ইন্টারনেটযুক্ত মোবাইল ব্যবহার করতে পারে এরকম সবারই এখন ফেসবুক রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে ইন্টারনেট মানেই হচ্ছে ফেসবুক। তবে ফেসবুকের এই সহজলভ্যতা কোন সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে- ফেক আইডি! আর এই ফেক আইডি চেনার উপায় নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
যেহেতু ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট করতে কোন টাকা লাগে না, তাই যে কেউই ইচ্ছে করলে যে কোন বেশে যে কয়টা ইচ্ছা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। ভূয়া পরিচয়ে এভাবে অ্যাকাউন্ট খোলা শুধু ফেসবুকের নীতিমালার পরিপন্থীই নয়, রীতিমতো অনৈতিক।
ফেসবুকের ভাষ্যমতে তারা ফেক আইডির ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর। তবে তা সত্ত্বেও ফেক আইডির দৌরাত্ম থেমে নেই। প্রতিনিয়ত এ-সব ফেক আইডির দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।
আপনি হয়ত ফেক আইডির পাল্লায় কখনো পড়েছেন, হয়ত পড়েননি। পড়ে থাকলে বুঝতেই পারছেন, ফেক আইডি চেনা কেন জরুরী; না পড়ে থাকলে আগে থেকেই সাবধান হয়ে নেওয়া ভালো। কারণ এটি শুধুমাত্র আপনার সাথে প্রতারণাই নয়, আপনার ব্যক্তিগত ইনফরমেশন হাতিয়ে নিয়ে অনেক বড় ক্ষতিও করতে পারে ফেক আইডি হোল্ডার। তাই, ফেক আইডি চেনার বা বোঝার উপায় জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
ফেক আইডি চেনার উপায়
ফেক আইডি ক্ষতিকর হলেও একটু সাবধানতা অবলম্বন করে নিজেকে ফেক আইডির কবল থেকে রক্ষা করতে পারবেন। তাই, ফেসবুকে আমরা আজকে এখানে ফেক আইডি চেনার ৭টি কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করব, পড়া শেষে কেমন লাগল তা কমেন্টে জানাবেন।
০১. প্রোফাইল ইনফরমেশন যাচাই করুন
কোন আইডি ফেক কিনা সেটা জানার জন্য সর্ব প্রথম যে কাজটি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি, সেটা হলো আইডির ইনফরমেশন দেখা। কোন আইডি ফেক হলে সেখানে অসঙ্গতি থাকবেই। আইডি মালিক নারী এবং একই সাথে ঢাকা কলেজে পড়ে, এ শুধুমাত্র ফেক আইডিতেই সম্ভব।
হোমটাউন, এডুকেশনাল হিস্টোরি, কোথায় কাজ করে, ফ্যামিলি মেম্বার, প্রিয় উক্তি ইত্যাদি দেখে আপনি বুঝতে পারবেন সেটি ফেক আইডি কিনা। ভুয়া পরিচয়ধারীরা নিজের সম্পর্কে খুব বেশি সঙ্গতিপূর্ণ তথ্য দিয়ে রাখতে পারে না। তাই বেশি তথ্য থাকলে সেখানে অসঙ্গতি চোখে পড়বেই।
তবে প্রোফাইল ইনফরমেশন সব হাইড করে রেখে দিলে আপনি এখান থেকে প্রায় কিছুই জানতে পারবেন না। অনেকেই নিরাপত্তার খাতিরে প্রোফাইল ইনফরমেশন ফ্রেন্ডস কিংবা অনলি মি করে রাখেন। সেক্ষেত্রে ঐ আইডি আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে না থাকলে বেশি কিছু জানা সম্ভব নয়।
০২. ফেসবুকের টাইমলাইন ও এক্টিভিটি খেয়াল করুন
সত্যিকারের ফেসবুক আইডির টাইমলাইন থাকবে জীবন্ত। সেখানে যেমন নিয়মিত পোস্ট বা বিভিন্ন ধরণের শেয়ারিং দেখতে পাবেন, তেমনি তার কমেন্ট সেকশনেও স্বাভাবিক কথাবার্তা পাওয়া যাবে। কিন্তু ফেক আইডির ক্ষেত্রে এটা হবে না। পোস্ট বা শেয়ারিং হবে একঘেয়ে, কমেন্টেও আইডির মালিকের সরব উপস্থিতি বা স্বাভাবিক কথাবার্তা পাওয়া যাবে না।
- আরো পড়ুন: ফেসবুকের মাধ্যমে চাকরি পাবেন যেভাবে
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাইমলাইন যাচাই করার জন্য ফ্রেন্ড হওয়া জরুরী। কোন আইডি নিয়ে সন্দেহ হলে তাই তার টাইমলাইন এবং এক্টিভিটি খেয়াল করুন।
০৩. ফেসবুকের URL চেক করুন
ফেক আইডির URL সাধারণত প্রোফাইল নামের সাথে কোন মিল থাকে না। URL হচ্ছে, ঐ আইডির ফেসবুক লিংক।
