মাথাব্যথার কারণ জানা জরুরী, যদি এই অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চান। যে কারণগুলো মাথাকে ব্যথার দিকে নিয়ে যায়, সেগুলো হলো-
- আবেগজণিত কারণ: মানসিক চাপ, হতাশা, উদ্বেগ।
- মেডিকেল কারণ: মাইগ্রেন, হাই ব্লাড প্রেশার।
- শারীরিক কারণ: অ্যাক্সিডেন্ট, মাথায় বা মাথার সাথে রিলেটেড কোনও অঙ্গে আঘাত।
- পরিবেশগত কারণ: আবহাওয়ার পরিবর্তণ।
মাথাব্যথা প্রতিটি মানুষেরই কোনো না কোনো সময় হয়ে থাকে। তবে এক একজনের ক্ষেত্রে মাথাব্যথার কারণও হয়ে থাকে ভিন্ন। মাথাব্যথা কী- এই প্রশ্নটি কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলবে মাথার ব্যথা। তবে মাথাব্যথার সঠিক সংজ্ঞা আপনাকে কেউই দিতে পারবে না। চলুন জেনে নেয়া যাক মাথাব্যথা কী ও মাথাব্যথার ১৫টি কারণ।
মাথাব্যথা কী?
মাথায়, মুখে বা গর্দানের উপরি অংশের ব্যথাকে সাধারণত মাথাব্যথা বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, মাথার যেকোনো অংশে যখন ব্যথা অনুভব হয়, তখনই তাকে মাথাব্যথা বলে। মাথাব্যথা তীব্র বা নিস্তেজ হতে পারে, মাঝেমধ্যে মাথা ঘুরতেও পারে।
মাথাব্যথা কত প্রকার ও কি কি
মাথাব্যথা শুধু এক প্রকার হয় না। মাথার কোন স্থানে ব্যথা হচ্ছে বা কোন কারণে ব্যথা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে মাথাব্যথা হয় বিভিন্ন প্রকার। জেনে নেয়া যাক মাথাব্যথার সে প্রকারগুলো কী কী:
১. চিন্তার কারণে মাথাব্যথা
অধিক চিন্তা, হতাশা ও ক্লান্তির কারণে এ ধরণের মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি মাথায় নিস্তেজ ব্যথা অনুভব করবেন।
২. হালকা মাথাব্যথা
এই ধরণের মাথাব্যথাকে ইংরেজিতে “ক্লাস্টার হেডেক” বলা হয়। এক্ষেত্রে মাথাব্যথা কিছু সময় পর পর আসে-যায়। এরকম মাথাব্যথায় আপনার কপালে বা মুখে ব্যথা হতে পারে।
৩. মাইগ্রেন
মাইগ্রেনের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। মাইগ্রেন হলে আপনার পুরো মাথায় তীব্র ও গভীর ব্যথা করবে। এমতাবস্তায় আপনি আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উঠবেন।
৪. সাইনাস মাথাব্যথা
এ ধরণের মাথাব্যথা সাধারণত যে কোনো প্রকার এলার্জির কারণে হয়ে থাকে। আপনি আপনার মাথার সামনের দিকে, গালে ও নাকের হাড়ে ব্যথা অনুভব করবেন, যদি আপনার এ রকম মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
মাথাব্যথার কারণ
১. অনিদ্রা
অনিদ্রা মাথাব্যথার একটি অন্যতম কারণ। ঘুমানোর রুটিনে পরিবর্তন আনলে মাথাব্যথা হতে পারে। আপনার যদি রাত জাগার অভ্যাস থাকে কিংবা রাতে ভাল ঘুম না হয়, তাহলে মাথাব্যথা আপনার পিছু ছাড়বে না। ভাল ঘুমের জন্যে কিছু ভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন।
২. হাইপোগ্লাইসেমিয়া
রক্ত প্রবাহে গ্লুকোজের স্বল্পতার নামই হাইপোগ্লাইসেমিয়া। মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য মানুষের শরীরের গ্লুকোজের দরকার হয়। শরীরে যদি কোনো কারণে গ্লুকোজ স্বল্পতা দেখা দেয়, তাহলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তাই, মাথাব্যথা হয়।
৩. স্ট্রেস
