ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পাওয়ারফুল প্রপেশন যেখানে প্রপারলি কাজ করতে পারলে গতানুগতিক চাকরি থেকে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। ব্যক্তিগত সেটআপ করা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে যথাযথভাবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে লোন নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
অর্থাৎ, আপনার কাছে যদি যথেষ্ট পরিমাণে টাকা-পয়সা না থাকে, তবে কারো কাছ থেকে লোন হিসেবে সেটা নিতে হতে পারে। কেননা, আপনি যদি পারফেক্টলি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, তবে আপনার বেশ কিছু জিনিসপত্রের প্রয়োজন হবে। প্রথমবার ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে প্রয়োজনীয় টিপস্ হিসেবে যে কেউ আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস-পত্র ব্যবস্থা করার কথা বলবে। যেমন-
- আরামদায়কভাবে বসে কাজ করার জন্যে একটি ডেস্ক।
- একটি ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ কম্পিউটার।
- নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট লাইন, রাউটার, ওয়াইফাই।
- ভাল মানের একটি স্মার্টফোন।
- প্রিন্টার ও স্ক্যানার (অপশনাল)।
- একটি অফিস চেয়ার, যা বসার জন্যে আরামদায়ক।
উপরোক্ত জিনিস-পত্রগুলো কেনার জন্যে আপনার টাকার দরকার। আর সেই টাকা যদি ব্যবস্থা করার মতো অবস্থা আপনার না থাকে, তবে কারো কাছ থেকে ধার নেয়া কিংবা লোন নেয়া ছাড়া উপায় কি!
উপরের জিনিসগুলো ছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করার জন্যে কিছু কাজ শিখতে হয়। বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং করা, কোর্সের সাথে সংশ্লিষ্ট বই-পত্র কেনাসহ আরো নানা-রকম খরচ বহন করতে হয়। আর এসব খরচ বহনের জন্যেই মূলত কিছু ব্যাংক ফ্রিল্যান্সারদের লোন দিয়ে থাকে। আসুন, এই ব্যাংকগুলো থেকে লোন নেয়ার প্রক্রিয়া জানা যাক।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্যে ব্যাংক লোন
১. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
সহজ শর্তে ফ্রিল্যান্সারদেরকে লোন দিচ্ছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। মূলত, ফ্রিল্যান্সিং প্রপেশনটাকে জনপ্রিয় করা এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্যেই সরকারের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের তুমুল জনপ্রিয় এই ব্যাংক।
আসুন, জেনে নেয়া যাক কারা ইসলামী ব্যাংকের এই বিনিয়োগ সুবিধা পাবে এবং কি কি যোগ্যতা থাকা লাগবে।
কারা পাবেন ইসলামী ব্যাংকের এই বিনিয়োগ সুবিধা?
শুধু মাত্র ফ্রিল্যান্সারা এই সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে, যাদের সরকারিভাবে প্রাপ্ত ফ্রিল্যান্সিং কার্ড রয়েছে, তারা অগ্রাধিকার পাবেন। ফ্রিল্যান্সরা নিশ্চয়ই জানেন যে, সরকার সকল ফ্রিল্যান্সারদেরকে ভার্সুয়াল আইডি কার্ড দিচ্ছে যা গত বছরের নভেম্বরে বিতরণ শুরু হয়েছে। এই কার্ড মূলত ফ্রিল্যান্সারদের রাষ্ট্রীয় পরিচয়।
ব্যাংকের এই বিনিয়োগ সুবিধা ভোগ করতে হলে ফ্রিল্যান্সারের বয়স হতে হবে ২২ থেকে ৫৫ বছর। আর ইসলামী ব্যাংকে তার একটি অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
কত টাকা লোন দেবে ইসলামী ব্যাংক?
ফ্রিল্যান্সার যদি একজন ব্যক্তি হন এবং তিনি ব্যক্তিগত ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্যেই লোন নিতে চান, তবে তাকে শর্ত সাপেক্ষে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দেবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। আর যদি কেউ ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠানের জন্যে লোন নিতে চান, তবে তাকে দেয়া হবে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে, এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং সেই অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জমা থাকতে হবে।
কত পার্সেন্ট সুদ নেবে ইসলামী ব্যাংক?
আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, ইসলামী ব্যাংক কোনও ধরণের সুদের কাজ-কারবার করে না। তার মানে, আপনাকে তারা লোন দেবে বিনা সুদে। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার রয়েছে আর সেটা হচ্ছে আপনাকে তারা যে টাকাটা দেবে, সেটা কিন্তু লোন হিসেবে দিচ্ছে না, দিচ্ছে বিনিয়োগ হিসেবে। অর্থাৎ, ইসলামী ব্যাংক আপনার পেছনে বিনিয়োগ করবে। সুতরাং, তারা আপনার লাভের বা অর্জিত টাকার একটা অংশ নেবে তাদের বিনিয়োগের লভ্যাংশ হিসেবে। আর এই লভ্যাংশ নির্ধারিত হবে আপনার আয়ের উপর নির্ভর করে। কিন্তু কোনভাবেই সেটি ১৩ পার্সেন্টের বেশি হবে না।
ইসলামী ব্যাংকের ফ্রিল্যান্সিং লোন পেতে হলে কোথায় যেতে হবে?
