ভূতের ছবি দেখতে কে না ভালবাসে? বাংলা ভাষায় ভূতের ছবি-র সে রকম ভান্ডার না থাকায়, বেশীরভাগ বাংলাদেশীর ভরসা ইংরেজি বা হিন্দি ভূতের ছবি। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা আবার উল্টো, অর্থাৎ হিন্দি ভূতের ছবি-র আবার অভাব নেই। এত ছবির মধ্য থেকে কোনটা দেখব? এই প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে। তাই আপনাদের জন্য সেরা হিন্দি ভূতের ছবি দেখার সাজেশন নিয়ে এলাম আজ।
যেহেতু, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে আবেগ-অনুভূতির ধরণও ভিন্ন ভিন্ন হয়, তাই একজনের কাছে যেটা সেরা, আরেকজনের কাছে সেটাকে সেরা মনে না’ও হতে পারে। তবে, সেরা হিসেবে আমি যেভাবে সিরিয়াল করেছি সেটা শুধু আমার নয়, অনেকেরই মতামত। এমনকি, বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মুভি রিভিউ বিভাগে এইভাবেই সেরা ভূতের ছবিগুলোর সিরিয়াল করা হয়েছে।
হিন্দি রোমান্টিক ছবি অনেকেই দেখেন এবং হিন্দি সিনেমার এই ক্যাটেগরিটিই আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কারণ, রোমান্টিক ছবিতে রয়েছে প্রচুর নাচ-গান যা দর্শকের অবসর সময়টাকে বিনোদনে ভরিয়ে রাখে। কিন্তু সব সময় কি আর রোমান্টিক ছবি ভাল লাগে? অনেকেই তাই মাঝে মধ্যে ভূতের ছবি খুঁজে থাকেন, তাদের জন্যেই এই আয়োজন।
সেরা ১০টি হিন্দি ভূতের ছবি
আপনার কাছে কোন ছবিটিকে সেরা মনে হয়, তা নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে জানান। কোন ছবিটি আপনার কেন ভাল লেগেছে, কোনটি কতটা ভৌতিক তা যদি লিখে জানান, তো আমাদের পাঠকরা খুশি হবে এবং আপনার ভাললাগা ছবিটি তারাও দেখবে। এবার চলুন, প্রতিটি ছবি সম্পর্কে একটু একটু ধারণা নেয়া যাক।
১। রাত (১৯৯২)
রাম গোপাল ভার্মার “রাত” কে ধরা হয় সেরা হিন্দি ভূতের ছবি। কাহিনীতে দেখা যায়, মিনি (রেবতী) তার মা-বাবা আর ভাগ্নে বান্টিকে নিয়ে নতুন বাড়িতে এসে ওঠে। বাড়ির পেছনের বাগানে বান্টি একটা বিড়ালছানা খুঁজে পেয়ে ঘরে নিয়ে আসে। কিন্তু বেড়ালটা গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।
রহস্য ঘনীভূত হয় যখন মৃত বিড়ালটা আবার ফিরে আসে। এরপরে শুরু হয় খুন। মিনির বান্ধবী রেশমিকে ঘাড় মটকে হত্যা করা হয়। হত্যা চেষ্টা চলে মিনির বাবা আর বয়ফ্রেন্ডের উপরেও। কিন্তু এসবের পিছনে আসলে কে রয়েছে? জানার জন্যে ইউটিউব কিংবা ইউটিউবের বিকল্প ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট থেকে খুঁজে নিন।
স্টিফেন কিং-এর উপন্যাস পেট সিমাটারির ছায়া রয়েছে এই হিন্দি ভূতের ছবিটিতে।
২। এক থি ডায়ান (২০১৩)
