যেহেতু আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, সেহেতু অবশ্যই আপনি তাদের মধ্যে একজন যারা জানতে আগ্রহী যে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ কি। এটি জানা থাকলে যে কারো জন্যেই নিজেকে এই কাজের জন্যে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা সহজ হয়ে যায়। সেই সাথে এই লাভজনক প্রপেশনে প্রবেশটাও সুন্দর ও সাবলীল হয়।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে এটি আবার লাভজনক প্রপেশন হয় কি করে! তাহলে আপনার জন্যে বলছি, একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার প্রতি ঘন্টায় ১৫ থেকে ৪০ ডলার আয় করতে পারেন। কারো কারো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যারা এই কাজে পুরনো আর এক্সপার্ট, তাদের আয়টা আরো অনেক বেশি।
যদি আপনি এ ব্যাপারে গবেষণা করেন বা ইন্টারনেটে তথ্য সার্চ করেন, তবে আপনি অবশ্যই জানেন যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইন ভিত্তিক লীড জেনারেট করে থাকেন।
বর্তমান সময়ে এ ধরনের মার্কেটার প্রতিটি কোম্পানীর জন্যই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যাকে তাদের অবশ্যই প্রয়োজন। আর তার কাজটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ
স্বাভাবিকভাবেই একজন বিজনেসম্যানের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব বেশি সময় ব্যায় করা সম্ভব হয় না। এ কারণে একজন মার্কেটার নিয়োগ করা তাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রয়োজনে পরিণত হয়। যে কারণে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার যে কোন কোম্পানীর কাছে যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে রয়েছে-
- কোম্পানীকে অনলাইনের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরা।
- নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরী করা।
- নতুন নতুন কাস্টমার তৈরী করা।
- কাস্টমারদের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করা।
- পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সবাইকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ধারণা দেওয়া।
- কন্টেন্ট পাবলিশ করা।
- কাস্টামাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ও অভিযোগ গ্রহণ করে কোম্পানীকে অবহিত করা।
প্লাটফর্ম বাছাই করা:
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারকে সর্বপ্রথমেই তার ক্লায়েন্টের কোম্পানীটি কি ধরনের তার উপর ভিত্তি করে কি কি প্লাটফর্মে মার্কেটিং করা তার জন্য উপযুক্ত সেটি নির্ধারণ করতে হয়। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, লিংকড ইন, ইউটিউব, ইত্যাদির মত বড় বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মসহ বিষয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্লাটফর্মেও একজন মার্কেটার তার ক্লায়েন্টের জন্য পেজ তৈরী করে থাকেন।
পরিকল্পনা গ্রহণ:
ব্যবসায় সফল হতে হলে, এমনকি একজন এসএম ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে হলে এই ৬টি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্ল্যান প্রয়োজন। এটি একজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের জন্যে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই ব্যবসা উন্নয়নের জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসএম ম্যানেজারের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় আমরা যেমনটা ভাবি ঠিক তেমনটা হয় না। সোশ্যাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। দেখা যায় অনেক সময় কাজের আশানুরুপ ফলাফল আসে না। সেক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা এসএম ম্যানেজার আগের কার্যাবলীকে পর্যবেক্ষণ করেন। যদি কোন ভুল থাকে, তাহলে সেগুলিকে সংশোধন করে নতুন নতুন কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকেন।
বাজেট তৈরী করা:
