কম্পিউটার কেনার আগে ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ – এই সংশয়ে পড়েন অনেকেই। কালের বিবর্তনে ডেস্কটপের আকার আগের থেকে অনেক ছোট হলেও এটি বহনযোগ্য নয়। অপরদিকে ল্যাপটপ বহনযোগ্য। এছাড়াও একেকজনের কাছে চার্লস ব্যাবেজ কর্তৃক আবিষ্কৃত এই যন্ত্রটির চাহিদা একেক রকম। ফলে, অনেকেই এই প্রয়োজনীয় ডিভাইসটি কিনতে গিয়ে সংশয়ে পড়েন, বুঝতে পারেন না কোনটি কেনা ভাল হবে।
কম্পিউটার কেনার সময় যেসব জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়, তার মাঝে ল্যাপটপ আর ডেস্কটপ থেকে যে কোন একটি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য কম্পিউটার হিসেবে ল্যাপটপের যেমন কিছু সুবিধা-অসুবিধা আছে, তেমনই ডেস্কটপের আছে কিছু ভাল-মন্দ দিক।
আপনি চাইলে দুটো কম্পিউটারই কিনে ব্যাবহার করতে পারেন। তবে আপনাকে যদি বাজেট স্বল্পতার কারণে যে কোনো একটি বেছে নিতে হয় এবং আপনি দ্বিধায় থাকেন, তবে হৈচৈ বাংলায় আমার এই প্রথম পোস্টটি আপনার জন্যেই। এই পোস্ট পড়ে আপনি আজ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে ল্যাপটপ আর ডেস্কটপের মাঝে কোনটি আপনার জন্যে ভাল হবে।
ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ – কোনটি কিনবেন?
উদ্দেশ্য বা কারণ বিবেচনা করুন
কম্পিউটার কেনার পুর্বে আপনাকে প্রথমে আপনার উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে। আপনি কম্পিউটারে কি ধরনের কাজ করতে চান, সেটা ভাবুন। আপনার কাজের ধরণের উপরেও নির্ভর করবে আপনার জন্যে কোনটা ভাল হবে। যেমন আপনি যদি একজন গান পাগল মানুষ হন এবং হাই-ভলিউমে গান শুনতে পছন্দ করেন, তবে আপনার জন্যে ডেস্কটপ ভাল হবে। কারণ, আপনি নিশ্চয়ই ল্যাপটপের সঙ্গে আপনার হাই-কনফিগারেশনের সাউন্ড বক্স নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন না।
আবার, আপনি যদি একজন সৌখিন মানুষ হন, কোন রকম প্রপেশনাল কাজের জন্যে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা বোধ না করেন, তবে আপনার জন্যে একটি চিমচাম লেপটপই ভাল। একইভাবে, আপনি কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবুন, ঠিক করুন যে ধরণের কাজে ব্যবহার করতে চান, তার জন্যে ডেস্কটপ নাকি লেপটপ ভাল হবে।
বিবেচনায় রাখুন বহন করার সুবিধা
আপনার কি কম্পিউটার বহন করার সুবিধা দরকার? আপনার কি প্রায়ই এমন প্রয়োজন হতে পারে যে, কোন মিটিংয়ে জয়েন করার জন্যে কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে যাতে আপনার অনেক দরকারি ফাইল থাকবে? আপনাকে প্রায়ই ব্যবসায়ীক কাজে বাইরে যেতে হয়? জার্নিতে থাকা অলস সময়টাকেও কাজে লাগিয়ে দিতে চান?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয়, তবে আপনার জন্যে ল্যাপটপ ভাল। আর যদি উত্তর হয় “না” অর্থাৎ এসবের কোনটিই আপনার দরকার নেই, তবে আপনি ডেস্কটপের কথা ভাবতে পারেন।
আবার এমন কিছু মানুষ আছেন যারা এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। একবার বসে কাজ করেন তো আবার শুয়ে পড়েন। অর্থাৎ, আরামের সঙ্গে কাজ করতে ভালবাসেন। আপনিও যদি এ রকম আরামপ্রিয় মানুষ হন অর্থাৎ শুয়ে-বসে, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে কম্পিউটারে কাজ করতে চান, তবে ল্যাপটপের বিপরীত ভাবনা আপনার জন্যে মোটেই ভাল হবে না।
বাজেট বিবেচনা বুদ্ধিমানের কাজ
বাজেট নিয়ে ভাবার মতো কোন ব্যাপার যদি আপনার বেলায় না থাকে, তবে ল্যাপটপ নেয়াই ভাল। অর্থাৎ, যে কোনও দামে কম্পিউটার কেনার মতো সামর্থ থাকলে, হাই-কনফিগারেশনের একটা ল্যাপটপ কিনতে পারেন। আর যদি বাজেট সমস্যা থাকে কিংবা সমস্যা না থাকলেও আপনি কম বাজেটের মধ্যেই কম্পিউটার কিনতে চান, তবে ডেস্কটপ দেখুন। কারণ, ল্যাপটপের তুলনায় ডেস্কটপের দাম কম হয়ে থাকে।
