একটা সময় শুধু মাত্র HTML দিয়েই তৈরি হতো ওয়েবসাইট, তারপর সেই ওয়েবসাইটটিকে আরো একটু সুন্দর করার জন্য CSS এর ব্যবহার শুরু হলো। প্রযুক্তি উন্নয়ন জ্যামিতিক হারের চেয়েও বেশি গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখন ২০ বছর আগেই সেই সাদামাটা কিছু তথ্য লেখা কয়েকটি পেজের ওয়েবসাইট হয়ে গেছে রীতিমতো দৃষ্টিনন্দন এবং বুদ্ধিমান!
২০১৩ সাল থেকেই ওয়েব ডেভেলপিং এর ক্ষেত্রে পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট, স্ট্রিমিং, ওয়েব অ্যাপ ইত্যাদি পরিচিত শব্দের পাশাপাশি যুক্ত হয়ে গেছে রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন শব্দটি।
প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে রেসপন্সিভভাবে ওয়েব ডিজাইন করার। এই ব্যাপারটা আসলে কী, কেন এটি নিয়ে ওয়েব ডেভেলপিং ক্ষেত্রে এতো কথা হচ্ছে, এর প্রয়োজনীয়তা কী বা গুরুত্ব কেমন, এসব কিছু খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েই কথা বলব আজকে।
আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনার হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনাকে রেসপন্সিভনেস বুঝতে হবে। আর যদি না হয়ে থাকেন, তবে নিজে নিজেই ওয়েবসাইট তৈরি করা শিখতে পারেন খুব সহজেই। যাইহোক, চলুন আমাদের মূল আলোচনায় অর্থাৎ রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়।
রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন
রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন নিয়ে নিয়ে কথা বলার শুরুতেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি সামনে আসে, সেটি হলো—
রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন কী?
এক কথায় বললে, এটি এমন একটি ব্যাপার, যার কারণে একটি ওয়েবসাইট যে কোন ডিভাইস বা স্ক্রীন সাইজ থেকে স্বাভাবিক এবং সাবলিলভাবে দেখা যায়। ব্যপারটাকে আমি যদি আরেকটু ব্যাখা করি, তাহলে হয়ত বুঝতে একটু সুবিধা হবে।
বর্তমানে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করি, স্মার্টফোন, ফিচারফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ডেক্সটপ ইত্যাদি সব গ্যাজেট ব্যবহার করে; অন্যদিকে ইন্টারনেটে তথ্য আদান প্রদান যে জিনিসটির মাধ্যমে করা হয় অর্থাৎ ইন্টারনেটের মৌলিক বিষয়বস্তু হচ্ছে হচ্ছে, ওয়েবসাইট। এখন একই ওয়েবসাইট যেন ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়, এমন সব বিভিন্ন স্ক্রিন সাইজের ডিভাইস থেকেই সহজে এবং পরিপূর্ণরুপে দেখা যায়, সেরকম করে তৈরী করার ব্যাপারটিকে আমরা বলছি রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন।
কম্পিউটারের বড় স্ক্রিনের জন্য তৈরী করা একটি ওয়েবসাইট মোবাইলের স্ক্রিনে দেখতে হলে সেটিকে জুম করতে হবে, সেটিই স্বাভাবিক।
যেমন, উদাহরণ স্বরূপ, এই ওয়েবসাইটির কথা বলা যায়। যেটি আপনি যদি মোবাইল দিয়ে ব্রাউজ করে তাহলে জুম করে সোয়াইপ করা ছাড়া দেখার কোন উপায় নেই। অন্যদিকে আমাদের এই সাইটটি বা ফেসবুক, ইউটিউব এসব ওয়েবসাইটে কিন্তু সেটি হচ্ছে না।
আপনি যে ডিভাইস থেকেই নেট ব্রাউজ করেন না কেন, জুম, সোয়াইপ এবং কোনরকম ভাঙাচোরা ছাড়াই খুব স্বাভাবিকভাবে এই সাইটগুলো দেখতে পাবেন। এই দুইরকম ওয়েবসাইটের মধ্যকার কারিগরি পার্থক্যটাই রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন।
রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর তো জানা হলো; এখন প্রশ্ন এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? কেন একটি ওয়েবসাইটকে রেসপন্সিভভাবে ডিজাইন করতে হবে?
