আইডিয়াই ব্যবসার প্রাথমিক ধাপ, বর্তমানে মেয়েদের জন্যে ব্যবসা আইডিয়া খুঁজে পাওয়া কঠিন কিছু নয়। এমন অনেক ব্যবসা রয়েছে যেগুলো খুবই সামান্য পুঁজি দিয়েই শুরু করা যায়। কিছু ব্যবসা আছে যেগুলো অল্প পুঁজির পাশাপাশি ঘরে বসেই করা যায়। আবার এমন অনেক ব্যবসা আছে যেগুলো মেয়েদের জন্যে সত্যিই বেশ লাভজনক ব্যবসা।
ব্যবসা শুধু ছেলেরা করবে, এ ধারণা পাল্টে গেছে বহু আগে। বিশ্ব জুড়ে বহু নারী রয়েছেন যারা নিজ নিজ ব্যবসা ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল। তাদের সফলতাই অন্য নারীদেরকে নিয়মিত উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। ফলে, ব্যবসা ক্ষেত্রে ক্রমশই নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, সেই সাথে তাদের মতো আরো অনেক নারীর জন্যেই তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মক্ষেত্র।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের নানা রকম হয়রানীর কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। বিশেষ করে যে কর্মক্ষেত্রগুলো পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমি বলছি না যে পুরুষরা পরিচালনা করছে এমন সব কর্মক্ষেত্রেই নারীরা হয়রানীর শিকার। বরং, আমি বলতে চাইছি পুরুষের মাধ্যমে পরিচালিত প্রায় ব্যবসাকেন্দ্রই নারীদের জন্যে নিরাপদ নয়। বাংলাদেশে নারীদের কাজের পরিবেশ কেমন তা আমরা প্রায় সকলেই জানি।
কাজেই, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যেই হোক আর চাকরি থেকে বেরিয়ে নিজেদের পায়ে নিজেদের দাঁড়ানোর জন্যেই হোক, মেয়েদের জন্যে ব্যবসা করাটা দারুণ রোমাঞ্চকর। ব্যবসা তাদের একদিকে যেমন নিরাপত্তা দেয়, অন্যদিকে স্বাবলম্বী করে তোলে।
কিন্তু কি ধরণের ব্যবসা করা যায়? মেয়েদের জন্যে উপযোগী কি কি ব্যবসা আছে? কোন ব্যবসাটি কার জন্যে কতটা গ্রহণীয়? কোন ব্যবসায় কেমন পুঁজি লাগে? কোন ব্যবসা থেকে দ্রুত রিটার্ন আসে? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই আজকের এই লেখা যেখান থেকে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া পাওয়া যাবে। তবে, আপনি যদি অফলাইন ব্যবসায় আগ্রহী না হয়ে থাকেন, তবে মেয়েদের জন্যে ৩টি অনলাইন ব্যবসা আইডিয়া থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
মেয়েদের জন্যে ব্যবসা আইডিয়া
মেয়েরা অনায়াসেই করতে পারে এ রকম অনেক ব্যবসাই রয়েছে। সবগুলো নিয়ে লিখতে গেলে আমার যেমন বোরিং লাগবে, তেমনি আপনাদেরও পছন্দের ব্যবসাটি বেছে নিতে হিমশিম খেতে হবে। তাই, বাছাই করা সেরা ৩টি ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
১. হিজামা বা কাপিং চিকিৎসা
