যখন আপনি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করবেন, তখন শুরু হবে প্রশ্নোত্তরের পালা। কোন কিছু জানার শুরুটা হয় কৌতূহল থেকে। এই কৌতূহলের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটে শেখার আগ্রহের। আপনি যত বেশী প্রশ্ন করবেন, উত্তর পাবার সাথে সাথে আপনার জ্ঞানের পরিধিও বাড়তে থাকবে।
বিজ্ঞান জানার মাধ্যমে আপনি আপনার চারপাশটা বুঝতে পারবেন। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানের অংকুরেই নিহিত আছে অগণিত শাস্ত্রের নির্যাস। আমাদের পড়াশোনা এবং কর্মজীবনে এর প্রভাব অপরিসীম। এই পোস্টটিতে আপনি জানতে পারবেন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেগুলো আপনাকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করবে।
বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার ৩টি প্রধান কারণ
সময়ের বিবর্তনে বিজ্ঞান মানব সভ্যতার বর্তমান রূপ দিয়েছে। ঠিক তেমনি, আমাদের ভবিষ্যতকে সমৃদ্ধ করে সাজাতে হলেও প্রয়োজন বিজ্ঞান চর্চা। চলুন, দেখা যাক- কোন ৩টি কারণে আপনার বিজ্ঞান নিয়ে পড়া উচিৎ।
১/ বিজ্ঞান সময় ও সভ্যতার রূপকার
বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার বদলে দিয়েছে পৃথিবীকে। ক্ষুদ্র বালুকণা থেকে শুরু করে বিশাল আকাশচুম্বী অট্রালিকা মানুষকে চমকে দিয়ে জায়গা করে নিয়েছে পৃথিবীর বুকে। সেসব কিছু ইতিহাস হয়ে গেলেও ভবিষ্যত গড়ার জন্য সেগুলোর ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।
সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের ধারাবাহিক অগ্রগতির ঘটনাগুলো একবার ভাবুন।
- প্রথমে মানুষ যোগাযোগের জন্য ইশারা ও শব্দ ব্যবহার করতো। তারপর আসলো আগুন ও ধোয়ার ব্যবহার। এভাবে কালক্রমে মানুষ উদ্ভাবন করলো ভাষা।
- পরিবহণে ব্যবহৃত হতো গৃহপালিত পশু। অতঃপর, কাঠের চাকা তৈরির পর থেকে পরিবহণের মাত্রা পাল্টে যেতে শুরু করে।
অর্থাৎ, প্রতি ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে মানুষ অগ্রসর হয়েছে। প্রতি ধাপে পেছনের ধাপগুলোর কথা মাথায় রাখা হয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদে অবস্থার উন্নতি সাধনের চেষ্টা চলেছে।
ইশারায় যোগাযোগ করা মানুষটি দূরত্বের কারণে যখন ঠিকভাবে তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছিলো না, তখনই প্রয়োজন হয় শব্দের। আরো বেশী দূরত্বের কারণে ইশারা বা শব্দে কাজ না হলে ব্যবহার করা হয় আগুন ও ধোয়া। এখানে, প্রয়োজনীয়তা উদ্ভাবনের জনক কথাটি সত্যতা পাওয়া যায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটেও এ তত্ত্বটির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।
- বাজারে আসা নতুন ডিভাইস বা মেশিনের ক্ষেত্রে পূর্বের মডেলে অনুপস্থিত থাকা সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
- অতীতের দূরত্ব ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানোর সময়ের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে বুলেট ট্রেইন।
এগুলোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ধাপগুলোর বিজ্ঞান বিবেচনা করেই উন্নতি সাধন করা হয়েছে।
এখন ভাবছেন আপনাকে তাহলে বিজ্ঞান চর্চা করে বিজ্ঞানী হয়ে যেতে হবে? একদম-ই না। বিজ্ঞান মানে শুধু কঠিন কঠিন মেশিনের সুক্ষ্ম কার্যপদ্ধতি জানা নয়।
আপনি যখন প্রথম জেনেছিলেন যে গাছের প্রাণ আছে, তখনিই আপনার একবার বিজ্ঞান চর্চা হয়ে গেছে। আর, তাই তো আপনি গাছের জন্য পানির ব্যবস্থা করেন। অতঃপর, একটি সবুজ পৃথিবী গড়ার নিমিত্তে আপনি সেই গাছ বড় হয়ে ওঠার জন্য পরিবেশ তৈরি করে দেন। এখানেই বিজ্ঞান চর্চার আসল সার্থকতা।
তাই, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেও আপনার উচিৎ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা।
