বর্তমান সময়ে অনেকেই রিলেশনশিপের একটা পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। হয়তবা অনিচ্ছাকৃতভাবে স্রোতের টানে এটি ঘটে। কিংবা রিলেশনশিপকে আরও মজবুত করার চিন্তায় ইচ্ছাকৃতভাবে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন।
যাইহোক না কেন, সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে গিয়ে এ রকক অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া আসলে কখনোই আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটি মারাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনে। হাজার রকম উপায় রয়েছে যাতে করে আপনার পছন্দের মানুষের সাথে কোন শারীরিক সম্পর্কে না জড়িয়েও আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারেন।
ঘনিষ্ঠতা আসলে মানসিক একটি বিষয়। তাই নিজেদের ইমোশনাল ও মানসিক বন্ধনটুকু বৃদ্ধি করতে পারলেই আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হওয়া সম্ভব। তাই যদি আপনি আপনার রিলেশনশিপকে সত্যিকারের অর্থবহ, শক্তিশালী এবং সুন্দর রাখতে চান, তাহলে শারীরিক সম্পর্ক থেকে মুক্ত রাখুন।
জেনে রাখুন শারীরিক সম্পর্কে না জড়িয়ে রিলেশনশিপকে আরও বেশি অন্তরঙ্গ ও সুন্দর করে তুললেই কেবল মাত্র আপনি সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করবেন। শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াই কিভাবে পছন্দের মানুষের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবেন, চলুন সে ব্যাপারে কয়েকটি উপায় জেনে নেওয়া যাক।
০১. হাত ধরুন
সম্পর্ক আরও একটু ঘনিষ্ঠ এবং মধুর করার একটি খুব কার্যকর উপায় হচ্ছে সঙ্গি বা সঙ্গিনীর হাত ধরা। একেবারে সহজ এই ছোট্ট কাজটি দু’জনের মধ্যকার বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। এমনকি হাত ধরার পর এই অনুভূতি সম্পর্কে চমৎকার বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।
যখন আপনি আপনার পছন্দের মানুষের হাত ধরেন তখন আমাদের মস্তিষ্ক থেকে অক্সিটোসিন নামক একধরণের হরমোন নিঃসরণ হয় (যেটিকে লাভ হরমোন হিসেবেও অবিহিত করা হয়), এর ফলে আপনি আরও বেশি আনন্দ, উদারতা এবং প্রশান্তি অনুভব করেন।
তাই, পরবর্তীতে আপনার পছন্দের মানুষটির সাথে দেখা হলে সহজভাবে হাত ধরুন। হতে পারে সেটা একসাথে বসে থাকার সময় কিংবা একসাথে হেঁটে চলার সময়। দেখবেন নিজেদের দু’জনের মুখেই সুন্দর একটি হাসি ফুটে উঠেছে।
০২. গভীর কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন
ঘুরেফিরে একই বিষয়ের মধ্যে কথোপকথন আটকে থাকলে একঘেয়েমি অবধারিতভাবে চলে আসবে। যেটা একটা রিলেশনশিপের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। তাই কথার বিষয়ে ভিন্নতা নিয়ে আসুন।
একই ধরণের হালকা কথাবার্তার ফাঁকে আলোচনা করুন কোন গভীর বিষয় নিয়ে। একঘেয়েমি না থাকলে ঘনিষ্ঠতা এমনতেই বাড়তে থাকবে।
০৩. স্বাভাবিকভাবে একে অন্যকে স্পর্শ করুন
স্পর্শের ক্ষমতা আসলে অচিন্তনীয়। এটিকে ভালোবাসা এবং একে অন্যর প্রতি আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অবসরে প্রিয়জনের কাঁধে বন্ধুর মমতা নিয়ে হাত রাখুন, চুল নিয়ে খেলা করু।