২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক যারা দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে এথলেটদের গায়ের লাল লাল গোলাকার দাগগুলো। ওই বছর অলিম্পিক ধারণকারী ক্যামেরাগুলো ঘুরে ফিরে এথলেটদের শরীরের ওইসব লাল দাগুলোর দিকেই ফোকাস করেছিল। ফলে, দর্শকদের মনে দারুণ কৌতুহল তৈরি করেছিল পেপেরোনির মতো প্লেয়ারদের গায়ের লাল দাগগুলো। তাদের কৌতুহল মেটাতে নিউজ পেপারগুলো যখন ওগুলো নিয়ে একের পর এক বিস্তর লেখালেখি শুরু করেছিল, তখন ধীরে ধীরে বিষয়টি মানুষের মাঝে পরিস্কার হয়ে ওঠেছিল বিশ্ববাসীর কাছে।
বিভিন্ন দেশের নিউজ পেপারগুলোর কল্যাণে বিশ্বের মানুষ জেনেছিল ওই দাগুগুলো হিজামা বা কাপিং চিকিৎসা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি এক ধরণের প্রাচীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা যা মিশর থেকে শুরু হয়ে সুদূর চীন এ আমেরিকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
বুঝতেই পারছেন চিকিৎসার এই পদ্ধতিটি প্রাচীন হলেও এখন পর্যন্ত আধুনিক দুনিয়ায় এটির ব্যবহার রয়ে গিয়েছে। অ্যাথলেটরা সাধারণত শারীরিক কসরতের কারণে নানা রকম আঘাত পেয়ে থাকে। আর ওই সব আঘাত থেকে মুক্তি পেতেই তারা আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার স্থলে হিজামা চিকিৎসা ব্যবস্থার আশ্রয় নেয় যা ২০১৬ সালে সর্বাধিক আলোচিত হয়।
শুধু অ্যাথলেটিস্টদের কাছেই নয়, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রপেশনের মানুষের কাছেই এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণীয়। আমাদের দেশেও দীর্ঘস্থায়ী রোগমুক্তির জন্যে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলণ শুরু হয়েছে এবং দিন দিনই বিস্তার লাভ করছে।
সুতরাং, ব্যবসা হিসেবে মেয়েদের জন্যে এটি একটি অসাধারণ আইডিয়া হতে পারে। কারণ-
- ১. আমাদের দেশের মানুষের মাঝে রোগ-ব্যাধি বেশি। শতকরা ৯০% লোকই কোন না কোন রোগের শিকার হয়ে আছে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও মানুষকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ্য করে তুলতে পারছে না। তার ওপর, আধুনিক চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুলও বটে। যার কারণে আমাদের দেশের ডাক্তারদের আমরা প্রায়ই কসাই বলে থাকি। এমতাবস্থায় হিজামা চিকিৎসা হতে পারে আধুনিক চিকিৎসার দারুণ বিকল্প। কারণ, এ চিকিৎসা পদ্ধতি স্থায়ী, এটি প্রিয়নবীর সুন্নত এবং এটি তুলনামূলকভাবে অনেক সাশ্রয়ী। কাজেই, আমাদের দেশে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার রয়েছে বিশাল এক বাজার।
- ২. এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে যে কয়টি হিজামা সেন্টার গড়ে উঠেছে, তার প্রায় সবক’টিই পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ, এগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিই কোন না কোন পুরুষ প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর পুরুষের হাতে চিকিৎসা নিতে হবে বলে এগুলোতে নারীরা সচরাচর যেতে চাইছে না। যদি কোন নারী হিজামা সেন্টার খোলেন, তবে তিনি অসংখ্য রোগী পাবেন। কাজেই, তার ব্যবসাটাও দারুণভাবে জমে উঠবে।
হিজামা চিকিৎসা কিভাবে শুরু করবেন?
