এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য এফিলিয়েট প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হওয়া জরুরী। এখানে সেরা ১০টি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর সঙ্গে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে যেখান থেকে আপনি এক বা একের অধিক প্রোগ্রামের সঙ্গে ট্যাগ হয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয় করতে পারেন।
বিশ্বজুড়ে এখন ছোট বড় প্রায় সব কোম্পানীই তাদের প্রোডাক্ট সেলের জন্য এফিলিয়েট মার্কেটারদের ওপর নির্ভরশীল। আর এফিলিয়েট মার্কেটার এবং কোম্পানীদের সঙ্গে সেতুবন্ধনের কাজটি করে দেয় আমাজন, ইবে, ক্লিক ব্যাংকের মত বিশ্ব বিখ্যাত এফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলো।
মূলত: এই এফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলো পণ্যের ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এতে করে উভয় পক্ষই লাভবান হয়। ধরুণ, আপনি একজন এফিলিয়েট মার্কেটার, আপনার একটি ওয়েবসাই আছে আর এই ওয়েবসাইটটিকে আপনি আমাজন এফিলিয়েট প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। সুতরাং, আপনার ওয়েবসাইটের টপিকের সঙ্গে মিল রেখে আমাজন বিভিন্ন কোম্পানীর প্রোডাক্ট প্রমোশন করবে আপনার ওয়েবসাইটে। আর আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যত পণ্য বিক্রি হবে তার একটা শতকরা অংশ আমাজন আপনার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবে।
অনলাইনে আয় এর ক্ষেত্রে ব্লগার এবং ওয়েবসাইট মালিকদের জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং তুলনামূলকভাবে একটি নির্ভেজাল পদ্ধতি। যেহেতু একজন অ্যাফিলিয়েটর এখানে নিজস্ব পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য নয়, বরং কোম্পানির পণ্যের অ্যাডভারটাইজিং করে সেখান থেকে কমিশন পায় সেহেতু বিনা পুজিতে এমন লাভজনক ব্যবসা খুব কমই আছে।
একজন অ্যাফিলিয়েটরকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যুক্ত হওয়ার জন্য কোন টাকা খরচ করতে হয় না। সম্পূর্ণ ফ্রি সাইন আপ করে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম থেকে আয় করা যায়। অনলাইন জুড়ে এ রকম এফিলিয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে অসংখ্য। সেখান থেকে বাচাই করে সেরা ১০টি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম নিয়ে আজ আলোচনা করা হচ্ছে।
সেরা এফিলিয়েট প্রোগ্রাম
একটা এফিলিয়েট প্রোগ্রাম বা এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে কোম্পানীর প্রোডাক্ট এবং প্রোডাক্ট বিক্রির ট্র্যাকিং, রিপোর্টিং, পেমেন্ট গ্রহণ এবং প্রদানসহ সব ধরণের কাজ করে থাকে। এখানে একজন পাবলিশার বা এফিলিয়েটর হিসেবে আপনি সম্পূর্ন মুক্ত, আপনার পেমেন্ট সিকিউরিট লেভেল শতভাগ। আর পেমেন্টের জন্য রয়েছে ৩টি মডেল বা ৩ ধরনের পদ্ধতি।
১. পে-পার-স্কেল (কস্ট্-পার-সেল)
এটাই হচ্ছে এফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় পেমেন্ট মডেল। এই মডেলের মাধ্যমে একজন এফিলিয়েট মার্কেটার তার নিজের ওয়েবসাইট থেকে এক্সটারনাল লিংকিং এর মাধ্যমে ক্রেতাদেরকে মূলত ব্যবসায়ীর ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে দেয়। এতে করে দেখা যায় শতকরা ৯৯% ভিজিটর ওই ব্যবসায়ীর ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ক্রয় করে। আর প্রতিটা ক্রয়ের বিপরীতেই ব্যবসায়ী এফিলিয়েট মার্কেটারকে কমিশন দিয়ে থাকে।