একটি ওয়েবসাইটের মূল লক্ষ্য, অর্থাৎ সবার কাছে সহজভাবে তথ্য উপস্থাপনের জন্য এর কোন বিকল্প নেই। শুরুতেই বলেছি, একটা সময় ইন্টারনেট ব্যবহার হতো শুধুমাত্র কম্পিউটার থেকে; কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন।
২০১৪ সালে করা একটি সার্ভেতে দেখা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বা ৩৩% মানুষ স্মার্টফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং একই বছর দ্রুত গতির ফোরজির গ্রাহক ২.৭ মিলিয়ন থেকে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৩.৬ মিলিয়নে।
আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকানদের ৪৫% স্মার্টফোন এবং ৩১% ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে। ২০১৪ সাল এবং আমেরিকার অবস্থাই যদি এই হয়, তাহলে এখনকার এবং আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
এখন কথা হচ্ছে, এই যে বিপুল সংখ্যক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে এবং তৈরী হচ্ছে, তাদের জন্য নিশ্চয়ই সেই মান্ধাতা আমলের কম্পিউটার লে আউটের ওয়েবসাইট উপযুক্ত নয়। একটি ওয়েবসাইটকে জুম করে কিংবা ডানে বামে সোয়াইপ করে দেখতে যেমন সময় নষ্ট হয়, তেমনি বিরক্তিকর আর তথ্য বোঝাও অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে। মানুষ চায় সহজে এবং সাবলীলভাবে তথ্য পেতে; আর এখানেই রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইনের গুরুত্বটি সর্বাধিক।
আপনি যদি এই বিপুল সংখ্যক মোবাইল ইউজার; আরও ভালো করে বললে সব ধরণের ডিভাইস ব্যবহারকারীদের কাছে আপনার ওয়েবসাইটকে উপস্থাপন করতে চান, তাহলে অবশ্যই ওয়েবসাইটিকে সেরকম করে প্রস্তুত করতে হবে।
এটি যে শুধু আপনার ভিজিটরদের সুবিধা দেবে ব্যাপারটি তা নয়। এতে করে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনেও আপনার ওয়েবসাইটের র্যাংক বাড়তে থাকবে। যার ফলে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বেড়ে যাবে অর্থাৎ সেটি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।
২০১৫ সালে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েব সাইট র্যাংকিং এর জন্য বেশ কিছু অ্যালগরিদম এর পরিবর্তণ আনে। যেখানে একটি ওয়েবসাইটকে ভালো র্যাংক পেতে হতে অবশ্যই সেটিকে মোবাইল ফ্রেন্ডলি হতে হবে। অর্থাৎ,
- জুম করা ছাড়াই যে কোন স্ক্রিন সাইজের ডিভাইস থেকে টেক্সট পড়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।
- ডানে বামে সোয়াইপ করার কোন বাধ্যবাধকতা থাকা যাবে না।
- যে কোন টার্গেটকে ট্যাপ করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকতে হবে, ইত্যাদি।
এসব কারণেই বর্তমানে রেসপন্সিভ ভাবে ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা আকাশচুম্বী। বর্তমানে যে সব ওয়েবসাইট তৈরী করা হয়, তার প্রায় সবগুলোই ডিজাইন করা হয়ে থাকে রেসপন্সিভভাবে।
প্রতিদিনই প্রায় নতুন ধরণের ডিভাইস বাজারে আসছে। সামনের দিনে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য মানুষ কী বা কোন ধরণের ডিভাইসকে গুরুত্ব দিবে সে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। কিন্তু আমাদের ওয়েবসাইটগুলো যেন সেগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, সেটি মাথায় রাখার সময় এখনই।
তাই ওয়েবসাইটকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য এবং উপযুক্ত করে তোলার জন্য রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন এর গুরুত্ব বর্তমানেই সীমাবদ্ধ নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এটি সমান দরকারী।
learnictbd says
রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম, এর গুরুত্ব সম্পর্কেও ভাল আইডিয়া পেলাম; লেখককে তাই ধন্যবাদ।