লিওনেল আন্দ্রেস মেসি নামটা শুনলেই এমন একজন খেলোয়াড়ের কথা চোখে ভেসে উঠে যাকে বলা হয় কিং অফ ফুটবল। ফিফা কিংবা লীগ সব জায়গায় তার সমান রাজত্ব। সবাইকে অবাক করে যিনি পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জিতলেন, সেই তিনিই বিশ্বের সেরা ফুটবলার, লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে থেকে শুরু হওয়া এই মেসি আজ নিজেকে এমন একটি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যেখানে তিনি হয়েছেন সেরাদের সেরা। বিশ্ব দরবারে নিজের পরিচয়টা লিখেছেন ফুটবলের বাদশা হিসাবে। আসুন দেখে নিই কেন মেসিই বিশ্বের সেরা ফুটবলার।
যে কারণে মেসিই বিশ্বের সেরা ফুটবলার
যে-সব কারণে বর্তমানে সময়ের সেরা ফুটবলার হিসেবে মেসিকেই বিবেচনা করা, সেগুলো থেকে সেরা ১০টি কারণ নিচে উল্লেখ করা হল।
মেসির নিজেকে নিয়ন্ত্রণ
লিও মেসির উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। এই উচ্চতায় মেসি তার আদর্শ দিয়েগো ম্যারাডোনার চেয়ে মাত্র ২ ইঞ্চি লম্বা কিন্তু মেসির নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা দিয়াগো ম্যারাডোনার মতোই। যে কারণে মেসি অর্জন করেছে তার এই বিস্ময়কর গতি।
মেসির এই তীব্র গতি হওয়ার কারণে ম্যাচে অনেক সময় ল্যাফট ব্যাকদের বিশ্রামহীন অবস্থায় থাকতে হয়। সবার চেয়ে সেরা হওয়ার পেছনে এটি একটি অন্যতম কারণ।
মেসির বল নিয়ন্ত্রণ
সত্যিকারের সব মহান খেলোয়াড়দের মতো বল নিয়ন্ত্রণ করতে মেসির ওয়ান টাচ এর বেশি দরকার হয় না বললেই চলে। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় উড়ে আসা বল মেসির প্রথম টাচেই দ্বিগুণ স্পিডে এগিয়ে যায়।
এই কারণেই মেসির পায়ে বল দ্বিতীয় বার আসতে না আসতেই মেসি ডিফেন্ডার থেকে ৪/৫ গজ এগিয়ে আসে। ফলে মেসি খুব সহজেই বল আক্রমণ করতে পারে।
মেসির ধৈর্য
মেসি যে কি পরিমাণ ধৈর্যশীল সেটা আমরা তার খেলাতেই দেখে থাকি। খুব কম সুযোগেই সে মিস করে। মেসি যদি একবার পেনাল্টি এরিয়াতে ঢুকে যেতে পারে তাহলে গোলকিপার আত্নসমর্পন করা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে। এরপর সে সুযোগ বুঝে গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে বল শুট করে ফলে বল গোলকিপারের নাগালের বাইরে গিয়ে সোজা গোলপোস্টের ভিতর চলে যায়।
বলা যায়, এটি মেসির একটি অসাধারণ গুন। এই গুনটিই মেসির সেরা হওয়ার আরেকটি কারণ।
মেসির ড্রিবলিং
মেসির অন্যসব বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য অন্যসব লিজেন্ডারি ফুটবল খেলোয়াড়কে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর তা হচ্ছে মেসির ড্রিবলিং করার ক্ষমতা। যা মেসিকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। একসাথে একাধিক ডিফেন্ডারকে খুব সহজেই ড্রিবলিং করে পরাস্ত করা রনক্ষেত্রে মেসির অসাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য। মেসির এই ইউনিক স্ট্র্যাটিজি খুব কমেই দেখা যায়।
মাঝে মাঝেই মেসি এতবেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে যে সত্যিই তাকে পরাস্ত করা খুব মুশকিল হয়ে উঠে অন্য খেলোয়াড়দের। লিওনেল মেসি তার আদর্শ ম্যারাডোনার মতই শুধুমাত্র বাম পা ব্যবহার করেই ড্রিবলিং করে থাকেন। যখন বল পায়ে ফুল স্পিডে আসে ঠিক তখনি মেসি ডান পায়ে শর্ট করে থাকেন। আর এই জন্যই ফুলবল প্রেমীদের কাছে মেসি ম্যাজিক্যাল মেসি নামে পরিচিত। অনেকটা জাদুর মতোই তিনি বলকে কন্ট্রোল করে থাকেন।