ইসলামী ব্যাংকের এই ফ্রিল্যান্সিং সুবিধা বা লোন পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে ব্যাংকের যে কোনও ব্রাঞ্চে। তবে, সবচেয়ে ভাল হয়, যে ব্রাঞ্চে আপনার অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যদি সেই ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করেন। আর যদি অ্যাকাউন্ট না থাকে কিন্তু আপনি এই বিনিয়োগ সুবিধা পেতে চান, তবে আপনার এলাকার কাছাকাছি ব্রাঞ্চে একটি অ্যাকউন্ট করে নিতে পারেন। আর সেই ব্রাঞ্চে গিয়ে যে কোনও অফিসারকে বলুন আপনি ফ্রিল্যান্সিং লোন নিতে চাচ্ছেন।
লোন বা বিনিয়োগ কিভাবে পরিশোধ করবো?
বিনিয়োগ বা লোন পরিশোধের বিষয়টি অবশ্যই আগেই জেনে রাখা ভাল। কারণ, আমরা সাধারণত সহজভাবে ঋণ নিয়ে নেই কিন্তু পরিশোধের বেলায় এসে কঠিন হয়ে যাই। অর্থাৎ, ঠিক মতো পরিশোধ করতে চাই না। যাইহোক, ইসলামী ব্যাংক থেকে ফ্রিল্যান্সিং লোন নিলে সেটা কিস্তিতে শোধ করতে হবে। আর এই কিস্তির মেয়াদ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১ বছর আর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২ বছর। অর্থাৎ, আপনি যদি নিজের জন্যে লোন নেন, তবে আপনাকে সেটা ১ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে আর যদি ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠানের জন্যে লোন নেন, তবে ২ বছরের ভেতরে শোধ করে দিতে হবে।
২. ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
কার্ডধারী ফ্রিল্যান্সারদেরকে ঋণ দেয়ার জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির পর পরই ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ঘোষণা দেয় তারা ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে লোন দেবে। তবে, এই লোনের পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়, ২০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মূলত, একজন ফ্রিল্যান্সারকে কম্পিউটার এবং আনুসঙ্গিক জিনিস-পত্র কেনার জন্যে স্বল্প সুদে এই পরিমাণ টাকা লোন দিচ্ছে ট্রাস্ট ব্যাংক।
কারা পাবেন ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ফ্রিল্যান্সিং লোন?
যাদের বয়স ২১ থেকে ৬০ বছর এবং যাদের ৫০০ ঘন্টা ফ্রিল্যান্সিং করার রেকর্ড রয়েছে, তারাই পাবেন ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের এই ফ্রিল্যান্সিং লোন। যাদের এখনো ৫০০ ঘন্টা কাজ করার রেকর্ড তৈরি হয়নি কিন্তু ইতিমধ্যে ১০০ মার্কিন ডলার আয় করে ফেলেছেন, তারাও এই ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন।
ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড কত পার্সেন্ট সুদ নেবে?
ইসলামী ব্যাংক সুদ না নিলেও বিনিয়োগের লভ্যাংশ হিসেবে ১ থেকে ২ বছরের ভেতর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তুলে নেয়ার ঘোষণা দিলেও ট্রাস্ট ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ১৪ পার্সেন্ট পর্যন্ত সুদ নেবে বলে জানিয়েছে।
কিভাবে পাবেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ফ্রিল্যান্সিং ঋণ?
ট্রাস্ট ব্যাংকের যে কোনও ব্রাঞ্চে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিন। এরপর, ব্যাংকের ম্যানেজার বা সংশ্লিষ্ট যে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনিই আপনাকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া বলে দেবেন।
শেষ কথা
প্রাইভেট ব্যাংকগুলোকে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে লোন দেয়ার এই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তারই ফলস্বরূপ উপরোক্ত দুটি ব্যাংক ইতিমধ্যেই লোন দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। আশা করা যায়, অন্যান্য ব্যাংকগুলোও শীঘ্রই ফ্রিল্যান্সারদেরকে লোন দেয়ার ঘোষণা দেবে। সুতরাং, ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ৪টি মার্কেটপ্লেস থেকে আপনার পছন্দেরটিতে আজই ফ্রিল্যান্স শুরু করে দিন। আর ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গঠনের জন্যে আরো বড়ো পরিসরে কাজ করার সুবিধা পেতে উপরোক্ত ব্যাংকগুলো থেকে লোন নিন।
ওয়াও, তাহলে তো অনেক ভাল; ফ্রিল্যান্সাররা ফেক্সিবিলিটির সাথে কাজ করে নিজের ও দেশের উন্নয়ন করতে পারবে।
ধন্যবাদ ভাই, ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যে ব্যাংকের লোন সম্পর্কে লেখা এই পোস্টটি অনেক ভাল লাগল। কিন্তু আর একটা বিষয় জানার ছিল, ব্যাংক যে ঋণ দেবে সেটা কতটা কিস্তিতে পরিশেধ করতে হবে বা সময়সীমা কতদিন?