ওয়েবসাইট ট্রাফিক মনেটাইজ করার অনেক উপায় আছে। আর সেগুলোর বেশিরভাগই ওয়েবসাইট ভিজিটরদে জন্যে থার্ড-পার্টি অ্যাডভার্টাইজিং প্রোডাক্টস্ কিংবা সার্ভিস। আবার, অনলাইনে অনেক অ্যাড প্রোগ্রাম রয়েছে যেগুলো ওয়েবসাইট মালিকদের আয় করার সুযোগ করে দিচ্ছে। আর এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজ প্রোগ্রামটি হচ্ছে গুগল অ্যাডসেন্স।
গুগলের এই অ্যাডভার্টাইজিং প্রোগ্রামটি ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হয়। আর এটিই এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটে থাকা পাবলিশারদের জন্যে সবচেয়ে পপুলার প্রোগ্রাম। এটি ওয়েব মাস্টার এবং ওয়েবসাইট মালিকদের জন্যে অনলাইনে আয়ের ভাল সুযোগ।
প্রতি বছর গুগল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বা ৮৪ হাজার কোটি টাকা পাবলিশার তথা ওয়েবসাইট মালিকদেরকে পে করে থাকে। আপনার মনে যদি প্রশ্ন জাগে যে, অ্যাডসেন্স কি আর এটি কিভাবে কাজ করে, তবে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
গুগল অ্যাডসেন্স কি?
ভূমিকা পড়েই আশা করি আপনি ইতিমধ্যে বুঝে ফেলেছেন যে, অ্যাডসেন্স কি। তবু, আরেকটু তেনা পেঁছানো যেতেই পারে, কি বলেন! গুগল অ্যাডসেন্স হচ্ছে গুগল ইনকর্পোরেশনের রান করা এমন একটি প্রোগ্রাম যা বিজ্ঞাপন দাতা এবং গ্রহীতা বা পাবলিশারদের মধ্যে একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ মিডিয়া অ্যাডভার্টাইজমেন্ট।
এই অ্যাডভার্টাইজমেন্ট মূলত গুগল দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়।
গুগল বিভিন্ন কোম্পানী থেকে অটোমেটিক সিস্টেমে অ্যাড কালেকশন করে থাকে। আর সেই অ্যাড আবার অটোমেটিক্যাল্লি পাবলিশারদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে থাকে। বলতে পারেন, গুগল মূলত এখানে একটি মিডিয়া হিসেবে কাজ করে।
অ্যাডভার্টাইজারদের কাছ থেকে গুগল পার ক্লিক ও পার ইমপ্রেশনের উপর ভিত্তি করে চার্জ নিয়ে থাকে। আর এই চার্জ থেকে যে আর্নিং আসে গুগল তার ২২ পার্সেন্ট থেকে ৩২ পার্সেন্ট পর্যন্ত রেখে দিয়ে বাকীটা পাবলিশার বা ওয়েবসাইট ওনারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। এতে করে, গুগলের প্রতি বছরের আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৩. ৬ বিলিয়ন ডলার।
ভাবছেন, তাহলে ওয়েবসাইট মালিকরা কেমন আয় করে! হুম, গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ওয়েবসাইট মালিকদের আয় আপনার চিন্তারও বাইরে। যাইহোক, এই হচ্ছে গুগল অ্যাডসেন্স, আশা করি যারপরনাই জেনেছেন।
গুগল অ্যাডসেন্স কিভাবে কাজ করে?
