বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ধরনের মানুষের মধ্যেই ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আপনিও যদি ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইট এর সন্ধানে থেকে থাকেন, তাহলে আপনি সঠিক স্থানেই এসেছেন।
হৈচৈ বাংলা অনেক দিন ধরেই ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন কাজ এবং ওয়েবসাইটের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো বর্তমান সময়ে অনলাইনে ইনকাম করার উপযোগী সেরা ওয়েবসাইটগুলিকে।
এ ওয়েবসাইটগুলোতে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেকেই কোটিপতি হতে পেরেছেন। আপনিও পারবেন। কাজেই, আগে জেনে নিন ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে যে ১০টি জিনিস দরকার সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত। এরপর, নিজেকে ভালভাবে প্রস্তুত করে তুলুন এবং এখানকার সেরা ওয়েবসাইটগুলো থেকে যে কোনটিতে কাজ শুরু করে দিন।
ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইট কোনটি এটি নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ, ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এমন একটি পৃথিবী যেখানে আমরা অর্থ উপার্জনের জন্য আগমন করলেও বিভিন্ন কারণে খুব দ্রুত প্রস্থানও করি। আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছরের মধ্যেই ফ্রিল্যান্সিং এর ধারণাটি সবার কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ঘরে বসেই নিজের ইচ্ছানুরুপ সময়ে কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করাই আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে বিবেচিত।
তাদের এ ধারণা যে একেবারে ভুল, আমি তা বলবো না। ভুলটা তখন হয়, যখন আপনি ঠিক কোন কাজটি করে এবং কোন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাজ করে টাকা ইনকাম করবেন, সেটি না জেনেই মাঠে নেমে পড়েন। যার ফলে শুধুমাত্র শোনা কথার উপর ভিত্তি করেই, কোন প্রকার অভিজ্ঞতা অর্জণ না করেই বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এদেশের হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে প্রোফাইল তৈরী করছেন। আবার, কিছু দিনের মধ্যেই হতাশ হয়ে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন।
আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, তাহলে সময় এসেছে এই পৃথিবীটা আরো একবার নতুন করে ঘুরে দেখার।
ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইট
বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তণ এসেছে। পরিবর্তণ হয়েছে কাজের ধরণ এবং চাহিদার। আগের চাইতে এখানে নতুনদের জন্য কাজ করার অনেক প্রতিকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে কয়েক হাজারেরও বেশি প্লাটফর্ম তৈরী হয়েছে যা ফ্রিলান্সারদেরকে কাজের ধরণভেদে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে।
আর সবচেয়ে ভালো খবরটি হলো এখন আপনাকে একটি প্লাটফর্মে হাজার ধরনের কাজের সন্ধান করার প্রয়োজন নেই। কারণ, কাজের ধরণের ভিত্তি করেও গড়ে ওঠা ওয়েবসাইটের সংখ্যাও কম নয়। আপনার মধ্যে যে ধরনের দক্ষতা রয়েছে, আপনি চাইলে সে ধরনের ওয়েবসাইটে কাজ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারেন।
তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক এ সময়ের ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইট সম্পর্কে। তার আগে আসুন, আরো কিছু ছোট-খাট বিষয় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক।
