আমরা সকলেই জানি যে কাউকে নিজের প্রেমে পড়তে বাধ্য করাটা সহজ নয়। কারো প্রেমে পড়া থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করাটা সহজ হতে পারে, কিন্তু অন্যকে নিজের প্রেমে ফেলা বা নিজের প্রেমে পড়তে বাধ্য করা কিছুটা কঠিন আছে। তবে, কিছু সাইকোলোজিক্যাল ট্রিকস্ আছে যেগুলো ব্যবহার করে যে কাউকে নিজের প্রেমে পড়তে বাধ্য করা যেতে পারে।
আপনি যতই মন প্রাণ দিয়ে চান যে, কেউ আপনার প্রেমে পড়ুক, যতক্ষণ না আপনি নিজে থেকে চেষ্টা না করবেন, ততক্ষণ এমন কিছুই হবে না। আপনি যদি চেষ্ট করেন, তাহলে অবশ্যই একজন মানুষকে আপনার প্রতি আকর্ষিত করতে পারেন। এ ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনার পছন্দের মানুষটিও যে আস্তে আস্তে আপনাকে পছন্দ করতে শুরু করবে তার সম্ভাবণা অনেক বেশি।
যদিও এ ধরনের কাজকে অনেকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন না। কিন্তু আমি বলবো যে, আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে যতক্ষণ না আপনি নিজের ভালো দিকগুলি দেখাবেন, ততক্ষণ সে আপনার প্রতি আকর্ষিত হবে না। আর এটির জন্য চেষ্টা করা অবশ্যই খারাপ কিছু নয়।
ইংরেজী প্রবাদ অনুসারে “ভালোবাসা এবং যুদ্ধে সবকিছু করা যায়”। এখন কেন একজন মানুষ আপনার প্রেমে পড়বে, এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। হতে পারে সে আপনার মধ্যে এমন কিছু দেখে প্রেমে পড়বে, যা সে নিজের স্বপ্নের মানুষটির মধ্যে দেখতে চায়।
হতে পারে সেটা আপনার হাসি বা চলাফেরা, বাচনভঙ্গীসহ আরো অনেক কিছু। কিন্তু সেটি যাই হোক, তা খুঁজে বের করে নিজেকে সেভাবে সাজিয়ে প্রিয় মানুষটির সামনে নিজেকে উপস্থাপন করার ভেতরেই আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে। একটা মেয়ের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার কিছু উপায় আছে। যদিও এ উপায়গুলো গার্লফ্রেন্ডের কাছে আকর্ষণীয় হওয়ার উপায় হিসেবে বিবেচিত, আপনি চাইলে অনয়াসে সেগুলো যে কোন মেয়ের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্যে ব্যবহার করতে পারেন।
আবার অন্যদিকে একটা ছেলের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করারও উপায় আছে। এ উপায়গুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায় যে, এগুলো লেখা হয়েছে মূলত বয়ফ্রেন্ডের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করার জন্যে। তবে, আপনি অবশ্যই এগুলো ব্যবহার করতে পারেন কোন ছেলের সামনে নিজেকে অন্যরকমভাবে তুলে ধরার জন্যে।
বিজ্ঞানিরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এটা বোঝার জন্য যে, আসলে কোন বিষয়গুলি একজন মানুষকে অন্য জনের প্রতি আকর্ষিত করে। এ কারণে তারা অসংখ্য মানুষের মধ্যে জরিপ চালিয়েছেন এবং তাদের মতামত গ্রহণ করেছেন এবং খুঁজে বের করেছেন এমন কিছু আশ্চর্য কৌশল যা অবলম্বন করলে আপনার ভালোবাসার মানুষটিও আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করবে।
তাই দেরি না করে চলুন শিখে নেওয়া যাক পছন্দের মানুষকে নিজের প্রেমে পড়তে বাধ্য করার সেরা কৌশলগুলি।
অনুকরণ করতে শুরু করুন:
এই কৌশলটিকে ইংরেজীতে মিররিং বলা হয়ে থাকে এবং এই প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তি অপরের যাবতীয় চাল চলনের অনুকরণ করতে শুরু করে। যখন কারো সাথে কথা বলবেন, তখন সে যেভাবে কথা বলে বা অঙ্গভঙ্গী করে সেইভাবে নিজেও করা শুরু করুন।
১৯৯৯ সালে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ৭২ জন পুরুষ এবং মহিলার উপর একটি গবেষণা করেন। গবেষণার জন্য তারা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে জুটি তৈরী করে দেন। এরপর তাদেরকে স্বাধীনতা দেওয়া হয় যে, তারা ইচ্ছা করলে তাদের সঙ্গীকে অনুকরণ করতেও পারে, আবার নাও পারে।
পুরো গবেষণা প্রক্রিয়াটিকেই তারা ভিডিও রেকর্ডিং এর মাধ্যমে সংরক্ষণ করেন এবং জুটিগুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি আকর্ষণের বিষয়টি লক্ষ্য করতে থাকেন।