২/ বিজ্ঞান বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষা ও কর্ম ক্ষেত্রের প্রভাবক
শিক্ষা ক্ষেত্রে
মাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান এই তিনটি বিভাগে নির্বাচন করার সুযোগ শুরু হয়। এখানে বিজ্ঞান বিভাগ নির্বাচন করা হলে পরবর্তীতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভাগ পরিবর্তন করে বিজ্ঞান থেকে মানবিক অথবা ব্যবসায় শিক্ষায় যাওয়া যায়। মাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা থাকলে সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিকে যাওয়া যায়। কিন্তু, মানবিক থেকে কোন বিভাগেই যাওয়া যায় না। এ ব্যাপারটি সবার-ই জানা।
তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের যে কোনো বিভাগ বা বিষয় নিয়ে পড়ার অগ্রাধিকার থাকে। ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক বিভাগের কোন শিক্ষার্থী প্রকৌশলের কোন বিষয় নিয়ে পড়তে পারে না। কারিগরি বিভাগে কোন বিষয় নিয়ে স্বল্পকালীন কোর্স বা ডিপ্লোমা করতে পারে। কিন্তু, স্নাতক বা সম্মান পড়তে পারে না।
অপর দিকে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় প্রশাসনে ভর্তির ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে। সরকারির পাশাপাশি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ব্যতীত অন্যান্য বিষয়গুলোতে ভর্তি হতে দেখা যায়।
এ তো গেলো শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সুবিধার কথা। কর্মক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের রয়েছে সুদূরপ্রসারী প্রভাব।
কর্মক্ষেত্রে
সামাজিকভাবে অধিক গ্রহণযোগ্য পেশা ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্য অবশ্যই দরকার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। কিন্তু আত্মবিঃশ্বাস, ধৈর্য্য এবং বিষয়টির প্রতি ভালো লাগা থাকলে যে কোনো বিষয়েই উন্নত ক্যারিয়ার সাজানো সম্ভব।
বর্তমানে ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশীয় ও বিদেশী কোম্পানিতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাজ করতে দেখা যায়। মার্কেটিংসহ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভিন্ন শাখায় তারা বেশ ভালো কাজ করে নিজেদের ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিচ্ছে।
তথ্য ও প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলে কর্পোরেট জগতে এখন প্রযুক্তিগত জ্ঞান অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারিগরি বিভাগের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় কর্মরত লোকদেরও আইটি বা তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞান বাধ্যতামুলক হয়ে পড়েছে। এমনকি, নথি ব্যবস্থাপক এবং গ্রাহক সেবা প্রতিনিধিদেরও সম-সাময়িক তথ্য-প্রযুক্তির খবরাখবরের ব্যাপারে অবহিত থাকতে হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপারে এই নিয়মিত খবর রাখাটা মানে এই না যে, আপনাকে রীতিমত সে ব্যাপারে দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে হবে। আপনি নতুন পাওয়া তথ্যটি এমনভাবে জানবেন যেন, সেটাকে আপনি আপনার নিজের জন্য এবং আপনার কোম্পানির জন্য কাজে লাগাতে পারেন।
ধরুন, আপনি এই মাত্র জানতে পারলেন যে, গুগল মিটের মাধ্যমে একসাথে অনেক জন এক ঘন্টারও বেশী সময় ধরে অনলাইন মিটিং করা যায়। এখন আপনি যদি চান, আপনিও আপনার ১০ জন বন্ধুর সাথে অনলাইনে গল্প করবেন, তাহলে আপনার প্রথম পদক্ষেপ কি হবে?
- অবশ্যই আপনি গুগল মিটের উপর কোন প্রিমিয়াম কোর্সে ভর্তি হবেন না!
- অথবা, এর মত কোন সফ্টওয়্যার আপনি নিজের জন্য বানানোর চেষ্টা করবেন না!
