যারা প্রোগ্রামিং করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য আজকে আলোচনা করব ৫টি হায়েস্ট পেইড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে। আর যদি আপনি নন টেকনিক্যাল হয়ে থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেল থেকে দেখে নিতে পারবেন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কী, কেন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে পিএইচপি বা জাভাস্ক্রিপ্ট প্রোগ্রামার ইদানীং প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট নিঃসন্দেহে সবচেয়ে পপুলার ল্যাঙ্গুয়েজ। আর এদের জন্য ডকুমেন্টেশনও প্রচুর। তার জন্য পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট-এর মত ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর ডেভেলপারও অনেক বেশি। ফলে, ইদানীং এসে এরা হায়েস্ট পেইডের তালিকায় বেশ পিছনের দিকে পড়ে গিয়েছে।
তবুও, বাংলাদেশে পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্টের ডেভেলপারদের চাহিদা যথেষ্ট হওয়ায় এগুলোকে জনপ্রিয় ল্যাঙ্গুয়েজের পাশাপাশি, নিরাপদ ল্যাঙ্গুয়েজও বলা যায়। ইদানীং অবশ্য প্রোগ্রামারদের জন্য দেয়া জব সার্কুলারগুলো দেখলে দেখবেন বাংলাদেশে ডট নেটের ডেভেলপারদের চাহিদাও প্রচুর।
তবে, একেবারে কমন সেন্স থেকেই বলা যায়, যে কোন ল্যাঙ্গুয়েজের ডেভেলপার যত বেশি হবে, ঐ ল্যাঙ্গুয়েজের ডেভেলপারদের স্যালারিও ততটাই কমে যাবে। আপনার পরিচিত পিএইচপি বা অন্যান্য কমন ল্যাঙ্গুয়েজের ডেভেলপারদের স্যালারি এবং জাভা স্ক্রিপ্ট বা একটু আনকমন ল্যাঙ্গুয়েজের ডেভেলপারদের স্যালারির পার্থক্য দেখলেই ব্যাপারটা সহজেই আঁচ করতে পারবেন।
৫টি হায়েস্ট পেইড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
তবে, আরও বেশি আনকমন ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন গুগোল গো বা এমন ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে যদি যান, তাহলে স্যালারির রেঞ্জও সাধারণত আরও উপরের দিকে দেখতে পাবেন। আর এই পোস্টে আমি মূলত হায়েস্ট পেইড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়েই আলোচনা করব, জনপ্রিয় ল্যাঙ্গুয়েজগুলো নিয়ে নয়। তো চলুন, শুরু করা যাক।
১) গুগোল গো (Google GO)
গুগোল গো ল্যাঙ্গুয়েজ ২০০৯ সালে সর্ব প্রথম গুগোল অফিসিয়ালি রিলিজ করে। ওপেন-সোর্স প্লাটফর্ম হওয়ায় পরবর্তীতে অনেক ওয়ার্ল্ড ক্লাস সার্ভিসেও গুগোল গো ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ সাউন্ডক্লাউড, নেটফ্লিক্স, ড্রপবক্স ইত্যাদি)। এর এফিসিয়েন্ট মেমোরি ইউজিং, ফাস্ট স্টার্ট আপ টাইম এবং মাল্টিথ্রেডের মাধ্যমে প্যারালাল প্রোসেসিং করতে পারার ক্ষমতা থাকার ফলে, গুগোল গো গত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে।
বাৎসরিক ১,১০,০০০ ডলার এভারেজ স্যালারির জন্য গুগোল গো-কেই হায়েস্ট পেইড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে ধরা যায়। আর আইভিভিটির র্যাংক অনুযায়ী গুগোল গো-ই হায়েস্ট পেইড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। যদিও টেকরিপাব্লিকের র্যাংকিং-এ এটির অবস্থান চতুর্থ।
২) পাইথন (Python)
টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে মেশিন লার্নিং, ইমেজ প্রোসেসিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোসেসিং-এর মত ব্যাপারগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর সেই সঙ্গে পাইথন ডেভেলপারদের চাহিদা বাড়ার রাস্তাটাও প্রসস্থ হচ্ছে। টেকরিপাব্লিকের এই আর্টিকেলটা অনুযায়ী ২০১৭ সাল পাইথনের সাল ছিল বলে তাদের দাবী।
