ফেসবুকে মার্কেটিং এর সফলতার যেমন প্রচুর গল্প রয়েছে ঠিক তেমনি ফেসবুক মার্কেটিং এর ভুল করে ক্যারিয়ার ধ্বংসের উদাহরণও কম নয়। “ফেসবুকের ২ বিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় ইউজার রয়েছে” শুধুমাত্র এ তথ্যের উপর নির্ভর করেই অনেকে চোখ-কান বুজে কন্টেন্ট পাবলিশ করা শুরু করে দেয়। আর মূল ঝামেলাটা শুরু হয় এখান থেকেই।
ফেসবুক মার্কেটিং যে কোন ব্যবসার জন্য অফুরন্ত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয় এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি এই সত্যের পিছনের সত্যটা হলো “যদি সব কাজ ঠিকমতো করা হয়”। তাই, এক্সপার্টদের দেয়া ফেসবুক মার্কেটিং টিপস্ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। ঠিক মতো কাজ করার মানে কিন্তু তাই। অর্থাৎ, আপনি এক্সপার্টদের অনুসরণ করবেন, তাদের মতোই কাজ করবেন এবং তাদের মতোই সফলতা পাবেন।
ডিজিটাল মার্কেটারদের অনেকেই শুধুমাত্র আপডেট পোষ্ট করে পর্যাপ্ত লাইক ও শেয়ারের আশা করেন, যা আজকের দিনে রীতিমত হাস্যকর ও ভুল মার্কেটিং। এ ধরণের আরো অনেক ভুল রয়েছে যেগুলো জানতে হবে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারকে সমুন্নত রাখতে এ ধরণের ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ফেসবুক মার্কেটিং এর ভুল
পরিসংখ্যান মতে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে লাভজনক মার্কেটিং প্লাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক। আর একারণেই ফেসবুক সব সময় ব্যবহারকারীদের ভালো কিছু উপহার দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। এর একটা অসুবিধা হলো আগে যেভাবে খুব সহজেই একটি পেজকে প্রতিষ্ঠিত করা যেত, এখন আর সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতি নিয়ত লক্ষ লক্ষ নতুন মার্কেটার ফেসবুকের সাথে সংযুক্ত হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এদের অনেকেই ফেসবুকের সর্বশেষ আপডেট সম্পর্কে জানেন না। ফলশ্রুতিতে তারা করে বসেন এমন কিছু ভুল যা তাদের মার্কেটিং ক্যারিয়ারকে শুরুর আগেই শেষ করে দেয়।
অতিরিক্ত প্রচারণা:
আপনি যদি একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর সদস্য হয়ে থাকেন, তাহলে সেটি নিয়ে আপনি গর্বিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনাকে মাথায় রাখতে হবে ফেসবুক ব্যকহারকারীরা এর থেকে অনেক বেশি কিছু একটি বিজনেস পেজের কাছ থেকে আশা করে।
কোম্পানীর বিভিন্ন অর্জন ফেসবুক ফলোয়ারদের সাথে শেয়ার করাটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তবে খেয়াল রাখতে হবে এটা যেন কখনোই মাত্রাতিরিক্ত না হয়। আপনি যদি আপনার ফলোয়ারদের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হন, তাহলে খুব দ্রুতই তারা আপনার পেজকে আনফলো করা শুরু করবে। এক্ষেত্রে আপনি ব্যবসায় সফল হওয়ার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যানগুলি জেনে নিতে পারেন।
অডিয়েন্স রিসার্চ না করা:
ফেসবুকে মার্কেটিং শুরু করতে হলে আপনাকে প্রথমেই একটি সম্পূর্ণ ও সঠিক গবেষনা সম্পাদন করতে হবে। আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব তত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আপানার অডিয়েন্স কারা, আপনি তাদের কোন কোন সমস্যার সমাধান দিতে সমর্থ, তাদের অবস্থান, পেশা ইত্যাদি।
