ব্যাট বলের লড়াই ক্রিকেটে একজন অলরাউন্ডের গুরুত্ব সর্বাধিক। মূলত, অলরাউন্ডার হলেন এমন একজন ক্রিকেটার যিনি বরাবরই ব্যাট ও বল হাতে দলের জয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। প্রকৃত অলরাউন্ডার তারাই যাদের ব্যাটিং ও বোলিং-এ ভালো দক্ষতা রয়েছে। কিভাবে অলরাউন্ডার হবেন তা জানাটা বোলার, ব্যাটসম্যান এবং ফিল্ডারসহ সবারই জানা দরকার।
একজন অলরাউন্ডার দলের কঠিন সময়ে ব্যাট অথবা বল হাতে দলকে পৌছে দেন জয়ের বন্দরে। সর্বশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারদের তালিকায় সবার উপরে যাদের নাম চলে আসে, তারা হলেন-
- ইমরান খান
- ক্রিস কেয়ার্ন্স
- শন পোলক
- এন্ড্রু ফ্লিনটফ
- যুবরাজ সিং
- শহীদ আফ্রিদি
- সাকিব আল হাসান
এদের প্রত্যেকেই দলের প্রয়োজনে ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠতেন।
আপনি যদি হতে চান একজন ভালো অলরাউন্ডার, তাহলে আপনাকে হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী ও প্রতিভাবান। ব্যাটিং ও বোলিং – দুই ডিপার্ট্মেন্টেই আপনাকে হতে হবে সেরা।
তবে যাই বলুন না কেন, নিজেকে একজন অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথটা কিন্তু মোটেও সহজ নয়। যদি একজন অলরাউন্ডার হিসেবে আপনার দলের জয়ে রাখতে চান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্যই। আজ আলোচনা করবো কিভাবে আপনি নিজেকে একজন অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তুলবেন!
কিভাবে অলরাউন্ডার হবেন
১. ফিটনেসের দিকে সচেতন হওয়া
শুধু একজন অলরাউন্ডার নয়, বরং একজন ভালো ক্রিকেটার হতে হলেও আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে আপনার ফিটনেসকে। ফিটনেসবিহীন একজন খেলোয়াড়ের যতো’ই স্কিল থাকুক না কেনো, সে কখনও ভালো অলরাউন্ডার হতে পারবে না।
ভালো অলরাউন্ডার হতে হলে আপনাকে স্কিল ও ফিটনেসের সঠিক সমন্বয় সাধন করতে হবে। তাই, প্রতিদিনের খাদ্যাভাস সম্পর্কে সচেতন হয়ে নিজের জন্য সঠিক ডায়েট নির্ধারণ করতে হবে। সঠিক ডায়েট গ্রহণ ও নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে একজন খেলোয়াড় তার ফিটনেস ঠিক রাখতে পারে যা তার অলরাউন্ডার হওয়ার পথে সহায়ক।
২. ব্যাটিং অনুশীলন করা
ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যানের কাজ রান সংগ্রহ করে দলে একটি বড় স্কোরের ভিত্তি গড়ে দেওয়া। একজন অলরাউন্ডারকে ব্যাটিং-এ অবশ্যই ভালো হতে হবে। যদি সে ওপেনিং করতে আসে, তাহলে তার কাজ দলকে একটি ভালো সূচনা দেওয়া।
মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে আসলে তার প্রধান লক্ষ্যই থাকে দলের ইনিংসকে ধীরে ধীরে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। আর লোয়ার অর্ডারে নামলে তার কাজ দলকে দ্রুত কম বল খেলে যথাসম্ভব বেশি রান করে দেওয়া।
তবে, এ-সবের জন্য আপনাকে করতে হবে প্রচুর ব্যাটিং প্র্যাক্টিস। অনুশীলনই একজন ব্যাটসম্যানকে পারফেক্ট করে তোলে। তাই, ভালো ব্যাটিং করতে চাইলে নেটে অধিক পরিমাণ অনুশীলন করুন। সেই সাথে, রিচার্ড পাইবাসের ১০টি ব্যাটিং টিপস ফলো করুন।
৩. বোলিং অনুশীলন করা
একজন অলরাউন্ডারকে হতে হবে তার বোলিং-এর দিকে মনোযোগী। ২২ গজের লড়াইয়ের পিচে একজন বোলারকে শারীরিক ও মানসিক দুই দিকেই শক্তিশালী হতে হয়।
প্রায়ই এমন হতে পারে আপনার করা একটি ওভারে ব্যাটসম্যান আপনাকে এক বা একাধিক বাউন্ডারি মেরে দিলো। এতে হতাশ বা নার্ভাস হলে চলবে না। মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা শিখতে হবে।
ক্রিকেট শুধু শারীরিক খেলাই না, এটি একটি মাইন্ড গেম। আর এই সাইকোলজিকাল গেমে জয়ী হতে হলে আপনাকে হতে হবে শীতল মস্তিষ্কের। তবেই আপনি বোলিং করে ব্যাটসম্যানের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবেন। পাশাপাশি নেটে বোলিং অনুশীলন করার কোন বিকল্প নেই। একই সঙ্গে, ভাল বোলার হওয়ার জন্যে কিছু বেসিক টিপস্ ফলো করাও জরুরী।
৪. প্রতিভা ও অনুশীলনের মিশ্রণ
একজন অলরাউন্ডার হতে হলে আপনাকে আপনার প্রতিভা ও অনুশীলনের সঠিক সমন্বয় সাধন করতে হবে। একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার যদি অনুশীলন না করে, তাহলে সে কখনও ভালো অলরাউন্ডার হতে পারবে না।
প্রতিদিন বাকি সবার থেকে অধিক অনুশীলন করতে হবে আপনাকে। মনে রাখবেন, নেটে যতো বেশি সময় কাটাবেন পিচে ততো বেশি সফল হবেন।
৫. বোলিং করার সময় লাইন ও লেংথ ঠিক রাখা
একজন অলরাউন্ডার যেহেতু বোলিং করেও দলের জয়ে অবদান রাখেন, তাই তাকে তার বোলিং নিয়ে হতে হবে আরও সচেতন। তাকে অবশ্যই বোলিং করার সময় লাইন ও লেংথে খেয়াল রাখতে হবে। ফাস্ট বোলারদের জন্য তার গতি তার প্রধান অস্ত্র। তবে একজন বোলার যে শুধু তার গতি দিয়েই ব্যাটসম্যানকে কাবু করে তা কিন্তু নয়!
