জীবনে প্রথমবার ফ্রিল্যান্স করতে যাচ্ছেন, এমন লোকের সংখ্যা অনেক এবং নিয়মিতই বাড়ছে। কারণ, ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে নিজের মতো করে নিজের সময়ে কাজ করার এবং নিজেই নিজের বস হওয়ার মতো দারুণ একটি পেশা।
এখানে একজন ব্যক্তি তার পছন্দের মতো কাজ করার সুযোগ পায়, তার উপর কাজ চাপিয়ে দেয়ার কেউ থাকে না, এমনকি সে নিজেই নিজের সন্মানীর পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারে।
কিন্তু তার পরও এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যারা ফ্রিল্যান্সিং প্রপেশনে আসতে ভয় পান। কারণ কি?
কারণ, ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে ১০টি জিনিস প্রয়োজন যা অনেকের মাঝেই নেই। ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া, তাকে কনভিন্স করা, কোয়ালিটি কাজ করা এবং সর্বোপরি ঠিক সময়ে কাজের ডেলিভারি দিয়ে ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করা, ইত্যাদি করতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই এগুলো খুব সহজ কাজ।
যারা প্রচলিত চাকরি বা পেশাকে পাশ কাটিয়ে মজার এই পেশাটিতে প্রবেশ করতে চান, তাদের ভয় পাবার কিছু নেই। আমরা এখানে এমন কিছু দরকারি টিপস্ নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যেগুলো ফলো করলে যে কেউ-ই প্রথমবার ফ্রিল্যান্সিংয়েই সফলতার মুখ দেখবেন।
নতুনদের জন্যে ফ্রিল্যান্সিং টিপস্
ফ্রিল্যান্সিং কাজে সফল হওয়ার জন্যে আপনাকে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। অর্থাৎ, আপনি যে কাজটি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, সেটিতে আপনার পারদর্শিতা থাকতে হবে। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে জেনে নিতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং করে সবচেয়ে বেশি আয় করা যায় এমন ৭টি কাজ সম্পর্কে।
নিজেকে গুছিয়ে নিন
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে অবশ্যই নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে। ছাত্র হলে অবসর সময়টাকে বেছে নিতে হবে। চাকরিজীবি হলে হুট করে চাকরি ছেড়ে দেয়া যাবে না। আগে চাকরির পাশাপাশি কাজ শুরু করতে হবে, পরে সফলতা আসলে চাকরি ছাড়তে হবে।
কাজ শিখুন, প্র্যাকটিস করুন, দক্ষতা অর্জণ করুন
কোন কাজ না শিখেই যদি কেউ ফ্রিল্যান্সিং করতে চায়, তো তার মতো বোকা আর কে হতে পারে! ফ্রিল্যান্স মানেই বিশেষ কোনও কাজে দক্ষ হওয়া এবং অর্থের বিনিময়ে অন্যদের জন্যে সে কাজটি করা। কাজেই, শুরু করার আগে যে কোনও একটি কাজ শিখে নিন। ৭টি লাভজনক ফ্রিল্যান্সিং কাজ থেকে যে কোনটি শিখে নিন এবং ক্রমাগত প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জণ করে নিন।
একাধিক কাজ নয়
এক সঙ্গে একাধিক কাজ শিখতে যাবেন না। তাহলে, কোনটাতেই ভাল করতে পারবেন না, দক্ষ হতে পারবেন না। যদিও ওয়েব ডিজাইন এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রায় কাছাকাছি, একটার সঙ্গে আরেকটার নিরেট সম্পর্ক রয়েছে, তবু দুইটা একসঙ্গে শিখতে গেলে আপনি খেই হারিয়ে ফেলবেন। সুতরাং, যা-ই শিখুন না কেন, অবশ্যই যে কোন একটার দিকে নজর দিন।
মার্কেটপ্লেস ঠিক করুন
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, ফাইভারসহ অসংখ্য মার্কেটপ্লেস রয়েছে। শুরুর দিকে সবগুলো মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট করা কিংবা কাজের সন্ধ্যান করা আপনার কিছুতেই উচিৎ হবে না। কারণ, এতে করে আপনার সময় এবং শ্রম ভাগ হয়ে যাবে। ফলে, কোনটাতেই ভাল করে সময় দিতে পারবেন না। তাই, প্রথমে যে কোনও একটা টার্গেট করুন এবং সেটা ঘেঁটেঘুটে ভাজা ভাজা করে ফেলুন। অর্থাৎ, ওই মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে প্রচুর স্টাডি করুন।
দক্ষতার বাইরে কোনও কাজ নয়
ধরুন, আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনে দক্ষ। এখন, মার্কেটপ্লেসে ঢুকে দেখলেন আর্টিকেল রাইটিং এর একটা জব পোস্ট যা আপনার পক্ষে করা খুবই সহজ মনে হচ্ছে। তাই, অ্যাপ্লাই করে দিলেন। ভাবুন, তারপর কি হতে পারে! ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইল ঘেঁটে দেখলো আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনার। কাজেই, কাজটা তো আপনাকে দেবেই না, বরং আপনার ব্যাপারে তার নেগেটিভ ধারণা তৈরি হবে। এমনকি, মার্কেটপ্লেসে আপনার বদনাম হওয়া শুরু হয়ে যাবে। সুতরাং, গ্রাফিক্সের কাজ পেতে দেরী হলেও আপনি দক্ষ নন এমন কাজে বিড করবেন না।
কাজের রেট নির্ধারণ করুন
ফ্রিল্যান্সিং এর একটা বড় সুবিধা হচ্ছে, নিজের ইচ্ছে মতো কাজের রেট ঠিক করে দেয়া যায়। কিন্তু এর অপব্যবহার বা ভুল ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ, শুরুতে এমন রেট নির্ধারণ করা যাবে না যা একজন ফ্রেশহ্যান্ডকে কেউ দিতে চাইবে না। অর্থাৎ, নিজের পজিশন আপ হওয়া পর্যন্ত বড় অংকের রেট দেয়া যাবে না। আবার, এত কম রেট নির্ধারণ করা ঠিক হবে না যে রেটে কেউই কাজ করে না। কম রেটে কাজ পাওয়ার সম্ভাবণা বেশি হলেও ভবিষ্যতের জন্যে খারাপ ফলাফল বয়ে আনবে। অর্থাৎ, সামনের দিকে আপনাকে কেউ আর বাড়তি রেট দিয়ে কাজ করাতে চাইবে না। সুতরাং, মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে নিজের কাজের রেট নির্ধারণ করুন।
প্রচুর সময় দিন
প্রথম কাজটি করার ক্ষেত্রে প্রচুর সময় ও মনোযোগ দিন। কারণ, যে কোনও ফ্রিল্যান্সারের জন্যেই প্রথম কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কাজের সুন্দর পরিসমাপ্তি এবং ক্লায়েন্টের সন্তুস্টির উপর অনেকখানিই নির্ভর করে আপনার পরবর্তী কাজ পাওয়া। কাজেই, প্রথম কাজে কোনও হেলাফেলা করা যাবে না। আসলে, প্রথম কাজ নয়, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা পেতে হলে কোনও কাজেই হেলাফেলা করা যাবে না। সময় মতো কাজ শেষ করতে হবে এবং সুন্দরভাবে শেষ করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং টিপস্ নিয়ে আজ এ পর্যন্তই। আগামীতে এ প্রসঙ্গে আরো কিছু দরকারি লেখা নিয়ে হাজির হবো, ইনশাল্লাহ্।
Leave a Reply