বাংলাদেশের সরকারি বীমা কোম্পানী মাত্র ২টি। আর বেসরকারি বীমা কোম্পানী রয়েছে অনেক। সরকারি দুটি কোম্পানীর মধ্যে একটি ইচ্ছে লাইফ এবং অন্যটি হচ্ছে নন-লাইফ। একটির নাম জীবন বীমা কর্পোরেশন আর অন্যটির নাম সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। আর দু’টি কোম্পানীই সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় ও জনগণের জন্যে নানা রকম কার্যক্রম চালায়।
সরকারি বীমা কর্পোরেশনের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে আজীবন বীমা যার আরেক নাম দীর্ঘমেয়াদী বীমা। এ বীমার আওতায় গ্রাহক তার জীবদ্দশাতেই বীমার লাভ পেয়ে যান। কিংবা জীবনাবশানের পর তার উত্তরসূরীরা লাভ পেয়ে থাকেন।
এরপর রয়েছে মেয়াদী বীমা যা একটি নির্দিষ্ট্য সময়ের জন্যে করা হয়ে থাকে। আর সময় শেষ হয়ে গেলে এ বীমার গ্রাহক তার লাভ পেয়ে থাকেন। এছাড়া রয়েছে একক ও যুগ্ন বীমা, আছে দ্বৈত নিরাপত্ত মেয়াদী বীমা পলিসি। রয়েছে প্রগতিশীল ও প্রত্যাশিত বীমা পলিসি। আরো আছে স্বাস্থ্য বীমা, ম্যারেজ বীমা, ওভারসিস বীমা, প্রবাসী বীমা, ইত্যাদি।
সরকারের সহযোগীতায় পরিচালিত জীবন ও সাধারণ দুটি বীমা থেকেই উপরোক্ত সেবাগুলো পাওয়া যাবে। এবার আসুন এ দু’টি বীমা সম্পর্কে আলাদা করে বিস্তারিত জানা যাক-
সরকারি বীমা কোম্পানী
১. জীবন বীমা কর্পোরেশন
ব্রিটিশদের করা ১৯৩৮ সালের ইন্সুরেন্স অ্যাক্ট আর ১৯৫৮ সালে জারী করা ইন্সুরেন্স রুলস্ এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ সরকারের জীবন বীমা কর্পোরেশন। সময়টা ছিল ১৯৭৩ সাল। তখনকার সময়ে ১৫ কোটির চেয়ে কিছু বেশি টাকার ঘাটতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানীটিই বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বীমা কোম্পানি।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের এই বীমা কোম্পানীর চেয়্যারম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ড. সেলিনা আফরোজা। এর আগে তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসের ৮ তারিখে তিনি এখানে জয়েন করেন এবং এই দুই বছরে তিনি জীবন বীমা কর্পোরেশনকে অনেক দূর এগিয়েছেন।
সরকারের এই বিশেষ বীমা কোম্পানীতে যে স্কিমগুলো রয়েছে, সেগুলো হল-
আমৃত্যু জীবন বীমা যা মৃত্যু পর্যন্ত গ্রাহককে লাভ পৌঁছাতে থাকবে। পেনশন স্কিম বীমা যা সরকারি এবং বেসরকারি উভয় পর্যায়ের চাকরিজীবিদের জন্যে অত্যন্ত লাভজনক একটি বীমা। আবার দলগত পেনশন বীমা স্কিমও রয়েছে সব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবিদের জন্যে। গ্রামে বসবাসরত সাধারণ মানুষদের জন্যে রয়েছে গ্রামীণ বীমা।
জীবন বীমা কর্পোরেশনে একক বীমার পাশাপাশি গ্রুপ বা যুগ্ন বীমাও করা যায়। শিশুদের জন্যেও রয়েছে দুইটি বীমা পলিসি। একটি হচ্ছে শিশু প্রতিরক্ষা বীমা আর অন্যটি হচ্ছে শিশুদের পলিসির মূল্য পরিশোদ ভিত্তিক বীমা।
২. সাধারণ বীমা কর্পোরেশন
বাংলাদেশ সরকারের মাত্র একটিই নন-লাইফ বা সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আর সেটি হচ্ছে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। এটি নিয়ন্ত্রণ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং তত্ত্বাবধানও করে থাকেই একই প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার ২ বছর পরে ১৯৭৩ সালে এই কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয় ১৯৭৩ এর বীমা কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী।
বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র নন-লাইফ এই বীমা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। আর পুরো প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্যে চেয়্যারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম যিনি ৭ সদস্য বিশিষ্ট্য পরিচালনা পরিষদের প্রধান।
বাংলাদেশের বীমা বাজারটি অনেক বড় আর এর প্রায় ২০ শতাংশই সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অধীনে রয়েছে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সেবাসমূহের মধ্যে যে সকল স্কিম রয়েছে, সেগুলোর কয়েকটি হল-
অগ্নিবীমা যা মূলত বাড়ি কিংবা অফিস কিংবা কল-কারখানার জন্যে করা হয়ে থাকে। কোন প্রতিষ্ঠানের আওতায় এই বীমাটি করা থাকলে, প্রতিষ্ঠানটি আগুনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলে সাধারণ বীমার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকে। এরপর রয়েছে নৌ-বীমা যা নৌ-যান (যেমন লঞ্চ, স্টিমার, ইত্যাদি) ব্যবসায়ীদের জন্যে অত্যন্ত উপকারী ও লাভজনক। আরো কিছু বীমার মধ্যে রয়েছে মোটরযান বীমা এবং আরেকটি উল্লেখযোগ্য বীমা হচ্ছে শস্য বীমা।
যাইহোক, সরকারি বীমা কোম্পানী সম্পর্কে জানলেন। এবার আপনার সুবিধা মতো সরকারের এই দু’টি বীমা কোম্পানী থেকে সেবা নিতে পারেন। আর লেখাটি বীমা সম্পর্কে কৌতুহলী বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন।
Dalim says
আমিও টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছি, হিসাববিজ্ঞান বিভাগে।
গোপাল চন্দ্র অধিকারী says
আমি একজন ড্রাইভার, ২০০৯ সাল থেকে চাকরি করি, বেসরকারি।
সরল মানুষ says
বীমা নিয়ে ভিন্ন রকম পোস্ট, যা থেকে সরকারি ও দরকারি দুইটি কোম্পানী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেল।