আমার ছোট ভাইটার উপর সবাই খুব বিরক্ত। মা, বাবা এবং আমার অন্যান্য ভাই-বোনসহ আমাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনরাও প্রায়ই তার উপর বিরক্তি প্রকাশ করে থাকে। কারণ একটাই, আর তা হচ্ছে পুরনো স্মার্টফোন কেনা তার নেশা আর সারাদিন সে ফোন নিয়েই পড়ে থাকে।
বাজারে নতুন কোন ফোন এলো, কোন ফোনের কি কি ফিচার, কি কি সুবিধা বা অসুবিধা, সবই সে এক নাগাড়ে মুখস্থ বলে দিতে পারে। শুধু নতুন ফোন নয়, পুরনো হয়ে যাওয়া যে কোনও কোম্পানীর যে কোনও ফোনের যাবতীয় সব তথ্যই তার নখ দর্পণে।
ফোন নিয়ে সে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে, জগতে তার কাছে আর কোনও খবর নেই। আপনি যদি তার সঙ্গে কোনও নতুন বা পুরনো কোনও স্মার্টফোন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যাবে; কিন্তু তার কথা পুরোবে না।
কিন্তু যদি কথা বলেন সিলেটে তরুণী ধর্ষণ ও ধর্ষকদের গ্রেফতার নিয়ে বা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন আর তৈলবাজদের তৈলাক্ত অনুষ্ঠান নিয়ে কিংবা কথা বলেন ৫০০ কিলোমিটার বৃষ্টিতে রংপুরের ডুবে যাওয়া নিয়ে, তবে সে আপনার দিকে হা-করে তাকিয়ে থাকবে। কারণ, এগুলোর কোনটি সম্পর্কেই সে কিছু জানে না।
জানবে কি করে! দেশের কোনও খবরই তো সে রাখে না, এমনকি আমাদের পরিবারেরও না। মাসের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই সে কোনও না কোন স্মার্টফোন কিনে থাকে এবং দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই সে ফোন নিয়ে পড়ে থাকে।
আপনি হয়তো ভাবছেন, এত স্মার্টফোন কেনার টাকা কোথায় পায় সে! হুম, সে এখন দস্তুর মতো মোবাইল ব্যবসায়ী। পুরনো মোবাইল কেনা-বেচা করে আয় করছে সে বিপুল পরিমাণে। শুরুর দিকে অবশ্য সে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এটা করেনি, করেছি প্যাশন থেকে, নেশা থেকে। পরবর্তীতে পুরনো মোবাইল কেনার এ নেশাই তাকে নানাভাবে লাভবান করেছে।
এখন দেখা যাচ্ছে, পুরনো কোনও ফোন কেনার জন্যে তাকে আর নতুন করে ইনভেস্ট করতে হচ্ছে না। কারণ, যে ফোনটি সে কিনছে সেটিকে ঘেঁটে-ঘুটে কিছুদিন ব্যবহার করে বিক্রি করে দিচ্ছে। আর প্রায় সব বিক্রিতেই তার কিছু না কিছু লাভ হচ্ছে।
চাইলে আপনিও আমার এই ছোট ভাইটির মতো পুরনো ফোন কিনে প্রায় সব ধরণের ফোন ব্যবহারের সুবিধা উপভোগের পাশাপাশি কিছু লাভও করতে পারেন। শুধু তাই নয়, পুরনো ফোনের আরো কিছু সুবিধা রয়েছে। আসুন জানা যাক, যে ৫ কারণে আমাদেরও পুরনো মোবাইল ফোন কেনা উচিৎ।
পুরনো স্মার্টফোন কেনার সুবিধা
বাজারে প্রতিনিয়তই নতুন স্মার্টফোন আসছে। সেগুলোতে ডিজাইনের নতুনত্ব যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ফিচার ও ফাংশনালিটির ভিন্নতা। এই ফোনগুলোই এক সময় পুরনো হচ্ছে আর এগুলো কেনার মাধ্যমে আপনি যে-সব সুবিধা পাচ্ছেন, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
কম দামে কেনা যায়
পুরনো ফোনের প্রতি মানুষ এ কারণেই আকৃষ্ট হয়ে থাকে যে, এটি কম দামে কেনা যায়। একটা নতুন ফোনের পেছনে বেশ ভাল অংকের টাকা ইনভেস্ট করতে হয়। বিশেষ করে যদি কোনও ভাল ব্র্যান্ডের ফোন কেনার প্ল্যান থাকে। কিন্তু সেই একই ফোনই কেনা যায় অনেক কম দামে, যেহেতু সেটি ইউজড্ বা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন। তবে, কম দামে নতুন ফোন কেনার সুবিধাও রয়েছে যা মোটামুটি বাজেটের মধ্যে কেনার ক্ষমতা রাখেন অনেকেই।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়
বিশ্ব সেরা ১০টি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড সম্পর্কে আমরা জানি। এর বাইরেও আরো অনেক স্মার্টফোন কোম্পানী রয়েছে। একজন মানুষের পক্ষে সবগুলো ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ব্যবহার করা সাধারণত সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু, আপনি যদি পুরনো স্মার্টফোন কেনেন, তবে আপনার পক্ষে প্রায় সব ব্র্যান্ডের ফোন ব্যবহারই সম্ভব।
সব ধরণের ফিচারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়
প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোনেই কিছু না কিছু ভিন্ন বা ব্যতিক্রমী ফিচার থাকে। প্রতিটি কোম্পানীই তাদের নতুন স্মার্টফোনে কিছু ভিন্নতা রাখার চেষ্টা করেন। সেটা যেমন আউট ডিজাইন বা বাহ্যিক সৌন্দর্যের দিক থেকে, তেমনই ভেতরের ফাংশনালিটি বা ফিচারের দিক থেকেও। পুরনো স্মার্টফোন কেনার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে সব ধরণের ফিচারের সাথেই পরিচিত হওয়া যায়।
সব পুরনো ফোনই কিন্তু পুরনো নয়
প্রায়ই এমন পুরনো ফোন পাওয়া যায়, যেটা আসলে পুরনো নয়। অল্প কিছুদিন ব্যবহার করা ফোন। কিংবা, বেশিদিন ব্যবহার করা ফোন, কিন্তু দেখতে একেবারেই নতুন। কেউ হয়তো খুব শখ করে একটি ব্র্যান্ড নিউ ফোন কিনেছে, কিন্তু বিপদে পড়ে বিক্রি করে দিতে চাইছে। আপনি যদি এ ধরণের একটি ফোন পেয়ে যান, তবে তো আসলে আপনি কম দামে নতুন ফোনই কিনলেন।
পুরনো স্মার্টফোন কেনার বেশ কিছু সুবিধা জানলেন যেগুলো আপনাকে হয়তো সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কিনতে উৎসাহিত করেছে। তবে, মনে রাখতে হবে যে পুরনো ফোনের কিছু অসুবিধাও আছে। সেগুলো অ্যাভয়েড করে কিনতে পারলে, পুরনো ফোনের মজা উপভোগ করতে পারবেন।
Leave a Reply