ম্যাজিশিয়ান বোবো (ইমরান হাশমী) ভারতের সেরা যাদুকর। কিন্তু তাকে তাড়া করে বেড়ায় তারই অনেক আগে মারা যাওয়া বোন মিশার মৃতদেহের ছবি। এর রহস্য লুকিয়ে আছে বোবোর ছোটবেলার ঘটে যাওয়া রহস্যময় ঘটনায়, যখন তার বাবা ও বোন মিশা নিহত হয় এক ডাইনীর হাতে। এতকাল পরেও সেই ডাইনী লেগে রয়েছে বোবোর পিছনে।
গা ছমছমে এই হিন্দি ভূতের ছবিটিতে ডাইনী, জাদুবিদ্যা এবং অতিলৌকিক ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
৩। রায (২০০২)
আদিত্য (দিনো মোরিয়া) আর সানজানা (বিপাশা বসুর) বিয়ে প্রায় ভেঙ্গে যাওয়ার মুখে। নিজেদের সম্পর্ককে গড়ে তোলার আরেকটা সুযোগ দিতে তারা দুজন বেড়াতে আসে সাগর তীরে। কিন্তু তারা জানত না কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। এক রহস্যময় নারীর প্রেতাত্মা আদিত্যের ওপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
আমেরিকান হরর ছবি “হোয়াট লাইস বিনিথ” থেকে প্রভাবিত হওয়া রায সিরিজের এই প্রথম ছবিটি সবচেয়ে অসাধারণ বলে মনে করেন অনেকেই। বিশেষ করে বিপাশা বসুর অভিনয় এই ছবিতে দেখার মত।
৪। ১৯২০ (২০০৮)
ইংরেজি ১৯২০ সাল। আর্কিটেক্ট অর্জুন (রজনীশ) পরিবারের অমতে বিয়ে করে এংলো ইন্ডিয়ান মেয়ে লিসাকে (আদাহ শর্মা)। শহর থেকে অনেক দূরে একটি রাজবাড়ি সারিয়ে ঠিক করার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে হাজির হয় অর্জুন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সে বুঝতে পারে, এই মহলটি স্বাভাবিক কোন বাড়ি নয়। তার স্ত্রীর উপর কোন একটা কিছু ভর করেছে এই মহল থেকে।
প্রাথমিক ভাবে একে গৎবাঁধা হিন্দি ভূতের ছবি মনে হলেও, বিক্রম ভাট পরিচালিত ১৯২০ এর কাহিনীতে নতুনত্ব রয়েছে।
৫। থারটিন বি (২০০৯)
মনোহরের (মাধবন) পরিবার নতুন এক হাইরাইজ বিল্ডিঙের ১৩ বি ফ্ল্যাটে উঠেছে। ফ্ল্যাটের ওঠার পরই ঘটতে থাকে আজব সব ঘটনা। বাসার পূজার ঘর কিছুতেই সেটাপ করা সম্ভব হয় না, কুকুর বিড়াল ঢুকতে চায় না বাসায়। অদ্ভুত এক ডেইলি সোপ প্রচারিত হতে থাকে এই বাসার টিভিতে, যা আর কারও বাসায় দেখা যায় না। এই ডেইলি সোপের পরিবারের সাথে মনোহরের পরিবারের সব ঘটনা মিলে যেতে শুরু করে।
এই ছবিটার বৈশিষ্ট্য হল প্রথমদিকে খুব স্বাভাবিক লাগলেও পরের দিকে ভয়টা ঘনিয়ে আসে। ভয় পেতে যদি ভালবাসেন, গা ছমছম করা এই ছবিটি অবশ্যই আপনার দেখা উচিত।
৬। কৌন? (১৯৯৯)
একলা বাড়িতে এক তরুণী (ঊর্মিলা মাতোন্দকার) টিভিতে দেখতে পায় পাগলাগারদ থেকে পালিয়েছে এক সাইকোপ্যাথ সিরিয়াল কিলার। এমন সময় তার দরজায় এসে হাজির হয় দুই অচেনা লোক। এদের মাঝে একজন খুনি, কিন্তু কে সে?