এটি দেখার জন্য, সরাসরি আইডির প্রোফাইলে ঢুকে যান এবং ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে www.facebook.com/এর পরের অংশ খেয়াল করুন। আইডির নাম এবং URL পুরোপুরি ভিন্ন হলে ধরেই নিতে পারেন সেটি একটি ফেক আইডি।
০৪. তাদের ফ্রেন্ডলিস্ট বা চেক করুন
অসৎ লোকের বন্ধু যেমন অসৎ হয়, তেমনি ফেক আইডির ফ্রেন্ডলিস্টেও প্রচুর ফেক আইডি থাকে। তাই ফ্রেন্ডলিস্ট চেক করে যদি একই ধরণের অনেকগুলো আইডি পেয়ে যান, তাহলে সেটিকে ফেক আইডি হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
তবে কেন জানি না, ইদানীং অনেকেই ফ্রেন্ডলিস্ট হাইড করে নিতে পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে তার টাইমলাইনে পোস্ট, কমেন্ট কিংবা লাইক করা আইডিগুলোও থেকেও ফ্রেন্ডদের সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
০৫. তার প্রোফাইল দেওয়া তথ্যগুলো নিয়ে মেসেজে কথা বলুন
আপনার সাথে নিয়মিত কথা হয়, এ রকম কাউকে যদি ফেক আইডির মতো লাগে, তাহলে প্রোফাইলে দেওয়া তথ্য; যেমন স্কুল, কলেজ, হোমটাউন, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদি নিয়ে কৌশলে কথা বলুন, গল্প করুন। ভুয়া পরিচয়ধারী যে কোন ব্যক্তিই এসব নিয়ে সঠিকভাবে কথা বলতে পারবে না।
তবে, এসব নিয়ে কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কোন আসল ব্যক্তি যেন মনে আঘাত না পায়।
০৬. ফটো অ্যালবাম বা ছবি খেয়াল করুন
ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আমরা সাধারণত প্রচুর ছবি শেয়ার করে থাকি। কেউ নিজে ছবি শেয়ার না করলেও তার অন্যান্য বন্ধুবান্ধব দ্বারা পোস্ট করা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা উৎসবে ওঠা ট্যাগকৃত কিছু ছবি টাইমলাইনে থাকবেই।
কিন্তু একটি ফেক আইডির বেলায় তার নিজের এরকম একাধিক ছবি থাকা সম্ভব নয়। কোন আইডিকে ফেক মনে হলে তাই তার প্রোফাইল ফটো অ্যালবামের ছবিগুলো চেক করুন।
০৭. প্রোফাইলে ছবি দেওয়া থাকলে সেটি গুগল থেকে চেক করুন
আগেই বলেছি ফেক আইডির প্রোফাইলে একাধিক ছবি থাকা একরম অসম্ভব। এসব আইডির প্রোফাইলে সাধারণত মানুষের ছবি থাকে না, যদিওবা থাকে, তাহলে একাধিক ছবি থাকে না বললেই চলে। প্রোফাইলে যদি খুব চমৎকার বা সুন্দর একটি ছবিই দেওয়া থাকে, তাহলে ধরে নিন সেটি ফেক আইডি।
এবং এটি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রোফাইল পিকচারটি ডাউনলোড করে, কম্পিউটারে মাউস দিয়ে সেই ছবিটিকে ধরে গুগলের সার্চবক্সে ফেলে দিন। তাহলেই ছবি আসল মালিক সম্পর্কিত তথ্য আপনি পেয়ে যাবেন এবং নিশ্চিত হতে পারবেন আইডিটি ফেক না রিয়েল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এখন হরহামেশাই ঘটছে। আপনার অজান্তে কেউ আপনার তথ্য ব্যবহার করে এসব কর্মকাণ্ড চালাতেই পারে। বর্তমান সময়ে তাই ব্যক্তিগত তথ্যর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আসলেই অনেক বেশি দরকার। কাজেই টু-স্টেপ অথেনটিফিকেশন সেট করে আপনার আইডিকে পুরোপুরি সিকিউরড্ করে রাখুন। নৈলে কখনো না কখনো আপনাকে কোন ফেক আইডরি প্রতারণায় পড়তে হতে পারে। শুধু প্রতারণা নয়, অনেক সময় আপনার সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এসব ফেক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়।
তাই, সেরকম কোন ভুয়া আইডি আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকে তাহলে উপরে আলোচিত ফেক আইডি চেনার উপায় গুলো প্রয়োগ করে সেটিকে আজকেই আনফ্রেন্ড প্রয়োজনে ব্লক করে দিন, সেই সাথে রিপোর্ট করতে পারেন ফেক আইডি সেকশনে। অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ড হিসেবে যোগ করার আগে যাচাই করে নিন সেই আইডি আসল না নকল।
Leave a Reply