ফ্রিল্যান্সিং পেশার জনপ্রিয়তার কারণ:
আমেরিকা বা ইউরোপের মত উন্নত দেশগুলিতে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করতে হয়। এ কারণে ঐ সমস্ত দেশের কোম্পানীগুলি তাদের বেতনভুক্ত কর্মচারীদের পরিবর্তে উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশ থেকে তুলনামূলক কম খরচে কাজগুলি করিয়ে নিতে আগ্রহী হয়ে থাকে।
ঘরে বসে কাজ করার সুবিধা থাকার কারণে অনেকেই এই পেশার সাথে যুক্ত হচ্ছেন। ফ্রিল্যান্সিং পেশার সবচেয়ে সুন্দর দিকটি হলো, এখানে আপনাকে কোন নির্দিষ্ট সময়ে অফিস করতে হয় না বা কারো অধীনে থেকে কাজ করার প্রয়োজন পড়ে না। এখানে আপনি নিজেই নিজের বস।
এ ধরনের ওয়েবসাইটে যাদের জন্য কাজ রয়েছে:
বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটেরই কাজ এবং দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। তাই বলা যায় যে, সব দক্ষতার মানুষদেরই এ সব ওয়েবাসাইট ভিন্ন ভিন্ন কাজের প্রস্তাব করে থাকে। আপনি কোন কাজটি করবেন, তা একমাত্র আপনার উপরই নির্ভর করে।
একই সাথে, এমনও কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যা একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার মানুদের জন্যই আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, নাইনটি নাইন ডিজাইন এমন একটি ওয়েবসাইট যা শুধুমাত্র লোগো ডিজাইনার বা ওয়েব ডিজাইনে পারদর্শী ব্যক্তিদের জন্যই সুবিধাজনক।
এবার চলুন, ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলো কি কি, কোনটিতে কি ধরণের কাজ রয়েছে এবং কোনটায় কি ধরণের সুবিধা পাবেন, ইত্যাদি সম্পর্কে জানি।
আপওয়ার্ক
১.৫ মিলিওনেরও বেশি গ্রাহক সংখ্যা (সাবেক ওডেস্ক) নিয়ে আজকের সময়েও ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট আপওয়ার্ক জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। সব ধরনের ফ্রিল্যান্সারদের কাছেই এই ওয়েবসাইটটি সমানভাবে জনপ্রিয়। এমনকি অনেকের কাছেই ফ্রিল্যান্সিং করার মানেই হচ্ছে আপওয়ার্কে কাজ করা।
আপওয়ার্কের শর্ট টার্ম প্রোজেক্ট, লং টার্ম প্রজেক্ট এবং ঘন্টা চুক্তি ভিক্তিক কাজের সাথে সাথে সাথে এন্ট্রি লেভেল কাজের ব্যবস্থা থাকায় নতুনদের অনেকেই এখানে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে উৎসাহী হয় উঠছে। এছাড়াও আপওয়ার্কে বর্তমানে ৩৫০০ এরও বেশি রেজিষ্টার্ড কাজের ক্যাটেগরি রয়েছে। এক কথায় বলা যায় যে, আপনার যে ধরণের দক্ষতাই থাকুক না কেন, আপওয়ার্কে আপনার জন্য কাজ রয়েছে।
আরপরেও আপওয়ার্কে কাজের কিছু প্রধান ক্যাটাগরি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, রাইটিং, অ্যাডমিন সাপোর্ট, কাস্টমার সার্ভির, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অন্যতম। প্রতিটি ক্যাটাগরিই আবার ভিন্ন ভিন্ন সাব-ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। যেমন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যাটাগরিটির অধীনে এখানে অল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব প্রোগ্রামিং, ই-কমার্স এবং ইউ আই ডিজাইন নামের ৮টি সাব-ক্যাটাগরি রয়েছে, যা কাজ নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে আরো বেশি সহজ করে তোলো।
জেনে নিন আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলবেন কিভাবে, আর অ্যাকাউন্ট খোলার পর স্কিল টেস্ট দিয়ে কিভাবে পাস করবেন।
ফ্রিল্যান্সার:
অন্যান্য প্লাটফর্মের মতই এই ওয়েবসাইটটিতেও কয়েক মিলিওনেরও বেশি কাজ রয়েছে। এখানে আপনি আপনার দক্ষতার মাধ্যমে অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ নিতে পারবেন।