রাম গোপাল ভার্মা পরিচালিত এই ছবিটি একটি সাইকোলজিকাল থ্রিলার হরর ছবি। কাহিনীর শেষ পর্যায়ে একটি অসাধারণ টুইস্ট রয়েছে। মুক্তির এতদিন পরেও এই হিন্দি ছবিটি থ্রিলার-হরর ঘরানার দর্শকদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয়।
৭। শাপিত (২০১০)
রায সিকুয়েলের তৃতীয় ছবি শাপিত। একে বলা যায় সত্যিকারের ভূতের ছবি। প্রচণ্ড ভয় পেতে চাইলে এই ছবিটি অবশ্যই দেখা উচিত, তবে সাথে কাউকে নিয়ে। একা দেখলে ভয়ে হার্টফেল করার আশঙ্কা আছে।
আমান (আদিত্য নারায়ণ) তার প্রেমিকা কায়া (শ্বেতা আগরওয়াল)-কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এর সাথে সাথেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মকআহত হয় কায়া। এদিকে কায়ার বাবা কিছুতেই কায়ার বিয়ে দিতে রাজি নন।
জানা যায় কায়ার পরিবারের ওপর গত তিনশ বছর ধরে রয়েছে ভয়ানক এক অভিশাপ। কায়ার পূর্বপুরুষরা ছিল মহীপাল্পুরের রাজবংশ। এই বংশের এক রাজপুরুষ এক বাগদত্তা মেয়ের ওপর অত্যাচার চালালে মেয়েটির বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আত্মহত্যা করে মেয়েটি। সন্তানশোকে কাতর আচার্য পিতা অভিশাপ দেন, এই রাজবংশের কোন মেয়ে সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করতে পারুবে না। বাগদানের পরপরেই এক সহিংস প্রেতাত্মার হাতে তাদের মৃত্যু হবে।
প্রেমিকার জীবন বাচাতে অতিপ্রাকৃত বিদ্যায় বিশেষজ্ঞ প্রফেসর পশুপতিকে নিয়ে যুদ্ধে নামে আমান।
৮। হন্টেড থ্রিডি (২০১৩)
বিক্রম ভাট পরিচালিত আরেকটি হিন্দি ভূতের ছবি হন্টেড। রিয়াল এস্টেট ব্যাবসায়ী রেহান (মহাক্ষয় চক্রবর্তী) একটা বাড়ি দেখতে যায়। বাড়িটিতে ভূতের বদনাম থাকায় সহজে বিক্রি হচ্ছে না। রেহান জানতে পারে অতীতে এই বাড়িতে একটি হিংস্র লোলুপ প্রেতাত্মার হাতে নিহত হয়েছিল একটি মেয়ে। মেয়েটিকে বাঁচাতে অতীতে পাড়ি জমায় রেহান।
ছবিটির কাহিনীতে নতুনত্ব রয়েছে, এবং অসাধারণ সিজিআই এর থ্রিডি নামকে সার্থক করেছে। আর কিছু না হলেও শুধু গ্রাফিকসের কাজের জন্য এ ছবিটি দেখা উচিত।
৯। রাগিনী এম এম এস (২০১১)
উদয় (রাজকুমার রাও) মেয়েদের ফাঁদে ফেলে ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেইল করে। তার নতুন শিকার রাগিনী (কাইনাজ মোতিওয়ালা)। কিন্তু উদয় নিজেই শিকার হয় অতিপ্রাকৃত কিছুর। আর রাগিনীর ভাগ্যে কি ঘটে?
সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত ফাউন্ড ফুটেজ ধাঁচের এই হিন্দি ভূতের ছবিটি নতুনত্বের জন্য খুব প্রশংসিত হয়েছিল। পরবর্তী সিকুয়েলগুলি বিখ্যাত হলেও প্রথমটির সারিতে পৌঁছায়নি।
১০। হরর স্টোরি (২০১৩)
হরর স্টোরি আরেকটি প্রচণ্ড ভয়ের ছবি, যা বিশেষ করে এ যুগের ছেলে মেয়েদের বেশি ভাল লাগবে। কারণ, এ ছবির মূল চরিত্র সাতটি তরুণ-তরুণী যারা নিজেদের সাহস পরীক্ষা করে দেখতে একটা পরিত্যাক্ত হোটেলে রাত কাটাতে যায়। এই হোটেলটি আগে ছিল পাগলা গারদ, যেখানে চরম উন্মাদ রোগীদের রাখা হয়ত। আগুনে সেই পাগলা গারদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অনেক দিন পরে সেখানে তৈরি হয় হোটেলটি। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই হোটেলের মালিক বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
হোটেলে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই খুন হয়ে যায় দলের একজন। বাকিরা আবিষ্কার করে তারা এক উন্মাদ প্রেতাত্মার হাতে বন্দী, যার হাত থেকে পালানোর একমাত্র উপায় হল ভোর হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকা। এক এক করে খুন হয়ে যেতে থাকে দলের সদস্যরা।
গা শিউরানো এই হিন্দি ভূতের ছবিটি পুরোপুরিই ভয়ের, এখানে সাধারণ হিন্দি ছবির মত কোন নাচ-গানের দৃশ্য নেই।
পেয়ে গেলেন তাহলে লোম খাড়া করে দেয়া দশটি হিন্দি ভূতের ছবির সাজেশন? এবার তাহলে বসে যান দেখতে। একা একা দেখার সময় সাবধান কিন্তু! ভয় পেলে আবার আমাকে দোষ দেবেন না যেন!
Leave a Reply