ল্যাপটপ কেনার সময় কম বেশী সবাই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকেন। কষ্টের টাকা দিয়ে আসলে সঠিক ল্যাপটপটি পছন্দ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। ল্যাপটপ কারও জন্য শখের আর কারও জন্য কাজের।
শখের জন্যে হোক কিংবা কাজ করার জন্য হোক, ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। শুধু ব্র্যান্ড আর ডিজাইন দেখে ল্যাপটপ কিনলে আপনাকে পরে পস্তাতে হতে পারে।
তাই, ল্যাপটপ কেনার আগে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো প্রয়োজন। তার আগে অবশ্য জানা প্রয়োজন কেন আপনার একটি ল্যাপটপ থাকা দরকার। এখানে ৯টি কারণ দেখানো হয়েছে যেগুলোর জন্যে যে কারো জন্যে একটি ল্যাপটপ থাকা দরকার। আশা করি, লেখাটি পড়ে নিশ্চিত হয়েছেন কি কারণে আপনার ল্যাপটপ প্রয়োজন।
পারফেক্ট ল্যাপটপটি নির্বাচন করার জন্য অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আজকের এই লেখায় আমি সে-সব বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করবো। আশা করি, ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে এসব বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
ল্যাপটপ কেনার সময় বিবেচনাধীন বিষয়
উদ্দেশ্য
উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজেই সফল হওয়া যায় না। ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রেও উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আপনার উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করবে ল্যাপটপ পছন্দ করার পরবর্তী ধাপগুলো। আপনি যদি শুধু শখের বসে ল্যাপটপ ক্রয় করতে চান, তাহলে এক ধরণের বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আর আপনি যদি সাধারণ কাজের জন্য ক্রয় করতে চান, তাহলে আবার অন্য ধরণের বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা আপনি যদি গ্রাফিক্স কিংবা ভিডিও এডিটিংয়ের মত বড় বড় কাজ করতে চান, তবে আপনার ল্যাপটপ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
বাজেট
আপনার উদ্দেশ্য যখন নির্দিষ্ট করবেন, তারপরের ধাপ হলো বাজেট নির্ধারণ করা। সাধারণ কাজের জন্য সাধারণত ৩৫ হাজারের নিচে অনেক ভাল ল্যাপটপ পাওয়া যায়। কিন্তু যদি প্রফেশনাল কাজের ক্ষেত্রে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে চান, তবে অবশ্যই বাজেট ৪০ হাজারের উপরে হতে হবে। তাই আগেই বাজেট নির্ধারণ করে নিন, যাতে পরে সমস্যা না হয়।
প্রসেসর
ল্যাপটপের জন্য প্রসেসর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রসেসর সম্পর্কে যদি কোন ধারণা না থাকে, তাহলে জেনে নিন প্রসেসর কি আর এটি কিভাবে কাজ করে। প্রসেসরের উপর আপনার ল্যাপটপের স্পিড এবং আপনার চাহিদা পূরণের বিষয়টি নির্ভর করে। বাজারে সাধারণত ২ কোম্পানির প্রসেসর পাওয়া যায়। যথা:
- ইন্টেল
- এএমডি
এসব প্রসেসরের আবার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। প্রফেশনাল কাজের জন্য ল্যাপটপ ক্রয় করতে চাইলে অবশ্যই লেটেস্ট প্রসেসরটি নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন।
র্যাম
আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে র্যাম কি আর এটি কিভাবে কাজ করে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র ল্যাপটপের জন্য। আপনি যদি প্রফেশনাল এবং হাই স্পিডের ল্যাপটপ চান, তবে অবশ্যই বেশী র্যামের ল্যাপটপ নির্বাচন করে নিবেন। আর দেখে নিবেন ল্যাপটপে পরবর্তীতে র্যাম ব্যবহারের জন্য আলাদা স্লট রয়েছে কিনা। আলাদা স্লট থাকলে আপনি পরে আবার চাইলে আলাদা র্যাম কিনে লাগিয়ে নিতে পারবেন।
