আপনি কি ফ্রিল্যান্সিং করতে আগ্রহী হওয়ার পরেও কোন কারণে সেটি শুরু করতে পারছেন না? চিন্তা করবেন না, আপনি একা নন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কারণ ও এর সম্ভাবনার কথা ভেবেও কিছু কারণ বশতঃ তা শুরু করতে পারি না।
প্রাথমিকভাবে যারা দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি বাড়তি কিছু ইনকামের কথা চিন্তা করেন বা বাধাধরা কাজের বাইরে কিছু করতে চান, তারাই ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকেন।
কিন্তু কোন নির্দিষ্ট পেশায় থাকা অবস্থায় সম্পূর্ণ নতুনভাবে কোন কাজে মনোনিবেশ করা, পাশাপাশি এ ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত ঝুঁকির কথা ভেবে অনেকেই শেষ পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে ব্যর্থ হন।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কারণ
অনলাইন মার্কেটে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সিং জব রয়েছে যা ফ্রিল্যান্সারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পূর্বে সবার মনেই প্রথম যে সমস্যার কথাটি মাথায় আসে তা হলো পেশাগত নিরাপত্তা বা আয়ের নিশ্চয়তা। কিন্তু যারা সঠিকভাবে কাজ শিখে এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন, তারা দ্বিতীয়বার পেছনের দিকে আর ফিরে তাকান না।
হ্যাঁ এটা অতি বাস্তব যে, ফ্রিল্যান্সিং এর মত পেশা সবার জন্য নয়। আপনি চাইলেই রাতারাতি ফ্রিল্যান্সার হয়ে যেতে পারবেন না। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা অত্যাবশ্যক। আপনিও যদি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে জেনে নিন যে ৬টি কারণে আপনার আজই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা উচিৎ।
সময়োপযোগী পেশা:
অন্যান্য পেশার তুলনায় ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে অধিক দ্রুত চাহিদা সম্পন্ন একটি পেশা। এর কারণ হচ্ছে গোটা পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানীগুলো তাদের কাজগুলিকে স্থানীয়ভাবে সম্পাদন করার পরিবর্তে একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারের মাধ্যমে করিয়ে নিতে আগ্রহী হয়ে পড়ছে।
এধরনের কাজের প্রক্রিয়ায় সঠিক সময়ে কাজ সম্পাদন, কাজের গুনগতমান অক্ষত রেখে তুলনামূলক অনেক কম খরচে কাজটি সম্পন্ন করার সুবিধা ফ্রিল্যান্সিংকে এত বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে।
সব ধরনের কাজ করার সুবিধা:
প্রতিদিন অসংখ্য নতুন ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে নিজেদের প্রোফাইল তৈরীর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট কাজের ৪০% ভাগই ফ্রিল্যান্সারদের দখলে চলে আসবে। মোটামুটি সব ধরনের দক্ষতাকেই ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে পেশাতে রূপান্তর করা সম্ভব।
আপওয়ার্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং এর কাজের মধ্যে আর্টিকেল রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভার্চুয়াল অ্যাসিসটেন্ট, এসইও ইত্যাদি কাজের চাহিদা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। দেখে নিন আপওয়ার্কে আপনি যে সকল ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে পারেন।
ফিল্যান্সিংয়ে আপনি নিজেই নিজের বস:
আপনি যখন ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন, তখন আপনি নিজেই হবেন আপনার বস। কোন কাজের জন্য আপনাকে আর কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে না। পাশাপাশি ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও অন্যের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজের বাধ্য বাধকতা থেকে আপনি চিরতরে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
আপনার পেশাগত জীবন পুরোপুরি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যার ফলে আপনি কোন চাপ নেওয়া ছাড়াই নিশ্চিন্তে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে পারবেন।
যে কোন সময় কাজ করার স্বাধীনতা:
একজন ফ্রিল্যান্সার যে কারণে এই পেশাটিকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে তার কারণ হলো, এ ধরনের পেশাকে কোন নির্দিষ্ট সময় জুড়ে কাজ করার বাধ্যবাধকতা থাকে না। প্রচলিত নিয়মে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিসে হাজিরা দেওয়ার ঝামেলা ছাড়াই সুবিধামত সময় অনুযায়ী কাজ করার স্বাধীনতা থাকে।
এ পেশাতে প্রতিটি কাজ সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নির্ধারিত দিনগুলির মধ্যে যে কোন সময় কাজ সম্পাদন করে সেটি ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে দেয়াটাই এখানে মূখ্য বিষয়। আপনি দিনে বা রাতে কখন কাজ করলেন তার জন্য কেউ আপনার কাছে কৈফিয়ত চাইতে আসবে না।
পছন্দসই কাজ নির্বাচনের সুবিধা:
আপনি যদি একজন ওয়েব ডিজানার হয়ে থাকেন, পাশাপাশি যদি কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে ওয়েবসাইট ডিজাইন করাকে অপছন্দ করে থাকেন, তাহলে আপনি সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা শুধুমাত্র তখনই পাবেন, যখন আপনি একজন পেশাদার ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
গতানুগতিকভাবে কোন কোম্পানীতে চাকরি করলে আপনার পছন্দ হোক বা না হোক আপনার বস আপনাকে কোন কাজ দিলে আপনি সেটি করতে বাধ্য। কিন্তু ফ্রিল্যান্সাররা শুধু মাত্র সেই কাজগুলিকেই বেছে নেন যেগুলি তারা করতে আগ্রহী।
অফুরন্ত আয়ের সম্ভাবনা:
আমি আগেও বলেছি যে, অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংকে গতানুগতিক কাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু ইনকাম করার উপায় মনে করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে এবং আমার মত হাজারো ফ্রিল্যান্সারের পক্ষ থেকে আমি এটা অনেক গর্বের সাথে বলতে পারি যে, ফ্রিল্যান্সিং এর কাজে গতানুগতিক যে কোন পেশার সমপরিমাণ এমনকি তার চাইতেও অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
ফ্রিল্যান্সিং পেশার মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হচ্ছে ব্লগিং যার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে প্রচুর আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সারের একটি ওয়েবসাইট থাকে এবং সে গুগল অ্যাডসেন্সসহ অন্যান্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আয় করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলছি, আপনি জেনে অবাক হবেন যে পিটি ক্যাশমোর প্রতি মাসে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় করেন ৪ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা।
সফল পেশাদার ফ্রিল্যান্সারগণ প্রচলিত যে কোন পেশার বেতনের থেকে এত বেশি পরিমাণ ইনকাম করে থাকেন, যা রিতিমত চমকে দেবার মত।
উপরের সবগুলি তুলনামূলক বিশ্লেষণে মূলত একটি গতানুগতিক চাকরির বিপরীতে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কারণ ও সুবিধাগুলি তুলে ধরা হয়েছে। চাকরির পাশাপাশি যে কোন ব্যবসার বিকল্প হিসেবেও ফ্রিল্যান্সিং অনেক উপযোগী পেশা হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
অন্যান্য ব্যবসার মত ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। এমনকি নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত আপনার কোন অফিস নিয়ে কাজ করারও প্রয়োজন হবে না। শতাধিক মূল্যবান যন্ত্র এবং কর্মীর পরিবর্তে শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার এবং আপনার দক্ষতাই এখানে আপনার পুঁজি হিসেবে কাজ করবে।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উন্নত বিশ্বের পরিবর্তনশীল কাজের ধারার সাথে তাল মিলিয়ে একটি স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় পেশা।
Leave a Reply