অনলাইনে আয়ের পিছনে ছুটে চলেছে আজকের বিশ্ব। আধুনিক সমাজে সবাই চায় যে অবসরের সময়টুকু ঘরে বসে কিছু কাজ করে যেন কিছু অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করা যায়, যার জন্য সবচেয়ে আদর্শ উপায় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্তপেশা। কিন্তু দেখা যায় দক্ষতার অভাবে অনেকেই বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলে অনলাইনে আয় করার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেন না। অনেকে আবার কিছুদিন অপেক্ষা করে যথন দেখেন যে কাজ পাচ্ছেন না তখন চেষ্টা করাই ছেড়ে দেন।
অনলাইনে আয় হতে বিলম্বের কারণ
এই পোষ্টটিতে আমি আপনাদের সামনে অনলাইনে আয় করতে আমাদের কেন সময় লেগে যায় তার একটি ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা করব। আমি নিজেও অনেক বছর ধরে ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে সম্পৃক্ত এবং মোটামুটি অনলাইনে আয় সম্পর্কে যতগুলি বিষয় আছে তার সবগুলোর উপর আমার কম-বেশি ধারণা রয়েছে। তাই আমি চাইনা যে অনলাইনে আয় করা নিয়ে আপনাদের মনে কোন ধরনের বিভ্রান্তি থাকুক।
আমার দায়িত্ব থেকেই আমি আপনাদের জানাতে চাই যে, অনলাইনে আয় করতে হলে অবশ্যই আপনার পর্যাপ্ত ধৈর্য্য থাকা প্রয়োজন। অনলাইনে আয় কোন লটারী নয় যা আপনাকে রাতারাতি বড়লোক বানিয়ে দেবে। তথাকথিত অনেক ইন্টারনেট গুরু এবং মার্কেটারগণ আপনাকে অল্প সময়ে ধনী বানিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও আপনার এটি বুঝতে হবে যে, অনলাইনে আয় করা টাকা হাতে আসার পূর্বে আপনাকে কয়েক মাসেরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে। কিছু কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে সময়টা বছরও হতে পারে।
ইন্টারনেট সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব
ইন্টারনেট সম্পর্কে যদি আপনার মোটামুটি ভালো ধারণা না থাকে, তাহলে এটিই হবে প্রথম কারণ যার ফলে আপনার অনলাইনে আয় করতে বিলম্ব হবে। ইন্টারনেট অনেক বড় একটি পরিসর এবং ইন্টারনেটে কোথায় কি হচ্ছে সে সম্পর্কে অবশ্যই আপনার প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। যারা নতুন তাদের এ সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান থাকে না, তাই তার জন্য সর্বশেষ আপডেটগুলি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া কষ্টকর হয়ে দাড়ায়।
তাই অনলাইনে আয়ের জন্য কি কি বিষয়ে জানতে হবে এবং কোন কোন বিষয়গুলিকে এড়িয়ে যেতে হবে এটি শিখতেই আপনার এক থেকে দুই মাস সময় লেগে যাবে। অনলাইনে আয়ের অনেকগুলি পদ্ধতি রয়েছে। আপনি কোন পদ্ধতিতে আয় করতে চান সেটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে আপনি যে পদ্ধতিতে আয় করতে ইচ্ছুক তা সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান ও ধারণা অর্জন করা।
কোন নিশ্চিত ফমূর্লা নেই
আপনাকে অবশ্যই এটি বুঝতে হবে যে ইন্টারনেটে আয় করার কোন নিশ্চিত ফর্মূলা নেই। হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই একটি পরিকল্পনা করতে পারেন, তবে এর কোন ব্লুপ্রিন্ট বা টেমপ্লেট নেই যার অনুসরন করলেই আপনি সফল হবেন।
