ব্যাংক ও আর্থিক খাতের টাকা এবং পণ্য-দ্রব্য লেনদেন সহজ করতে ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রি (FinTech Idustry) বা আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান্সমূহের কাজ হল ব্যাংক এবং আর্থিক খাতকে সহায়তা দেওয়া। টাকা এবং ব্যবসায়িক পণ্য বা জিনিসপত্র কাস্টমারদের সাথে লেনদেন করার পরিকল্পনা তৈরী করতে যেমন আর্থিক প্রযুক্তি শিল্প সহয়তা দেয়, তেমনি কাস্টমারদের সাথে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের পারস্পরিক কর্মকাণ্ডেও ফিনটেক ইণ্ডাস্ট্রি সহায়তা প্রদান করে থাকে।
বিশ্বব্যাপী প্রধান ব্যবসায়ীরা আর্থিক প্রযুক্তি বিষয়ে পূর্ব সতর্কতামূলক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং আর্থিক প্রযুক্তি বিষয়ে ব্যাপক গণ প্রচারণার আহবান জানিয়ে আসছেন।
সাম্প্রতিককালে ফিনটেক ইনডাস্ট্রির ব্যাপক প্রসারের ফলে ক্রমবর্ধমান ইতিবাচক প্রতিযোগিতা, কাস্টমারদের মূল্য সাশ্রয়, পিছিয়ে পড়া লোকদের আর্থিক খাতে সংযুক্তি এবং এরকম আরও সুযোগ-সুবিধা তৈরী হয়েছে। ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রি( FinTech Idustry ) বা আর্থিক প্রযুক্তি যে আরও কতো সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসবে তা কেবল সময়ই বলতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের আর্থিক খাতে প্রযুক্তি শিল্প
ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রি( FinTech Idustry ) বা আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান্সমূহ তাদের ব্যবসার প্রসারের জন্য ২০১৬-১৭ সালে নতুন নতুন পলিসি ঘোষণা করে মধ্যপ্রাচ্যে এই শিল্প চালু করেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যে ধীরে হলেও এই শিল্প ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।
গত বছর মধ্যপ্রাচ্যে এই শিল্পের অবকাঠামোতে সারা পৃথিবীর মোট বিনিয়োগের ১% টাকা বিনিয়োগ এসেছে যা মিল্কেন ইন্সটিটিউট (the Milken Institute) এবং মিনা ভেঞ্চার রিপোর্ট [ the Middle East and North Africa (Mena) Venture Investment Report] থেকে জানা যায়।
মধ্যপ্রাচ্যে আর্থিক খাতের প্রযুক্তি শিল্প বা ফিনটেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ
মধ্যপ্রাচ্যে ফিনটেক বা আর্থিক প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন জরিপ ওই অঞ্চলের জনগণের সামাজিক বাস্তবতার কারণে এই খাতের পূর্ণ বিনিয়োগের ফলাফল বের করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের [the Middle East and North Africa (Mena)] মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং বিভিন্ন শিল্প বিকাশের কারণে ফিনটেক বা আর্থিক প্রযুক্তি শিল্পের ভবিষ্যৎ বিকাশের সুযোগ রয়েছে।
এই খাতে প্রায় ৩০% বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বিদ্যমান এবং চলতি বছরের মধ্যে এই খাতের নতুন বিনিয়োগ দুইশো কোটি ডলার ছাড়াতে পারে এবং সাড়ে চারশোরও অধিক প্রযুক্তি কোম্পানি এই বিনিয়োগ থেকে লাভবান হবে যেখানে পূর্বে এই কোম্পানির সংখ্যা ৪০টিও ছিল না।
প্রযুক্তি শিল্প বা ফিনটেকে বিনিয়োগের লোভনীয় ক্ষেত্রসমূহ
প্রথম শুরুর সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে আর্থিক প্রযুক্তি শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে মূল্য পরিশোধ, বীমা, বৈদেশিক মুদ্রা, অনলাইনে ঋণ দেওয়া, গণ-অর্থায়ণ (crowdfunding ), ডিজিটাল ব্যাংকিং , ক্রিপ্টোকারেন্সি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ৯০% ফিনটেক প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক মুদ্রা, ফাণ্ড ট্রান্সফার এবং মূল্য পরিশোধ (remittances, payments and transfer) খাত পরিচালনা করে থাকে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের(UAE) প্রায় ৯০% জনসংখ্যা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় দেশিটি দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রেমিট্যান্সের মূল চালিকাশক্তি রূপে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। একটি জরিপ অনুযায়ী, বিভিন্ন মানিএক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) দেশ থেকে রেমিটেন্সের মূল অংশ মূলতঃ ভারতবর্ষসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ফিনটেক ক্ষেত্রে বিশেষ শ্রেণির জনসখ্যার ভূমিকা
মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ২২৫ মিলিয়ন ২৫ বছর বয়সী তরুণ জনসখ্যা রয়েছে যারা সারা পৃথিবীর মতো মধ্যপ্রাচ্যের প্রযুক্তি/ ডিজিটাল প্রডাক্টের বৃহত্তম গ্রহিতা। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন দেশকে প্রবেশ পথের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবেশ করার সূবর্ণ সুযোগ পেয়েছে।
২০১৭ সালের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের ১০০% জনসংখ্যা মোবাইলের আওতায় এসেছে এবং প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এই এলাকায় চলতি বছরেই 5G সেবা চালু হচ্ছে। আর ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ফিনটেক ব্যবসার মূল চালিকা শক্তি। এতো সব উপযুক্ত পরিবেশে ফিনটেক ব্যবসা ব্যাপকহারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লোকাল ফাণ্ডেরও বিনিয়োগ শুরু
গত কয়েক বছরে ফিনটেক প্রতিষ্ঠান টার্গেট করে গড়ে ওঠা নতুন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনে প্রায় ছয়টি প্রতিষ্ঠান এই ক্ষেত্রে মূলধন ১.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। আর স্থানীয় কোম্পানীতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ফিনটেকে উন্নতি আনার জন্য স্থানীয় নব উদ্যোক্তদের জন্য দেশীয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা প্রাথমিক কর্ম পরিকল্পনা নির্দ্ধারিত করে দিয়েছে।
ফিনটেক বিষয়ক যে কোনো উদ্যোগ সফল হওয়ার উপযুক্ত অবকাঠামো উন্ন্য়নে সরকা্রি বেসরকারি খাতের সাথে অংশীদারত্ব করায় মধ্যপ্রাচ্যে ফিনটেক শিল্পের ব্যাপক উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ফিনটেক প্রচলনকারিদের এবং এই ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণকারিদের সমন্বয় করার জন্য অতি শিঘ্রই ‘InternetShine Corp’s “ FiNext conference”-এর চতুর্থ সম্মেলন উদ্বোধনের মাধ্যমে ফিনটেকের শ্রষ্ঠ বিশেষজ্ঞগণ দুবাইতে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীতে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। তরল সোনা পেট্রোলিয়ামসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য আর্থিক খাতের দিকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর সকল দেশ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেখানে অর্থপ্রবাহের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ্ সম্ভাবনা নিয়ে কারোর আগ্রহের কমতি নেই। সেখানকার শ্রমবাজার এবং অর্থ নেটওয়ার্ক থেকে সমগ্র পৃথিবাসী উপকৃত হচ্ছে। তাই ওই অঞ্চলে ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রির উন্নতির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply