ফুটবল নাকি ক্রিকেট কোনটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়? আপনি যদি ফুটবল ফ্যান হন তাহলে অবশ্যই ফুটবলকেই সেরা বলবেন। আবার ক্রিকেট ভক্ত হলে অবশ্যই বলবেন ক্রিকেট। যদিও সারাবিশ্বে এই দুইটি খেলায় মোটামোটি সমান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু আমি আজকে আপনাদের কাছে এমন ১০ টি কারণ বলব যা প্রমাণ করবে ফুটবল খেলা ক্রিকেটের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং ভাল।
ক্রিকেট এবং ফুটবল দুইটিই অনেক প্রাচীন খেলা। যা এক সময় উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন সারাবিশ্বের সকল মানুষেই এই খেলায় অংশ নিচ্ছে। আর দিনদিন ক্রিকেট এবং ফুটবল বিশ্বের মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই দুইটা খেলায় সফলতার দিক থেকে সমান। কিন্তু এখানে আমরা আলোচনা করব বিশ্বের মানুষের কাছে সবদিক থেকে কোনটি বেশি জনপ্রিয়।
তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেয়া যাক কি কি কারণে ফুটবল খেলা ক্রিকেটের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়।
ফুটবল খেলা ক্রিকেটের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়
সব মৌসুমেই ফুটবল
বৃষ্টি কিংবা রোদ সব সময়েই আপনি ফুটবল খেলতে পারবেন। কিন্তু খুব ভারী বৃষ্টি হলে কখনোই আপনি ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। এজন্য ফুটবল খেলায় অধিক জনপ্রিয়। ক্রিকেট খেলা এদিক থেকে পিছিয়ে আছে।
সময়ের খেলা
মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যেই ফুটবল খেলায় কোন টিম জয়ী সেটা বলা যায়। ক্রিকেট খেলায় সর্বনিম্ন ৭-৮ ঘন্টা এবং সর্বোচ্চ ৫-৬ দিনও লেগে থাকে। এটা অনেক সময়েই একঘেঁয়েমি লাগে, এতদিন ধরে খেলা দেখার পর একদল বিজয়ী হবে। অনেকের কাছে এটা বিরক্তিকর বলে মনে হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এই কারণেই অনেকে ফুটবলকেই ক্রিকেটের চেয়ে ভাল মনে করে।
ফুটবল রেফারি বনাম ক্রিকেট আম্পায়ার
ফুটবলের রেফারিরা খেলোয়াড়দের চেয়েও অনেক বেশি দৌড়ায়। এক ম্যাচেই তারা প্রায় ১২ কিমি দৌড়ায়। ১২০ স্প্রিন্টে ২০ থেকে ৫০ মিটার। তাদেরকে পাউল, পেনাল্টি, ইয়েলো কার্ড দেয়ার জন্য খুব দ্রুত দৌড়াতে হয় এবং খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাদের এই সিদ্ধান্ত ৯৯% সঠিক হয়।
অন্যদিকে ক্রিকেটে আম্পায়ার কেবল একস্থানে দাঁড়িয়েই থাকে। একটা ম্যাচে খুব কম সময়েই তারদিকে বল আসতে দেখা যায়। আবার এখানে একজন আম্পায়ার যথেষ্ট নয়, ফিল্ডে দুইজন আম্পায়ারের দরকার হয়। একজন মেইন আম্পায়ার অন্যান্য আম্পায়ার থেকে প্রথম জিজ্ঞেস করেই তারপর তার ডিসিশন নেন। কিন্তু দুইজন মিলেও যদি না পারে, তখন তারা তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে জিজ্ঞেস করে। এজন্য আম্পায়ার আর রেফারির মধ্যে তুলনা করলে ফুটবলের সিস্টেমেই অনেক বেশি জনপ্রিয়।
ফুটবল বিশুদ্ধতার আর ক্রিকেট কেবল পুঁজিপতিদের
ফুটবল একটানা ৪৫ মিনিট ধরে চলে, এরপর আবার ৪৫ মিনিট ধরে খেলা হয়। অন্যদিকে ক্রিকেটে প্রত্যেক ওভার, উইকেট, চার, ছয়, সেঞ্চুরি, আঘাত বা ব্যবধানের পরে বানিজ্যিক বিরতি থাকে। এমনকি এখানে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্রান্ডেড উইন্ডোজ, পপ-আপ সবার সাথে চুক্তি করে থাকে। ফলে এখন ক্রিকেট খেলা কেবল খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাই।
এখানে খেলোয়াড়দের জার্সি, টুপি, হেলমেট, ব্যাট, প্যাড সবকিছুই এখন স্পনসর করা থাকে। তাই এদিক থেকে ফুটবল অনেকটা বিশুদ্ধ একটি খেলা বলা যেতে পারে।
ক্রিকেট দর্শকের খেলা
ক্রিকেটে দর্শকরা এক সময়ে কেবল একজনের উপরেই নজর রাখে। সেটা ব্যাটসম্যান হতে পারে কিংবা বলার, ফিল্ডার। কিন্তু ফুটবলে সবাই বলের দিকেই তাকিয়ে থাকে, যেখানে একটি বলেই কেবল একজনের কাছে থাকে না, সেকেন্ডের মধ্যেই আরেকজনের কাছে চলে যায়। এই কারণেই ফুটবল খেলা ক্রিকেটের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
কমেন্ট্রি বক্স এবং ধারাভাষ্যকার
দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ভবিষ্যত বাণী থাকে এই ক্রিকেটের কমেন্ট্রিতে। এটা অনেকটা রেন ও মার্টিন পড়ার মত। সব ম্যাচেই ধারাভাষ্যকার একই ছন্দে একইভাবে কমেন্ট্রি দিয়ে থাকে। কিন্তু ফুটবলের ক্ষেত্রে এমনটি করা সম্ভব না। এখানে প্রতি সেকেন্ডেই নতুন মোড় নেয়। কথার মধ্যেই অনেক পরিবর্তণ আনতে হয়। উত্তেজনা কাজ করে গোল হবে কি হবে না। সাথে সাথে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হয়। এই কারণে ক্রিকেট খেলার চেয়ে ফুটবল খেলার ধারাভাষ্যই অনেক বেশি জনপ্রিয়।
ক্রিকেট টেকনোলজি বনাম ফুটবল টেকনোলজি
ফুটবলের আবিষ্কারের পর থেকে এখন পর্যন্ত কেবল সামান্যই পরিবর্তণ হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটে এখন অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ইউজ করা হচ্ছে। যেমন সুপার স্লো মোশন, রেভ মিটার, ডিয়ারেস, অন ফিল্ড মিক, হটস্পট।
কিন্তু ক্রিকেটে এতসব প্রযুক্তি থাকার পরেও একটি ডিসিশন নিতে গেলেই অনেক বেশি সময় লাগে। স্কিনে দেখাতে হয়। অন্যদিকে ফুটবলে খুব দ্রুতই ডিসিশন নেয়া যায়। এই কারণেও বলা যেতে পারে ফুটবল খেলায় এগিয়ে আছে সবার কাছে।
ক্রিকেট পোশাক বনাম ফুটবল পোশাক
আচ্ছা বলেন তো কতগুলো টিম এই ব্লু কালারের জার্সি পড়ে? ইন্দিয়া, শ্রীলঙ্কা ইংল্যান্ড ছাড়াও আরও অনেক দলেই এই একই কালারের জার্সি পরে। অন্যদিকে ফুটবলে একেক দলের একেক রকম পোশাক থাকে। অনেকটা একই রঙের পোশাকেও অনেক ভিন্নতা থাকে। এতে পরিস্কারভাবে চেনা যায়। এটাও একটা কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে।
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণ হয়ে যায় যে, ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল অনেক বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু যারা ক্রিকেট ভক্ত, তারা এটা পড়ে মন খারাপ করার কিছুই নেই। এটা কেবল একদিক থেকেই লেখা হয়েছে। ক্রিকেট ভাল লাগার এবং ভালবাসার হাজারটা কারণ আপনার জানা থাকতে পারে।
তাজওয়ার উচ্ছাস says
আমার মনে হয় আরেকটা ইম্পরটেন্ট কারণ হল, ফুটবল অনেক দেশ খেলে। ওরা জানে ফুটবল কি। কিন্তু ক্রিকেট ইন্টারন্যাশনালি ১১০টা দেশের ক্রিকেট বোর্ড থাকলেও, ১৫-২০টার বেশি দেশ ক্রিকেট সম্পর্কে জানে বলে মনে হয় না। এটা ব্যাসিক্যালি আইসিসির ব্যর্থতা।
মুনতাকিমুল আবেদীন says
ঠিক বলেছেন ভাইয়া