ক্রিকেট এবং ফুটবল দুটি খুবই জনপ্রিয় খেলা। এই দুটি খেলার মধ্যে একটি বিষয়ে খুব মিল রয়েছে, আর তা হল ফুটবল খেলায় গোলকিপার এবং ক্রিকেটে উইকেটকিপার। দু’জনের লক্ষ্যটা বলতে গেলে অনেকটা একই। ফুটবলে যেমন বলকে জালের ভেতরে ঢুকতে না পারার জন্য রক্ষা করা হয়, তেমনি ক্রিকেটে একজন উইকেটকিপার বোলারের ডেলিভারি করা বলকে ধরার জন্য এবং ব্যাটসম্যানের ব্যাটের ছোঁয়ায় লাগা বলকে ক্যাচ ধরতে হয়। তবে, এছাড়াও একজন উইকেটকিপারের আরও অনেক ভূমিকা রয়েছে, যা ফুটবলে একজন গোলকিপারের থেকে অনেক বেশি।
একজন উইকেটকিপার ক্যাচ ধরার পাশাপাশি, কোন ব্যাটসম্যানকে স্টাম্পিং আউট, রান আউট, ফিল্ডারের কাছ থেকে নিক্ষেপ করা বল ধরা এবং এলবিডব্লিউ আবেদনে বোলারের সাথে তাকেও জোরালো আবেদন জানাতে হয়। এ-সব কাজকে অনেকে যতটা সহজ ভাবে, বস্তুত তা মোটেও সহজ কাজ নয়। বরং একজন উইকেটকিপারকে সবার থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়।
তাই, একজন ভালমানের উইকেটকিপার হতে চাইলে পরিশ্রমের পাশাপাশি তাকে বেশ কিছু টিপস অনুসরণ করে চলতে হয়। তবেই তিনি হয়তো একদিন হতে পারবেন মহেন্দ্র সিং ধোনী, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মত নামকরা উইকেটকিপার। আসুন জেনে নিই একজন দক্ষ উইকেটকিপার হওয়ার জন্যে যে ৬টি টিপস মেনে চলা উচিত।
দক্ষ উইকেটকিপার হতে চাইলে মেনে চলুন ৬টি টিপস
১. নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলা
কোন দল যখন ফিল্ডিং করে, তখন একজন উইকেটকিপারকে সব থেকে বেশি চাঙ্গা থাকতে হয়। কারণ, পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রে একজন উইকেটকিপারকে অনেক সময় লাফিয়ে বল ধরতে হয়। সীমানার দিকে বল গেলে ফিল্ডারদের কাছ থেকে সেই বল ধরার জন্য উইকেটের সামনে এসে সেই ফিরতি বল ধরতে হয়।
আর তাই দেখা যায়, একজন উইকেটকিপারকে সব সময়ই একটিভ মুডে অর্থাৎ কর্মচঞ্চলভাবে থাকতে হয়। ফলে, নিজেকে চাঙ্গা বা কর্মচঞ্চল করে রাখার জন্য নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস থাকা দরকার।
দৌড়ানোর অনুশীলনটা অবশ্যই খুব আস্তে কিংবা খুব বেশি জোরে হওয়ার দরকার নেই। বরং মিডিয়ামভাবে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট দৌড়ানো উচিত।
২. ক্রাউচ পজিশনে বসার অভ্যাস তৈরি করা
ক্রাউচ পজিশন হচ্ছে পা ভাঁজ করে মাটিতে না বসে কেবল দু’পায়ের উপর ভর করে থাকা। এই অভ্যাসটি একজন উইকেট রক্ষকের জন্য ভীষণ দরকার। কারণ, স্পিন বোলিংয়ের সময় একজন উইকেটকিপারকে স্টাম্পের ঠিক পেছনে ক্রাউচ পজিশনে থেকে বল ধরতে হয়।
অনেক সময় টেস্ট খেলায় স্পিনাররা বেশি ওভার করে বলে একজন উইকেটকিপারকেও অধিকাংশ সময় ক্রাউচ পজিশনে থেকে বল ধরতে হয়। আর এজন্য ক্রাউচ পজিশনে বসার অভ্যাস গড়াটা একজন উইকেটকিপারের জন্য আবশ্যক।
৩. ক্যাচ ধরার অনুশীলনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ব্যবহার করা
ক্যাচ ধরার অনুশীলনের জন্য ফিল্ডারদের মত একজন উইকেটকিপারকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়। একজন ভাল উইকেটকিপার হতে হলে অনুশীলনে এই সরঞ্জামগুলো অবশ্যই দরকার। সরঞ্জামগুলো কি কি আর সেগুলোর কাজ কি তা জানতে ক্রিকেট ফিল্ডিংয়ে ভাল করার দুর্দান্ত উপায় দেখে নিন। এর ভেতরই আপনি এইসব সরঞ্জাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
৪. বলের দিকে ফোকাস ঠিক রাখা
