বর্তমান সময়ে বাবা-মায়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বাচ্চাদের স্মার্টফোন আসক্তি দূর করা। বাচ্চাদের দিনের অর্ধেক সময় নষ্ট হয় স্মার্টফোনে। অথচ এই সময়টি তাদের জীবনের জন্য একটি সুন্দর সময়। স্মার্টফোনের আসক্তির কারণে বঞ্চিত হচ্ছে একটি সুন্দর শৈশব থেকে। তবে বাচ্চাদের স্মার্টফোনের আসক্তি দূর করতে, সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে পারে তার পিতা-মাতা।
কমন সেন্স মিডিয়া নামের একটি অলাভজনক সংস্থা কার ভূমিকা কত এ নিয়ে এক জরিপে বলে:
- পিতা-মাতার ভূমিকা – ৮৯%
- বাচ্চাদের নিজের ভূমিকা – ৫%
- স্মার্টফোন কোম্পানির – ২%
- অ্যাপ কোম্পানির – ১%
- অনান্য – ৩%
এরকম জরিপ দেখার পরেও যদি আপনি সর্তক না হন, তাহলে জেনে নিন এই স্মার্টফোন আসক্তি পড়া লেখার বা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আর কি কি কাজ থেকে তাকে বঞ্চিত করছে।
স্মার্টফোনের আসক্তি বাচ্চাদেরকে বঞ্চিত করছে
১. বই পড়া
আপনার বাচ্চাদের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন তারা বইয়ের থেকে বেশী স্মার্টফোনে সময় দিচ্ছে। বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করার সর্বোত্তম উপায় হল বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করা। কিন্তু স্মার্টফোন আসক্তি আপনার সন্তানের অধিকাংশ সময় নষ্ট করায় স্মার্টফোনের স্ক্রিনের পিছনে। আর এইভাবে যদি আপনার সন্তান বইয়ের বদলে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে বেশী সময় দিতে থাকে, তবে এটি তার ভবিষ্যতে শিক্ষার জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে।
আপনি তাদের সাথে বসে মজার এবং আকর্ষণীয় বই পড়েন, বই পড়ে শুনান এবং তাদের পছন্দসই কিছু বই বাছাই করে উপহার দিন। আপনার সন্তানের অলস সময়গুলো চিহ্নিত করে, সেই সময়গুলোতে বই পড়তে উৎসাহিত করুণ।
২. পিতা-মাতা এবং ভাই-বোনদের সাথে সময় কাটানো
পরিবারের সাথে বাচ্চারা সময় কাটাবে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে স্মার্টফোন আসক্তি এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি নষ্ট করে দেয়। একটি বাচ্চার মানুসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা অনেক বেশী। পরিবার থেকে একটি বাচ্চা প্রাথমিক শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা নেয়। কিন্তু স্মার্টফোন এই সময়টিকে নষ্ট করে দেয়।
অনেক সময় দেখা যায়, খাবার টেবিলেও বাচ্চারা স্মার্টফোন স্ক্রিনে মগ্ন থাকে। আর এই স্মার্টফোনের আসক্তির কারণে ভাই-বোনের সাথে সময় কাটানোও হয় না। অর্থ্যাৎ পারিবারিক ভালবাসা থেকে সে ছোট বেলা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে।
৩. বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে সামাজিকতা
বর্তমান সময়ে অনেকে বাচ্চারা স্মার্টফোনে, স্যোশাল মিডিয়া কিংবা ভিডিও গেমের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে সংযুক্ত থাকে। তাদের ভাবের আদান প্রদান হয়ে থাকে ভয়েস কিংবা টেক্সট মেসেজে। এজন্য অবশ্য প্রযুক্তি একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য। তবে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে এর ফলে তারা সামাজিকতা কিংবা সমাজের মৌলিক আনুষ্ঠানিকতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উশৃঙ্খল কিংবা শালীনতাহীন জীবন যাপনের সাথে তারা বড় হচ্ছে। এটা সমাজের জন্য যেমন বড় হুমকি, সেই সাথে আপনার সন্তানের জন্যেও।
৪. বাহিরে খেলাধুলা
স্মার্টফোনের স্ক্রিনের থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সতেজ বাতাস এবং ব্যায়াম বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এর আরও একটা সুবিধা হল, এর ফলে বাচ্চাদের মানসিকতার উন্নয়ন ঘটে এবং স্মার্টফোন আসক্তি দূর করে।
কিন্তু স্মার্টফোনের আসক্তির কারণে বর্তমান সময়ের বাচ্চারা স্মার্টফোনে গেম খেলাটাকেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এর ফলে সময়ের সাথে সাথে তারা অলস হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছে একটি সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে। কাজেই, আপনার সন্তানকে সব সময় গেম খেলা থেকে বিরত রাখার ৪টি উপায় জেনে নিন আর সেগুলো ব্যবহার করে চেষ্টা করুন তাকে অন্যন্যা সৃজণশীল কাজে লাগিয়ে দিতে।
৫. সৃজনশীলতা কিংবা কল্পনা শক্তি হ্রাস
ভিডিও গেম, ইউটিউবে ভিডিও, ফানি অ্যাপ ইত্যাদি নানা উপায়ে বর্তমান বাচ্চারা বিনোদন নিচ্ছে। অথচ এগুলো সাময়িক সময়ের জন্য ফলদায়ক হলেও, দীর্ঘ সময়ের জন্য এর প্রভাব বেশ ভংয়কর।
বাচ্চাদের সৃজনশীল চিন্তার সময়টিকে নষ্ট করছে স্মার্টফোন। কল্পনা করার সময়টুকু তারা ব্যয় করছে স্মার্টফোনের পেছনে।
শেষ কথা
আমাদের জীবনে স্মার্টফোন কিংবা এর সাথে সম্পর্কিত ডিভাইস গুলোর অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন মুহূর্তে মধ্যে শত শত মাইল দূরে বসবাসকারী পিতা-মাতা বা আত্মীয় স্বজনের সাথে সাথে ভিডিও চ্যাট করতে পারি। কিন্তু এর পরেও বাচ্চাদের ডিভাইস ব্যবহার সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে নিষিদ্ধ করতে হবে।
বিল গেটস যদি তার সন্তানদের স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করতে পারে, স্টিভ জবস যদি ১৮ বছরের পূর্ব পর্যন্ত তার সন্তানদের স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করতে পারে। তাহলে আপনি পারবেন না কেন? আপনার এবং সন্তানের জন্যে মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পাবার ১৫টি উপায় জেনে নিন, এ ক্ষতিকর অভ্যাশ থেকে নিজেকে এবং নিজের সন্তানকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
অভিযাত্রী says
বর্তমান সময়ের এই সোশ্যাল মিডিয়া নিয়িন্ত্রিত যুগে আমরা অনেক বেশি ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত। এর পরিনাম আসলেই ভয়াবহ! বর্তমান প্রজন্ম বেড়ে উঠতে অস্বাভাবিক মানসিক বিকাশ নিয়ে। তারা সম্পর্ক, আবেগ ইত্যাদির চেয়ে অনেক বেশি ঝুকে পড়ছে ডিজিটাল ডিভাইসে। ফলে ওরা হয়ে উঠছে অনেক বেশি সহিংস। যেহেতু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির আগ্রাসনকে অস্বীকার করারও উপায় নাই- তাই অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। লেখককে অনেক ধন্যবাদ জানাই এমন একটি লেখা দেওয়ার জন্য।
ওমর ফারুক says
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।