প্রেমে পড়ার কোন নির্দিষ্ট সময় বা বয়স নেই। কার সাথে কখন আপনার মনের মিল হয়ে যাবে, তা আগে থেকে ভেবে রাখা সম্ভব নয়। যদিও অনেকেই বলে থাকেন যে বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া উচিৎ নয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের কথা অনেকটাই সঠিক হিসাবে প্রমাণিত হয়।
আমার নিজস্ব মতামত হলো জীবন কাটানোর জন্য বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া যেতে পারে। কারণ, প্রতিটি জিনিসেরই ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিকই থাকে। বন্ধুর সাথে প্রেম করার ক্ষেত্রে আপনি যে বিষয়গুলি নিয়ে ভয় পাচ্ছেন অন্য কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তার চেয়েও খারাপ কিছু হতে পারে।
কারণ যে আপনাকে পুরোপুরিভাবে চেনে সে আপনাকে যেভাবে মূল্যায়ন করবে, অন্য কারো দৃষ্টিভঙ্গি তার চেয়ে অনেক ব্যতিক্রম হবার সম্ভাবনাই বেশি।
বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা যখন হাতে হাতে রেখে এক পথের পথিক হয়, তখন তার চেয়ে সুখের আর কিছু হয় বলে আমি মনে করি না। আপনার মধ্যে যদি বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ার ৭টি লক্ষণ দেখা দেয়, তবে আপনি বিলক্ষণ ভাগ্যবান। আর আপনি যদি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়েই যান, তাহলে আপনার জন্য সুসংবাদ হচ্ছে আপনার জীবনে চাঞ্চল্য, সুখের পাশাপাশি এমন একজনের আগমন হয়েছে, যে আপনাকে আপনার চেয়ে এতটাই বেশি বোঝে যা প্রকাশ করার জন্য কোন শব্দেরও প্রয়োজন হবে না।
বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া যেতে পারে
যখনই আপনি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়বেন, তখন থেকে আপনার জীবন এমন একটি সুন্দর ফুলের বাগানে পরিণত হবে, যা আপনি কখনোই ছেড়ে যেতে চাইবেন না। একটি সুন্দর জীবনের গল্প তখনই লেখা সম্ভব, যখন একে অন্যকে বোঝার মত দু’জন মানুষ একে অপরের সাথে জীবন অতিবাহিত করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
মনে রাখবেন আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডই সেই ব্যক্তি যে আপনার সু-সময় আর দুঃসময়ে আপনার পাশে ছিল, আর থাকবে। তাই চলুন কেন বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া যেতে পারে তা জেনে নেয়া যাক।
কোন কিছুই আপনাদের অজানা নয়:
আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড নিঃসন্দেহে আপনার অতীত সম্পর্কে জানে। আপনার যদি পূর্বে কোন সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে সেই সময় এবং সেই সম্পর্কটির অবসান ঘটার মত কঠিন সময়ে যেই ব্যক্তিটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি সান্তনা দিয়ে আপনার আত্মবিশ্বাসকে ভেঙ্গে পড়তে দেননি, তিনি নিশ্চয়ই আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড।
এছাড়া তিনি জানেন আপনার কি করতে ভালো লাগে আর কোন কাজটি আপনাকে উদাস করে। আপনারা দুজনেই দুজনের পরিবারের পরিবেশের সাথে আগে থেকেই পরিচিত। আর আপনারা দু’জন দু’জনকে কতটুকু চেনেন বা বোঝেন তা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর সবচেয়ে খুশির খবরটি হলো, যেহেতু আপনাদের কারো অতীতই আর আপনাদের অজানা নয়, সেহেতু আপনাদের অতীত কখনোই আপনাদের ভবিষ্যতের অংশ হয়ে অশান্তি আর কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।
না চাইতেই সবকিছু আপনার হাতের মুঠোয়:
আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের কি পছন্দ আর কি অপছন্দ তা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। ঠিক তার বেলাতেও বিষয়টি একই রকম। জীবনে বেশিরভাগ সময়ই এমন হবে যে, আপনাদের একে অপরের মস্তিষ্কে কি চলছে তা আপনারা আগে থেকেই অনুমান করতে পারবেন। যদিও সবার ক্ষেত্রেই যে এমনটা হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না, তবে যদি হয়েই যায় তা নিঃসন্দেহে দারুন কিছু।
পারিবারিক সম্মতির সবচেয়ে বেশি সম্ভবনা:
অন্যান্য রিলেশনের ক্ষেত্রে, যখন আপনি পরিবারের সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করেন, তখন আপনার মনে ভয় কাজ করতে থাকে। আর কোন পরিবারই একবারেই কাউকে আপনার জীবন সঙ্গী করার অনুমতি দেবে না। তবে যদি সেই ব্যক্তিটি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে থাকে, তাহলে আপনার পরিবারের আপত্তি করার সম্ভাবণা নেই বললেই চলে।
এমনও অনেক পরিবার আছে, যেখানে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডকে আপনার আগে থেকেই আপনার জীবনসঙ্গী হিসাবে মনে মনে পছন্দ করে রাখে। কারণ জীবনসঙ্গী নির্বাচনের জন্য যে-সব দিকে লক্ষ রাখতে হয়, তার মোটামুটি সবগুলোই আপনার পরিবার আগে থেকেই আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে দীর্ঘদিন পরিচয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারে।
অন্যান্য বন্ধুদের মধ্যে স্বাচ্ছন্দবোধ করা:
আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড ব্যতীত অন্য কেউ যদি আপনার ভালোবাসার মানুষ এবং ভবিষ্যত জীবনসঙ্গী হয়ে থাকে, তাহলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে তার অন্যান্য বন্ধুদের সাথে সাক্ষাত এবং মেলামেশার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু অপরিচিত মানুষদের সাথে মিশে যাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাবে তার মন রক্ষার জন্য নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়েও আপনাকে কিছু মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলতে হবে।
বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করার আরো একটি সুবিধা হচ্ছে যে, আপনারা যেহেতু আগে থেকেই বন্ধু সেহেতু আপনাদের যারা অন্যান্য বন্ধু রয়েছেন, অবশ্যই আপনারা দুজনই তাদের সাথে পূর্ব পরিচিত। তাই মনে সংকোচ আসার কোন সুযোগই নেই।
আপনার বোকামিগুলোও তার কাছে সাদরে গ্রহণযোগ্য:
দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের পর আমরা কাউকে বেস্ট ফ্রেন্ড হিসাবে গণ্য করি। আর বেস্ট ফ্রেন্ড যখন সেই জায়গাটা থেকে আরো বেশি আন্তরিক হয়, তখনই সে ভালোবাসার মানুষে পরিণত হয়। তাই এতো দীর্ঘ পথ একসাথে পাড়ি দিয়ে আপনার কোন কাজটি অপটু, তা জানতে নিশ্চয়ই কারোরই বাকি নেই।
কিছু সময় এমন আসবে যে, আপনি পারবেন না জেনেও শুধু সে খুশি হবে ভেবে আপনি কাজটি করতে যাবেন। চিন্তা নেই, আপনি যদি সফল নাও হন, তবুও আপনার বোকামির জন্য আপনাকে কোন প্রকারের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে না। বরং আপনি যে তার জন্য কাজটি করার চেষ্টা করেছেন, তা জেনে সে অত্যন্ত খুশি হবেন এবং আপনার প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠবেন।
আপনার স্বাচ্ছন্দের সীমা থাকবে না:
অন্যান্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যাপারে কথা বলতে বা প্রয়োজনে তার সাহায্য চাইতে মনে সংকোচ আসতেই পারে। কিন্তু আপনারা দু’জনই যখন দুজনের কাছে একটি খোলা বইয়ের মত, তখন আপনাকে আর এগুলি নিয়ে ভাবতে হবে না।
জীবনের যে ছোট ছোট খুশিগুলোকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিজের ইচ্ছার বিপরীতে যেয়ে আমরা মানিয়ে নিই, এক্ষেত্রে সেটি হবার সম্ভাবণাই নেই। কারণ আপনারা যখন বেস্ট ফ্রেন্ড তার মানে হলো আপনাদের অধিকাংশ পছন্দ আর অপছন্দগুলোও একই রকম। একসাথে মুভি দেখা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের ইনডোর-আউটডোর গেমস এ অংশ নেয়া, সব কিছুতেই সে আপনার সহযোগী এবং আনন্দ লাভের কারণ হয়ে উঠবেন।
বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া যেতে পারে নাকি পারে না তা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই এ ব্যাপারে সম্মতি দিলেও কিছু কিছু মানুষ আছে যারা বলেন বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া উচিৎ নয়। তবে এর মধ্যে যেটি নিশ্চিত, তা হচ্ছে আপনি তার প্রেমে পড়েন আর নাই পড়েন উভয়ক্ষেত্রেই সেটি আপনার জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।
Leave a Reply