স্ট্রেস অথবা চাপ মাথাব্যথার একটি প্রধান কারণ। শারীরিক, মানসিক বা অন্য যে কোনো ধরণের চাপের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। পারিবারিক সমস্যার কারণে স্ট্রেস হতে পারে। তাছাড়া, যদি কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিমান বেড়ে যায়, তাহলে মানসিক চাপ পড়তে পারে। আর ফলাফল হিসেবে মাথাব্যথা হতে পারে। তাই, জেনে নিন প্রচন্ড মানসিক চাপে পড়লে যে ৫টি কাজ করবেন।
৪. হতাশা
বিভিন্ন কারণে একজন মানুষের জীবনে হতাশা দেখা দিতে পারে। সে কারণগুলো হতে পারে পারিবারিক বা সামাজিক। একজন মানুষের চিন্তাধারা যখন বদলে যায়, নিজের প্রতি বা আশপাশের মানুষের প্রতি, তখন বুঝতে হবে যে মানুষটি হতাশায় ভুগছে। একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষ জীবনের অনেক কিছুর প্রতি প্রেরণা হারিয়ে ফেলে। অনেক দিনের হতাশা একজন মানুষকে আত্মঘাতী করে ফেলে। একজন হতাশ মানুষের মাথায় অনেক চিন্তাভাবনা থাকে, যার কারণে মাথাব্যথা হবেই। আপনার জীবনে হতাশা থেকে থাকলে তা দূর করা আপনার জন্য বাঞ্চনীয়। তাই, হতাশা দূর করতে ডার্ক চকলেটের ভূমিকা জেনে নিন।
৫. পানিশূন্যতা
পানিশূন্যতা মাথাব্যথার কারণ হিসেবে অন্যতম। আমরা সবাই জানি যে মানুষের শরীরের ৭০% পানি। এই হিসাব থেকেই বোঝা যায় যে পানি আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনার শরীর থেকে পানি বের হওয়ার পরিমান পানি গ্রহণের পরিমান থেকে বেড়ে যায়, তখন সেই অবস্থাকে পানিশূন্যতা বলে। পানিশূন্যতার কারণে শরীরে দু’টি জরুরি উপাদান সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম কমে যায়। এ কারণে রক্তের কাঠামো পরিবর্তন হয় এবং মাথাব্যথা অনুভব হয়। পানিশূন্যতার কারণে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন হতে পারে।
৬. গ্লুকোমা
চোখের রোগ গ্লুকোমা: দৃষ্টির নীরব ঘাতক। এটি অন্ধত্বের একটি কারণ। গ্লুকোমা চোখের ব্যাধি যা অপটিক নার্ভের ক্ষতি সাধন করে ও দিনের পর দিন তা বাড়তেই থাকে। যখন অপটিক নার্ভ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায়, তখন একজন মানুষ অন্ধ হয়ে পড়ে। গ্লুকোমার একটি লক্ষনই হচ্ছে প্রচন্ড মাথাব্যথা।
৭. মেনিনজাইটিস
মেনিনজেসের ফুলে যাওয়ার নামই মেনিনজাইটিস। মানুষের মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ড যে ঝিল্লি দ্বারা আবৃত সেটিই হলো মেনিনজেস। মেনিনজাইটিস বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে হতে পারে। এই রোগের রোগীদের মাথাব্যথা অনুভব হয়।
৮. ব্রেইন টিউমার
মস্তিষ্ক কোষ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়ার নামই হলো ব্রেইন টিউমার। সব ধরণের মাথাব্যথা ব্রেইন টিউমারের কারণে হয় না। যেসময় মাথাব্যথা ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ স্থায়ী থাকে ও ওষুধ খেলেও কমে না, তখনই এর জন্য ব্রেইন টিউমার দায়ী। এরকম মাথাব্যথার ক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
৯. ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়ার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এটি একটি সংক্রামক রোগ যা এনোফিলিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে। মাথাব্যথা ম্যালেরিয়া রোগের একটি লক্ষণ। তাছাড়া ম্যালেরিয়া রোগের আরো কিছু লক্ষণ হচ্ছে- বমির ভাব বা বমি, মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি ইত্যাদি।
