একটি ভালো স্মার্টফোন কিনতে চাইছেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না কিভবে সঠিক ফোনটি পছন্দ করবেন? বাজারের শত শত ফোনের মাঝে দিশেহারা বোধ করছেন। আপনাদের সঠিক ফোনটি নির্বাচনে সাহায্য করার জন্য আমি সানজিদা জামান আবারো হাজির হয়েছি খুব চমৎকার একটি স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইন নিয়ে।
স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইন
এখনকার স্মার্টফোনগুলোতে ক্যামেরা, হাই গ্রাফিক্স ভিডিও গেম, ডকুমেন্ট সেভ এর পাশাপাশি মুভি দেখা এমন কি মাইক্রোসফট অফিস এও কাজ করা যায়। মোট কথায় একের মধ্যে ধরতে গেলে প্রায় সব কিছু। এর এ কারনেই ফোন কেনার আগে সবার এত জল্পনা কল্পনা।
আপাতত সব চিন্তা ভাবনা দূরে সরিয়ে রাখতে আপনাদের জন্য নিচে স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইন দেয়া হল। আসুন জেনে নেই স্মার্টফোন কেনার সময় কোন কোন বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে।
একটি ফোন কেনার আগে নিম্নলিখিত বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরি।
১। বিল্ড কোয়ালিটি
স্মার্টফোনের স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করনে এর বিল্ড কোয়ালিটি সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। বাজারের সমস্ত হ্যান্ডসেট মূলত দুই ধরনের উপাদানে তৈরি – মেটাল এবং প্লাস্টিক।
এছাড়াও কিছু ফোন আছে যেগুলোতে গ্লাস-কোট প্যানেল রয়েছে, তবে তার সংখ্যা খুব কম। যদি এমন হয় যে আপনার ফোনটি হাত থেকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আপনার জন্য পরামর্শ হল মেটাল বা প্লাস্টিক বডির ফোন পছন্দ করা। মেটাল বা প্লাস্টিক বডির ফোন ২-৩ ফুট উঁচু থেকে পড়লেও খুব বেশী একটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।
২। ডিসপ্লে সাইজ
আপনার স্মার্টফোনটি ঠিক কোন কোন কাজে ব্যবহার করবেন তার উপর ফোনের ডিসপ্লের আকার এবং রেজুলিউশন নির্ভর করবে। যদি আপনি নিয়মিত ভিডিও স্ট্রিম, ছবি বা ভিডিও এডিট, অথবা মুভি ডাউনলোড করেন এবং দেখেন, তাহলে ৫.৫ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি, ফুল এইচডি বা কিউএইচডি রেজুলিউশন ডিসপ্লের স্মার্টফোন আপনার জন্য ঠিক হবে।
৬-ইঞ্চি থেকে বড় ডিসপ্লে হ্যান্ডসেটকে অতিরিক্ত ভারী করে তোলে এবং একে হ্যান্ডেল করাও কঠিন। যদি ইমেল পরীক্ষা, চ্যাটিং এবং ব্রাউজিংয়ের জন্য আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে চান, তাহলে ৫ ইঞ্চি থেকে ৫.৫ ইঞ্চির এইচডি বা ফুল এইচডি ডিসপ্লের হ্যান্ডসেটগুলি আপনার জন্য ভাল হবে।
৩। প্রসেসর
একটি স্মার্টফোনের প্রসেসরের ক্ষমতা বিভিন্ন ফ্যাক্টর যেমন OS ভার্সন, UI, bloatware এবং আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসের পৃথক হয়।
যদি আপনি হেভি ইউজার হন যেমন ইমেজ, ভিডিও, অনলাইন ডকুমেন্ট এডিট করেন অথবা হাই গ্রাফিক্সের গেম খেলেন, ভিডিও স্ট্রিম করেন অথবা স্প্লিট স্ক্রিন মোড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন, তাহলে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৫২ বা স্ন্যাপড্রাগন ৮২০-৮২১ প্রসেসরের স্মার্টফোনগুলি আপনার মাল্টিটাস্কিং এর জন্য ভালো হবে। মিডিয়াটেক প্রসেসরের হ্যান্ডসেটগুলি হাল্কা কাজের জন্য ভালো।
৪। ক্যামেরা
মনে রাখবেন, শুধু মেগাপিক্সেল বেশি হলেই স্মার্টফোনের ক্যামেরা ভাল হয় না। ভালো মানের জন্য অনেক স্পেসিফিকেশন যেমন ক্যামেরা অ্যাপারচার, আইএসও লেভেল, পিক্সেল সাইজ, অটোফোকাস এবং আরো অনেক কিছু অপরিহার্য। এই ফিচারগুলো ফন্ট এবং ব্যাক উভয় ক্যামেরার জন্য প্রযোজ্য।
হাই পিক্সেলের মানে হল যে ছবির আকারটি বড়, যা একটি ছোট স্ক্রিনে আরো শার্প হয়ে যায়। একটি ফটোগ্রাফারের কম আলোতে বা দ্রুত শট নেয়া যায় এমন ক্যামেরা প্রয়োজন হতে পারে। তাই ফোন কেনার আগে এই বিষয়গুলোতে লক্ষ্য রাখা জরুরী। দেখে নিতে পারেন সবচেয়ে ভাল ক্যামেরার ১০টি স্মার্টফোন ও সেগুলোর বিস্তারিত স্পেসিফিকেশন।
৫। ব্যাটারি
