কাজপাগল কিংবা যান্ত্রিক জাতি হিসেবে জাপানীদের খ্যাতি (নাকি কুখ্যাতি!) রয়েছে। তবে সারাক্ষণ কাজ এবং কঠিন নিয়ম-কানুনে তাদের জীবন বাঁধা হলেও শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে কিন্তু পিছিয়ে নেই তারা। বিশেষ করে সিনেমা শিল্পের ক্ষেত্রে জাপানীদের ভূমিকা খুবই অগ্রগণ্য।
কিংবদন্তী আকিরা কুরসাওয়ার এর নাম জানেন না, এমন কোন মুভি পাগল লোক পৃথিবীতে নেই। সব ধরণের মুভির পাশাপাশি মানবিক সম্পর্কের আবেগ অনুভূতি নিয়েও মুভি তৈরীতে তারা সমান পারদর্শী। আর রোমান্টিক ধাঁচের মুভিগুলোর ক্ষেত্রে এশিয়ানরা যে সব সময় এগিয়ে থাকে, সেটি তো জানা কথা।
এর আগে আমরা ২০১৮ সালের সেরা ৪টি ইংলিশ রোমান্টিক মুভি নিয়ে লিখেছিলাম যা আমাদের পাঠকরা দারুণ পছন্দ করেছিল। এরপর আবার সেরা ৪টি চাইনিজ রোমান্টিক মুভি নিয়ে লিখেছিলাম যা অনেকের কাছেই ভাল লেগেছে। আজকের আলোচনা চমৎকার কিছু জাপানিজ রোমান্টিক মুভি নিয়ে।
যারা হলিউড কিংবা বলিউডের নানা রোমান্টিক মুভিগুলো দেখে অভ্যাস্ত, তারাও সমান বিনোদিত হবেন এই জাপানিজ চমৎকার মুভিগুলো দেখে।
জাপানিজ রোমান্টিক মুভি
চলুন আর কথা না বাড়িয়ে ঝটপট দেখে নিই, সেরা ৫টি জাপানিজ রোমান্টিক মুভি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। সেই সাথে আপনি ঠিক করে ফেলুন কোনটা দিয়ে আপনি জাপানিজ রোমান্টিক মুভি দেখা শুরু করবেন।
1,778 Stories of Me and My Wife
সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মোমোরু হোশি। এটি বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লেখক তাকু মায়ুমুরার ব্যক্তিগত জীবন অবলম্বনে রচিত।
মুভিটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র অর্থাৎ সায়েন্স ফিকশন লেখকের নাম সাকতারো মাকিমুরা। যে কিনা তার স্ত্রী সেতসোকুকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। কিন্তু হঠাৎ একদিন প্রাণপ্রিয় সেই স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং ডাক্তার তার বেঁচে থাকার সময় বলে দেয় বড়জোর এক বছর! সেই সাথে এটিও বলে দেয়, হাসিখুশি থাকতে পারলে হয়ত তার আয়ু আরও কিছু দিন বেড়ে যেতে পারে।
এটি শোনার পরপরই মাকিমুরা তার স্ত্রীকে হাসিখুশি রাখার জন্য প্রতিদিন গল্প লেখার সিদ্ধান্ত নেন এবং লিখে ফেলেন ১,৭৭৮টি গল্প। এতগুলো গল্প লেখার পরে কী তার স্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন, না মারা গিয়েছিলেন, বা কেমন ছিলো সেই দিনগুলো, তার উত্তর পেতে হলে দেখতে হবে মুভিটির শেষ পর্যন্ত।
২ ঘন্টা ১৯ মিনিটের এই মুভিটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে, তুইওশি কুসানগি এবং ইউকো তাকুচি। ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি এটি জাপানে মুক্তি পায়।
আপনি যদি হৃদয়স্পর্শী পরিণত ভালোবাসার কোন মুভি দেখতে চান, তাহলে দেরী না করে দেখে ফেলুন 1,778 Stories of Me and My Wife.