গুগল অ্যাডসেন্সের এই পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সিম্পল। আপনি একটি অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করবেন, যা আবেদনের মাধ্যমে অনুমোদন বা অ্যাপ্রুভ করে নিতে হয়। এরপর, আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজে একটি ছোট অ্যাড কোড বসাবেন। এটাই হল আপনার শুরুর কাজ, বাকীটা গুগলের কাজ।
গুগল অটোমেটিক্যাল্লি আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাড ডিসপ্লে শুরু করবে। আর গুগল এটা করে আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের ধরণ কিংবা ইউজার বা ভিজিটরদের ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্সের উপর ভিত্তি করে যেখানে মূলত গুগলের অটো অ্যালগোরিদম কাজ করে।
ওয়েবসাইটের ভিজিটররা যখন প্রদর্শিত অ্যাডে ক্লিক করা শুরু করবে, তখন আপনার ইনকাম জেনারেট হওয়া শুরু হবে। আর ইনকামটা ক্যালকুলেট হবে কস্ট-পার-ক্লিক অনুসারে এবং আপনার সঙ্গে গুগলের লেনদেন হবে রেভিনিউ শেয়ারিং বেসিসে। তার মানে বুঝতেই পারছেন, আপনার ইনকাম বা রেভিনিউ নির্ভর করছে ভিজিটরদের ক্লিকের উপর।
- নোট-১: গুগলের সঙ্গে কখনোই প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার কথা চিন্তা করবেন না। অর্থাৎ, কৃত্রিমভাবে অ্যাডে ক্লিক ফেলার কথা ভাববেন না। কারণ, গুগলের মেশিন অ্যালগোরিদম আপনার থেকে বেশি স্মার্ট।
- নোট-২: এমন কোনও উপায় অবলম্বণ করবেন না, যাতে ভিজিটররা আপনার অ্যাডে ক্লিক করতে বাধ্য হয়।
- নোট-৩: কোনও ব্যানার বা টেক্সট্ প্রদর্শন করে ভিজিটরদেরকে অ্যাডে ক্লিক করতে উৎসাহিত করবেন না।
মনে রাখবেন, গুগলের একেবারে একিউরেট এবং কমপ্লিকেটেড একটা সিস্টেম রয়েছে, যা আপনার সব ধরণের ফ্রড সিস্টেম ধরে ফেলতে পারে। কাজেই, যা কিছু করবেন, তার সবকিছুই যেন ন্যাচারাল হয়। নতুবা, আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যানড্ হয়ে যাবে।
গুগল অ্যাডসেন্সের সুবিধা সমূহ
গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে জানার কৌতুহল জাগাটা খুবই স্বাভাবিক। আসুন, অ্যাডসেন্সের আসল কিছু সুবিধা সম্পর্কে জানা যাক-
- সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাড প্রকাশের জন্যে কোনও কোম্পানী বা অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মের কাছে ধর্ণা দিতে হবে না। অ্যাড কালেকশনের দায়িত্ব গুগলের।
- আয়ের জন্যে আপনার কোনও নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে হবে না। অর্থাৎ, কোনও ধরণের মার্কেটিং এর প্রয়োজন নেই।
- অ্যাডসেন্সের জন্যে ওয়েবসাইট তৈরি মেইনটেনান্স ছাড়া কোনও রকম বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ, অ্যাডসেন্স থেকে আয়ের জন্যে আলাদা ইনভেস্টমেন্ট দরকার হয় না। কারণ, এর রেজিস্ট্রেশন প্রসেস সম্পূর্ণ ফ্রি।
- আপনার ভিজিটরদের পছন্দ ও অপছন্দ নিয়েও চিন্তা করতে হবে না। অর্থাৎ, কোন ধরণের ভিজিটরদের জন্যে ঠিক কোন প্রকারের অ্যাড শো করতে হবে, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না। এটাও গুগলের অটো অ্যালগোরিদম করে নেবে।
- গুগলের সার্চ অপশন রয়েছে যা একজন ইউজারকে তার প্রত্যাশিত পেজে নিয়ে আসে এবং ঠিক সেই রিলেটেড অ্যাড প্রদর্শন করে থাকে। আপনার কাজ শুধু একটি ওয়েবসাইট বানানো এবং তাতে এমন কন্টেন্ট তেরি করা যা সার্চ রেজাল্টে জায়গা পায়।