হার্ড ড্রাইভ
হার্ড ড্রাইভ হল আপনার ল্যাপটপের স্টোরেজ। আপনার ফাইলগুলো মূলত এই হার্ড ড্রাইভে থাকবে। বাজারে ২ ধরনের হার্ড ড্রাইভ পাওয়া যায়। যথা:
- এইচডিডি
- এসএসডি
এইচডিডি দামে সস্তা কিন্তু স্লো আর এসএসডি দাম বেশী কিন্তু ফাস্ট। আপনার ল্যাপটপ যদি এসএসডি হয়, তবে তো খুব ভাল আর না থাকলেও সমস্যা নেই। কেননা এইচডিডি দিয়ে আপনি অনায়াসে যে কোনো কাজ করে নিতে পারবেন। তবে দেখে নিবেন এসএসডি লাগানোর জন্য আলাদা অপশন আছে কিনা।
হার্ড ড্রাইভ কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই এর সাইজ দেখে নিবেন। চেষ্টা করবেন ১ টেরাবাইটের হার্ড ড্রাইভ কেনার।
গ্রাফিক্স কার্ড
যারা প্রফেশনাল কাজ করবেন কিংবা গেম খেলবেন তাদের জন্য গ্রাফিক্স কার্ড অনেক বেশী জরুরি। এটা ছাড়া আপনার ল্যাপটপের আট আনাই বৃথা হবে। এটা আপনার কাজের গতিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে। যদিও ল্যাপটপে বিল্ট ইন গ্রাফিক্স কার্ড থাকে, যা দিয়ে অনায়াসে সাধারণ কাজগুলো চালিয়ে নেয়া যায়। তবে প্রফেশনাল বা গেমার হলে দেখে নিবেন ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড আছে কিনা।
ব্যাটারি
যেহেতু মানুষ ল্যাপটপ ক্রয় করে এর পোর্টাবিলিটির জন্যে এবং যে কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য, তাই ল্যাপটপের ব্যাটারি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ল্যাপটপ ক্রয় করে যদি ডেস্কটপের মত সারাদিন বিদ্যুতের সাথে প্লাগ ইন করে রাখতে হয়, তাহলে ল্যাপটপ কিনে লাভ হবে কি।
তাই ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই এর ব্যাটারির পারফরমেন্স দেখে নিবেন। ব্যাটারি কত অ্যাম্পিয়ার, কত ঘণ্টা ব্যাকআপ দিতে পারবে, এ-সব বিষয় জেনে নিবেন।
ডিজাইন এবং ওজন
ল্যাপটপ নিয়ে অফিস, ট্রাভেল কিংবা বিভিন্ন জায়গায় যাবেন, তাই এর ডিজাইন যেমন আকর্ষণীয় হওয়া চাই, পাশাপাশি এর ওজনও কম হওয়া চাই। বেশী ওজনের ল্যাপটপ বহন করা কঠিন। আর ডিজাইনের দিকে দিয়ে যদি আকর্ষণীয় না হয়, তাহলে ব্যবহার করে শান্তি পাবেন না।
ব্র্যান্ড
ব্র্যান্ড শব্দটি সবার নিকট পরিচিত। বাজারে অনেক ব্রান্ডের ল্যাপটপ রয়েছে। এবার আপনি সেখান থেকে পছন্দের ব্রান্ড নির্বাচন করে নিন। ব্রান্ডের ক্ষেত্রে আবার কিছুটা পার্থক্য দেখা যায় অ্যাপেলের ম্যাক-বুকে। আপনার যদি অ্যাপেলে আকর্ষণ থাকে, তাহলে ম্যাক-বুকের প্রতি আপনি সুদৃষ্টি দিতে পারেন। মাথায় রাখবেন ম্যাক-বুকের অপারেটিং সিস্টেমের কিন্তু ম্যাকওএস। ম্যাকওএস চালাতে পারলে এই দিকে নজর দিতে পারেন।
ওয়ারেন্টি
ওয়ারেন্টি কত দিনের এবং চার্জার বা অন্যান্য যন্ত্রাংশের জন্য আলাদা ওয়ারেন্টি রয়েছে কিনা তা অবশ্যই দেখে নিতে হবে। কেননা ল্যাপটপ যে কোনো সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শেষ কথা
এই ছিল আজকে ল্যাপটপ কেনার সময় করণীয় কিছু কাজ সম্পর্ক সংক্ষিপ্ত আলোচনা। উপরে আমরা সবচেয়ে জরুরি ১০টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এর বাহিরেও অনেক বিষয় রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা হয়নি। আপনার নিকট যদি মনে হয় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে গিয়েছে, তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।
Leave a Reply