ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং ক্যামেরা লেন্স এর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কোম্পানি হল ক্যানন। ক্যাননের তৈরী করা অনেক মডেলের ক্যামেরা এবং ক্যামেরা লেন্স রয়েছে বাজারে। তবে এবার তারা বাজারে এনেছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ক্যামেরা লেন্স যার ব্যবহার দেখা যাবে এবারের অলিম্পিক গেমস এ।
সাধারনত টিভি ব্রডকাস্টিং কিংবা বিভিন্ন খেলার মাঠে ফটোগ্রাফারদের কাছে আমরা যে ক্যামেরা লেন্সগুলো দেখে থাকি তার দাম ১০হাজার ডলার এর কাছাকাছি থাকে। তবে এবার যে ক্যামেরা লেন্সটি তারা নিয়ে এসেছে তা অন্য সব ক্যামেরা লেন্স এর দামকে ছাড়িয়ে গেছে।
সবচেয়ে দামি ক্যামেরা লেন্স
Canon Digisuper 27 Lens মডেল এর এই ক্যামেরা লেন্সটির দাম ধরা হচ্ছে প্রায় ২০০,০০০ ইউএস ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ৬৫ লক্ষেরও বেশি!
প্রায় ৬০ পাউন্ড ওজনের এই ক্যামেরা লেন্সটি পাশে ১০ ইঞ্চি এবং লম্বায় প্রায় ২৪ ইঞ্চি এর মত। বাইরে থেকে সাধারণত এটিকে কেউ ক্যামেরা লেন্স নাও ভাবতে পারে, কারণ এটি দেখেতে একটি বক্স এর মত। তবে এর ভেতরে রয়েছে অসংখ্য এলিমেন্ট (কাচের লেন্স)। যখন আলো এর এর সামনের লেন্সে এসে পড়ে তখন এই এলিমেন্টগুলো আলোর প্রতিসরণ ঘটায়। এর ফলে এটি সঠিক ভাবে ফোকাস করতে ক্যামেরাকে সাহায্য করে থাকে।
CANON DIGISUPER 27 LENS
ক্যানন কোম্পানির ইমেজিং টেকনোলজি এবং কমিউনিকেশনস এর জ্যেষ্ঠ সদস্য ল্যারি থ্রোপ এর কাছ থেকে এই ক্যামেরা লেন্স সম্পর্কে আরও যা জানা যায়, এই ক্যামেরা লেন্সটির জন্য তারা সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ৪০ টি এলিমেন্ট ব্যবহার করেছেন। সধারন মানুষ এর বুঝার সুবিধার জন্য তিনি আরও জানান যে, আমরা যে জটিল ক্যামেরা লেন্স ব্যবহার করে থাকি (যেমন প্রাইম লেন্স) সেগুলোতে ১০টির বেশি এলিমেন্ট ব্যবহার হয় না।
ক্যামেরার লেন্স আলোর প্রতিসরণ ও বিচ্ছুরণকে ব্যবহার করে কাজ করে থাকে। তাই সামান্য ভুল হলে তা পুরো ছবিটিকেই নষ্ট করে দিতে পারে। বিষয়টি বুঝতে হলে আলোর প্রিজম প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। আলোর প্রিজম প্রতিক্রিয়া হল একটি সাদা আলোর রেখা যখন প্রিজম এর মধ্যে দিয়ে যায়, তখন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। এর ফলে ওই সাদা আলো সাতটি রঙ এ ভাগ হয়ে যায়। আর প্রতিসরণ হল আলো যখন কাঁচের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন আলোর গতিপথ সামান্য বেঁকে যায়।
আলোর এই বিচ্ছুরণ ও প্রতিসরণ বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখে ক্যাননের এই লেন্সটিতে বেশি সংখ্যক এলিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বেশি পরিমাণে আলো প্রবেশ করতে পারে। সাধারণত বক্স লেন্সগুলোর অ্যাপারচার বেশি হয়ে থাকে। এ কারণে এই লেন্সগুলোতে বেশি পরিমাণে আলো প্রবেশ এর সুযোগ থাকে। Canon Digisuper 27 Lens ক্যামেরার ওয়াইড আঙ্গেল লেন্স সেটিং এর কারনে এর অ্যাপারচার সাধারণের চেয়ে বেশি হবে। যার ফলে এর মধ্যে আলো যথেষ্ট পরিমাণে প্রবেশ করতে পারবে এবং স্পষ্ট ছবি তুলতে সাহায্য করবে।
জুমিং সুবিধা
