কে হবে এবারের বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী? এই নিয়ে হাজার তর্ক-বিতর্ক চলছে ফুটবল প্রেমীদের মধ্যে। দেখতে দেখতে কোয়ার্টার ফাইনাল শেষ হয়ে গেল। অনেক প্রিয় টিমেই বিদায় নিল। বাকি আছে ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স এই চারটি দল। একবারের শিরোপা জয়ী ইংল্যান্ড ফেভারিটের তালিকায় আছে তৃতীয় নম্বরে। হয়তো ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতবে।
অন্যসব দলের তুলনায় শিরোপা জয়ের প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড আছে সবার শীর্ষে। সম্ভবত ইংল্যান্ডেই একমাত্র দল যারা সেমিফাইনালে গিয়ে খুব কম চাপে আছে। তার কারণ অন্যান্য দলের তুলনায় তারা নিজেদের দল নিয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। আর মাত্র দুইটা খেলায় জয়ী হলেই তারা কাপ নিয়ে যাবে। দেশের মানুষও বিশ্বাস করে সব ইতিহাস ভুলে এবার নতুন কিছু হবে। সত্যিকার অর্থেই তারাই এই কাপ ডিসার্ভ করে।
কেন ইংল্যান্ডকে এবারের বিশ্বকাপ জয়ী বলছি? চলুন কয়েকটা কারণ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি।
হ্যারি কেইনের ফর্মে থাকা
ইউরো কাপের পর হ্যারি নিজে যখন দেশে ফিরে আসে, তখন তিনি ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ একজন খেলোয়াড়। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলেও তিনি নিরব ছিলেন। তার এই নিরবতাই বলে দিয়েছিল তিনি নিজেকে আরও ভালভাবে প্রস্তুত করছিলেন। আর তার প্রমান এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপ। গোল্ডেন বুট জিতার প্রতিযোগিতায় তিনিই সবার প্রথমে আছেন। তিনিই ইংল্যান্ডের মুল শক্তি। যদি ইংল্যান্ড এবারের কাপ জিতে যায়, তাহলে তার অবদানেই বেশি থাকবে।
হ্যারি কেইন একদিকে যেমন একজন দক্ষ খেলোয়াড়, তেমনি তিনি এখন তার সকল দক্ষতা দিয়েই খেলছেন। তিনিই এখন একমাত্র খেলোয়াড় যিনি এই আসরে ছয়টি গোল করে এখন পর্যন্ত সবার উপরে আছেন। যদি ইংল্যান্ড ফাইনালে যায়, তাহলে তার এই ফর্মের জন্যই যাবে।
স্টোনস ও মাগুইরের বিষ্ময়
এক মাস আগেও এটা কেউ কল্পণা করতেই পারেনি। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে এটা রীতিমতো সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। আর এটাই এখন রাশিয়া বিশ্বকাপের বাস্তবতা। স্টোনস ও মাগুই এখন অনেক ভাল খেলছে যেটা ইংল্যান্ডের জন্য প্লাস পয়েন্ট। পানামার বিপক্ষে খেলায় স্টোন দুই গোল করেছিল, যেটি জাতীয় টিমে তার প্রথম অর্জন ছিল। মারগুইও খুব ভাল খেলেছিল। ডিফেন্সের বাইরে মিডফিল্ডে গিয়ে তার চমৎকার খেলা সত্যিই মনোমুগ্ধকর ছিল। মাঠের মাঝখানের শূন্যতা তিনি ভালভাবেই হ্যান্ডেল করছেন। এভাবে খেলতে থাকলে নিসন্দেহে বলা যায় ইংল্যান্ডের জন্য সামনে ভাল কিছু অপেক্ষা করছে।
সাউতগেইটের অভিনবত্ব
ইংল্যান্ড আগে যে সিস্টেমে খেলতো তাদের কোচ সাউটগেইট সেই সিস্টেম পালটিয়ে এমন একটি ছকে খেলাকে সাজিয়েছেন যাতে তার দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের সবচেয়ে ভালটাই দিতে পারে। এতে করে কিরান ট্রিপেরিয়ারের খেলোয়াড় এখন সাচ্ছন্দ্যে বলকে ডি বক্সে নিয়ে যেতে পারছে। ফলে সাউটগেইট তার বেস্ট এটাকিং প্লেয়ারদের আরও বেশি কাজে লাগাতে পারছে। অন্যদিকে আলি, লিংগার্ড, রাহিমও খেলা দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। যে কারণে ইংল্যান্ডকে হারানো খুব কঠিন হবে বিপক্ষ দলের জন্য৷
অনেককিছুই দেখানোর বাকি
আপনি যদি মনে করেন, ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ডের খেলা দেখেছেন, তাহলে সেটি আপনার ভুল। তাদের কাছে হয়তো কলোম্বিয়া, তিউনেসিয়া এবং পানাম পরাজিত হতে পারে, কিন্তু এখনও ইংল্যান্ড তাদের চূড়ান্ত খেলা দেখায়নি। ক্লাবে আমরা স্টার্লিং এবং আলিকে খেলতে দেখেছি। যাদের খেলা মুগ্ধ করেছে এছাড়াও আছে মার্কাস রাসফোর্ড। ইংল্যান্ড যদি সব খেলোয়াড় থেকে তাদের সেরাটা বের করে আনতে পারে, তাহলে মনে হয় না ক্রোয়েশিয়া কিংবা ফ্রান্স খুব সহজে জিততে পারবে। তিনসিংহ খ্যাত এই দল আবার ১৯৬৬ এর মত জ্বলে উঠেছে।
তৃতীয় ফেভারিট ইংল্যান্ড
যেখানে গ্রুপ পর্বের খেলা থেকে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন বাদ হয়ে গেল, ব্রাজিলের মত দল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ গেল, সেখানে ইংল্যান্ড এখন সেমিফাইনাল খেলবে। যারা এক সময় ৭ গোলে হেরেছিল। ১৯৬৬ সালের পর থেকে ইংল্যান্ড কখনো ফাইনাল খেলতে পারেনি। এজন্য এটা ইংল্যান্ডের জন্য এক বিরাট সুযোগ। আর ইংল্যান্ডের ম্যাচ ড্র করার ইতিহাস খুব বিরল। তাই বলা হচ্ছে এবার ইংল্যান্ড যেভাবে জ্বলে উঠেছে সেদিক থেকে ইংল্যান্ডে ফাইনালে গেলে অবশ্যই নতুন কিছু করে দেখাবে।
উপরে উল্লেখিত ৫ টি কারণ কেবল ফুটবল বিশারদদের মতামতের ভিত্তিতে বলা হয়েছে। যেহেতু ফুটবল এমন একটি খেলা যার ভবিষ্যৎ বাণী করা সত্যিই কঠিন। বাস্তবে অনেক সময় তা হয় না, যা আমরা পূর্বেই অনুমান করে থাকি। কিন্তু বর্তমান পারফরমেন্স, রেকর্ড, প্লেয়ার, খেলার কৌশল চিন্তা করলে অবশ্যই ইংল্যান্ডকেই জয়ীদের প্রতিযোগিতায় সবার আগে রাখতে হবে। যদি সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া হারে তাহলে ১৫ জুলাই ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। ম্যাচটি অনুষ্টিত হবে মস্কোতে।
Leave a Reply