বজ্রপাত আমাদের কাছে এক অতি পরিচিত শব্দ। সাধারণত, বজ্রপাত বলতে আকাশের আলোর ঝলকানিকে বুঝায়। বজ্রপাত মানুষের পরিচিত সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। তবে এই ভয়ংকর বজ্রপাত নিয়েও মানুষের কৌতূহল ও আগ্রহের শেষ নেই।
আজ আমরা জানবো বজ্রপাতের কিছু অজানা ও বিষ্ময়কর তথ্য।
তথ্য-১: আদ্র ও উত্তপ্ত আবহাওয়ায় বায়ু যখন শীতল হয় তখন বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। জলীয়বাষ্প ঘন হয়ে মেঘে পরিণত হওয়ার সময় এতে প্রচুর বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরী হয়। এ চার্জের এক অংশ পজিটিভ ও এক অংশ নেগেটিভ আধানে চার্জিত থাকে।
তথ্য-২: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় কোথায়? ভেনিজুয়েলার লেক ম্যারাকাইবো নামক স্থানে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে। প্রতি বছর এই স্থানে গড়ে ১৪০-১৬০ বার বজ্রপাত হয়ে থাকে।
তথ্য-৩: বজ্রপাতের কারণে গাছপালার ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। একটি বজ্রপাতের আঘাত এতোটাই জোরালো হয় যে তা একটি গাছের উপর পড়লে গাছটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধ্বংস হয়ে যায়।
তথ্য-৪: এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, হেলিকপ্টারের চলাচলের কারণেও বজ্রপাত হওয়ার আশংকা রয়েছে। হেলিকপ্টার তার নিজ পথে চলার সময়ে এক প্রকার নেগেটিভ চার্জ আহরণ করে। তাই, হেলকপ্টার যদি বায়ুমন্ডলের ধনাত্মক আধানযুক্ত কোন স্থান দিয়ে চলাচল করে, তাহলে তার ফলে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তথ্য-৫: বজ্রপাতের ফলে বিদ্যুৎ চমকানো আমাদের প্রকৃতির এক অতি সাধারণ ও চেনা একটি দৃশ্য। সারা বিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ৩০ লক্ষ বার আকাশে এই বিদ্যুৎ চমকায়, যা প্রতি সেকেন্ডের হিসেবে হয় ৪৪ বার।
তথ্য-৬: বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিদ্যুৎ চমকানো শুরু করলেই মানুষ যদি নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতো, তাহলে এই মৃত্যুর হার অনেকটা হ্রাস পেতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, একসময় আমাদের গ্রাম এলাকাতে অনেক বড় বড় গাছ থাকতো। সেই গাছগুলো বজ্রপাত তাদের নিজেদের শরীরে নিতো। এখন এ-রুপ বড় বড় গাছ না থাকায় বজ্রপাত সরাসরি খোলা জায়গায় পতিত হচ্ছে ও অনেক লোকের প্রাণহানী হচ্ছে।
তথ্য-৭: একটি বজ্রপাত ভূমিতে এক বিলিয়ন থেকে দশ বিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন করে থাকে। একটি বজ্রপাতে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, সেই সমপরিমাণ শক্তি দিয়ে একটি পরিবার ১৮-২০ বছর বিদ্যুৎ খরচ করতে পারবে।
তথ্য-৮: এক আমেরিকান জরিপে দেখা যায়, বজ্রপাতের কারণে গড়ে ১২০০০ মানুষের মধ্যে মারা যেতে পারে মাত্র ১ জন, সংখ্যায় যা খুবই নগণ্য। তবুও, বজ্রপাতকে ভয় করেন না এমন মানুষ বোধহয় নেই। বজ্রপাতকে ভয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক, অন্তত নিজেকে সুরক্ষিত করে রাখা সকলেরই দায়িত্ব।
তথ্য–৯: বজ্রপাত প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে থাকে। যে জায়গায় বজ্রপাত হয়, ঠিক সে জায়গার বাতাস এক সেকেন্ডের জন্য প্রায় সূর্যের সমান উত্তপ্ত হয়ে থাকে।
তথ্য-১০: বৃষ্টি বা ঝড় তুফান হলেই বজ্রপাত হবে এ ধারণা অমূলক। বৃষ্টি ছাড়াও বজ্রপাত হতে পারে। আমেরিকাতে এ ধরণের বজ্রপাত প্রায়ই হয় যা “ শুষ্ক বজ্রপাত” নামে পরিচিত।
শেষকথা
বজ্রপাত কখনও পূর্বাভাস দিয়ে আসে না। তাই ঝড় বৃষ্টি চলার সময় সকলেরই উচিত নিয়ম মেনে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়া। এক্ষেত্রে একটি দালান বা পাকা ভবন হতে পারে আপনার নিরাপদ আশ্রয়। এ সময় উচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
কোন খোলা স্থানে বজ্রপাত শুরু হলে নিচু হয়ে বসে পড়ুন। তবে মনে রাখবেন, কোন অবস্থাতেই শুয়ে পড়বেন না। কেউ বজ্রপাতে আহত হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করি, বজ্রপাত সম্পর্কে উপরোক্ত তথ্যগুলো আপনাদের উপকারে আসবে। পরিশেষে বলবো, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখাটা এক্ষেত্রে সকলের জন্যে দরকারি।
Leave a Reply