বেড়াতে গেছেন, অথবা আপনার ল্যাপটপটি আপনার কাছে নেই কিন্তু হঠাৎ করে মনে পড়ল এই মুহুর্তে একটি লেখা বা অ্যাসাইনমেন্ট অথবা একটি প্রেজেন্টেশন শেষ করতে হবে। বন্ধুর একটা ল্যাপটপ আছে হাতের পাশে, কিন্তু পেনড্রাইভও আনেননি সাথে করে! এখন উপায়?
কিংবা ধরুন, হঠাৎ করেই আপনার হার্ডডিস্ক ক্র্যাশ করে বসল! এতোদিনের সব কাজ একমুহুর্তে হাওয়া! হ্যাঁ, আমরা যে কেউই এ রকম আরও অনেক করুণ পরিস্থিতির শিকার হতে পারি। যেটা কোনভাবেই কারো কাম্য নয়।
তবে অভ্যাসের কিছুটা পরিবর্তণ করে যদি প্রয়োজনীয় কাজগুলো আমরা অনলাইনে অর্থাৎ অনলাইন অফিস অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে করি, তাহলে এই ঝুঁকিগুলো থেকে মুক্ত হওয়া খুবই সম্ভব!
অনলাইন অফিস অ্যাপ্লিকেশন
ক্লাউড কম্পিউটিং এর এই যুগে একটি কম্পিউটারে এখন আর বিশাল বিশাল সাইজের গাদা গাদা সফটওয়্যার ডাউনলোড বা ইন্সটল করে রাখার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই পাইরেসি করা সফট্ওয়্যার ব্যবহারের। প্রয়োজন শুধুমাত্র একটি ওয়েব ব্রাউজার আর মোটামুটি গতির ইন্টারনেট সংযোগ। তাহলেই ব্যাক্তিগত প্রয়োজনের টুকিটাকি সব কাজই করতে পারবেন অনলাইনে থাকা ক্লাউড ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন এর সাহায্যে।
আজকে আমরা পরিচিত হব এরকমই পাঁচটি অনলাইন অফিস অ্যাপ্লিকেশন এর সাথে। যার সাহায্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট এর কাজ সহ আরও এরকম বেশ কিছু কাজ করতে পারবেন শুধুমাত্র ব্রাউজার থেকেই।
Google Docs
প্রথমেই গুগল! গুগলের যে সার্ভিসগুলো আমি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি তার একটা হচ্ছে গুগল ডক! গুগলের সার্ভিস নিয়ে বলার কিছু নেই। অনলাইনে ক্লাউড ভিত্তিক যতগুলো অ্যাপ্লিকেশন আছে তার মধ্য আমার কাছে সবচেয়ে সেরা মনে হয়েছে গুগল ডককে।
ফাস্ট এবং একদম স্মুথ এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে পারবেন পুরোপুরি ফ্রিতে। প্রয়োজন শুধু একটি গুগল অ্যাকাউন্ট। গুগল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে চলে যান নিচে থাকা লিংকটিতে অথবা চাইলে গুগল ক্রোম এর হোমপেজ থেকে সরাসরি যেতে পারেন গুগল ডকে।
এখানে একই সাথে মাইক্রোফট অফিস ওয়ার্ড, এক্সেল এবং পাওয়ার পয়েন্টের কাজ করতে পারবেন গুগল ডক, শীট এবং স্লাইড ব্যবহার করে। সবগুলো পাবেন ডকের হোমপেজে থাকা সাইড অপশনে।
যেহেতু এটি একটি অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন তাই যতটুকু কাজ করবেন, ততটুকুই সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সেভ হয়ে থাকবে ড্রাইভে। এর জন্য ড্রাইভে কোন জায়গারও দরকার হবে না। সারাজীবন যতখুশি তত কাজ এটিতে করে ড্রাইভে রেখে দিতে পারবেন।
গুগল ডকে করা কাজগুলো অফলাইনে করার জন্য ডাউনলোড করে নিতে পারবেন *.docx, *.xlsx, *.pptx, *.pdf সহ প্রয়োজনীয় আরও বিভিন্ন ফরম্যাটে। ইপাব বা এইচটিএমএল ফরম্যাটেও সেভ করে রাখা যাবে যে কোন ডকুমেন্ট।
সমস্যার মধ্য শুধু ইচ্ছেমত বাংলা ফন্ট এখানে ব্যবহারের সুযোগ নেই। পাঁচটি নির্দিষ্ট বাংলা ফন্ট ছাড়া বাংলার জন্য অন্য কোন ফন্ট এখানে পাবেন না। তবে যে কোন ছবি থেকে টেক্সট আলাদা করার (ও সি আর) সবচেয়ে বড় সুবিধাটি এর থেকে পাওয়া যাবে সহজেই।
তাছাড়া এখানে রাখা ফাইল আপনি এডিট করতে পারবেন অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকেও, গুগল ডক অ্যাপটি ইন্সটল করে। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য সেরা ৫টি মোবাইল অফিস অ্যাপস্ এর মধ্যে এটি অন্যতম।
Office Online
আপনি যদি মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ড এর একজন নিয়মিত ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে এটি একদম আপনার জন্য। অফলাইন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর সকল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করার সময় একবারের জন্যও অপরিচিত লাগবে না।
এর জন্য নিচের ওয়েব সাইটটিতে গিয়ে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া একেবারেই সহজ। তারপরেই আপনি ৯৯ ডলারের মাইক্রোসফট অফিস প্যাকেজটির সবগুলো প্রোগ্রামের প্রতিনিয়ত আপডেট ভার্সন ব্যবহার করতে পারবেন পুরোপুরি ফ্রিতে এবং কোন রকম ইন্সটল করার ঝামেলা ছাড়া।