একজন পেস বোলার ঘণ্টায় ১৩০ কি.মি থেকে শুরু করে ১৫০ কি.মি. পর্যন্ত বা এর উপরেও গতিতে বল ডেলিভারি করে থাকে। এই গতিতে আসা বল যখন ব্যাটসম্যানের ব্যাটের কোনায় লেগে উইকেটকিপারের নিজের দিকে কিংবা অনেকটা বামে বা ডান পাশে বলটি দ্রুত বেগে চলে আসে, তখন যদি একজন উইকেটকিপার ঠিকমত বলটি দেখতে না পান, কিংবা বলটির গতি-প্রকৃতি বুঝতে না পারেন, তাহলে ক্যাচ মিস হবার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।
আবার, স্পিন বলের ক্ষেত্রে, যেহেতু একজন উইকেটকিপারকে স্টাম্পের পেছনে খুব কাছাকাছি অংশে উইকেটকিপিং করতে হয়, তাই স্পিন বলের মুভমেন্ট বা গতি-প্রকৃতি ঠিকমত না বুঝলে বলটিকে গ্লাবস বন্দি করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে, বলের দিকে যদি উইকেটকিপার ঠিকমত ফোকাস না রাখেন। আর তাই, একজন ভাল উইকেটকিপার হতে হলে বলের দিকে সবসময় ফোকাস রাখতে হবে।
৫. ক্ষিপ্রতা অর্জন
একজন উইকেটকিপারকে অনেক বেশি পরিমাণে ক্ষিপ্র হতে হয়। অর্থাৎ, তাঁকে খুব দ্রুততার সাথে বেশ কিছু কাজ করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে স্টাম্পিং আউট করা। স্টাম্পিং আউটটি বলতে গেলে কেবল স্পিন বোলিংয়ের সময়েই কেবল করা যায়।
কারণ, এ সময় একজন উইকেটকিপার উইকেটের কাছেই অবস্থান করেন। আর তাই, ব্যাটসম্যান যখন ক্রিজ থেকে কিছুটা বা অনেকটাই বের হয়ে শট নিতে যান, তখন যদি সেই ব্যাটসম্যান বলটি হিট (আঘাত) করতে মিস করেন তাহলে, একজন উইকেটকিপার বলটি ধরার পর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাটসম্যানকে স্টাম্পিং আউট করতে পারেন।
কিন্তু অনেক সময়ই স্টাম্পিং আউট করার ক্ষেত্রে একজন উইকেটকিপারকে অনেক ক্ষিপ্রতার সাথে স্টাম্পিং করতে হয়। যাতে করে ব্যাটসম্যানের দুই পা ক্রিজ থেকে সামান্য পরিমাণে বাইরে থাকার সুযোগটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্টাম্পিং আউট করতে সমর্থ হয়।
৬. ডাইভ দিয়ে বল ধরার দক্ষতা অর্জন
একজন উইকেটকিপারকে অধিকাংশ সময়ই বামে বা ডানে ডাইভ দিয়ে (লাফ দিয়ে) বল ধরতে হয়। বিশেষ করে ক্যাচ ধরার জন্য অনেক সময় এক হাত দিয়ে বামে বা ডানে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরতে হয়। তবে, এই ডাইভ দেওয়াটা টিভিতে খেলা দেখার সময় যতটা সহজ মনে হয় বাস্তবে তা ততটা সহজ নয়। এর জন্য, অনেক বেশি অনুশীলন করতে হয়।
কারণ, মিলি সেকেন্ডের ব্যবধানে একটি বল ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে কিংবা বোলারের অনেক বাইরের ডেলিভারি করা বল ছুটে আসে। আর এর পাশাপাশি ইঞ্জুরি বা আহত হবার সম্ভাবনাও থাকে। আর সে কারণেই অনুশীলনের মাধ্যমে ডাইভ দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন।
তবে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন উইকেটকিপারকে মনে রাখতে হবে, নিজের নিরাপত্তার জন্য এবং ইঞ্জুরি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁকে তার ব্যবহৃত গ্লাবস, প্যাড তার জন্য কতটুকু সহায়ক তা দেখেশুনে ব্যবহার করা। সেই সাথে, স্পিন বোলিংয়ের সময় একজন উইকেটকিপারকে অবশ্যই হেলমেট এবং সানগ্লাস পড়া উচিত। কেননা, অনেক সময় ভুলক্রমে বলটি তার মুখে কিংবা বল স্টাম্পে লাগার পর বেল উড়ে এসে তার চোখে লাগতে পারে।
এ রকম একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক উইকেটকিপার মার্ক বাউচার। বেল উড়ে এসে তার চোখে আঘাত করে, কিন্তু ভাগ্যক্রমে তার চোখের বড় কোন ক্ষতি হয়নি। যাইহোক, এ জন্যই একজন উইকেটকিপারকে অবশ্যই তার উইকেটের ঠিক পেছনে উইকেটকিপিং করার সময়ে হেলমেট এবং সানগ্লাস পড়া উচিত।
যাই হোক, দক্ষ উইকেটকিপার হতে চাইলে উপরে বর্ণিত সবগুলো টিপস্ মেনে চলুন। আশা করি, আপনি অচিরেই একজন ভাল মানের উইকেটকিপার হয়ে উঠবেন।
Leave a Reply