প্রযুক্তি কখনো থেমে থাকে না। এটা সবসময়ই পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত রূপে বছরের পর বছর চলতে থাকে। আজকে যে বিষয়টা অসম্ভব মনেহয় কয়েক বছর পরই দেখা যায় সেটাই বাস্তব রূপ নিয়ে হাজির। অতীতের প্রযুক্তিগুলো বর্তমানে আমাদেরকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে সত্য। কিন্তু গবেষণা চলমান সদা সর্বত্র। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে দিবে আরো অভিনব রূপ।
ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নিয়ে বিজ্ঞানীরা সবমসয়ই আশাবাদী। এমন অনেক প্রযুক্তির কাজ চলছে যেগুলো খুব সম্প্রতিই জনসাধারণের হাতে পৌঁছাবে।
ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি – তাক লাগিয়ে দেবে আপনাকে
অতীতের অবিশ্বাস্য প্রযুক্তিগুলোর সুবিধা বর্তমানে আমরা ভোগ করছি। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চলমান। চমকে যাওয়ার মতো ভবিষ্যতের ১০টি প্রযুক্তি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুন :-
- পৃথিবী জুড়ে ব্যান হওয়া সেরা ১৫টি গেম এবং এর পেছনের রহস্য
- ফেসবুক থেকে আয় করার সেরা ১০ উপায়
- টুইটার থেকে আয় করার ৫টি উপায়
স্পর্শের অনুভূতি সম্পন্ন নকল অঙ্গ
ভবিষ্যতের এই প্রযুক্তিটি অনেকটা স্বপ্নের মতো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ভবিষ্যতে মানুষ নকল হাত-পা ব্যবহার করেও পাবে সত্যিকারের স্পর্শের অনুভূতি।
২০১৩ সালের মার্চে ইউরোপিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানীদের একটি গ্রুপের তৈরি স্পর্শের অনুভূতি সম্পন্ন বিশেষ ধরনের নকল হাতের পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছিল ডেনিস আবো সরেনসেন নামক এক ব্যক্তির ওপর। এই নকল হাতকে সরাসরি নার্ভস সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করা হয়। তাই এতে যেকোন বস্তু স্পর্শের অনুভূতি পাওয়া যায় এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজে।
পরীক্ষার সময় দেখা যায় ডেনিস বিভিন্ন বস্তু যেমন : বোতল, বেসবল, কমলা ইত্যাদির মধ্যকার পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারছে নকল হাতের সাহায্যে। এই হাত বিভিন্ন বস্তুর ওপর প্রয়োগকৃত চাপ নিয়ন্ত্রণেও সক্ষম। কোন কিছু স্পর্শ করে এর অবস্থা বর্ণনা (শক্ত/নরম), আঁকড়ে ধরা এবং ওঠানো-নামানোর মতো কাজগুলো করতেও সক্ষম হয়েছিল ডেনিস।
যদিও এটা বিজ্ঞানের অনেক বড় একটা অর্জন তারপরও বলতে হয় যে একে বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের উপযোগী করতে এখনো অনেক কাজ করা বাকি। এটি পরিচালনার জন্য সরাসরি ইলোক্ট্রোড প্রয়োগের প্রয়োজন এবং এই ইলেক্টোডের স্থায়িত্ব পরীক্ষার জন্য এখনো যথেষ্ট পরীক্ষা পরিচালনার প্রয়োজন।
এছাড়াও এই হাত পরিচালনার জন্য যথেষ্ট পাওয়ারের প্রয়োজন এবং এতে একটা ল্যাপটপ সংযুক্ত করত হয়। রিসার্চাররা এই প্রসেসিং কম্পিউটারকে ছোট করে হাতের সাথে সংযুক্ত করে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
জেট প্যাক আন্তর্জাতিক H202
ভবিষ্যতের এই প্রযুক্তি অনেকটা ডানা ছাড়া আকাশে ওড়ার মতো। জেট প্যাক প্রযুক্তির H202 এবং H202-Z দুটোই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ফুয়েলের সাহায্যে চলে। এই জেট প্যাকের সাহায্যে একজন ব্যক্তি ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ ফিট ওপরে ঘণ্টায় ৭৭ মাইল বেগে উড়তে পারবে।
সর্বোচ্চ ক্ষমতার জেট প্যাক H202-Z মাত্র ৩৩ সেকেন্ড সময় উড়তে সক্ষম হয়েছিল। এই সময় এর অতিক্রান্ত দূরত্ব ছিল ৩,৩০০ ফিট।