প্রথমে কোথাও থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিন। হিজামা থেরাপিউটিক্স এর উপর এই ডিপ্লোমা কোর্সটির খবরাখবর নিতে পারেন। খোঁজ নিয়ে যদি ভাল মনে হয়, তবে এখান থেকে কোর্সটি করতে পারেন। আমি এদের সম্পর্কে ভালভাবে জানি না, অনলাইনে পেয়েছি। তবে মনে হচ্ছে কোন একজন পুরুষই এটি চালাচ্ছে। আপনি যদি পুরুষের কাছে শিখতে বিব্রত বোধ করেন, তবে ইউটিউব ভিডিও দেখে দেখে শিখতে পারেন। উল্লেখ্য, আমি একটা ভিডিওর লিংক দিয়েছি। খুঁজলে আপনি বাংলা ও ইংরেজীতে আরো অনেক হিজামা ট্রেনিং ভিডিও পাবেন। হিজামা নিয়ে কাজ করছে এমন একটা ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন, অনেক ধারণা পাবেন।
২. পাখি পালন হতে পারে দারুণ ব্যবসা
পাখি পালন এক ধরণের শখ আর আমাদের দেশের মানুষের মাঝে এ শখটি দিন দিনই বাড়ছে। পাখিপ্রেমী এ রকম সৌখিন মানুষদের মাঝে সবাই যে বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন করছে, এ রকম নয়। অধিকাংশই দু’চারটি পাখি কিনে বাসায় সেগুলোর যত্ন নিচ্ছে আর এক ধরণের আনন্দ অনুভব করছে। এ ধরণের মানুষের সংখ্যাটা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কাউকে না কাউকে পাখি পুষতে দেখা যাচ্ছে।
বুঝতেই পারছেন, পাখির ব্যবসা প্রসার হচ্ছে। অর্থাৎ, যারা বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন করে ব্যবসা করছেন, তাদের কপাল খুলছে। চাইলে, আপনিও তাদের সাথে যোগ দিতে পারেন, বাড়িতে বসেই পাখি পালন শুরু করতে পারেন। কেন করবেন?
- ১. এটি একটি শখের ব্যবসা। এ ব্যবসায় একদিকে যেমন শখ মিটবে, মনের মত একটা কাজ করা যাবে, অন্যদিকে ব্যবসাও হবে। যেসব মেয়েরা প্রকৃতি প্রেমী, পাখি দেখতে ভালবাসেন, পাখি পুষতে পছন্দ করেন, তাদের জন্যে এটি একটি অসাধারণ আইডিয়া হবে।
- ২. পাখি পালনে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন, মেয়েদের মাঝে পুরুষের চেয়ে বেশি ধৈর্য্য রয়েছে। কাজেই, এ ব্যবসায় পুরুষের চেয়ে মেয়েদের জন্যে আরো বেশি ভাল করার সুযোগ রয়েছে। পাখি পালনে মোটামুটি ভালই সময় দিতে হয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সময় দেয়াটা পুরুষের চেয়ে সহজ।
- ৩. অন্যান্য অনেক ব্যবসায় বাইরে যেতে হয়, কিন্তু এ ব্যবসায় খুব একটা বাইরে যেতে হবে না। সুতরাং, যেসব মেয়েরা ঘরে বসেই কিছু না কিছু করতে চান, তাদের জন্যে এটি একটি দারুণ ব্যবসা হবে।
- ৪. পাখির ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। কারণ, প্রায় সব ধরণের পাখিই বাচ্চা দিয়ে থাকে। তার মাঝে কিছু কিছু পাখি আছে যেগুলো নিয়মিত বাচ্চা দেয়। এমনকি, বছরে বেশ কয়েকবারই বাচ্চা দিয়ে থাকে। আর পাখির বাচ্চা বিক্রি করে অনেক লাভ করা যায়। সুতরাং, মেয়েদের জন্যে পাখি পালন একটি চমৎকার ব্যবসা হতে পারে।
কোথা থেকে পাখি কিনবেন?
