আজকাল কম্পিউটার ছাড়া এক মুহূর্ত কল্পনা করা যায় না। প্রায় সব কাজে কম বেশী কম্পিউটারের প্রভাব টের পাওয়া যায়। কম্পিউটারের কথা বললে আবার চোখের সামনে দুই ধরনের কম্পিউটার ভেসে উঠে যার একটি হল ডেস্কটপ আর অন্যটি হল ল্যাপটপ।
ডেস্কটপ কম্পিউটারের সূচনা যদিও প্রথমে দিকে, তবে প্রয়োজনের বিবেচনায় ১৯৭১ সালে ল্যাপটপের আগমন ঘটে। ডেস্কটপ আর ল্যাপটপ দুটি দিয়েই কম্পিউটারের যাবতীয় সব ধরণের কাজ করা যায়। কিন্তু পোর্টেবলটির জন্য পরবর্তীতে ল্যাপটপ বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
যদিও গেমিং, ওয়ার্ক স্টেশনসহ হাই-পারফর্মেন্সের জন্য অনেকেই ডেস্কটপকে বেশী প্রয়োজনীয় মনে করেন। তবে সে ধারণাও এখন পরিবর্তণ করে দিচ্ছে বর্তমান সময়ের গেমিং ল্যাপটপগুলো।
ডেস্কটপ নাকি ল্যাপটপ কোনটি আপনার প্রয়োজন এটা বেশ তর্ক সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু আজকে আমরা সে তর্কে যাবো না, আজকে আমরা আলোচনা করবো যে ৯টি কারণে আপনার একটি ল্যাপটপ থাকা প্রয়োজন।
১. সহজে বহন করা যায়
পোর্টেবলটি তথা সহজে বহন করা যায় বলেই ল্যাপটপ এত দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ল্যাপটপকে আপনি যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় নিয়ে যেতে পারবেন। যা কিনা ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে চিন্তাও করা যায় না। যেমন আপনি ট্রাভেল কিংবা অফিসে যাওয়ার সময় ল্যাপটপ নিয়ে যেতে পারবেন এবং গাড়িতে বসেই কাজ করতে পারবেন। ফলে আপনার প্রোডাক্টিভিটিও বৃদ্ধি পাবে।
তাই, আপনি যদি পোর্টেবলটির কথা চিন্তা করেন অর্থাৎ যে কোন জায়গায় প্রয়োজনের মুহূর্তে কম্পিউটার বের করে কাজ করার কথা ভাবেন, তবে ল্যাপটপের বিকল্প নেই। আর একটি বিষয় হল, ল্যাপটপ কেনার সময় কম ওজনের ল্যাপটপ কেনার চিন্তা করবেন।
২. স্বাচ্ছন্দ্যদায়ী
স্বাচ্ছন্দ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করতে চাইলে ল্যাপটপের বিকল্প নেই। ল্যাপটপ আপনি শুয়ে থেকে যেমন ব্যবহার করতে পারবেন, পাশাপাশি বসেও ব্যবহার করতে পারবেন। ল্যাপটপের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও ই-বুক পড়াসহ যে কোনো কাজ খুব স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারবেন।
আপনি কিচেন রুমে রান্না করতে করতে কিংবা বিছানায় আয়েশ করে শুয়ে বসে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারবেন। ডেস্কটপের ক্ষেত্রে যা কল্পনা করাও অসম্ভব। যারা ইউটিউবের জন্যে ভিডিও তৈরির কাজ করেন, তারা ভাল মানের ৫টি ভিডিও এডিটিং ল্যাপটপ থেকে পছন্দেরটি কিনে নিতে পারেন।
৩. কম জায়গা খরচ করে
কম জায়গা খরচ করা বলতে মূলত বোঝাচ্ছে ডেস্কটপ কম্পিউটারের মত এত বেশী জায়গা খরচ করে না। যেমন ডেস্কটপ কম্পিউটারের সিপিউ, মনিটর, ইউপিএস, কিবোর্ড, মাউস, স্পিকারসহ সব পার্টসের জন্য আলাদা আলাদা জায়গার প্রয়োজন হয়।
অথচ ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এ রকম কোন জায়গার প্রয়োজন হয় না। ল্যাপটপ ডেস্কটপের থেকে সবচেয়ে কম জায়গা খরচ করে। ব্যাচেলর জীবনে যারা আছেন অর্থাৎযারা মেসে থাকেন, তাদের জন্য ল্যাপটপ উত্তম বিকল্প বলা যায়।