একজন ভালো বোলার তার বোলিং-এ গতিতে আনে বেশ কিছু ভ্যারিয়েশন যা ব্যাটিং করার সময় ব্যাটসম্যানকে বিব্রত করে। পাশাপাশি, সঠিক লাইন লেংথে বোলিং করে আপনি হতে পারেন আপনার দলের একজন উইকেট টেকিং বোলার।
৬. সবসময় নিজের সেরাটা দেওয়ার প্রচেষ্টা
একজন অলরাউন্ডার একটি দলের ব্যাটিং ও বোলিং দুই ডিপার্ট্মেন্টেই কাজ করে থাকেন। তাই, তাকে হতে হবে একজন উদ্দীপনাপূর্ণ ব্যক্তি। যখন দলের জন্য কিছু করার সুযোগ আসবে, তখনই একজন অলরাউন্ডারকে তার সেরাটা দেওয়া লাগবে।
নিজের সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার এই মানসিকতা আপনাকে একজন ভালো অলরাউন্ডার হওয়ার পাশাপাশি ভালো ক্রিকেটার হতেও সাহায্য করবে।
৭. ভিডিও এনালাইসিস পদ্ধতি অবলম্বন
একজন অলরাউন্ডের জন্য ভিডিও এনালাইসিস পদ্ধতি অবলম্বন করা খুবই জরুরী। এই পদ্ধতিতে একজন খেলোয়াড় তার নিজের পুরানো খেলার ভিডিওগুলো দেখে তার নিজ ভুলগুলো বের করতে পারে এবং সেগুলো সংশোধন করার সুযোগ পায়।
নেটে ব্যাটিং বা বোলিং অনুশীলন করার সময়ে একজন প্লেয়ার তার ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলনের ভিডিও রাখতে পারে। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ফুটেজগুলো দেখে কোচের সাথে পরামর্শ করে সে তার খেলার উন্নতি সাধন করতে পারবে।
৮. লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার মানসিকতা তৈরী করা
একজন অলরাউন্ডের ব্যাটিং-এর উপরে তার দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। সেজন্য একজন অলরাউন্ডারকে ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে লম্বা ও দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটিং করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
৯. দীর্ঘ স্পেল নিয়ে বোলিং না করা
একজন বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য এই নিয়মটি মনে রাখা খুবই দরকারি। বিশেষ করে, যারা বিখ্যাত বোলারদের দেয়া ফাস্ট বোলিং টিপস্ মেনে চলেন এবং নিজেও ফাস্ট বোলার হয়ে থাকেন। ওডিআই বা টি২০ ফরম্যাটে বোলারকে খুব একটা দীর্ঘ স্পেল এর বোলিং করতে হয় না।
তবে টেস্টে সাধারণত একজন বোলারকে এক স্পেলেই ১০/১২ বা আরও বেশি ওভার বোলিং করা লাগে। তাই এই দীর্ঘ স্পেলের বোলিং-এ যেন আপনি ফিজিক্যালি আহত যাতে না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
১০. খাবার তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাদ্য রাখা
অলরাউন্ডার হওয়ার সাথে খাবার তালিকায় প্রোটিন রাখার গুরুত্ব দেখে মোটেও অবাক হবেন না। কেন খাবার তালিকায় প্রোটিন রাখবেন সেটাও সংক্ষেপে বলছি!
পূর্বেই বলা হয়েছে একজন অলরাউন্ডারকে অন্য সবার তুলনায় নেটে বেশি অনুশীলন করা লাগে। তাই, তার ক্যালরিও খরচ হয় বেশি। এজন্য একজন অলরাউন্ডার বা ক্রিকেটারের উচিত অধিক পরিমাণে প্রোটিনজাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
শেষকথা
কিভাবে অলরাউন্ডার হবেন তা ইতিমধ্যেই জেনে নিলেন। একজন অলরাউন্ডার হয়ে উঠার গল্পটা কারও জন্যই মোটেও সহজ নয়। প্রতিটি খেলোয়াড়েরই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। তবে, উপরে বর্ণিত অলরাউন্ডার হওয়ার উপায়গুলো অনুসরণ করলে আপনিও পারবেন সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে আপনার দলের একজন স্বীকৃত ও ভরসাযোগ্য অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে।
তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার প্রচেষ্টায় যেন প্রতিভার সাথে কঠোর পরিশ্রমের সংমিশ্রণ ঘটে।
Leave a Reply