আর সত্যি বলতেও অজস্র বিল্ট-ইন লাইব্রেরি ফাংশন থাকায়, মেশিন লার্নিং, ইমেজ প্রোসেসিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোসেসিং-এর মত ব্যাপারগুলোতে পাইথনের চেয়ে কনভিনিয়েন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ পাওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন। টেকরিপাব্লিকের এই র্যাংক অনুযায়ী পাইথনই এই মুহুর্তে বিশ্বের হায়েস্ট পেইড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। তাছাড়া ইভিভিটির এই র্যাংক অনুযায়ীও পাইথন পৃথিবীর পঞ্চম হায়েস্ট পেইড ল্যাঙ্গুয়েজ।
৩) জাভা (Java)
তালিকায় এরপরে আছে শক্তিশালী অবজেক্ট অরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জাভা। বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই জাভার কোর্স থাকে। বাংলাদেশের কোম্পানীগুলোতেও জাভার চাহিদা খারাপ না। জাভার স্প্রিং ফ্রেমওয়ার্কের ডিমান্ডও বেশ ভাল।
যদিও, বাংলাদেশের কোম্পানীগুলোর স্যালারি দিয়ে আসলে কোনভাবেই বিচার করতে পারবেন না যে, ল্যাঙ্গুয়েজটার বিশ্বব্যাপি চাহিদা কেমন বা এর ডেভেলপারদের স্যালারি কেমন। তবে, যাই হোক, নির্দ্বিধায় জাভা খুবই শক্তিশালী এবং হায়েস্ট পেইড ল্যাঙ্গুয়েজদের লিস্টে থাকা একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। টেক রিপাব্লিকের লিস্টে জাভা তিন নাম্বারে। আর আইভিভিটি-এর লিস্টে জাভা ছয় নাম্বারে।
৪) আর (R)
প্রায় ২৫ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের আগস্টে সর্ব প্রথম অফিসিয়ালি রিলিজ পাওয়া “আর” ল্যাঙ্গুয়েজ গত কয়েক বছর ধরেই হায়েস্ট পেইড ল্যাঙ্গুয়েজের তালিকায় একদম উপরের দিকে আছে। মূলত অটোমেশন আর মেশিন লার্নিং-এর ডিমান্ডই আর-এর চাহিদা বাড়িয়েছে।
ডাটা প্রোসেসিং আর স্ট্যাস্টিক্যাল এনালাইসিসের জন্য “আর” বলতে গেলে সবচেয়ে বেশি কনভিনিয়েন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ। টেকরিপাব্লিকের র্যাংকিং-এ “আর” ২০১৮ সালে হায়েস্ট পেইড ল্যাঙ্গুয়েজের তালিকায় দ্বিতীয়। বিভিন্ন স্ট্যাটাসে ইউজারদের বিহ্যাভিওর এনালাইসিসের জন্য ফেইসবুক “আর” ব্যবহার করে। এছাড়াও, গুগোল, টুইটার, আইবিএম, উবার সহ অনেক টেক জায়ান্ট “আর” ব্যবহার করেন স্ট্যাটিস্টিকাল এনালাইসিসের জন্য।
৫) কোটলিন (Kotlin)
পুরাতন সব ল্যাঙ্গুয়েজের ভীড়ে কোটলিন একেবারেই নতুন একটি ল্যাঙ্গুয়েজ হলেও, এরই মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সুইফটের মত মোবাইল ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ হলেও, কোটলিন ওপেনসোর্স ল্যাঙ্গুয়েজ। ২০১১ সালে সর্ব প্রথম রিলিজ পেলেও, ২০১৮ সালের অক্টোবরে গুগোল অফিসিয়ালি এন্ড্রয়েড-এর সাপোর্ট দিবে বলে ঘোষনা দিলে কোটলিনের জনপ্রিয়তা হঠাৎ করে অনেকটাই বেড়ে যায়।
নেটফ্লিক্সের সিনিয়র সফটওয়্যার ডেভেলপার, রবার্ট ফ্লেচার কোরা-তে তার উত্তরে, কোটলিনের জাভার সাথে ইন্টার অপারেবিলিটি, নাল সেইফটি ইত্যাদি থাকায় উক্তি করেছেন যে, তিনি যদি একটিই জেভিএম ল্যাঙ্গুয়েজ তার ডে-টু-ডে লাইফে ইউজ করেন, তবে সেটা হবে কোটলিন।
টেকরিপাব্লিকের র্যাংকিং-এ কোটলিন হায়েস্ট পেইড ল্যাঙ্গুয়েজ-এর লিস্টে পাঁচ নাম্বারে। আর আইভিভিটি-এর র্যাংকিং-এ আছে ৮ নাম্বারে। পিন্টারেস্ট, কোর্সএরা, ট্রেলো থেকে শুরু করে অনেক টেক জায়ান্টই মোবাইল অ্যাপসের জন্য এর মধ্যেই কোটলিন ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে।
যাই হোক, তো এই ছিল আজকের মত ৫টি হায়েস্ট পেইড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে আলোচনা। তবে, একটা ব্যাপার ঠিক, আপনি যেই ল্যাঙ্গুয়েজেই নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারবেন, সেই ল্যাঙ্গুয়েজই আপনাকে যথেষ্ট পে করবে। সুতরাং, কোন ল্যাঙ্গুয়েজ-এ দক্ষ হতে আমার মনে হয় হায়েস্ট পেইডের লিস্টের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার নিজের প্যাশনের লিস্টটা আগে চেক করে নেয়া।
Leave a Reply