ডকুমেন্ট স্টোর করার জন্য পাবেন পাবেন ৫ জিবি ওয়ানড্রাইভ স্টোরেজ। বিল্ট কিছু বাংলা ফন্টও আছে এখানে। আছে ক্রোম ব্রাউজারের এক্সেটেনশন থেকে সরাসরি ব্যবহারের সুবিধা। গুগল ডকের মতো এখান থেকেও ফাইল সেভ করতে পারবেন পিডিএফ সহ অন্যান্য ফরম্যাটে এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ থেকেও এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
Thinkfree
রেজিস্ট্রেশন একটু ঝামেলার মনে হচ্ছে? আচ্ছা, তাহলে রেজিস্ট্রেশন বাদ দিন। সরাসরি নিচের লিংকে চলে যান, তারপরে কাজ শুরু করে দিন। আর কিচ্ছুর প্রয়োজন নেই। তবে হ্যাঁ, কাজ হওয়ার সাথে সাথে সেটিকে ডাউনলোড করে নিতে ভুলবেন না।
যেহেতু রেজিস্ট্রেশন করা নেই, সেহেতু এখানে অনলাইনে স্টোর হয়ে থাকবে না। সেই সুবিধাটুকুর জন্য আপনাকে রেজিস্ট্রেশন অবশ্যই করতে হবে। আর হ্যাঁ, এই অ্যাপ্লিকেশনটি যদি ক্রোম ব্রাউজার থেকে ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনাকে পপ-আপ উইন্ডো সেটিংটি অন করে নিতে হবে।
Zoho Docs
সাইনআপ বা রেজিস্ট্রেশন বেশ ঝামেলার, তবে বিকল্প হিসেবে গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে খুব সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ইন্টারফেস পুরোটাই একটু ভিন্ন ধরণের। কিন্তু তা ইউজার ফ্রেন্ডলী!
এই অনলাইন অফিস অ্যাপ্লিকেশন-টির সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হচ্ছে এর বেশ কিছু ইউনিক কাস্টমাইজেশন ফিচার। ডকুমেন্টের মধ্য কোড লেখা, প্রচুর পরিমাণের ক্যাটাগরি ভিত্তিক ইকুয়েশন, সিম্বল, ফ্লোচার্ট শেপ ইত্যাদি।
এখান থেকেও ইপাব, পিডিএফ, *.docx সহ আরও বেশ কয়েকটি ফরম্যাটে ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন। সাথে অটোসেভ ফিচার তো থাকছেই। ইচ্ছে করলে ডকুমেন্টের অফলাইন মোড চালু করে এতে নেট কানেকশন চলে গেলেও ডকুমেন্ট এডিট করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে ব্রাউজারের ক্যাশ ক্লিয়ার করা চলবে না কিছুতেই।
Only office
স্লো, রেজিস্ট্রেশন করতে হয় আবার বাংলা ফন্টও ভেঙে যাবে, এরকম সমস্যাযুক্ত অনলাইন এডিটর দেখতে চাইলে Only Office থেকে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন! রেজিস্ট্রেশন করা খুবই সহজ। জাস্ট নির্দিষ্ট বক্সে ইমেইল দিবেন এবং তারপর কনফারমেশন মেইলে গিয়ে লিংকে ক্লিক করে মেইলটি কনফার্ম করবেন। ব্যাস!
উল্লেখযোগ্য কোন সুবিধা আমি এতে খুঁজে পাইনি! বাংলা ফন্ট ভেঙে যায় বলে খোঁজার সে রকম ইচ্ছেই আসলে হয়নি। তবুও কেন এটি এখানে লিখলাম? কারণ আপনি আগ্রহী হয়ে এটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলে হয়ত সে রকম কোন ফিচার পেয়ে যেতে পারেন, যেটি খুব কাজের কিন্তু অন্যগুলোতে নেই!
তবে যেহেতু রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, তাই অনলাইন ব্যাকআপ এর সুবিধা এতে আছে। সাথে অন্যগুলোর মতোই ওয়ার্ড, এক্সেল এবং পাওয়ার পয়েন্ট; *.docx, পিডিএফ, এইচটিএমএল সহ বিভিন্ন ফরম্যাটে সেভ করা; ইংরেজিতে ওসিআর এর সুবিধা এতে পাওয়া যাবে।
অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন বিশেষ করে এই অনলাইন অফিস অ্যাপ্লিকেশন সমূহের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এদের জন্য আপনার ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের এক্সট্রা জায়গা খরচ হয় না। সেইসাথে গুগল, মাইক্রোসফট বা অন্যান্য সুরক্ষিত সার্ভারে থাকা এসব অ্যাপ্লিকেশন এবং এখানে স্টোর করা ডকুমেন্ট ভাইরাস বা অন্যকোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকাও নেই।
আর সফট্ওয়্যারগুলো একদম ফ্রি ব্যবহারের সুযোগ থাকায় পাইরেটেড সফট্ওয়্যার ব্যবহার করা থেকেও আপনি বিরত থাকতে পারছেন। তাহলে আর দেরী কেন? ব্যবহার করে আপনার মতামত জানিয়ে দিন কমেন্টে!!
Riazul Islam says
দারুণ কিছু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের সন্ধ্যান দেয়ার জন্যে লেখককে ধন্যবাদ। এগুলো দিয়ে ব্রাউজার থেকেই মাইক্রোসফট্ অফিসের কাজ করা যাবে।