কিন্তু এটা শুধুই শুরু। জেট প্যাক প্রযুক্তির ওড়ার সময় এবং দূরত্ব বাড়ানোর কাজ অব্যহত আছে। এটা সত্য যে জেট প্যাক H202 এবং H202-Z বাণিজ্যিকভাবে এখনো বাজারজাত হয়নি। তবে আপনার কাছে $১০০,০০০ থাকলে এমন একটা জেট প্যাক আপনি পেতে পারেন।
TALOS ‘আয়রন ম্যান স্যুট’
TALOS (Tactical Assault Light Operation Suit) এমন একটা যুদ্ধ স্যুট যেটা ক্ষেপণাস্ত্র, শক এবং আগুন থেকে সৈন্যকে রক্ষা করবে। আগামী চার বছরের মধ্যে ভবিষ্যত প্রযুক্তিগুলোকে চমকে দিয়ে এই যুদ্ধের স্যুটটি বাস্তবে নাগালের মধ্যে আসবে বলে আশাবাদী আমেরিকা।
আয়রন ম্যান স্যুট নামে পরিচিত TALOS স্যুটটিকে সৈন্যদের জন্য বর্তমানের চেয়ে আরো সুবিধাজনক, সঞ্চালনক্ষম এবং বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী অ্যাজেন্সি এবং সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে এই স্যুটটি।
২০১৮ এর আগস্টে সম্পূর্ণ প্রোটোটাইপের ওপর পরীক্ষা চালানোর লক্ষ্য আছে আমেরিকার। তবে সাধারণের পক্ষে এ স্যুট কেনার সামর্থ হবে না।
সুপার ম্যাগলিভ ট্রেন
ম্যাগলিভ (Maglev- Magnetic Levitation) হচ্ছে এমন এক ধরনের পরিবহন যেটা গাড়িকে ভূমি বা কোন রকম বৈদ্যুতিক সংস্পর্শ ছাড়াই চৌম্বকীয় হালকাকরণ পদ্ধতিতে দ্রুত পরিচালনা করে। ম্যাগলিভ টেকনোলজি চায়নাতে আরো আগে থেকেই চলছিল। কিন্তু চায়নার রিসার্চাররা এখন ম্যাগলিভকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় আছে। চায়না এবং জাপানে এখন যে ম্যাগলিভ ট্রেন আছে ওগুলো ঘণ্টায় ২৬০ মাইল বেগে ছুটতে সক্ষম। কিন্তু এর পরবর্তী ম্যাগলিভ জেনারেশন, দ্বিগুণ সুপার ম্যাগলিভ এর চেয়েও দ্রুতগামী হবে বলে আশাবাদী গবেষকরা।
সুপার ম্যাগলিভ ট্রেনও ম্যাগলিভ প্রযুক্তিতে তৈরি। কিন্তু এখানে ট্রেনটা একটা ভ্যাকুয়াম টিউবে থাকবে যেটা বাতাসের রোধ থেকে ট্রেনকে মুক্ত রেখে সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে চলার সুবিধা দিবে। রিসার্চারদের মতে এরকম সুপার ম্যাগলিভ ট্রেন ঘণ্টায় ১৮০০ মাইল পথ অতিক্রম করতে পারবে।
এটা ঠিক যে এত বড় ভ্যাকুয়াম টিউব তৈরি এবং এর চাপ নিয়ন্ত্রণ মুখের কথা নয়। কিন্তু বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়াররা যদি সত্যিই এতে সক্ষম হয় তাহলে আমরা একদিনে সর্বোচ্চ দুরত্ব অতিক্রম করতে পারব অতীতের যে কোন পরিবহনের চেয়ে দ্রুত এবং নিরাপদে।
এইরোফেক্স এইরো-এক্স
যারা বাইক চালাতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিটি অনেকটা স্বপ্নের মতো। অনেকটা ডানা ছাড়া আকাশে ওড়া যাকে বলে।
এইরো-এক্স স্পিডার বাইক প্রায় ১৫ বছরের বেশি সময়ের গবেষণার ফসল। ২৪০ হর্সপাওয়ারের ওয়াটারর-কুলড ইঞ্জিন ও দুটো রোটারের সমন্বয়ে এই বাইকটি পরিচালিত। এই বাইকটি ১২ ফিট উচ্চতায় ঘণ্টায় ৪৫ মাইল বেগে ছুটতে পারে। এটি ৩১০ পাউন্ড ওজন বহনে সক্ষম।
কাপলিং ইফেক্ট অতিক্রমের লক্ষ্যে এইরো-এক্স বাইকে এখনো রিসার্চ চলছে। মূলত একে আরো নিরাপদ ও সহজে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই কাজ চলছে এখন।
টাইটান আর্ম
এই আর্মটি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার একটি টিম কর্তৃক আবিষ্কৃত। এই বহিঃঅঙ্গটি একজন মানুষকে অতিরিক্ত ৪০ পাউন্ড ভার উত্তলনে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতের এই প্রযুক্তিটি সৃষ্টির পেছনে রয়েছে একটা মহৎ উদ্দেশ্য। যাদেরর হাত বড় ধরনের আঘাত প্রাপ্ত বা স্ট্রোকের কারণে অচল প্রায় তাদেরকে আলাদা শক্তি ও নিরাপত্তা দানের উদ্দেশ্যে এটি তৈরি। এছাড়াও অনেকে আছে যারা ভারী জিনিস উত্তোলন করেই জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের জন্য এই টাইটান আর্ম আশীর্বাদ স্বরূপ হবে।