৪. কম বিদ্যুৎ খরচ করে
ডেস্কটপ ল্যাপটপের থেকে বেশী বিদ্যুৎ খরচ করে। ল্যাপটপ ব্যবহার করলে আপনার বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ অনেক কম হবে। তাই, কম্পিউটার ব্যবহারে আপনি যদি বিদ্যুৎ খরচ বাঁচানোর চিন্তা করে থাকেন, তবে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারেন।
৫. সাশ্রয়ী মূল্য
ডেস্কটপের থেকে ল্যাপটপের দাম তুলনামূলক কম। যদিও ডেস্কটপের কনফিগারেশন বেশী পাওয়া যায় কম দামে। তবে সব দিক বিবেচনা করলে ল্যাপটপের দাম তুলনামূলক কম হয় এবং আপনি অনেক কম দামেও যে কোনো ল্যাপটপ ক্রয় করতে পারবেন।
৬. বিজনেস মিটিংয়ে ব্যবহার
অনেক সময় অফিসের বিজনেস মিটিংয়ে কম্পিউটার প্রয়োজন হয়। যেমন প্রেজেন্টেশন কিংবা জরুরি তথ্য দেখার জন্য। সেক্ষেত্রে ল্যাপটপ আপনাকে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা দিতে সক্ষম হবে। এজন্য আপনার যদি ঘন ঘন বিজনেস মিটিং করতে হয়, তবে আপনার একটি ল্যাপটপ থাকা বাঞ্ছনীয়।
৭. পড়া-লেখার কাজে ব্যবহার
পড়া লেখার কাজেও ল্যাপটপ বেশ সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন, আপনি এটা আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেত পারবেন। নোট, প্রেজেন্টেশন, বই পড়াসহ সব ধরণের কাজ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে করতে পারবেন ল্যাপটপের মাধ্যমে। ক্লাস রুমে কিংবা ক্লাস শেষে অবসর সময়েও আপনার জরুরি কাজগুলো সেখানে বসেই ল্যাপটপের মাধ্যমে করে নিতে পারবেন।
৮. ব্যাটারির মাধ্যমে ব্যবহারে সুবিধা
ল্যাপটপের জনপ্রিয়তার আরেকটি প্রধান কারণ হল এর মধ্যে থাকা ব্যাটারি। ল্যাপটপ আপনি যেমন সরাসরি বিদ্যুতের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবেন, পাশাপাশি লোডশেডিং কিংবা রাস্তা ঘাটে বিদ্যুৎ ব্যতীত ব্যাটারির মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবেন। এটা ল্যাপটপের অন্যতম একটি বড় সুবিধা যা ডেস্কটপ কখনোই দিতে পারে না, যেহেতু ডেস্কটপে ব্যাটারির ব্যবস্থা নেই।
৯. অতিরিক্ত ফিচার
অতিরিক্ত অনেক ফিচার ল্যাপটপে পাওয়া যায়। যেমন ওয়েবক্যাম সুবিধা, মাউস, টাচ-প্যাড, স্পিকার ইত্যাদি ফিচার থাকে। ডেস্কটপে তা আলাদা ক্রয় করে নিতে হয়। এছাড়া এসব ফিচার আপনি ডেস্কটপের মত আলাদা লাগিয়েও ব্যবহার করতে পারবেন।
শেষ কথা
এই ছিল আজকে ল্যাপটপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এখানে আমরা ল্যাপটপ কেন আপনার থাকা প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনার যদি মনে হয় আপনার মধ্যে এসব চাহিদা বিদ্যমান, তবে আপনি ল্যাপটপ ক্রয় করতে পারেন। আপনার ল্যাপটপ কেনার সিদ্ধান্ত যদি ফাইনাল হয়ে যায় আর আপনার বাজেট যদি হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার, তবে আপনি এই ৫টি ভাল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ থেকে যে কোনটি বেছে নিতে পারেন।
আর আপনার যদি উপরোক্ত চাহিদা না থেকে থাকে, তবে আমার পরামর্শ থাকবে ডেস্কটপ কম্পিউটার কেনার।
Leave a Reply