১০. ইনফ্লুয়েঞ্জা
ইনফ্লুয়েঞ্জাকে ফ্লুও বলা হয়ে থাকে। এটি আমাদের শ্বসনতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। জ্বর, সর্দি, কাশি এসব ফ্লুয়ের লক্ষণ। ইফ্লুয়েঞ্জার কারণে মাথাব্যথা হয়।
১১. দুশ্চিন্তা
দুশ্চিন্তার কারণে অধিকাংশ সময় মাথাব্যথা হয়ে থাকে। দুশ্চিন্তা, ভয় ও অশান্তি এসব মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বাধা ঘটাতে সক্ষম। উদ্বেগ ব্যাধি সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বয়সী মানুষের হয়ে থাকে। দুশ্চিন্তা থেকে জন্ম নিতে পারে হতাশা। এক্ষেত্রেও মানুষ আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
১২. স্ট্রোক
মস্তিষ্কে রক্ত জমে যাওয়ার কারণে বা রক্তনালিতে রক্ত আটকে যাওয়ার কারণে স্ট্রোক হয়। স্ট্রোককে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সেরিব্রোভাস্কুলার এক্সিডেন্ট (CVA) বলা হয়ে থাকে। স্ট্রোক যেহেতু মাথার একটি রোগ, তাই বুঝতেই পারছেন যে স্ট্রোক মাথাব্যথার একটি কারণ বা মাথাব্যথা স্ট্রোকের একটি লক্ষণ। সব ধরণের স্ট্রোকে মাথাব্যথা হয় না, হেমোরেজ স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সাধারণত মাথাব্যথা হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে আইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রেও মাথাব্যথা হয়ে থাকে, তবে তার সম্ভাবনা খুব কম।
১৩. ভুল খাবার
ভুল খাবার খাওয়ার কারণেও মাথাব্যথা হয়ে থাকে। বেশি পরিমান চিনি বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলে মাথাব্যথা হয়। যেমন- চিনি আমাদের অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়াকে বাড়তে সাহায্য করে। এই অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলোকে শরীর থেকে বের করতে গিয়ে আমাদের মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে ও মাথাব্যথা হয়। মাথাব্যথার কারণ হিসেবে হালকা হলেও এটিকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
১৪. হরমোনাল ইমব্যালেন্স
হরমোনাল ইমব্যালেন্স মাইগ্রেনের একটি অন্যতম কারণ। এস্ট্রোজেন হরমোন অধিক পরিমানে বেড়ে গেলে মাইগ্রেন হয়ে থাকে। এটা সাধারণত মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। কারণ এটি মহিলাদের মাসিক চক্রের সাথে সম্পর্কিত।
১৫. ভিটামিনের ঘাটতি
ভিটামিনের ঘাটতির কারণেও মাইগ্রেন হয়ে থাকে। ম্যাগনেসিয়াম কম পরিমানে থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা অনুভব হয়। ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। তাই, এটি মাইগ্রেনের সাথে সম্পৃক্ত। ম্যাগনেসিয়াম মানুষের দেহের মসৃন পেশী শিথিলকরণের জন্যও বিশেষভাবে উপকারী।
এই ১৫টি কারণ ছাড়াও মাথাব্যথার কারণ আছে আরো অনেক। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো-
- প্রয়োজন থেকে বেশি বা কম পাওয়ারের চশমা ব্যবহার
- উচ্চ শব্দ শোনা
- উজ্জ্বল আলো দেখা
- টাইট স্কার্ফ বা ক্যাপ পরা
Leave a Reply