গবেষণার শেষে দেখা যায় যে, যে সকল জুটিতে একে অন্যকে অনুকরণ করার প্রবণতা বেশি, তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আকর্ষণও অনেক বেশি তৈরী হয়েছে। বলাই বাহুল্য যে, মানুষ হিসেবে যেহেতু আমাদের নিজের আচার ব্যবহারকে আমরা মূল্যায়ন করে থাকি, সেহেতু নিজের মত একজন মানুষকেকে না ভালোবাসবে।
ভালোবাসার মানুষের কাছাকাছি থাকুন:
মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে কিছু সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো আমরা পরিচিত জিনিসগুলির প্রতিই বেশি আকর্ষিত হই এবং আস্থা পাই। অপরিচিত কোন ব্যক্তি বা বস্তু যতক্ষণ না আমাদের পরিচিত হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা তার প্রতি আস্থা স্থাপন করতে পারি না। সেখানে পছন্দ করা বা ভালোবাসা তো অনেক দুরের ব্যাপার।
তাই আপনি যাকে ভালোবাসেন, চেষ্টা করুন অধিক সময় তার আশে পাশে থাকার। আপনাদের যদি আগে থেকে পরিচয় না থাকে, তাহলে কোন বন্ধুর মাধ্যমে আগে নিজেদের মধ্যে পরিচয় পর্বটা সেরে ফেলুন। এরপর তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করুন। একবার আপনার বন্ধু হয়ে গেলে তারপর নিয়মিত তার সাথে কথা বলা বা বন্ধুদের আড্ডায় উপস্থিত থাকতে শুরু করুন।
এতে একদিকে সে যেমন আপনার সম্পর্কে জানবে অন্যদিকে আপনার প্রতি তার একটা আস্থাও তৈরী হবে। এতে ভবিষ্যতে আপনাকে তার পছন্দ করার সম্ভবনাও বেড়ে যাবে।
অন্যদের প্রশংসা করুন:
এখানে আপনি একটু অবাক হতেই পারেন। আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, আমি নিজের প্রশংসা করার পরিবর্তে অন্য কারো প্রশংসা করার কথা বলে ফেলেছি। কিন্তু না, আপনি যেটি পড়েছেন সেটি একদম সঠিক। বরং আপনি যদি নিজে থেকেই নিজের প্রশংসা করতে থাকেন, তাতে ফল বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আপনি অন্যদের প্রশংসা করার জন্য যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করবেন, সেটিকে আপনার ব্যক্তিত্বে উপস্থিত গুণাবলী হিসেবেই সবাই ধরে নেবে। এটা একটা আশ্চর্য ধরনের সাইকোলোজিক্যাল ট্রিকস্ যাকে স্পনটেনিউয়াস ট্রেইট ট্রন্সফারেন্স বলা হয়ে থাকে।
দ্যা হ্যাপিনেস প্রজেক্ট গ্রন্থের লেখক গ্রিচেন রবিন তার বইতে উল্লেখ করেছেন যে, “আপনি কোন ব্যক্তি সম্পর্কে যা বলেন, অন্যরাও আপনার মধ্যে একই জিনিস দেখতে শুরু করে”। তাই আপনি যদি কাউকে দয়ালু বা মহান বলে সম্বোধন করেন, তাহলে আপানার আশে পাশের মানুষরা ভাবতে শুরু করবে যে, আপনি নিজেও একজন দয়ালু বা মহান ব্যক্তি।
তবে এক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যে, হঠাৎ করেই যার তার প্রশংসা করতে যাবেন না। যিনি প্রকৃতপক্ষেই প্রশংসা পাওয়ার পাত্র, তার সম্পর্কেই এ ধরনের কথা বলুন। এতে আপনার মধ্যে ওই ধরনের গুনাবলী সম্পর্কে আপনার পছন্দের মানুষটি নিশ্চিত হওয়াসহ আপনার কথার উপর তার বিশ্বাস আসতে শুরু করবে এবং একই সাথে সে আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তে বিশ্বাস করতে শুরু করবে।
আপনি নিঃসন্দেহেই তাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন এবং তার প্রতি আপনার আবেগ কাজ করে। কিন্তু আপনার আবেগ এবং অনুভুতিগুলো তার কছে ততক্ষণ পর্যন্ত মূল্যহীন, যতক্ষণ না সে আপনাকে লক্ষ্য করতে শুরু করবে। হয়তো তার আগে থেকে আরো অনেক বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু থাকতে পারে এবং যখন সে তাদের সাথে কথা বলে বা আড্ডা দেয়, তখন হয়তো আপনার মধ্যে ঈর্ষা সৃষ্টি হয়। কিন্তু এটিই সেই সময় যখন আপনার আবেগকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
আপনার পছন্দের মানুষটির সামনে যতটা সম্ভব ইতিবাচক আবেগ প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনি তার সাথে যেমন আচরণ করবেন, আপনার প্রতিও সে তেমনই আচরণ করবে। যথক্ষণ না আপনার সাথে তার কোন সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে, ততক্ষণ সে আপনার আবেগের মূল্যায়ন করবে না।
তাই, সম্পর্ক তৈরী হবার পূর্বেই অধিকার প্রয়োগের চেষ্টা করবেন না বা এটা ভেবে বসে থাকবেন না যে সে অন্য বন্ধুদের সাথে কথা বলুক এটা আপনার পছন্দ হচ্ছে না এটা বোঝালেই সে আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করবে। নিজেকে সংযত রাখুন আর চেষ্টা করতে থাকুন তার মনোযোগ আকর্ষণ করার।
Leave a Reply