যদি আপনার মধ্যে প্রতিযোগি মনোভাব এবং কাজের দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনার পোর্টফোলিওর মাধ্যমে খুব সহজেই এখানে আপনি কায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবেন।
আপনি জেনে খুশি হবেন যে, আপওয়ার্কের চেয়ে ফ্রিল্যান্সারে কাজের পরিমাণ বেশি। হাজার হাজার ক্লায়েন্ট রয়েছে এই ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইট টিতে। এমনকি, ফ্রিল্যান্সারে কাজের রেটও পাওয়া যায় আপওয়ার্ক থেকে বেশি। জেনে নিন ফ্রিল্যান্সারে অ্যাকাউন্ট খুলে কিভাবে আয় করবেন।
ইল্যান্স:
ফ্রিল্যান্সারদের কাজের বিভিন্ন সমস্যার সহজ সমাধান থাকার কারণে ইল্যান্স জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আপনি কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ইচ্ছা করলে এখনি ইল্যান্সে একটি প্রোফাইল তৈরী করে কাজ করতে পারেন।
ইল্যান্সের পেমেন্ট প্রটেকশন সার্ভিসের কারণে এখানে পেমেন্ট না পাওয়ার আশংকা ছাড়াই আপনি ঘন্টা ভিত্তিতে পারিশ্রমিক নিতে পারবেন।
যদিও বর্তমানে ইল্যান্স আপওয়ার্কের অধীনে থেকেই নিজেদের সকল কার্যাবলী সম্পাদন করে, তবুও ইল্যান্সের নিজস্ব বৈশিষ্ট সমূহ অটুট থাকায় এটি এখনো সব ধরনের ফ্রিল্যান্সারদের কাছে পূর্বের মতই গ্রহণযোগ্য।
নাইনটি নাইন ডিজাইন:
এই ওয়েবাসাইটটি শুধুমাত্র ওয়েব ডেভেলপার, ইউআই ডিজাইনার, ইউএক্স ডিজাইনার, ওয়েব ডিজাইনার এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের জন্য। যে কেউ ব্যক্তিগতভাবে এখানে নিজের প্রোফাইল তৈরী করতে পারে। ডিজাইন ভিত্তিক কাজে যাদের দক্ষতা রয়েছে তাদের জন্য এটিই সবচেয়ে আদর্শ ওয়েবসাইট।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, অন্যান্য ওয়েবসাইটে ডিজাইনের কাজেও দেখা যায় যে, নন-ডিজাইনার অনেকেই কাজে বিড করে থাকেন এবং অনেক ক্ষেত্রে কাজটি পেয়েও থাকেন। এতে করে একদিকে যেমন একজন যোগ্য ব্যক্তি কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে ক্লায়েন্ট অসন্তুষ্ট হওয়ার কারণে পরবর্তীতে কাজ পোষ্টের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সেখানে এই ওয়েবসাইটটিতে একজন ডিজাইনারের প্রতিযোগি একজন ডিজাইনার হওয়াতে সবার মধ্যেই একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরী হয়।
ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানার পর এখন যদি আপনার ফ্রিলান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার প্রতি আগ্রহ জন্মে থাকে, তাহলে আমি আপনাদের বলবো, সময় নষ্ট না করে এখনই আপনার দক্ষতার সাথে মিলে যায় এমন একটি ওয়েবসাইটকে বেছে নিয়ে কাজ শুরু করুন।
আপনি যদি একবার প্রোফাইল তৈরী করেন এবং কাজ পেতে সক্ষম হন, তাহলে অন্যান্য ওয়েবসাইটেও কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি আপনার জন্য সহায়ক হবে। যারা একদমই নতুন তাদের জন্য আপওয়ার্ক এর মত ওয়েবসাইটগুলি দিয়ে কাজ শুরু করা ভালো হবে।
প্রথম কাজের ক্ষেত্রে আপনার বিড অন্যান্যদের তুলনায় সামান্য কম রাখুন এবং যখন আপনি আস্তে আস্তে কাজ পেতে থাকবেন, তখন রেটও বৃদ্ধি করুন। আমি আশা করছি এইসময়ের সবচেয়ে ভালো ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলি সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি। এরপরেও যদি আপানদের কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানান। ফ্রিল্যান্সিং এর পৃথিবীতে আপনার যাত্রা শুভ হোক।
Leave a Reply