিলেন তিনি। তার ধারাভাষ্যকার পরিচয়ের আড়ালেই চলে যায় তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার। অথচ এক সময় বিশ্বসেরা লেগ-স্পিনারদের একজন ছিলেন তিনি।
১৯৫২ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হয় রিচি বেনোর। কিন্তু প্রথম ৫-৬ বছরে খুব একটা নজর কাড়তে পারেন নি তিনি। ৬০’র দশকের শুরু হতে দেখা যেতে থাকে তার লেগ-স্পিন ভেল্কি। এই সময়টাই ছিল তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণযুগ। রিচির ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ছিল ৩২-১১-৭০-৬। ১৯৬১ সালে ম্যানচেস্টারে খেলতে গিয়ে চতুর্থ ইনিংসে রিচি বেনোর এই বোলিং ফিগারের সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতেছিল ৫৪ রানে।
৬৩ টেস্ট ম্যাচে মাত্র ২৭.০৩ গড়ে ২৪৮ উইকেট শিকার করা এই লেগ-স্পিনার ক্যারিয়ার শেষ করেন ১৯৬৪ সালে।
৭. সুভাষ গুপ্তে (ভারত)
সুভাষ গুপ্তে একজন ভারতীয় কিংবদন্তী লেগ-স্পিনার। বিশ্ববিখ্যাত অলরাউন্ডার স্যার গ্যারি সোবার্স তার সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন এরকম-“আমি এ পর্যন্ত যতজন লেগ-স্পিনারের মুখোমুখী হয়েছি সুভাষ গুপ্তেই তাদের মাঝে সেরা। এমনকি আমার মনে হয় গুপ্তে লেগস্পিনের রাজা শেন ওয়ার্ন থেকেও ভালো বোলিং করে”। শুধু স্যার গ্যারি সোবার্স নন, বিখ্যাত স্পিনার জিম লেকারও বলেছেন সুভাষ গুপ্তে তার দেখা সেরা লেগ-স্পিনার।
সুভাষ গুপ্তে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন কিছুটা ধীরলয়ে। ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে কোন উইকেট পাননি তিনি। এর কয়েক বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তাকে জাতীয় দলে ডাকা হয়। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৫ টেস্টে ২৭ উইকেট নিয়েছিলেন তখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত ব্যাটিংলাইন-আপের বিপক্ষে নিখাদ ব্যাটিং পীচে!
নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগ-স্পিনার হিসেবে প্রমাণ করা এই লেগির ক্যারিয়ার থেমেছিল ৩৬ টেস্টে ১৪৯ উইকেট নিয়ে।
৮. মুশতাক আহমেদ (পাকিস্তান)
মুশতাক আহমেদ আরেক বিখ্যাত পাকিস্তানি খেলোয়াড় আবদুল কাদিরকে রোল মডেল মেনে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন এবং খুব দ্রুতই পাকিস্তান দলে নিজেকে মেলে ধরেন। তবে অনেক পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের মতোই মুশতাকের ক্যারিয়ারটা খুব একটা দীর্ঘ হয়নি।
৫২ ম্যাচে ১৮৫ উইকেট নিয়ে শেষ হয় তার ক্যারিয়ার। ২০০৩ সালে দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি শেষবার মাঠে নেমেছিলেন। মুশতাক আহমেদ কাউন্টি ক্রিকেটেও একটি দীর্ঘ ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন। তিনি কাউন্টির দল সাসেক্স, সমারসেট আর সারের হয়ে খেলেছেন।
৯. স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল (অস্ট্রেলিয়া)
শেন ওয়ার্ন দুঃখ হয়ে আছেন স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের জন্য। বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম প্রতিভাবান কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যবান লেগ-স্পিনার হিসেবে মনে করা হয় স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলকে। কারণটাও খুব সোজা। স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের যখন আবির্ভাব তখন অস্ট্রেলিয়া দলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন সর্বকালের সেরা লেগ-স্পিনার শেন ওয়ার্ন।