- একটা অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট দিয়ে আপনি অসংখ্য ওয়েবসাইটে অ্যাড বসাতে পারবেন। গুগলের মনিটরিং প্রসেস সেগুলো মার্ক করা ও রেভিনিউ ক্যালকুলেট করার কাজটি অটোমেটিকভাবে করে দেবে।
- অ্যাডসেন্স ব্যবহার ও অ্যাড কোড ক্রিয়েট করাসহ যাবতীয় কোনও বিষয়েই তেমন একটা টেকনিক্যাল নলেজের প্রয়োজন নেই। একজন সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারী এবং ওয়েবসাইটের মালিক কোনও রকম কোডিং জানা ছাড়াই অ্যাডসেন্স ব্যবহার করতে পারেন।
গুগল অ্যাডসেন্সের অসুবিধা সমূহ
সকল সেবা এবং পরিসেবার মতোই গুগল অ্যাডসেন্সেরই কিছু অসুবিধা রয়েছে, যদিও সুবিধার তুলনায় সেগুলো একেবারেই নগন্য। আসুন, অ্যাডসেন্সের কয়েকটি অসুবিধা সম্পর্কে জানা যাক-
- গুগল অ্যাডসেন্সের জন্যে আবেদন করতে হলে, অন্য কোনও অ্যাড নেটওয়ার্ক ইউজ করা যায় না।
- পত্র-পত্রিকায় যেসব অ্যাড পাবলিশ করা হয়, সেগুলোর জন্যে এককালীন একটা পেমেন্ট পাওয়া যায়, অ্যাডে ক্লিক পড়ুক আর না পড়ুক। কিন্তু অ্যাডসেন্সের বেলায় বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন ওয়েবসাইট মালিক কেবল তখনই রেভিনিউ জেনারেট করতে পারেন, যখন তার ভিজিটররা অ্যাডে ক্লিক করে। যতক্ষণ না কোনও ইউজার অ্যাডে ক্লিক না করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত পাবলিশারের কোনও ইনকাম হয় না।
- অ্যাড ইম্প্রেশন থেকে যদিও কিছু আয় আসে, কিন্তু সেটা খুবই সামান্য পরিমাণ।
- অ্যাডসেন্সের পলিসি ভায়োলেশনের কারণে যে কোনও সময় অ্যাকাউন্ট শাট ডাউন হয়ে যেতে পারে। যার কারণে, সব সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়।
- যদিও অ্যাডসেন্স থেকে প্রচুর পরিমাণে আয় করা যায়, তবু এটা পুরোপুরি নির্ভর করে ভিজিটরের উপর। একটা সাইটে ভিজিটর না থাকলে, ইনকামও থাকে না। কাজেই, ভিজিটর পাওয়ার জন্যে প্রচুর এসইওর কাজ করতে হয়।
- গুগল কখনোই জানায় না যে, অ্যাডভার্টাইজারের কাছ থেকে কত টাকা নিচ্ছে আর পাবলিশারদেরকে কত টাকা দিচ্ছে।
- গুগল কখনোই জানায় না যে, কোন অ্যাডভার্টাইজারের অ্যাড পাবলিশ করা হচ্ছে। অবশ্য এটা জানা খুব একটা জরুরীও না।
Md Sagor says
Just wow apu. But, I want to know how to enable dark mode system on my blogger.
টি আই অন্তর says
Sorry, Sagor. I don’t have enough knowledge about the Blogger CMS. Why don’t you search on Google to get the process of enabling the dark mode system?
Md Sagor says
Why my comment was not approved automatically?
টি আই অন্তর says
Thanks, Md Sagor. We are using a feature to protect spamming comments where we approve them manually. That’s why, your comment was not automatically approved, you know.
Explain BD says
আপনার ব্লগটি পড়ে গুগল অ্যাডসেন্স সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য পেলাম যা আমাকে আগামী দিনে ব্লগিং-এ ভাল কিছু করতে সাহায্য করবে।
brianna ava says
আমাদের ওয়েবসাইট দিয়ে গুগল অ্যাডসেন্সের জন্যে অ্যাপ্লাই করার কথা ভাবছি। কিন্তু, গুগল অ্যাডসেন্স সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিল না। এই লেখাটি পড়ে অ্যাডসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। পাঠকরা চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে education সম্পর্কে নানা রকম তথ্য পেতে পারেন।