এসব ছোট ছোট অ্যাক্টিভিটি নিজেদের মধ্য আপনার অজান্তে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তুলবে।
০৪. একে অন্যের পছন্দের কাজটি করার চেষ্টা করুন
যদি সত্যি কাউকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই তার পছন্দের বিষয়গুলোকেও ভালোবাসবেন। একবার ভাবুন তো আপনার পছন্দের কাজটি কেউ যদি আপনাকে পছন্দ করার কারণে করতে থাকে, তাহলে লাগবে? নিজের অজান্তেই তার উপর ভালোলাগা বাড়তে থাকবে।
তাই প্রিয়জনের পছন্দের কাজটি করুন, ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যাবে।
০৫. সাহায্য চান
যে কোন ধরণের সম্পর্কের উন্নতির জন্যই খোলামেলা কথোপকথন জরুরী। সাহায্য চাওয়া তার একটি উৎকৃষ্ট উৎকৃষ্ট উপায়। এতে একদিকে আপনারর মধ্য যদি আত্ম-অহংকার থেকে থাকে, তাহলে সেটি দূর হবে, তেমনি অন্যদিকে আপনার সঙ্গি বা সঙ্গিনী জানতে পারবেন আপনার কাছে তিনি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই একে অন্যের কাজে প্রয়োজন হলেই সাহায্য চান।
০৬. শুধু কথার মধ্য আবদ্ধ না থেকে চিঠি বা চিরকুটে মাঝে মাঝে যোগাযোগ করুন
কী অদ্ভুত লাগছে? হ্যাঁ, অদ্ভুত লাগলেও এটি সত্যি। যদি আপনি “The Notebook” কিংবা “Dear John” সিনেমাটি দেখে থাকেন, তাহলে এর গুরুত্বটি এতক্ষণে ধরে ফেলেছেন। চিটিতে ভাব আদান প্রদান যে গভীরতা সৃষ্টি করে সেটি কখনোই অমলিন হবার নয়।
চিঠিতে মনের কথা যতো সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারবেন, কথা বলার ক্ষেত্রে সেটা কখনই হবে না। এটা একধরণের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ধরণের দলিলের মতো। তাছাড়া চিন্তা করুন তো, বিয়ের পর কিংবা বুড়ো বয়সে দুজনে একসাথে বসে আজকের এই চিঠিগুলো পড়ার দৃশ্যটি কত মধুর হবে!
০৭. একে অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকুন
এটি শুনে হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু সিরিয়াসলি, চোখে চোখ রাখার বিষয়টি সম্পর্কের উন্নয়নে আসলেই খুব কার্যকর। শুরুর দিকে অস্বস্তিকর বা ছেলেমানুষী মনে হলেও সুযোগ পেলে চার মিনিট পরষ্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকুন। তারপর কথা বলা শুরু করুন।
এটি আপনার সম্পর্কের দৃঢ়তাকে অন্য লেভেলে নিয়ে যাবে।
০৮. আলিঙ্গন করুন
জড়িয়ে ধরা বা আলিঙ্গন করা ইমোশনাল স্ট্রেস দূর করা এবং কাছাকাছি অনুভব করার দারুণ একটি উপায়। এতে করে নিজেদের মধ্যকার বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তবে আলিঙ্গন বা জড়িয়ে ধরার বিষয়টি অবশ্যই রুচিশীল এবং স্বাভাবিক হওয়া উচিত।
মাথায় অশুভ চিন্তা বা অন্যায় করছি এরকম মনে হলে আলিঙ্গন করার কোন প্রয়োজন নেই।
০৯. চ্যালেঞ্জিং বা নতুন কোন কিছু একসাথে করার চেষ্টা করুন
প্রবাদে রয়েছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। কথাটি সব ক্ষেত্রেই সত্যি। দুজনের একসাথে কাটানো সময়গুলো একটু চ্যালেঞ্জিং কিংবা ক্রিয়েটিভ কিছু করে কাটাতে পারেন। যেমন, পাহাড়ে উঠা, সাইকেলিং, মানুষকে সাহায্য করা বা যে কোন সেবামূলক কাজ ইত্যাদি।
এতে করে যেরকম ঘনিষ্টতা বেড়ে যাবে সেরকম একে অন্যের প্রতি আস্তাটাও বেড়ে যাবে বহুগুণে।
Leave a Reply