আবার বাজেট কম হলে যে ল্যাপটপ কিনতে পারবেন না, এমন নয়। কম বাজেটেও ভাল মানের ল্যাপটপ কিনতে পারবেন। ২০-২৫ হাজার টাকার ভেতর ৫টি ভাল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ থেকে কিনে নিতে পারেন পছন্দেরটি।
প্রসেসর স্পিড নিয়ে ভাবুন
প্রসেসরের স্পিড বেশি হলে, কম্পিউটারের ওভারঅল পারফর্মান্স ভাল হয়। ডেস্কটপের প্রসেসর ল্যাপটপের প্রসেসরের তুলনায় সাধারণত একটু বড় আকৃতির হয়ে থাকে। তবে শুধু আকৃতিতেই না, ডেস্কটপের প্রসেসর ল্যাপটপের থেকে শক্তিশালীও হয়ে থাকে। ডেস্কটপের জন্য অনেক নতুন ও আধুনিক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসর এখন মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে।
অবশ্য কিছু গেইমিং ল্যাপটপেও আধুনিক ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর পাওয়া যাচ্ছে এখন। তবে সেগুলোর মুল্য ডেস্কটপের থেকে অনেক বেশী। আপনি যদি কম্পিউটারে অনেক ভারী কাজ করার প্ল্যান করে থাকেন, তবে আপনার বড় এবং বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর দরকার। আর সেক্ষেত্রে ডেস্কটপ ভাল। আর যদি সাধারণ আর হালকা কাজের জন্যে কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়, তবে ল্যাপটপ।
যন্ত্রাংশ সংযোজন সুবিধা
ডেস্কটপ কম্পিউটারের একটা বিশেষ সুবিধা হলো আপনি ইচ্ছামতো এতে যন্ত্রাংশ আলাদাভাবে লাগাতে পারবেন। পরবর্তীতে যদি আপনি আপনার কম্পিউটারকে আপগ্রেড করতে চান, তাহলে আপনি যে কোনো যন্ত্রাংশ ইচ্ছামতো পরিবর্তণ করে নতুন যন্ত্রাংশ লাগিয়ে আপনার কম্পিউটারকে আপগ্রেড করতে পারবেন।
অপরদিকে ল্যাপটপ ক্রয় করার ক্ষেত্রে আপনাকে সমস্ত কনফিগারেশন ভালভাবে চিন্তা ভাবনা করে কিনতে হবে। কারণ, ল্যাপটপের যন্ত্রাংশ আপনি ইচ্ছামতো পরিবর্তণ করতে পারবেন না। খুব বেশী হলে আপনি র্যাম এবং হার্ড ডিস্ক পরিবর্তণ করতে পারবেন। কারণ, ল্যাপটপের যন্ত্রাংশের বেশিরভাগই বিল্ট-ইন।
গেইমিং ও হার্ড ইউজ
গেইমিং এর ক্ষেত্রে বলতে গেলে ল্যাপটপ খুব একটা পিছিয়ে নেই। বর্তমান বাজারে বেশ কিছু গেইমিং ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন। তবে সেগুলো ডেস্কটপ কম্পিউটারের সাথে খুব একটা পেরে উঠবে না। সত্যি কথা বলতে ডেস্কটপ কম্পিউটারের হাই-এন্ড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো আপনাকে গেইমিং এর এক অন্যরকম স্বাদ দিবে যা ল্যাপটপ কম্পিউটারে খুব একটা পাবেন না। আর পেলেও সেগুলোর মুল্য ডেস্কটপের থেকে কয়েক গুন বেশী। আর হার্ড ইউজের ক্ষেত্রেও ডেস্কটপ কম্পিউটার এগিয়ে থাকবে।
ওভারঅল সুবিধা
পার্ফরমেন্সের কথা বাদ দিলে ল্যাপটপের বেশ কিছু সুবিধা আছে। সহজেই বহনযোগ্যতা, আকারে ছোট, ইন্টার্নাল ক্যামেরা, ইন্টার্নাল মাউসপ্যাড ও কিবোর্ডের মতো দরকারি কিছু সুবিধা ল্যাপটপে আছে। এগুলো আপনি ডেস্কটপে পাবেন না।
ডেস্কটপের ক্ষেত্রে সব আলাদা কিনতে হয়। আর তাছাড়া আপনি যদি ক্লাসে, অফিসে, ট্যুরে আপনার কম্পিউটারকে আপনার সঙ্গী করতে চান, সেক্ষেত্রে ল্যাপটপের বিকল্প নেই।
বাসার জন্য যেটি ভাল হবে
আপনি যদি আপনার কম্পিউটার শুধু বাসায় ব্যাবহার করতে চান এবং কোথাও বহন করার প্রয়োজন না হয়, তাহলে ডেস্কটপ আপনার জন্য বেস্ট চয়েস হবে। ডেস্কটপে আপনি তুলনামুলক কমদামে ল্যাপটপের থেকে ভাল কনফিগারেশন পাবেন। এছাড়াও আপনার কম্পিউটারের কোনো যন্ত্রাংশ যদি নষ্ট হয়ে যায় বা আপনি আপনার কম্পিউটারকে আপগ্রেড করতে চান, তাহলে আপনি নিজেই সেই যন্ত্রাংশ ডেস্কটপে পরিবর্তণ করতে পারবেন।
ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ
পরিশেষে বলা যায়, আপনি যদি গেইমিং বা ভারী কাজ করে থাকেন এবং আপনার কম্পিউটার বহনের প্রয়োজন না হয়, তাহলে আপনার জন্য ডেস্কটপ ভাল হবে। তবে আপনি যদি টুকটাক কাজ যেমন ফটোশপ, মাইক্রোসফট অফিস, ব্রাউজিং, রাইটিং, বিনোদনের জন্য এবং বহন করার জন্য কম্পিউটার কিনতে চান, তাহলে আপনার বাজেটে একটা ভাল স্পেসিফিকেশন দেখে ল্যাপটপ কিনে ফেলুন।
Leave a Reply