কিছুদিন আগেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন ভর্তি যুদ্ধে দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সেরা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অকান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আর কেনই বা করবে না, এর উপরেই তাদের ভবিষ্যত জীবনের স্বার্থকতা লুকিয়ে আছে।
কে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করে দেশে ও দেশের বাইরে মা বাবা ও মাতৃভূমির জন্য সুনাম অর্জন করবে তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে এই সময়েই। এখান থেকে কেউ ডাক্তার, কেউবা ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কোন ভাল বিষয়ে বেছে নিয়ে নতুন এক শিক্ষা জীবনের সুচনা করবে।
তবে এই সময়টাতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে একটি সিদ্ধান্তহীনতা লক্ষ্য করা যায়। যদিও আমি স্বীকার করি যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সুযোগ পাওয়া মুখের কথা নয়। তবুও যাদের মধ্যে সেই যোগ্যতা এবং মেধা রয়েছে তাদের জন্য সেরা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দুয়ার সব সময়ই খোলা।
ঐতিহাসিকরা প্রযুক্তির আধুনিকায়নের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন যুগের সূচনার হিসাব করে থাকে। প্রাচীন কালে যেখানে পাথর যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ বা লৌহ যুগ হিসেবে সময়কালকে সম্বোধন করা হতো, বর্তমান যুগকে সেখানে শিল্প বিল্পব, নিউক্লিয়ার যুগ এবং সর্বশেষে তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ হিসেবে সম্বোধন করা হয়।
আর এই তথ্য ও প্রযুক্তির যুগের অন্ত যে খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে না, এটা আমাদের সবারই জানা। সময় যত বেশি এগিয়ে যাচ্ছে, তথ্য ও প্রযুক্তিরও তত বেশি উন্নতি সাধিত হচ্ছে এবং মানুষ প্রযুক্তি শিক্ষায় উৎসাহিত হচ্ছে। অনেকে কোন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেও, অনলাইন আইটি কোর্স করে নিজেদেরকে চলমান প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, এটাই সঠিক সময় প্রযুক্তিনির্ভর কোন বিষয়ে পড়াশোনা করে পৃথিবীকে আরো একধাপ সামনে নিয়ে যাওয়ার। আর তার জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে ভালো মানের কোন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে সঠিক জ্ঞান অর্জন করার।
প্রযুক্তিগত বিষয়ে পড়াশোনার দিক থেকে আমাদের দেশের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে। তাই চলুন দেরী না করে জেনে নিই আমাদের দেশের সেরা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সম্পর্কে।
সেরা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনলোজি (বুয়েট):
প্রযুক্তিগত উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে খ্যাতনামা এবং স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ৯৭৪০ জন শিক্ষার্থী এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, প্লানিং এবং বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোন করছে।
বর্তমানে বুয়েটে ৫টি ফ্যাকাল্টির অধীনে ১৮টি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষা প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতি বছরই এখানে স্নাতক পর্যায়ে প্রায় ১০৫০ এবং স্নাতকোত্তর এবং পি.এইচডি পর্যায়ে প্রায় ১০০০ জন নতুন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়।
বুয়েট ক্যাম্পাসটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ক্যাম্পাসের মধ্যে দুর দুরান্ত থেকে আসা ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিগত ৩ বছরে নতুন একাডেমিক বিল্ডিং, আবাসিক ভবন ও অডিটোরিয়ামও স্থাপন করা হয় যা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে।
আজ পর্যন্ত এখান থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আর্কিটেকচারের বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রী নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যানে কাজ করে যাচ্ছে, যাদের সুনাম বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ইরান, জর্ডান, মালেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং প্যালেস্টাইনের শিক্ষার্থীরাও এখানে শিক্ষা নিতে ব্যাপকভাবে আগ্রহী।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি):
শাবিপ্রবি নামে অধিক পরিচিত বাংলাদেশের এই অন্যতম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি সিলেটে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের ৮ম পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয় যা প্রথম বারের মত বাংলাদেশে আমেরিকান ক্রেডিট সিস্টেম চালু করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা ব্যবস্থায় এটি পুরো পৃথিবীর সামনে বাংলাদেশের পরিচয় গর্বের সাথে তুলে ধরে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্বে কথা বিবেচনা করে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বাংলাদেশের প্রথম বিশেষায়িত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এটির সাফল্যের হাত ধরেই পরবর্তীতে অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। এখানে তারা নিত্য নতুন গবেষণার মাধ্যমে এমন অনেক বিষয়ের সাথে পরিচিত হয় যা সম্পর্কে আগে হয়তো তাদের কোন ধারণাই ছিল না। আবার এমনও অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা নিজে গবেষণা করে পৃথিবীতে নতুন একটি আবিষ্কার উপহার দিয়ে থাকেন।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট):
দক্ষিণাঞ্চলের গর্বে গর্বিত এই মহান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি। বাংলাদেশের খুলনা জেলায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রযুক্তিগত উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের দিক থেকে এদেশের প্রথম সারির প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরী করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ৩২০ জনেরও অধিক অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্বাবধায়নে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালটিতে একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, লাইব্রেরী, অডিটোরিয়ামসহ আরো বেশ কিছু ভবন রয়েছে।
এখানে ভর্তির জন্য প্রতি বছর ১০০৫টি সিটের বিপরীতে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। তাদের মধ্য থেকে মাত্র ১০ হাজারের মত শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে সেরা শিক্ষার্থীদের অধ্যায়নের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
সেরা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এতকিছু বলার পেছনে কারণ হলো এ ধরনের শিক্ষা আজকের দিনে একজন শিক্ষার্থীকে এতটাই যুগোপযোগী করে গড়ে তোলে, যা তাদের পরিরর্তণের জোয়ারে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি যদি পেশাগত অবস্থানের কথাও বলি, তাহলে পৃথিবীতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং নির্ভর পেশাগুলি সবচেয়ে দামী পেশা হিসেবে বিবেচিত।
আগামীতে বাংলাদেশে নেতৃত্ব তারাই দেবে যারা প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকবে। আরা আধুনিক বাংলাদেশের কারিগর সৃষ্টিতে সেরা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভূমিকা থাকবে সবচেয়ে বেশি।
Leave a Reply