স্মার্টফোনের ব্যাটারির স্থায়ীত্ব নির্ভর করে সেটটি ব্যবহারের উপর। আপনি যদি হেভি ইউজার হন যেমনঃ অ্যাপ্লিকেশান নিয়ে কাজ করেন, গেম খেলেন, ভিডিও স্ট্রিম করেন তাহলে আপনার জন্য স্মার্টফোনের ব্যাটারি অন্তত ৩৫০০ এমএএইচ এর বা তার বেশি হলে ভালো হয়।
আর যদি আপনি এভারেজ বা লাইট ইউজার হন, তাহলে ৩০০০ এমএএইচ ব্যাটারির একটি হ্যান্ডসেট পুরো দিনটি চালানোর জন্য যথেষ্ট হবে। আর আপনি যদি চান যে, এমন ফোনটিই কিনবেন যেটি ব্যাটারির দিক থেকে সবচেয়ে ভাল, তবে দেখে নিতে পারেন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির সেরা ১০টি স্মার্টফোন।
৬। অপারেটিং সিস্টেম
একটি স্মার্টফোনের অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর হল এর অপারেটিং সিস্টেম। কম্পিউটারে যেমন অপারেটিং সিস্টেম থাকে ঠিক তেমনই প্রতিটা স্মার্টফোনেও থাকে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোনে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম দেয়া হয়ে থাকে। যেমন, অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ, সিম্বিয়াম ইত্যাদি।
তবে সবচেয়ে প্রচলিত এবং বিভিন্ন রকম অ্যাপস সাপোর্ট করতে জনপ্রিয় হল অ্যান্ড্রয়েড। তবে আপনি যে ফোনই পছন্দ করেন না কেন, চেষ্টা করবেন একেবারে নতুন ভার্সনটি কেনার।
৭। স্টোরেজ
স্মার্টফোনের একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছে হ্যান্ডসেটের স্টোরেজটি। ১৬ গিগাবাইট / ৩২ গিগাবাইট / ৬৪ গিগাবাইট ইত্যাদি পরিমাপে হ্যান্ডসেটগুলিতে মেমোরি দেয়া হয়। আপনি যদি আপনার ফোনে খুব বেশী পরিমানে অ্যাপ্লিকেশান রাখতে না চান, তাহলে আপনার ৩২জিবি স্টোরেজের চলতে পারে।
আর অ্যাপ্লিকেশন বেশী রাখতে চায়লে ৬৪ বা ১২৮গিগাবাইট ভেরিয়েন্ট পছন্দ করতে পারেন। আবার ১৬গিগাবাইট স্টোরেজ কিনে মাইক্রো এসডি কার্ড দিয়ে পছন্দমত বাড়িয়ে নিতে পারেন।
৮। এক্সট্রা ফিচার
বেশিরভাগ স্মার্টফোনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক্সট্রা কিছু ফিচার থাকে যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর বা আইরিশ সেন্সর ইত্যাদি। এই নিরাপত্তা টুকু যে কেবল হ্যান্ডসেট লক বা আনলক করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়।
যদিও একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ৫,০০০ টাকার ডিভাইসের মধ্যে পাওয়া যাবে, তবে আইরিশ স্ক্যানারের ডিভাইসগুলি এখনও বেশ অপ্রতুল। ফোনে সাধারনত আমাদের সবচেয়ে ব্যক্তিগত তথ্য থাকে তাই এই ধরনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক্সট্রা কিছু ফিচার সম্বলিত ফোন ভালো হবে।
৯। ওডিও/স্পিকার
স্পিকার এবং এটি থেকে বেরিয়ে আসা অডিওর মানটি হেভি ভিডিও স্ট্রিমিং বা ভিডিও কনফারেন্সগুলির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি এই সুবিধাগুলো পেতে চান তাহলে এমন একটি হ্যান্ডসেট কিনুন যেখানে মুখোমুখি স্পিকার রয়েছে।
যদি আপনি ভিডিও স্ট্রিমিং বা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মত ভারী কোন কাজ না করেন, তবে নিচের-ফায়ারিং স্পিকারগুলির হ্যান্ডসেট আপনার জন্য ঠিক থাকবে এবং স্পিকার পেছনে থাকলেও সমস্যা হবে না।
১০। বাজেট
এইটি হয়ত স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইন এর শুরুতেই আমার বলা উচিৎ ছিল। আসলে আপনি কোন কোন ফিচারগুলিকে পছন্দের তালিকায় রাখবেন, তার পুরোটাই বলতে গেলে নির্ভর করে আপনি কেমন বাজেটের ফোন কিনতে চাইছেন তার উপর।
তাই প্রথমেই আপনার বাজেট ঠিক করে নিন। তারপর দেখুন আপনার বাজেটে কোন কোন ফোনগুলি সহজলভ্য। এবার সেগুলো থেকে পর্যায়ক্রমে বিচার বিশ্লেষন করে পছন্দ করে নিন আপনার কাঙ্ক্ষিত স্মার্টফোনটিকে।
আপনার নির্দিষ্ট্য বাজেটের মধ্যে ভাল স্মার্টফোনটি কেনার জন্য দেখে নিতে পারেন ৬ হাজারের ভেতর ১০টি ভাল স্মার্টফোন, ৮ হাজারের ভেতর ১০টি ভাল স্মার্টফোন এবং ১০ হাজারের ভেতর ১০টি ভাল স্মার্টফোন।
আমার দেয়া স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইন অনুসরণ করে দেখুন আপনার কাংক্ষিত ফোনটি খুঁজে পান কিনা। পেয়ে গেলে এই লেখার নিচে কমেন্ট করে আমাকে জানাতে কিন্তু ভুলবেন না।
Leave a Reply