- আবার, এখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা অনেক জন একসাথে মিটিং করা যায়- শুধু এতটুকু জেনে বসে থাকলেও হবে না।
আপনার সাধারণ বোধ দিয়ে একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন। আপনার যা করতে হবে তা হচ্ছে, গুগল মিট কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা শেখা। ব্যবহার বলতে-
- কিভাবে গুগল মিটে আপনার নিজের একটা আইডি খুলবেন।
- কিভাবে আপনার বন্ধুদের ইমেইল আইডি নিয়ে তাদেরকে স্বাগত জানাবেন।
- সর্বোপরি কিভাবে নির্দিষ্ট সময়ে একটা মিটিং-এর ব্যবস্থা করবেন।
আর হ্যা, এই কাজগুলোর জন্য আপনাকে অবশ্যই সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে না।
৩/ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা অতঃপর সৃজনশীলতা
আমরা কেউই জানি না কালকের দিনটা পরিকল্পনা মাফিক কাটবে কিনা। এরপরেও আমরা আগে থেকে সব সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করি। এখন, ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো কতটুকু আমাদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সেটা নির্ভর করছে আমরা কিভাবে পরিকল্পনাটা করছি তার উপর।
আপনি যদি ধরাবাধা চিন্তার বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রমভাবে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলোর প্রভাব অনুমান করতে পারেন, তখনিই আপনার পরিকল্পনা পদ্ধতি সফলতার মুখ দেখবে। আর, এই ব্যতিক্রমী চিন্তাটাই হলো সৃজনশীলতা।
সৃজনশীলতা আপনার ভেতর যে কোনো ব্যাপারকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ক্ষমতা তৈরি করবে। ফলে, আপনি পরিণত হবেন সেরা সমস্যা সমাধানকারীতে।
আপনি যখন আপনার কোন বন্ধুকে কোন একটা সমস্যা সমাধান করতে দেখেন, তখন স্বভাবতই আপনি আফসোস করেন এই ভেবে যে, ইশ! এই দিকটা আমি আরো আগে কেন খেয়াল করলাম না! তাহলে তো আমিই সমস্যাটা সামাধান করে ফেলতে পারতাম!
বিজ্ঞান চর্চা আপনার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষকে উত্তেজিত করে তোলে। যেটাকে বলে নিউরনের অনুরণন। এর ফলে আপনি যে কোনো সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন।
আপনি নিশ্চই ক্যালকুলেটর আবিষ্কারের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন। শুধুমাত্র গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে গবেষণায় সময় বাঁচানোর জন্য তৈরি হয়েছিলো এই ছোট্ট সাধারণ যন্ত্রটি। প্রয়োজনীয়তা ও সৃজনশীলতার এক দারুণ মেলবন্ধন ঘটেছিলো সেখানে।
আবিষ্কারের কথা শুনে ভাববেন না যে, আপনাকেও আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায়ই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হই। এগুলো আপনি সমাধান করতে পারেন সৃজনশীল পরিকল্পনার মাধ্যমে।
আর, এখানেই আসছে বিজ্ঞান চর্চা। জীবনের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই সৃজনশীলতার অনুশীলন একটি শিশুকে পরবর্তীতে জীবনের বড় বড় সমস্যাগুলোর জন্য পরিপক্ক করে তোলে।
পরিশিষ্ট
এ কথা বলাই বাহুল্য যে, বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা, তত্ত্ব-উপাত্ত ও যুক্তিবিদ্যা থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতি এমনকি, আইন শাস্ত্রকেও পৃথক করা যাবে না। আপনার যে কোনো বিষয়ের প্রতি ভালো লাগা থাকতেই পারে। আপনি সম্পৃক্ত থাকতে পারেন অন্য যে কোনো পেশায়। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা সে বিষয়টিকে আপনার কাছে আরো আনন্দদায়ক করে তুলবে। পাশাপাশি, আপনি আরো বেশী দক্ষ হয়ে উঠবেন নিজের পেশায়। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানাতে পারেন। আর, লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করতে পারেন।
Rakib Hasan says
ধন্যবাদ, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্যে। বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে আমার ভালো লাগে।