মেসির উদারতা
ফুটবল বিশারদরা মনে করেন ফরোয়ার্ডে খেলে কোন গোল পেতে হলে খেলোয়াড়কে অবশ্যই সামান্য স্বার্থপর হতে হবে। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি বদলে দিয়েছেন মেসি। মেসির দলের কোনো খেলোয়াড় যদি মেসির চেয়ে ভালো অবস্থানে খেলেন, তখন মেসি তাকেই বল দিয়ে গোল করান।
এমন ঘটনা খুব কম ঘটেছে মেসি বল দেননি। বিশ্বাস হচ্ছে না? এর প্রমাণ প্রতি বছর এসিস্ট তালিকায় সেরা তিনে থাকেন মেসি। ২০০৯-১০ মৌসুমের এক ম্যাচে জারাগোজার সাথে মেসি হ্যাট্রিক করার পর ডি-বক্সে ফাউল করলে পেনাল্টি দেন ম্যাচ রেফারি। তখন মেসি ৪র্থ গোলটি না করে নিজ দলের ইব্রাকে দেন গোল করার জন্য। যার কারন ইব্রা সে সময় গোল শূন্যতায় ভুগছিলো। এই পর্যন্ত বলা সবচেয়ে অসাধারণ গুণ হল মেসির এই উদারতা। সত্যিই তার এই গুণ অন্যান্য খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরনার।
মেসির পাসিং
মেসিকে ভালবাসে না এমন মানুষও অবিশ্বাস করতে পারবেন না যে মেসিই বার্সার সেরা পাসদাতা। আর এটাই মেসির লিওনেল মেসি হওয়ার অন্যতম কারন। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং জাভি হার্নান্দেজ এই দুইজন থেকে ভালো না হলেও যখন মার্কিং অবস্থায় থাকেন, মেসি ঠিক তাদের খুজে বের করেন। মেসির এই দৃষ্টিশক্তি এবং চতুরতা অন্য সবার চেয়ে যে আলাদা সেটা আর বিস্তারিত না বললেই চলে।
মেসির পাওয়ার
বল শুটিং করার জন্য সব খেলোয়াড়রাই সামান্য ছুরি থেকে মেশিনগান সবই ব্যবহার করে থাকে প্রয়োজন অনুযায়ী। মেসি ডি-বক্সের বাইরে থেকে যে বুলেট গতির শট করেন, সেটি খুব সহজেই যে কোন গোলকিপারকেই বোকা বানাতে পারে। আর এর প্রমাণ মিলাতে বেশি দূরে যেতে হবে না। গত বছর ব্রাজিলের সাথে অনুষ্টিত ম্যাচে মেসি হ্যাট্রিক করেন। সেই ম্যাচেই মেসির দেয়া তিন নাম্বার গোলটা দেখলেই বুঝতে পারবেন মেসির শুটিং পাওয়ার। এছাড়াও আরও একটি উদাহরণ আপনাকে দিতে পারি, ২০১১ তে হওয়া ইউসিএল ফাইনালে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের সাথে মেসির গোলটাও এভাবেই হয়েছিল।
মেসির গতি
মেসির শারীরিক সমস্যা থাকায় তার শারীরিক গঠন বামন পর্যায়ের। তা হওয়া সত্বেও মেসি যখন দৌড়ানো আরম্ভ করে, তখন সাথে সাথেই বিস্ময়কর ত্বরণ সৃষ্টি করতে পারে। আর মেসির দৌড় আরম্ভের মাত্র ৫ গজ পরেই তিনি পূর্ণ গতিতে দৌড়াতে পারেন। ফলে তার সাথে প্রতিযোগিতা করে উঠা যে কোনো ডিফেন্ডারের পক্ষেই অনেক কঠিন কাজ। মেসি দ্রুত গতিতে ছুটে চলার সময় বিস্ময়করভাবে বলকে নিয়ন্ত্রণে রেখে হঠাৎ করেই দিক পরিবর্তণ করে ফেলতে পারেন।
সতর্কতা
মেসি যখন ড্রিবলিং করে এগিয়ে যান, তখন অন্যান্য খেলোয়াড়দের মত সব সময় বলের দিকে না তাকিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে বল নিয়ে দৌড়ােতে পারেন। ফলে তার পাশে থাকা নিজ দলের খেলোয়াড়ের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে মেসি জানতে পারেন। একটু সুযোগ পেলেই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ডেফট ফ্লিক করে বল বাড়িয়ে দেন তার সতীত্ব খেলোয়াড়দেরকে।
উপরের দেয়া সব তথ্য থেকে বিন্দুমাত্র বুঝতে অসুবিধা হবে না মেসিই বিশ্বের সেরা ফুটবলার। সেরাদের তালিকায় মেসির নাম চিরকাল থাকবে, ইতিহাস তাকে ভুলবে না ।
Leave a Reply