আপডেট শব্দটি কারও কাছে আতঙ্ক, আবার কারও কাছে ভালোবাসার নাম। আপনি পিসিতে কোন কাজ করছেন কিন্তু হঠাৎ একটি পপ আপ এসে বললো আপনার পিসি বা ব্যবহৃত সফটওয়্যার আপডেট করতে হবে। এই সময়টি কি পরিমাণ যন্ত্রনাদায়ক তা খুব সহজেই অনুমেয়। এই আপডেট আরও বেশী যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠে যখন কম্পিউটারটি হয় পুরাতন তথা লো কনফিগারেশনের পিসি। প্রতিনিয়ত আপডেটের কারনে পিসে হয়ে যায় স্লো।
সফটওয়্যার আপডেট
কিন্তু এতো কিছুর পরেও আপডেট পিসি কিংবা সফটওয়্যারের জন্য অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পিসির কনফিগারেশন যদি ভাল হয়, তবে অবশ্যই আপনার পিসি এবং সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করা জরুরি। এখন আপনি কেন আপডেট করবেন এই নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করবো।
ত্রুটির সমাধান এবং সিকিউরিটি বৃদ্ধি
ত্রুটিকে কম্পিউটারের ভাষায় বলা হয় বাগ। সফটওয়্যার তৈরি করার সময় মাঝে মধ্যে কিছু ভুল হয়ে যায়, সেসব ভুলের সমাধান হয়ে থাকে আপডেটের মাধ্যমে। অধিকাংশ সময় আবার এসব ভুল তথা বাগ নিরাপত্তার জন্য বিশাল ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই সিকিউরিটি বৃদ্ধির জন্য আপডেটের বিকল্প নেই।
পৃথিবীতে ভাল মানুষের পাশাপশি রয়েছে অসংখ্য খারাপ মানুষ। আর কম্পিউটার জগতে এসব খারাপ মানুষকে চিহ্নিত করা হয় ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার নামে। আপনার ঘরের কোন দরজা, জানালা কিংবা কোন অংশ খোলা থাকলে যেমন চোরের চুরি করতে সুবিধা হয়, তেমনি সফটওয়্যার বা পিসিতে কোন বাগ থাকলে হ্যাকারদের হ্যাক করা সহজ হয়ে যায়।
সফটওয়্যার নির্মাতার প্রতিনিয়ত তাদের সফটওয়্যারের দুর্বলতাকে খুঁজে বের করে এবং আপডেট প্রদান করে তা সমাধান করে থাকে। তাই একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী হিসাবে আপনার পিসি নিয়মিত আপডেট করা জরুরি।
নতুন ফিচার এবং সুবিধা
সফটওয়্যার বা পিসির আপডেট কেবল সিকিউরিটি বৃদ্ধি করে না বরং সেই সাথে অসংখ্য নতুন নতুন ফিচার যোগ করে। যেমন উইন্ডোজ তাদের এপ্রিল ২০১৯ আপডেটে অনেক নতুন ফিচার যোগ করছে। উইন্ডোজ তাদের নতুন আপডেটে ব্যবহারকারীদের অনেক চাহিদা পূরণ করেছে। সাধারণত সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিটি আপডেটে এমন সব ফিচার যোগ করে যা আপনাকে কঠিন কাজ সহজে করার সুবিধা দিবে।
অনেক ক্ষেত্রে সফটওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেমে নতুন ফিচার যোগ হয় ব্যবহারকারীর মতামতের উপর ভিত্তি করে। আর একজন ব্যবহারকারী স্বাভাবিক ভাবেই তার যেটা প্রয়োজন সেই ফিচার যোগ করার কথা বলবে। তাই আপডেটের মাধ্যমে আপনি সেই ফিচারটি পেয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া আপনি নিজেও আপনার মতামত সফটওয়্যার নির্মাতাদের জানাতে পারেন।
ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা
কম্পিউটার ব্যবহার করলে যেকোন সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর কোন ভাবে একটি পিসি ভাইরাস আক্রান্ত হলে সহজে অন্য পিসিতে চলে যেতে পারে। ভাইরাস ইমেল, রিমোভাল হার্ড ড্রাইভ, পেন ড্রাইভ, অনলাইন ফাইল শেয়ার কিংবা অন্য যেকোন উপায় সংক্রামিত হতে পারে।
সুতরাং, আপনার কম্পিউটার থেকে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার দূর করার জন্যে আপনার পিসি এবং অ্যান্টি ভাইরাস নিয়মিত আপডেট রাখা জরুরি। প্রশ্ন আসতে পারে অ্যান্টি ভাইরাস কেন আপডেট করবো? একটি সহজ উদাহরণ দিলে বুঝবেন, থানার পুলিশ কিভাবে অপরাধীকে সনাক্ত করে! প্রথমত পুলিশের কাছে অপরাধীর নাম, পরিচয়, ছবি এবং অপরাধীর অপরাধের ধরনের তালিকা থাকতে হয়। তারপর পুলিশ অপরাধীকে ধরতে পারে।
অ্যান্টি ভাইরাসও একই পদ্ধতিতে ভাইরাস সনাক্ত করে। অ্যান্টি ভাইরাসে আপনি নিয়মিত যে আপডেট পান সেটি আসলে ভাইরাসের তালিকা। এখন আপনিই চিন্তা করুন আপনার অ্যান্টি ভাইরাসে যদি নিত্য নতুন ভাইরাসের তালিকা না থাকে, তবে সেই অ্যান্টি ভাইরাস কিভাবে আপনার পিসিকে ভাইরাস মুক্ত রাখবে।
পিসির পারফরমেন্স বৃদ্ধি
আপডেট নতুন ফিচার বা সিকিউরিটি বৃদ্ধির পাশাপাশি লেটেস্ট ভার্সনের ওএসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে। আমাদের পিসির অপারেটিং সিস্টেম আপডেট হচ্ছে নতুন ভার্সনের হার্ডওয়্যারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার জন্য। অপরদিকে সফটওয়্যার আপডেট হচ্ছে হার্ডওয়্যার এবং নতুন ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার জন্য।
প্রতিটি আপডেট সফটওয়্যারকে আগের থেকে আরও বেশী ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। সেই সাথে করে তোলে আরও বেশী ফাস্ট। কেননা নতুন আপডেট নতুন হার্ডওয়্যার ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। এখন আপনি যদি কোর আই ৭ এর ১৬ জিবি রেমে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করতে চান তবে কখনোই আপনি আপনার হার্ডওয়্যারের পূর্ণ ব্যবহার করতে পারবেন না। উইন্ডোজ এক্সপি এসব হার্ডওয়্যার ব্যবহারে অক্ষম।
শেষ কথা
উপরে উল্লেখিত কারণে আপনার পিসি নিয়মিত আপডেট করা জরুরি। অনেক সময় হয়তো ৫ থেকে ১৫ মিনিটের আপডেট আপনার কাছে কয়েক শতাব্দী মনে হতে পারে। কিন্তু এই আপডেট আপনাকে কয়েক শতাব্দীর সমস্যা থেকে মুক্ত রাখবে। আপনার কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও বৃদ্ধি করবে। আপডেট পৃথিবীর সাথে তাল মিলাতে সহায়তা করবে।
Leave a Reply