কমিশনের ক্ষেত্রেও আবার ২টা মডেল রয়েছে। একটা মডেল হচ্ছে পার্সেন্টেজ যেখানে প্রোডাক্টের রেটের উপর ভিত্তি করে এফিলিয়েটর একটা অ্যামাউন্ট পায়। আরেকটা হচ্ছে ফিক্সড্ রেট যেখানে প্রোডাক্টের রেট কম/বেশি যা-ই হোক না কেন, এফিলিয়েট মার্কেটারের সাথে একটা নির্দিষ্ট রেটের চুক্তি হয়ে থাকে। অর্থাৎ, প্রতিটি সেলের জন্যই এফিলিয়েটর একই অ্যামাউন্টের পেমেন্ট পাবে।
২. পে-পার-ক্লিক (কস্ট্-পার-ক্লিক)
এই মডেলটিও এফিলিয়েট প্রোগ্রাম এবং এফিলিয়েট মার্কেটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এফিলিয়েট ব্যবসায়ীক চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় পে-পার-স্কেলের ২য় মডেলটিও অর্ন্তভূক্ত। অর্থাৎ এখানেও আপনি প্রতিটি সেলের জন্য একটা ফিক্সড্ অ্যামাউন্ট পাবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থক্য হচ্ছে, এই মডেলের মাধ্যমে আপনি ব্যবসায়ীর ওয়েবসাইটে যে ক্রেতাদের পাঠাবেন তারা সেখান থেকে পণ্য কিনুক আর না কিনুক আপনাকে আপনার পেমেন্ট দিতে হবে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আপনার যে ফিক্সড্ রেট নির্ধারিত হবে, ব্যবসায়ী আপনাকে সে রেট অনুযায়ী পেমেন্ট দিতে বাধ্য। এখানে বিক্রি হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিক্রি হোক আর না হোক, আপনার তাতে কিছু এসে যায় না। আপনি আপনার পেমেন্ট পাবেন।
৩. পে-পার-লিড (কস্ট্-পার-লিড)
এই মডেলটিও অনেকের কাছেই জনপ্রিয় বিশেষ করে এফিলিয়েট মার্কেটারদের কাছে। ব্যবসায়ীরা সাধারণত এ মডেলে চুক্তি করতে চায় না। কারণ, এই মডেলের নিয়ম হচ্ছে- আপনার ওয়েবসাইট থেকে যত ভিজিটর বা ক্রেতা ব্যবসায়ীর ওয়েবসাইটে যাবে এবং সাইন-আপ বা রেজিস্ট্রেশন করবে তার উপর ভিত্তি করে আপনি ব্যবসায়ীর কাছে থেকে পেমেন্ট পাবেন। এখানে ক্রেতা পণ্য কিনতেও পারে, না-ও কিনতে পারে, উইন-উইন সিচুয়েশন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে, কিভাবে এখান থেকে আয় হয় আর কোন কোন মডেলের মাধ্যমে এফিলিয়েট প্রোগ্রামের সাথে আপনি চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন, তার সবই আপনার জানা হয়ে গিয়েছে। সুতরাং, আপনার যদি একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে থাকে তো আজই নিচের যে কোন এফিলিয়েট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে যান।
১। Clickbank
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য এই নেটওয়ার্কটিকে রীতিমত বিশাল বলা চলে এবং এটা প্রায় ১৭ বছর ধরে রাজত্ব করে চলেছে। এটা ডিজিটাল তথ্য সম্বলিত পণ্যের প্রতি গুরত্বারোপ করে। Clickbank এ প্রায় ৬ মিলিয়ন স্বতন্ত্র পণ্য রয়েছে এবং সারা পৃথিবী জুড়ে এর কাস্টমার সংখ্যা প্রায় ২০০ মিলিয়ন।
২। LinkShare
প্রায় ১০ মিলিয়ন অ্যাফিলিয়েট পার্টনারশিপের সমন্বয়ে গঠিত এই নেটওয়ার্কটি সবচেয়ে বড় অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০১২ সালে শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম, সাপোর্ট কোয়ালিটি এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতার জন্য এটি প্রথম ২০ টি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কের মধ্যে ব্লু বুকে প্রথম স্থান অর্জন করে নিয়েছিল।