আপনি যে এলাকায় থাকেন, খুঁজলেই তার আশে-পাশে কোথাও না কোথাও পাখির দোকান পাবেন। বিভিন্ন এলাকায় সপ্তায় একদিন পাখির বাজারও বসে থাকে। ঢাকায় সবচেয়ে বড় পাখির হাট বসে পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারে।
এছাড়া পুরান ঢাকার রিয়াজউদ্দিন বাজারেও সব সময় পাখি পাওয়া যায়। আর নীলক্ষেতের পাশের কাটাবনের কথা কে না জানে! মোহাম্মদপুর, রায়ের বাজার, নিমতলীতেও পাখি কিনতে পাওয়া যায়। একটু সস্তায় পাখি কিনতে চাইলে যেতে পারেন ঢাকার টঙ্গী বাজার। প্রতি রবিবার সেখানে পাখির হাঁট বসে।
৩. ওয়েডিং প্ল্যানিং একটি সৃজনশীল ব্যবসা
কারো বিয়ের জন্যে সুষ্ঠু পরিকল্পণা করা এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে একজন ওয়েডিং প্ল্যানারের কাজ। ওয়েডিং প্ল্যানিং বা বিয়ের অনুষ্ঠানের প্ল্যানিং একটি দারুণ ব্যবসা। বিশ্ব জুড়ে বহু তরুণ-তরুণী এটাকে তাদের পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। আমাদের দেশেও এটিকে পেশা বা ব্যবসা হিসেবে নেয়ার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাই, আপনিও যোগ দিতে পারেন এ পেশার পরিবারে।
প্রতিটি মানুষই তার বিয়ের মুহুর্তগুলোকে স্বরণীয় করে রাখতে চায়। তাই, গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে বৌভাত পর্যন্ত প্রতিটি অনুষ্ঠানকেই আকর্ষণীয় করার জন্যে নানা রকম পরিকল্পণা করতে হয়। কিন্তু নাগরিক ব্যস্ততার দরুণ নিজের বিয়ের পরিকল্পণা করা ও তা বাস্তবায়ন করার সময় মানুষের হাতে নেই। ফলে, মানুষ এগুলোর দায়িত্ব অন্যের উপর, বিশেষ করে ওয়েডিং প্ল্যানিং ফার্মের উপর অপর্ণ করে চিন্তামুক্ত থাকতে চায়।
বর ও কণের, উভয় পক্ষের অভিভাবকরাও আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দেয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য নানা কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে বিয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজটি অন্যের উপর অর্পণ করতে চান। কারণ, একটা বিয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারে ওয়েডিং প্ল্যানাররাই। চাইলে আপনিও এই সৃজনশীল পেশাটিতে আসতে পারেন, অন্যদের বিয়েতে সাহায্য করে নিজের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারেন। কেন আসবেন ওয়েডিং প্ল্যানিং পেশায়?
- ১. মেয়েদের জন্যে এ পেশাটি রোমাঞ্চকর। ছেলেদের চাইতে মেয়েরা বিয়ে বিষয়ক যাবতীয় সবকিছু সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে থাকে। উপভোগের এ জায়গাটিতে যদি পেশাদারিত্ব নিয়ে আসা যায়, তবে সফল হওয়ার সম্ভাবণা বেড়ে যায়।
- ২. চলতি সময়ে বেশিরভাগ ব্যবসাই ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে মেয়েদের জন্যে সব ব্যবসাই সুইটেবল নয়। এর মাঝে বিয়ে ব্যবস্থাপনা মেয়েদের জন্যে অত্যন্ত আনন্দের ও উপভোগের ও লাভজনক। এতে কোন রকম ঝুঁকি নেই।
- ৩. প্রায় সব ব্যবসাতেই পুঁজি খাটাতে হয়, কোন কোন ব্যবসায় ভালই পুঁজির প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিয়ে ব্যবস্থাপনা বা ওয়েডিং প্ল্যানিং এ তেমন কোন পুঁজির প্রয়োজন নেই। কারণ, যাদের বিয়ের ব্যবস্থাপনা করতে হবে, তারাই সব ধরণের আর্থিক সংকুলান করে থাকেন।
মেয়েদের জন্যে ব্যবসা আইডিয়া হিসেবে এ ৩টিকেই সিলেক্ট করা যায়। এ ৩টির সবটিতেই সৃজনশীলতা রয়েছে আর সবগুলোই একটু ভিন্ন ধাঁচের। কিন্তু আপনি তো আর সবগুলো একসঙ্গে করতে পারবেন না। তাই, এ ৩টি ব্যবসা থেকে যদি কোনটি পছন্দ হয়ে যায়, তবে কেবল সেটি দিয়েই শুরু করে দিন। প্রথমে ছোট পরিসরেই শুরু করতে পারেন, পরে না হয় আস্তে আস্তে ব্যবসার পরিধি বাড়াবেন।
Leave a Reply