এই ক্যামেরা লেন্সটির আকাশ ছোঁয়া দামের আরেকটি কারণ হল এর জুমিং সুবিধা। একটি সাধারন ডিএসএলয়ার ক্যামেরা দিয়ে যেখানে ৩ গুন বা ৪ গুন জুম করা যায়, সেখানে এই লেন্স দিয়ে ৮৬ গুন পর্যন্ত জুম করা সম্ভব! কারণ এই ক্যামেরার ফোকাস লেন্থ হল ৯ এমএম- ৮০০ এমএম।
এছাড়াও জুমিং সুবিধা আরও বাড়ানোর জন্য এতে বিল্ট-ইন হিসেবে ফোকাস লেন্থ বর্ধক ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে এর ফোকাস লেন্থ ১৮এমএম থেকে ১৬০০ এমএম পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে আপনি যদি স্টেডিয়াম এর এক প্রান্তে থাকেন, তাহলে এর আরেক প্রান্ত থেকেও এই ক্যামেরা লেন্স এর সাহায্যে আপনাকে স্পষ্ট দেখা যাবে।
রেজুল্যুশন
আমরা সব সময়ই নিখুঁত ছবি দেখতে পছন্দ করি। তাই চলচ্চিত্র জগতে এখন 4k ভিডিও তৈরীর ধারা শুরু হয়েছে। 4k ভিডিও হল সবচেয়ে আধুনিক মান সম্পন্ন ভিডিও যাতে পিকচার কোয়ালিটি থাকে খুবই উঁচু মানের এবং ছবিটি হয় পুরো এইচডি কোয়ালিটির।
তাই এই ক্যামেরায় জুমিং এর পাশাপাশি আরও যে দিকে খেয়াল রাখতে হয়েছে তা হল এর রেজুল্যুশন। ব্রডকাস্টিং ক্যামেরার ক্ষেত্রে এর রেজুল্যুশন অনেক গুরুত্বপুর্ণ। কারণ ঘোলাটে ছবি কেউই দেখতে পছন্দ করে না। এর সমাধান হিসেবে এই ক্যামেরা লেন্সে একটি সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে যা অধিক পরিমাণ পিক্সেল একটি ছোট জায়াগায় আবদ্ধ করতে পারে। এর ফলে আমরা আরও নিখুঁত ছবি দেখতে পারব।
সিম্যুলেশন
ক্যামেরা লেন্সটি সঠিকভাবে তৈরী করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য কম্পিউটার সিম্যুলেশন ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এই লেন্সটি সঠিকভাবে ব্যবহার এর আগে সিম্যুলেশন ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করতে হয়। কারণ চাইলেই এই লেন্সটিকে বদলে ফেলা সম্ভব না এর আকাশছোঁয়া মুল্যের কারণে।
লেন্সটির ব্যবহার পদ্ধতি
ক্যাননের এই ক্যামেরা লেন্সটির ব্যবহার খানিকটা জটিল। কারণ এর ম্যানুয়ালি কন্ট্রলিং সিস্টেম এর দু’পাশেই থাকে। অর্থাৎ এই লেন্সটিকে ব্যবহার করতে হলে দুই হাতই একজন অপারেটর এর ব্যবহার করতে হবে। এক হাত দিয়ে জুমিং এবং আরেক হাত দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় ক্যামেরার ফোকাসিং।
কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এটিকে অটমেটিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব। এর ভেতরে একটি কম্পিটার সিস্টেম দেয়া হয়েছে যা দিয়ে দূরে থেকেও রিমোট এর মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে ম্যানুয়ালি এই লেন্সের নিয়ন্ত্রণ করার কারণ হল কোন দুর্গম এলাকায় যদি নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলেও যাতে এই লেন্সটিকে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
ক্যামেরার জগতে ক্যানন কোম্পানির সবচেয়ে দামি ক্যামেরা লেন্স নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আরো যে অনেক সাড়া ফেলবে এটি তা অনুমান করাই যায় এর দুর্দান্ত ফিচারগুলোর জন্য। ক্যানন এর এই ক্যামেরা লেন্সটি আসলেই ক্যমেরা জগতের বিস্ময়। আশা করি প্রযুক্তির এই বিস্ময় আরও ঘটুক আর সে সকল বিস্ময় ব্যবহার্য হয়ে উঠুক আমাদের জীবনে।
Leave a Reply