সোশ্যাল মিডিয়া আজকের যুগে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার প্রায় সব চাহিদাকেই পূরণ করে চলেছে। একই সাথে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরাসহ ব্যবসার সম্প্রসারনেও অন্যান্য যে কোন মাধ্যমের চাইতে সোশ্যাল মিডিয়া অনেক বেশি কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত। আর সেই প্রয়োজন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সবার কাছে ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
ফেসবুক, টুইটার, লিংকড ইন ইত্যাদির মত সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তাদের নিজ প্রয়োজনেই ব্যবহার করে থাকেন। সাইটের কন্টেন্ট বা তথ্যসেবা প্রদানের ধরণও একটি অন্যটি থেকে আলাদা হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন ব্যবহারকারীর একাধিক সাইটে অ্যাকাউন্ট থাকতে দেখা যায়। আবার এই মার্কেটিং এর পদ্ধতি বা কৌশলও সাইটভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আসুন অত্যন্ত ইফেক্টিভ এই মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
প্রতি মুহুর্তেই সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় নিত্য নতুন কন্টেন্ট। যার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেক বড় একটি অংশ প্রায় সব সময় সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে সক্রিয় থাকেন। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েই ব্যবসায়ীক প্রচার, সম্প্রসারন করে চলেছে অনলাইন বা অফলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলি। সেই সাথে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হয়ে অনলাইনে আয় করছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি?
এর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। সাইটের ধরণ অনুযায়ী দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরীর মাধ্যমে কোন পণ্য বা বিক্রয়, কোন ওয়েবসাইটের ভিজিটর বৃদ্ধি বা কোন তথ্য প্রচুর পরিমাণ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার পদ্ধতিকেই সাধারণভাবে সোশ্যাল মার্কেটিং বলা যেতে পারে।
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সংক্ষিপ্ত রূপ এসএমএম।
- এটি পুরোপুরি সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক বা ওয়েবসাইটের সাথে সম্পৃক্ত।
- অনলাইন পৃথিবীর প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট Bolt Dot Com।
- সোশ্যাল মিডিয়ার প্রাথমিক নাম ছিল Plato System।
- অনলাইন প্রোডাক্ট প্লাটফর্মের ৩৬% সেলস্ আসে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং থেকে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের পদ্ধতি:
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার ধরণ, কন্টেন্টের প্রকৃতি এবং কোন স্থানে বা কোন এলাকার মানুষকে টার্গেট করে মার্কেটিং করা হবে তার উপর ভিত্তি করে মার্কেটিং কৌশল তৈরী করা হয়। আমাদের দেশে বহুল পরিচিত সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে ফেসবুক, লিংকড ইন, গুগল প্লাস, পিন্টারেস্ট, ইউটিউব ইত্যাদি অন্যতম।
উপরের সাইটগুলির মধ্য হতে ফেসবুক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলেও বর্তমানে ইউটিউবের মাধ্যমেও এই মার্কেটিং এর প্রচলন বাড়ছে। আবার আমাদের পার্শ্ববতী দেশ ভারতে উপরে বর্ণিত সাইটগুলির পাশাপাশি হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার, ইমো, ইন্সটাগ্রাম। আবার আমেরিকাতে রেড্ডিট, রাশিয়াতে ভিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ৫টি মূল পদ্ধতি-
- স্ট্রেটিজি
- প্ল্যানিং এন্ড পাবলিশিং
- লিসেনিং এন্ড অ্যাংগেজমেন্ট
- অ্যানালিটিক্স এন্ড রিপোর্টং
- অ্যাডভার্টাইজিং
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা:
একটা সময় মার্কেটিং জিনিটা শুধুমাত্র পোষ্টার, লিফলেট কিংবা টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেই সময়ের বিজ্ঞাপন পদ্ধতি হিসেবে এগুলি জনপ্রিয়তা পেলেও নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে এই মাধ্যমগুলিতে প্রচারণা চালানো সম্ভব ছিল না।