সোশ্যাল মিডিয়াতে ফ্রি এবং পেইড দুই ধরনের প্রমোশনই করা যায়। কোম্পানী ও ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী কি ধরনের মার্কেটিং করা হবে এবং কোনটি কায়েন্টের জন্য বেশি উপযোগী তা এসএম ম্যানেজারকেই নির্ধারণ করতে হয়। এখনকার সময়ে যে কোন কোম্পানীই এ ধরনের মার্কেটিংয়ের জন্য অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত। একজন দক্ষ এসএম ম্যানেজারকে ক্লায়েন্টের মার্কেটিং এর লক্ষ্যের উপর দৃষ্টি রেখে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন বাজেট তৈরী করতে হয়।
কন্টেন্ট তৈরী ও প্রচার করা:
এটি একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার প্রধান দায়িত্ব। প্লাটফর্ম ভেদে একজন মার্কেটার ভিন্ন ভিন্ন কন্টেন্ট তৈরীর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে থাকেন।
অনেকে কন্টেন্ট বলতে শুধুই আর্টিকেলকে বোঝেন। সেক্ষেত্রে এটি জেনে নেওয়া ভালো যে, দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম এমন যে কোন কিছুই কন্টেন্ট হিসেবে বিবেচিত। সেটা আর্টিকেল, ইনফোগ্রাফিক, ভিডিও, মোশন গ্রাফিক্স, এ্যানিমেশন যে কোন কিছু হতে পারে। শুধু দেখতে হবে প্লাটফর্মের ধরণ ও কন্টেন্টের উপযোগীতা।
পোষ্ট শিডিউল করা:
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার সব সময় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রতিদিনের সাধারণ কন্টেন্টের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসের জন্যেও তিনি বিশেষ ধরনের কন্টেন্ট তৈরী করেন যা আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একজন এসএমএম মার্কেটার পুরো সপ্তাহ মাসের কোন দিন কি কন্টেন্ট পাবলিশ করবেন তার জন্য তিনি আগে থেকেই সবকিছু গুছিয়ে রাখেন। আর শিডিউল পোষ্টের মাধ্যমে সেগুলো প্রকাশের দিন ও সময় নির্ধারণ করে দেন।
যোগাযোগ স্থাপন করা:
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ এবং তার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে এই কাজটি দ্বিতীয় স্থান দখল করে নেয়। প্রতিটি কোম্পানীর প্রসার এবং সাফল্য ধরে রাখতে হলে অবশ্যই তাদেরকে বিশ্বস্ত কাস্টমার তৈরী করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন ক্রেতা যারা উক্ত কোম্পানী থেকে সেবা গ্রহণে বা পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া।
আর যারা পুরাতন কাস্টমার তাদের কাছ থেকে পণ্য বা সেবার রিভিউ গ্রহণ করা। যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে সেটি যত দ্রুত সম্ভব কোম্পানীকে অবহিত করার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের দায়িত্ব।
তথ্য বিশ্লেষণ ও রিপোর্ট তৈরী করা:
এসএম ম্যানেজার শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেই মোতাবেক কাজ করেই থেমে থাকেন না। তিনি নির্দিষ্ট সময় পর পর কাজের অগ্রগতি এবং প্রাপ্ত ফলাফলগুলি নীবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তার ক্লায়েন্টকে রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে অবহিত করেন। এর মাধ্যমে ক্লায়েন্টের আস্থা অর্জণ করা যায় এবং ভবিষ্যতেও কাজ পাওয়ার সম্ভাবণা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
আপনিও যদি এ ধরনের কাজ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে উপরের কাজগুলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। একই সাথে আপনাকে কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন-
- ভুল তথ্য সম্বলিত কন্টেন্ট পাবলিশ করা।
- ফেক ট্রাফিক জেনারেট করা।
- ব্লাক হ্যাট এসইও করা।
উপরের কোনটি যদি আপনি করেন, তাহলে আপনি ভিজিটর পেলেও সেটি সাময়িক হবে। আপনার পণ্য বা সেরা ক্রয় করে কাস্টমার যদি সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে সে কোন মতেই দ্বিতীয়বার আপনার পণ্য ক্রয় করবে না। এমনকি অন্যদেরও অনুৎসাহিত করবে।
আমি আশা করছি সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ সম্পর্কে আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পেরেছেন। আরো ভালভাবে জানার জন্যে এবং নিজেকে এ পেশায় দক্ষ করে তোলার জন্যে এই ৫টি ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কোর্স থেকে যে কোনটি করতে পারেন। কিংবা চাইলে একাধিক কোর্সও করে নিতে পারেন। এগুলো যেহেতু সবই অনলাইন, কাজেই কোর্সের জন্যে আপনাকে কোথাও যেতে হবে না।
Leave a Reply