আর তারকাবহুল বোলিং লাইন-আপ থাকায় দলে দ্বিতীয় লেগ-স্পিনার হিসেবে ম্যাকগিলকে প্রয়োজন মনে হয়নি অস্ট্রেলিয়ান টিম ম্যানেজম্যান্টের। আর এ কারণের ক্যারিয়ার জুড়ে শেন ওয়ার্নের ছায়া হয়েই থাকতে হয়েছে প্রতিভাবান এই লেগ-স্পিনারকে।
ম্যাকগিল যদি অন্য কোন দলে খেলতেন বা অন্য কোন যুগে খেলতেন তবে হয়তো সহজেই খেলতে খেলতে পারতেন ১০০ টেস্ট কিংবা নিতে পারতেন ৪০০ এর বেশী উইকেট। কিন্তু তা হয়নি। ম্যাকগিল খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে, খেলতে হয়েছে শেন ওয়ার্নের যুগে।
মাত্র ৪৪ টেস্ট ম্যাচে ২০৮ উইকেটই তার প্রতিভার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। ম্যাকগিল সাধারণত তারকা কোন বোলারের অনুপস্থিতিতে বা অফ-ফর্মের কারণে সুযোগ পেতেন। আর এ কারণে শেন ওয়ার্নের পাশেই অনেক ম্যাচ খেলা হয়েছে তার। আর মজার ব্যাপার হল, অধিকাংশ ম্যাচেই তিনি শেন ওয়ার্নকে ছাপিয়ে যেতেন।
ম্যাকগিল খুব ভাল গুগলি করতে পারতেন। এটি তার অন্যতম শক্তির জায়গা ছিল। তবে প্রায় প্রতি ওভারেই ম্যাকগিল একটি বা দুইটি আলগা বল করে বসতেন যা ব্যাটসম্যানকে প্রলুব্ধ করতো শট খেলার জন্য।
সর্বকালের সেরা ১০ লেগ-স্পিনার এর তালিকায় ম্যাকগিল হয়তো সবচেয়ে দূর্ভাগা লেগ-স্পিনার।
১০. দানিশ কানেরিয়া (পাকিস্তান)
দানিশ কানেরিয়া একজন পাকিস্তানি লেগ-স্পিন কিংবদন্তী বোলার।
সাম্প্রতিক সময়ে দানিশ কানেরিয়ার বিতর্কিত ফিক্সিং কান্ডের কারণে তার খ্যাতি অনেকটা কমে গেছে। স্পট-ফিক্সিং এ জড়িত থাকার কারণে তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও তাকে মনে রাখতে হবে পাকিস্তান ক্রিকেটকে। কারণ মাত্র ৬১ টেস্টে ২৬১ উইকেট নেওয়া এই স্পিনার এখনও পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশী উইকেট নেওয়া স্পিনার।
তার “গুগলি” ছিল একেবারেই বিশ্বমানের। শুধুমাত্র খুব ভালো গুগলি করতে পারতেন বলেই ক্যারিয়ারের শুরুতে পাকিস্তান জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজর কাড়তে পেরেছিলেন। জাতীয় দলে অভিষেকের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বিখ্যাত অস্ট্রেলিয় খেলোয়াড় ও ধারাভাষ্যকার প্রয়াত রিচি বেনো কানেরিয়ার গুগলির প্রশংসা করে বলেছিলেন-“আমার দেখা সেরা ছদ্মবেশী বল হল কানেরিয়ার গুগলি”।
যদিও ক্যারিয়ার যতো এগিয়েছে তার পারমরম্যান্সের মান তত কমেছে, তবুও বিশ্বক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত বোলারদের ছোট তালিকায় তার নামটা অনায়াসেই চলে আসে। বলতে হয় নিজের বোলিং দিয়েই এই তালিকায় নিজের নাম তুলেছেন তিনি।
সর্বকালের সেরা ১০ লেগ-স্পিনার এর তালিকায় সর্বশেষ নামটা তাই দানিশ কানেরিয়া।
এই ছিল সর্বকালের সেরা ১০ লেগ-স্পিনার এর তালিকা। আপনিও যদি একজন ভাল বোলার হতে চান, তবে সেরা ১০টি ক্রিকেট বোলিং টিপস জেনে নিন আর হয়ে উঠুন একজন দুর্দান্ত বোলার।
উল্লেখ্য, লেগ স্পিনারদের নিয়ে এ লেখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন, আর কোন লেগ-স্পিনারকে আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে তা জানাতে কমেন্ট নিচের বক্সে কমেন্ট করুন।
Leave a Reply