গবেষকরা এর মূল্য নাগালের মধ্যে রাখবেন বলে জানিয়েছেন। সুতরাং, ভবিষ্যতের ভারী কাজগুলোর সহজ সমাধান হিসেবে দেখা যাবে টাইটান আর্মকে।
উচ্চ ক্ষমতার তারবিহীন চার্জিং
কোন রকম তার বা ক্যাবেল ছাড়াই চার্জ দেয়ার সাথে অনেকেই আগে থেকে পরিচিত। তবে কোরিয়ার অ্যাডভান্সড ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি যথেষ্ট দূরত্ব থেকেই এই কাজটা করতে সক্ষম।
কোরিয়ার এই টিমটি ১৫ ফিট দূরের কোন বস্তুকে কোন রকম তার বা ক্যাবল ছাড়াই চার্জ দিতে সক্ষম হয়েছে। এখানে DCRS (Dipole Coil Resonant System) চৌম্বকক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে ১৫ ফিট দূরের ৪০টিরও বেশি মোবাইল একসাথে চার্জ দিতে সক্ষম। এমনকি টিভির মতো বড় ডিভাইসও এটাতে চার্জ করা যায়।
তবে এটা ঠিক কবে বিশ্বাব্যাপী ব্যাবহারের উপযোগী করে বাজারজাত করা হবে সেটা এখনো বলা সম্ভব হয়নি।
স্টোরডট দ্রুত চার্জিং ব্যাটারি
StoreDot একটা যুগান্তকারী ন্যানোটেকনোলজি কোম্পানি। সম্প্রতি এরা এমন একটা নেক্সট জেনারেশন ব্যাটারি তৈরি করেছে যেটা এর পূর্বের সব ন্যানোটেকনোলজি এবং স্টোরেজ টেকনোলজিকে ছাড়িয়ে গেছে। স্টোরডট এখানে বায়ো অরগানিক ‘ন্যানোডটস’ ব্যবহার করেছে যা ইলেক্ট্রোডের সক্ষমতা ও ইলেকট্রোলাইটের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে বিষয়টা অনেক জটিল। কিন্তু সোজা ভাষায় বলতে গেলে এই ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হতে সময় নিবে মাত্র ৩০ সেকেন্ড!
আর সবচেয়ে বড় আশার বাণী হচ্ছে এই প্রযুক্তি বায়ো অরগানিক প্রযুক্তি। মানে পরিবেশগতভাবে সম্পূর্ণ নিরাপদ। অন্যান্য ন্যানোডট টেকনোলজি যেরকম বিভিন্ন ক্ষতিকর মেটাল এবং ক্যামিকেল ব্যবহার করে এখানে তা থাকবে না। সুতরাং, বলা যায় না, হয়তো খুব তাড়াতাড়িই আমারা আমাদের স্মার্টফোন চার্জ করতে পারব মাত্র ৩০ সেকেন্ডে!
লিপ মোশন
ডেক্সটপ কম্পিউটার ব্যবহারে আমরা প্রায়ই বিরক্ত হয়ে যাই। কারণ দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারে হাত ব্যথা হয়ে যায়। এখন ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে কম্পিটারটা স্পর্শ না করে কেবল হাত বা আঙ্গুলের ইশারায় একে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে!
ভবিষ্যতে এমনটাই হতে যাচ্ছে। লিপ মোশনের সাহায্যে ওয়েব পেজ স্ক্রল, ম্যাপ বা ছবি জুম এমনকি শুটিং গেমও খেলা যাবে স্ক্রিন স্পর্শ ছাড়াই। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই সবকিছু করতে লাগবে মাত্র $৭০!
গুগল ড্রাইভারলেস কার
ড্রাইভার ছাড়া গাড়ি! হুম, ‘এটাই সত্যি হবে’ না বলে বলা উচিত- এটাই সত্যি হয়েছে। কারণ ইতোমধ্যেই মানুষের কোন নির্দেশনা ছাড়াই ১৬০৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে গুগল ড্রাইভারলেস কার।
এই কারের ভিতরে কয়েকটি ভিডিও ক্যামেরা, পজিশন সেন্সর ইত্যাদি ব্যবহার করে একটা কৃত্রিম ইন্টেলিজেন্স তৈরি করা হয় যা কারটি মানুষের কোন নির্দেশনা ছাড়াই চালাতে সক্ষম। এর মানে ভবিষ্যতে মানুষকে গাড়ি চালিয়ে নিতে হবে না। বরং গাড়ি নিজেই চলবে।
মানুষ একটা সময় আকাশে উড়বে এটি যেমন অবিশ্বাস্য ছিল, তেমনি ভবিষ্যতের এই প্রযুক্তিগুলোর কথা শুনলেও অবিশ্বাস্য মনে হয়। কিন্তু রূপকথার মতো শুনতে এই প্রযুক্তিগুলোই সত্যি হয়ে আসবে আগামীতে।
Leave a Reply