LinkShare ২,৫০০ এর ওপরে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম অফার করে, এর মধ্য থেকে আপনি আপনার পছন্দ মতো যেকোন একটি নিয়ে কাজ করতে পারেন। অথবা কোম্পানির সার্ভিস এবং সাপোর্ট অপশন ব্যবহার করে নিজস্ব প্রোগ্রাম পরিচালনা করতে পারেন।
৩। Commission Junction
সারা বিশ্বে পরিচালিত হলেও এটাকে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক হিসেবে ধরা হয়। ব্যাবসায়ী, নেটওয়ার্ক এবং অ্যাফিলিয়েট এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ২০১২ সালে সেরা ২০টি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কের মধ্যে এটি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
৪। Rakuten
সরাসরি বলতে গেলে Buy.com, Rakuten.com অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে অনেকটা দৈত্যাকৃতি ধারণ করেছে। প্রথম সারির ৩টি কমার্স কোম্পানির মধ্যে Rakuten একটি। ৩৮,৫০০ দোকানির কাছ থেকে প্রায় ৯০,০০০ এর বেশি পণ্য নিয়ে এটি পরিচালিত। এর কাস্টমার সংখ্যা ১৮ মিলিয়নেরও বেশি।
৫। ShareaSale
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্কে ShareaSale আছে প্রায় ১৫ বছর ধরে। এর টেকনোলজি গতি, দক্ষতা এবং সর্বোপরি যথাযথতার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে।
৬। Amazon Aassociation
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্কে Amazon.com কে নতুন করে পরিচয় করে দেয়ার কিছু নেই। এটা আমেরিকার একটি ইলেকট্রনিক কমার্স কোম্পানি যার হেডকোয়ার্টার ওয়াশিংটনের সিয়েটলে। আমেরিকার ইন্টারনেট ভিত্তিক রিটেইলারের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড়।
৭। eBay
অনেক মার্কেটারই e.Bay সম্পর্কে এখনো অবগত নয়। অথচ এটা প্রায় ২০ বছর ধরে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সাথে জড়িত। eBay Partner Network ফার্স্ট ক্লাস টুলস, ট্র্যাকিং, রিপোর্টিং সরবরাহ করে।
৮। Avangate
এটা ডিজিটাল কমার্স অ্যাফিলিয়েট নেটওযার্কিংয়ের সাথে জড়িত। এর প্রধান লক্ষ্য অনলাইন কমার্স, সাবসক্রিপশন বিলিং, গ্লোবাল পেমেন্ট সফটওয়ার, SaaS এবং অনলাইন সার্ভিস কোম্পানি। ১৮০ টারও বেশি দেশে প্রায় ৪০০০ ডিজিটাল বিজনেস ( Absolute Software, Bitdefender, Brocade, FICO, HP Software, Kaspersky Lab, Telestream, Spyrix, Clever control ইত্যাদি) নিয়ে এটি পরিচালিত।
৯। RevenueWire
RevenueWire গ্লোবাল কমার্স প্ল্যাটফর্মের কোম্পানিগুলো ( যেমন : Clickbank) যারা ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করে তাদের জন্য গঠিত। প্রায় ১২০টি দেশে এটার মজবুত প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
১০। Avantlink
Avantlink অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্কে ইন্ডাস্ট্রি লিডিং টেকনোলোজিতে এগিয়ে। এর অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানের ওপর গুরত্বারোপ করা হয়। এখানে নতুন নতুন টুলসের সমারহ সর্বদাই চলতে থাকে।
উল্লিখিত অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কগুলো ছাড়াও অনলাইন জুড়ে আরো অনেক অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক রয়েছে। আপনার খুঁজে নেয়ার সুবিধার্থে এখানে বাছাইকৃত ১০টি নিয়ে আলোচনা করা হলো। পছন্দ মতো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগদান করে একজন সফল অ্যাফিলিয়েটর হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার।
Leave a Reply