Norwegian Wood
যারা বই পড়েন বা গল্প উপন্যাস বই এর ব্যাপারে একটু-আধটু খোঁজখবর রাখেন, তাদের কাছে Norwegian Wood একটি পরিচিত নাম। হ্যাঁ, হারুকি মুরাকামির লেখা বিখ্যাত বই Norwegian Wood অবলম্বনেই নির্মিত হয়েছে এই মুভিটি।
বন্ধু কাযুকির মৃত্যুর পর মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়ে তোরু। অন্যদিকে তার ছোটবেলার বান্ধবী যে কিনা কাযুকির প্রেমিকা; সেও দুঃখে হতাশায় আচ্ছন্ন। এরকম একটা অবস্থায় দুই জনের মধ্য কাছে আসা শুরু হয় এবং গল্প এগিয়ে চলে।
ত্রান আঙ হান পরিচালিত এই মুভিতে অভিনয় করেছেন কেনিচি মাতসুয়াম, রিঙ্কো কিকুচি, কিকো মিজুহারাসহ আরও অনেকে। ২০১০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাপানে মুক্তি পায় ২ ঘন্টা ১৩ এই মুভিটি। বক্স অফিসে মুভিটি আয় করে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার।
Heavenly Forest
কলেজের সদ্য ভর্তি হওয়ার প্রথম দিনই মাকোতোর পরিচয় হয় মিষ্টি একটি মেয়ে সিজোরুর। একটু লাজুক স্বভাবের মাকোতোকে সিজোরুর ভালো লাগতে থাকে তার শিশুসুলভ সরলতা আর ব্যবহারের জন্য। Heavenly Forest মুভির শুরুটা হয় এরকমই সাধারণ একটি গল্প দিয়ে। তারপর আস্তে আস্তে দুঃখ, আনন্দ আর পাওয়া না পাওয়ার একটা ত্রিমাত্রিক ভালোবাসার কাহিনীতে জমে উঠে মুভিটি।
Norwegian wood এর মতো এটিও একটি উপন্যাস থেকে নির্মিত। মুভিটি পরিচালনা করেছে তেকহিকো শিনজো। ২০০৬ সালের ৩রা জুন এটি জাপানে মুক্তি পায় এবং আয় করে প্রায় সাড়ে ৬ মিলিয়ন ডলার। ১ ঘন্টা ৫৬ মিনিটের এই মুভিটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন, আইই মিয়াজাকি, হিরোশি তামাকি এবং মাসা ইকুরোকি সহ আরও অনেকে। কাহিনী নির্ভর ছবি যাদের পছন্দ, তারা নিশ্চিন্তে এটি দেখা শুরু করতে পারেন।
My Girlfriend Is a Cyborg
রোমান্টিক, কমেডি এবং সায়েন্স ফিকশন এর একটি মিশ্রণের নাম My Girlfriend is a Cyborg. গল্পটি একটি ছেলের যার বান্ধবী হচ্ছে আধা মানুষ এবং আধা রোবট অর্থাৎ সাইবর্গ। নানারম মজার ঘটনার মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলে তাদের কাহিনী।
মুভিটি ২০০৮ সালের ১২ই মে জাপানে মুক্তি পায়। এটি পরিচালনা করেন কোয়েক জা ইয়ং। পুরো ২ ঘন্টার এই মুভিটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন, কেইসুক কোয়েদ এবং হারুক আইজেস। যারা একটু হালকা ধরণের মুভি বেশি পছন্দ করেন তদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার মুভি।
Crying Out Love in the Center of the World
গতো কয়েক বছরের মধ্য জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় রোমান্টিক মেলোড্রামাটির নাম Crying Out Love in the Center of the World. মুভিটি নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত উপন্যাস Socrates in Love অবলম্বনে, যেটি Norwegian Wood থেকেও বেশি বিক্রিত হয়েছিলো।
এই মুভির কাহিনী নিয়ে কিছু বলব না। শুধু এটুকুই বলব, জাপানিদের রোমান্টিক মেলোড্রামার টেম্পলেট বুঝতে চান, তাহলে এটি অবশ্যই আপনাকে দেখতে হবে।
বক্স অফিসে ৭৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা এই মুভিটি মুক্তি পায় ২০০৪ সালের ৮ই মে, জাপানে। ইশাও ইউকিসাদা পরিচালিতএই মুভিটিতে অভিনয় করেছেন, মিরই মরিয়মা, মাসামি নাগাসওয়া, তাকাও ওসওয়া সহ আরো অনেকে।
জাপানিজ রোমান্টিক মুভি নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের আলোচনা। এই জাপানিজ মুভিগুলো আপনাদের কাছে কেমন লাগল দেখে সেটি কিন্তু আমাদের জানাতে ভুলবেন না; সেই সাথে ভালো লাগলে এই লেখাটিও বন্ধুদের কাছে ছড়িয়ে দিন।
সাজেদুর says
মুভিগুলো যদিও জাপানিজ, আমাদের ভাষায় বোঝা খুব কঠিন, তবু এগুলো অনেক ভাল লেগেছে।
জেসিকা জেসমিন says
ধন্যবাদ, সাজেদুর। আমিও জাপানিজ মুভি দেখতে পছন্দ করি। তাদের মুভিগুলোর মূল বিষয় অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে থাকে।
আতিফ says
খুব ভালো লাগলো জাপানিজ মুভিগুলো সম্পর্কে জেনে।