বিটকয়েন এমন একটি মুদ্রা যাকে নিয়ে দেশ-বিদেশের মানুষের আগ্রহের কোন শেষ নেই। অনেকেই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অনেক কিছুই জানেন, নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখেন, আবার অনেকে কিছু কিছু জানেন আর এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যারা বিটকয়েন সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও জানেন না, শুধু শুনেছেন। যারা জানেন তাদেরও এই কয়েন নিয়ে অনেক বেশি জানার আগ্রহ থাকে যার আসল কারণ এই কারেন্সি একদিকে যেমন দূর্লভ, অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালি কারেন্সী।
আর বিট কয়েন আয় করা অনেক কঠিন কিন্তু আয় করার উপায় রয়েছে ঠিকই। হৈচৈ বাংলার নিয়মিত লেখক শাহরিয়ার আহমেদ বিট কয়েন আয় করার উপায় নিয়ে অসাধারণ একটি লেখা লিখেছেন। আপনার যদি বিট কয়েন আয় করার ইচ্ছে থাকে, তবে লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।
অনলাইনেই যার সবচেয়ে বেশি অস্তিত্ব সেই বিটকয়েন নিয়ে রয়েছে অনেক অদ্ভূত তথ্য। বিটকয়েন নিয়ে ১০টি মজার ও অদ্ভুদ তথ্য নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা। তাহলে, চলুন জেনে নেয়া যাক বিটকয়েন নিয়ে অদ্ভুদ তথ্য।
বিটকয়েন নিয়ে অদ্ভুদ তথ্য
বিটকয়েনের নির্মাতা আজও রহস্যমানব
সাতোসি নিকামটো যিনি কিনা বিটকয়েনের ডিজাইন করেছিলেন, তাকে নিয়ে আজও রহস্যে আছেন গবেষকরা। কারণ সাতোসির আসল পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তার সাথে আরও অনেকে ছিল বলে ধারণা করা হয়। তাদের মধ্যে নিক, ডরিয়েন নাকামটো, হ্যাল ফিন্নে, স্টিভেন রাইড উল্লেখযোগ্য। বিটকয়েনের ছোট অংশকে সাতোশির নামেই ডাকা হয়ে থাকে। অনেক সাতোশি মিলে এক বিটকয়েন হয়।
বিটকয়েন সীমিত
আপনি কি জানেন এক বিটকয়েনে কত টাকা? ১ বিটকয়েনে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৬ লাখ টাকার সমান। যারা তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে জ্ঞান রাখেন, তারা হয়তো জানেন এক বিটকয়েন পেতে কি পরিমাণ সময় আপনাকে অনলাইনে দিতে হবে।
তার কারণ, বিটিকয়েন মাইনিং হয় খুব অল্প পরিমাণে। তাই বিটকয়েন বর্তমান বাজারে বিরল এবং দামী। হ্যাকাররাই এটা ইউজ করে থাকে।
কে বিটকয়েন পাঠালো/ পাঠালেন তার পরিচয় অজানা
এটাই বিটকয়েনের সবচেয়ে বিষ্ময়কর ব্যাপার যে, আপনি যদি কাউকে বিটকয়েন সেন্ড করেন, তাহলে আপনি তার পরিচয় জানতে পারবেন না। আবার আপনাকে কে সেন্ড করলে, তাকেও বিটকয়েনের ড্যাশবোর্ড শো করবে না। আর এই কারণে দুনিয়ার যত ইল্লিগ্যাল কাজ আছে, সব এই বিটকয়েনের ট্রানজেকশনেই হয় থাকে।
এইজন্য বিভিন্ন হ্যাকার, সাইবার অপরাধী এই বিটকয়েনের মাধ্যমে ট্রান্সজেকশন করে থাকে। বিটকয়েন দিয়েই বিভিন্ন চোরা-চালান হয়ে থাকে।
বিটকয়েনে প্রথম পিজ্জা ক্রয়
শুনলেই অবাক লাগে বিশ্বের সবচেয়ে দামী কারেন্সি যার প্রথম পারচেজ হয়েছিল একটা পিজ্জা কিনার জন্য। হা ২০০৯ সালে বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতা সাতোশি এবং হ্যালের মধ্যে প্রথম যে বিটকয়েনের আদান-প্রদান হয়েছিল তা একটি মাত্র পিজ্জা কিনার জন্যই। যে পিজ্জার দাম ছিল ২৫ ডলার। আর তাদের পিজ্জা কিনতে প্রয়োজন পড়ে ১০ হাজার বিটকয়েন।