যদি আপনি সফলতা পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই তার জন্য নতুন নতুন বিষয়গুলিতে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে এবং কাজের জন্য নতুন নতুন কৌশল তৈরী করতে হবে। আর এ ধনের অভিজ্ঞতা বা কৌশল রপ্ত করতে অনেক সময় বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। যদি আপনি এমন কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন, যে আপনাকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সফল হওয়ার রাস্তা বলে দিতে পারে, তাহলে আমি বলবো আপনি ভুল পথে রয়েছেন। ইন্টারনেটে সফল হওয়ার কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই যা মেনে চললেই আপনি সফল হয়ে যাবেন। আপনাকে নিজেই নিজের সফলতার পথ তৈরী করে নিতে হবে এবং তাতে সময় লাগবেই।
সঠিকভাবে ইংরেজী লেখার অদক্ষতা
সঠিকভাবে ইংরেজী লেখার দক্ষতার অর্থ হলো আপনি ইংরেজীতে কতটা পারদর্শী তা বোঝা। আপনি ব্লগিং বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং যাই করতে চান না কেন আপানাকে অবশ্যই ইংরেজীতে খুব ভালো হতে হবে। বিশেষ করে আপনি যদি বাংলাদেশের মত কোন দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন যেখানের মাতৃভাষা ইংরেজী নয়। এখানে আমি পরিষ্কারভাবে আপনাকে বলে দিতে চাই যে, যদি আপনি ইংরেজীতে ভালো না হয়ে থাকেন, তাহলে ইন্টারনেটের চাকরী আপনার জন্য নয়। অনলাইনে আয়ের প্রথম ধাপে বেশির ভাগ মানুষেরই ইংরেজী সম্পর্কে খুব বেশি দক্ষতা থাকে না। আপনি বর্তমানে কতটুকু ইংরেজীতে দক্ষ তার উপর ভিত্তি করে আপনাকে প্রতিদিন ইংরেজী চর্চা করতে হবে। নতুন নতুন শব্দ শেখা এবং সেগুলির প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে অবশ্যই কিছু সময়ের প্রয়োজন।
পরিবর্তণকে মেনে নিতে শেখা
অনলাইনে অর্থ উপার্জনের যতগুলি পন্থা রয়েছে তাতে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনাকেও সে অনুসারে নিজেকে বদলে নিতে হবে। যখন আপনি অনলাইন আয়ের রাস্তায় প্রথম পর্দাপন করবেন তখন যে আপনার এ সব প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধারণা নেই বলে থেমে থাকলে চলবে না। আপনাকে অবশ্যই ইন্টারনেটে চলমান প্রযুক্তি এবং পরিবর্তণ সম্পর্কে জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে পরিবর্তণ করে কাজ করতে হবে। আর চলমান কোন প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে কিভাবে নিজেকে বদলে নিয়ে কাজ করতে হবে সে কৌশল রপ্ত করা সময় সাপেক্ষ।
ইন্টারনেটে সফলতা লাভের মূলমন্ত্র হলো অধ্যবসায় আর পরিশ্রম। অনলাইনে আয় করে আজ যারা সফলতার উদাহরণ হিসেবে আমাদের সামনে উপস্থিত, তাদের সফলতার পিছনের প্রধান কারণটিই ছিল পরিশ্রম, ধৈর্য্য আর অধ্যবসায়। ইন্টারনেটে এফিলিয়েট মার্কেটিং বা ব্লগিং এর মত এমনও অনেক কাজ রয়েছে যাতে সফলতা লাভের জন্য বছরের পর বছর চেষ্টা করে যেতে হয়। কিন্তু পরিশেষে আপনার পরিশ্রম যখন আপনাকে ফল দেওয়া শুরু করবে তখন আপনাকে আর ফিরে তাকাতে হবে না। তাই ইন্টারনেটে দ্রুত সময়ের মধ্যে সফল হওয়ার চিন্তা ছেড়ে দিয়ে যে কাজটিতে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তা নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করুন আর ধৈর্য্য ধরুন, সফলতা আসবেই।
Leave a Reply