মোবাইল ডিভাইস এবং ইন্টারনেট সহজলভ্যতা লাভ করার সাথে সাথে এ ধরনের ধ্যান ধারণারও পরিবর্তন হতে থাকে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্মের কল্যানে বিশ্বে প্রতিমুহুর্তে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নখদর্পনে চলে আসতে থাকে। একই সাথে মানুষ এগুলির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত মানুষদের সাথেও পরিচিত হতে থাকে।
ইমেজ শেয়ারিং, ভিডিও শেয়ারিং, চ্যাটিং, ভয়েস কলিং, ভিডিও কলিংসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে কোটি কোটি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে সব সময় সক্রিয় থাকেন। যার ফলে উপযুক্ত কন্টেন্ট এর মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষন করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের মাধ্যমে খুব সহজেই যে কোন ধরনের পণ্য বা সেবা বিক্রয় করার জন্য বর্তমান সময়ের সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হলো এই মার্কেটিং।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীতা
- পরিবার পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা
- ব্যবসার প্রচার প্রসার
- প্রোডাক্ট ও সার্ভিস ব্র্যান্ডিং
- প্রোডাক্ট সেলস্ বাড়ানো
- কাস্টোমারদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি
- ব্লগ কিংবা বিজনেস ওয়েবসাইটের র্যাংকিং ইমপ্রুব
যেসব প্রয়োজনে এসএমএম করতে পারেন:
ইন্টারনেটের এই স্বর্ণযুগে একজন উদ্যোক্তার জন্য অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায়ীক প্রচার ও প্রসার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, শুধুমাত্র আমাদের দেশেই সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০ লক্ষেরও বেশি এবং দিন দিন তা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে এসএমএম যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচার ও প্রসারে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
এসএমএম এর মাধ্যমে যে কোন প্রতিষ্ঠানকে খুব সহজেই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। একই সাথে এর মাধ্যমে যে কোন ওয়েবসাইটেও বিপুল সংখ্যক ট্রাফিক নিয়ে আসা সম্ভব। যার মাধ্যমে কোন পণ্য বা সেবার গুণগতমান সম্পর্কে আগ্রহী ক্রেতাকে তথ্য প্রদান করাসহ পণ্য বিক্রয় করা সম্ভবপর হয়ে থাকে।
একই সাথে এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিক্রয়ত্তর সেবাও প্রদান করা সম্ভব হয়। আপনি যদি কোন পণ্য বা সেবা এভাবে বিক্রয় করে থাকেন, তাহলে পরবর্তীতে আপনি চাইলে ক্রেতা আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে কি ভাবছেন, তিনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না ইত্যাদি জানার মাধ্যমে আপনি ক্রেতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। মার্কেটিং ভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, যেসব প্রতিষ্ঠান যতবেশি ক্রেতাদের বিক্রয়ত্তর সেবা প্রদান করেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রসার তত দ্রুত গতিতে হতে থাকে।
কোন ক্রেতা যদি এই মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা ক্রয় করেন, তাহলে সে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার পণ্য সম্পর্কে ইতিবাচক রিভিউ দেবে। আর এটি অন্যান্য ক্রেতাদেরকেও উক্ত পণ্যটি কিনতে আগ্রহী করে তুলবে। আবার আপনার পণ্য সম্পর্কে যদি কারো কোন তথ্য জানার থাকে, তাহলেও সেটি তাৎক্ষনিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাকে অবহিত করা যায়।
যে কোন ধরনের মার্কেটিং এর মূল্য উদ্দেশ্যই হলো পরিচিতি লাভসহ পণ্য বা সেবা বিক্রয়। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এটি গতানুগতিক অন্যান্য মার্কেটিং বা বিপণন পদ্ধতিগুলোর চাইতে অনেক বেশি কার্যকরী। বর্তমান সময়ে পোষ্টার, ব্যানার, রেডিও, টেলিভিশনে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনগুলির চাইতে সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট খুব দ্রুত সময়ে অনেক বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। আর যে গতিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে তা থেকে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবগুলিও খুব সহজেই অনুমেয়।
Sohan says
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দরভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা জন্য। আমি অনেক কিছু জানলাম এসএমএম সম্পর্কে যা আগে জানতাম না।