বিটকয়েনের নেটওয়ার্ক সুপারকম্পিউটার থেকে শক্তিশালী
বিশেষজ্ঞদের মতে বিটকয়েনের কম্পিউটিং পাওয়ার ২০৪৬,৩৬৭ ফিফ্লপ/সেকেন্ড। যেখানে আপনি ৫০০ টি সুপার কম্পিউটার একত্রিত করে পাবেন মাত্র ২৭৪ ফিফ্লপ/সেকেন্ড কম্পিউটিং। তাহলে দেখুন বিটকয়েন কতটা বেশি শক্তিশালী। এজন্য বিটকয়েন মাইনিং করতেও শক্তিশালী কম্পিউটার দরকার।
বিটকয়েনের ট্রানজেকশন অপরিবর্তণীয়
যেহেতু বিটকয়েনের লেনদেন অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত, তাই বিটকয়েনে পাঠানো অর্থ অপরিবর্তণীয়। অনেকটা জনপ্রিয় প্লাটফর্ম পেপ্যালের মতোই। তাই এখানে একবার ট্রানজেকশন হয়ে গেলে, তা আর পরিবর্তণ করা যাবে না। এটা সব জায়গাতেই হয়। কোথাও একবার মানি লেনদেন হয়ে গেলে, তা আর রিটার্ন করা সম্ভব না। আমাদের দেশের বিকাশেও এই সুযোগ নেই।
বিটকয়েনের বড় ওয়ালেট এফবিআই এর
সিল্ক রোডের নামতো অনেকেই শুনে থাকবেন। আমেরিকার সেরা গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই যখন সিল্ক রোড বন্ধ করার অপারেশনে নামে, তখন তারা সব অবৈধ চালান সিস করে দেয়। এতে করে এফবিআই হয়ে উঠে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিটকয়েনের অধিকারী। ওয়ার ম্যাগাজিন নামের একটি শীর্ষস্থানীয় ম্যাগাজিন কমপ্লেইন করে এফবিআই থেকে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলারের বিটকয়েন আছে।
বিটকয়েন ওয়ালেট হারানোর অর্থই বিটকয়েন হারানো
অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আপনি যেমন টাকা রাখেন, তেমনি বিটকয়েন রাখতে হয় বিটকয়েনের ওয়ালেটে। যদিও এটি হাইলি সিকিউর স্টোরেজ কিন্তু আপনি যদি একবার ওয়ালেট হারান, তাহলে আজীবনের জন্যই আপনি বিটকয়েন হারালেন।
আবার এটাও একেবারেই অসম্ভব যে, কেউ আপনার ওয়ালেট ইউজ করতে পারবে। আপনার যদি একটি বিটকয়েন অ্যাড্রেস থাকে, তাহলে আপনি যাকে বিটকয়েন পাঠাবেন, তার একটা নম্বর দেখতে পারবেন। আর সেই নম্বরেই পাঠাতে হবে৷ একইভাবে আপনারও একটা নম্বর থাকবে।
বিটকয়েন পরিবর্তণশীল
যখন থেকেই বিটকয়েন আসে, তখন থেকেই বিটকয়েন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে দামী কারেন্সি হিসাবে রাজত্ব করছে। কিন্তু এই বিটকয়েনের মান ভবিষ্যতে কমতে পারে। এতে করে এর রাজত্ব ৯০ শতাংশে কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে বিভিন্ন সাইবার কমিউনিটিতে এবং যারা এই কারেন্সির উপরে নির্ভর করে।
বিটকয়েন অদৃশ্য
যাকে নিয়ে এত কথা সেই বিটকয়েনের কোন অস্তিত্বই নেই। মানে বিটকয়েন কেবল অনলাইনেই আছে, অফলাইনে এটার কোন অস্তিত্বই নেই। আর বিটকয়েনের যে মুদ্রা আপনি দেখে থাকেন, তাও বাস্তবে নাই। এটা কেবল অনলাইনেই পাবেন, আবার অনলাইনেই গায়েব। কিন্তু এর মূল্য অনেক বেশি।
বিটকয়েনের বর্তমান বাজার মূল্যও অনেক বেশি। দিন দিন এই কারেন্সি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করছে৷ কারণ এই কারেন্সি দিয়ে অনলাইনে লেনদেন করা খুব সহজ। কোন ভেরিফিকেশন দরকার হয় না। আবার আপনার পরিচয়ও গোপন থাকে৷
ডার্ক ওয়েবের সকল লেনদেনও এই কারেন্সি দিয়েই হয়। তাই একদিকে যেমন বিটকয়েন ভাল, তেমনি অপরাধ জগতেও অপরাধীরা খুব সহজেই আইনের কাছে ফাঁকি দিতে পারছে।
Leave a Reply