নাগরিক জীবনে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার বেড়েছে ব্যাপক হারে। এমনকি, এই ইলেকট্রোনিক্স যন্ত্রটির ব্যবহার আজ দেশের বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণের কাছে পৌঁছে গেছে। শহর জুড়ে যেমন এর চাহিদা রয়েছে, তেমনই গ্রামীণ জীবনেও এর কদর বাড়ছে দিন দিন।
সময় স্বল্পতার জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভেন সার্বজনীন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় সর্বস্তরে। বিলাসবহুল জীবন যাপনে যেমন এর গুরুত্ব তুলনাহীন, তেমনি এর অবিরত ব্যবহার কখনো কখনো ঠেলে দিচ্ছে নানা রকম ঝুকিঁর মধ্যে, কখনো কখনো নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে।
তাই, ব্যবহারের আগে জেনে নেয়া প্রয়োজন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে যে-সব কাজ করবেন আর যে-সব কাজ করবেন না। এগুলো জানা হয়ে গেলে আপনি এই ইলেকট্রোনিক্স যন্ত্রটির ইফেক্টিভ ব্যবহার করা শিখে ফেলবেন। পাশাপাশি, আপনার অবশ্যই জেনে নেয়া প্রয়োজন যে ৭টি কারণে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ–
যে-সব কারণে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ
১. মাইক্রোওয়েভ খাবারের স্বাদ এবং গঠন বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটায়
মাইক্রোওয়েভে রান্না অন্যান্য সাধারণ ওভেনে রান্নার মতো রান্নাকে পরিপূর্ণতা দেয় না। তাছাড়া, একবার মাইক্রোওয়েভ করলেই খাবার স্টিকি হয়ে যায়। খাবারের সব জায়গায় তাপ ছড়িয়ে যায় না।
এতে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয় না। যা আপনাকে সালম্যানেলা, ই-কোলি’র মত মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াপ্রবণ রোগের দিকে ঠেলে দেয়।
২. মাইক্রোওয়েভ ভিটামিন বি-১২ নষ্ট করে দেয়
ভিটামিন বি-১২ এর কার্যকারিতা নষ্ট করতে মাইক্রোওয়েভের একবার রেডিয়েশনই যথেষ্ট। ‘জার্নাল অব এগরিকালচার এন্ড ফুড কেমেস্ট্রি’র গবেষকরা খাদ্যের ভিটামিন বি-১২ এর অনুসমূহের উপর মাইক্রোওয়েভের প্রভাব সংক্রান্ত একটা পরীক্ষা চালান।
পরীক্ষায় দেখা যায় যে,মাইক্রোওয়েভ এক্সপোজারে রাখলে খাবারের ৩০-৪০% ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। আর ভিটামিন বি-১২ খাদ্যে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখে।
৩. মায়ের দুধের কার্যকারিতা ব্যাহত করে
মায়ের দুধে যে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এজেন্ট থাকে, মাইক্রোওয়েভের ফলে তা বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া মাইক্রোওয়েভ করা মায়ের দুধে লাইসোজোম অকার্যকরী উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখে এবং মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়।
৪. মাইক্রোওয়েভ খাবারে কারসিনোজেন তৈরি করে
প্লাস্টিকে মোড়ানো খাবার মাইক্রোওয়েভে হিট করলে খাবারের কারসিনোজেন সৃষ্টি হয়। মাইক্রোওয়েভাল খাবারে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক যেমন- বিপিএ, পলিইথিলিন টারপ্যাথালেট, বেনজিন, টলুইনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
প্লাস্টিক কন্টেইনারে রান্না খাবারে কারসিনোজেন এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকের অনুসমূহ মিশ্রিত থাকে যা আমাদের দেহের ইমিউনিটি গ্রোথকে নষ্ট করে দেয়।
৫. মাইক্রোওয়েভ রক্তের গঠন প্রণালীর পরিবর্তন ঘটায়
মাইক্রোওয়েভে রান্না করা দুধ এবং সবজি রক্তের গঠন প্রণালী পরিবর্তন করে ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে মাইক্রোওয়েভ করা খাবার রক্তের লোহিত কণিকা কমিয়ে শ্বেতকণিকা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
৬. মাইক্রোওয়েভে রান্না হার্টের সমস্যা বাড়ায়
মাইক্রোওয়েভের ২.৪ গিগাহার্জ রেডিয়েশন হার্টের উপর প্রভাব বিস্তার করে। অনিয়মিত হার্টবিট কিংবা বুকের ব্যাথা দেখা দিলে অবশ্যই মাইক্রোওয়েভ করা খাবার বর্জণ করতে হবে।
৭. রেডিয়েশন লিকেজ
মাইক্রোওয়েভ ডোর খোলা-বন্ধের ফলে রেডিয়েশন সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় এবং ইমিউন সিস্টেমে বিরুপপ্রভাব ফেলে। এছাড়া, মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
চলুন জীবনের ঝুঁকি এড়াতে এবং সুস্থ জীবনের লক্ষ্যে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার বর্জন করি। ফিরে যাই আমাদের সেই বহুল ব্যবহৃত প্রাচীন পদ্ধতিতে। অক্ষুন্ন থাকুক খাদ্যে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ।
Leave a Reply