এধরনের তথ্যাবলি হাতে আসার পরই মার্কেটিং প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব। আবার আপনার কাছে যদি আগে থেকে কাস্টমারদের ইমেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করা থাকে, তাহলে সেটি ফেসবুকে আপলোড করার মাধ্যমে সরাসরি মার্কেটিং করতে পারেন। এক্ষেত্রে ফেসবুক আপনার সরবরাহকৃত ইমেইল হোল্ডার অ্যাকাউন্টগুলিকেই প্রাইমারি টার্গেট করবে।
কিন্তু অধিকাংশ নতুন মার্কেটারই শুধুমাত্র পোষ্ট বুষ্ট করে দিয়েই দায়িত্ব শেষ মনে করেন। ফলশ্রুতিতে পেইড মার্কেটিং এর সুফল তারা তুলনামূলক অনেক কম পান।
অসত্য কিংবা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান:
আপনি পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ফেসবুক পেজ পরিচালনা করবেন এবং সেজন্য আপনি প্রচারণা চালাবেন; এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন তা যেন কখনোই অতিরঞ্জিত না হয়। এমনটা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রচারণামূলক পোষ্টগুলিতে যতটা সম্ভব আপনার পণ্য এবং সেবা সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করুন। বিভ্রান্তিমূলক কথা এড়িয়ে চলুন। এ ধরনের পোষ্ট থেকে সাময়িকভাবে ভিজিটরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হলেও দীর্ঘ মেয়াদে আপনার ব্যবসা টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
অনেক বেশি শব্দের ব্যবহার:
অনেক পেজেই দেখা যায় তারা একটি পোষ্টকে এত বেশি দীর্ঘায়িত করে ফেলে যে ভিজিটর সেটি পড়ার আগ্রহই হারিয়ে ফেলে। অনেকে তো পোষ্ট পড়তে যেয়েও পোষ্টের সাইজ দেখে আর পড়েন না। এটা একটা সাধারণ বিষয় কারণ আপনাকে বুঝতে হবে যে একজন ব্যবহারকারী এত বেশি সময় কখনও একটি পোষ্টের পিছনে ব্যয় করবে না, যদি তা ঐ ভিজিটরের কাছেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হয়ে থাকে।
স্বাভাবিক ভাবে ছোট ছোট পোষ্ট লিখুন। অল্প কথার মধ্য দিয়ে বেশি বোঝানোর চেষ্টার মধ্যেই কিন্তু ক্রিয়েটিভিটি লুকিয়ে থাকে। Forbes এর গবেষণায় দেখা গেছে ২৫০ অক্ষরের পোষ্টগুলি ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি শেয়ার হয়।
নেগেটিভ ফিডব্যাক এড়িয়ে যাওয়া:
এ কাজটি অনেক বেশি সংখ্যক পেজ ম্যানেজারদের করতে দেখা যায়। হয় তারা নেতিবাচক কমেন্টগুলিকে ডিলিট করেন, না হয় এড়িয়ে যান, যা একটি মারাত্বক ভুল। মার্কেটিং গুরুরা বলেন কাস্টমার কি চায় সেটা সব সময় কাস্টমারের নেতিবাচক মন্তবের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। কাস্টমারের প্রয়োজন হচ্ছে একটি তালার মত। যেদিন আপনি সেই তালার চাবি পেয়ে যাবেন, সেদিন আপনি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন।
তো বুঝতেই পারছেন, কাস্টমারের ইতিবাচক মন্তব্যের সাথে সাথে নেতিবাচক মন্তব্যগুলোকেও সহজভাবে নেওয়া শিখতে হবে। কাস্টমারের অভিযোগগুলি বুঝে সেগুলিকে দ্রুত সঠিক করার চেষ্টা করে কাস্টমারকে তার সমস্যার সমাধান দিতে হবে।
ফেসবুক মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে সফলতা আর বিফলতা পাশাপাশি অবস্থান করে। কোন কোন কাজ করলে আপনি নিশ্চিতভাবে সফল হবেন তা বলা না গেলেও অর্থাৎ সম্ভব না হলেও উপরের কাজগুলি যদি আপনি করে বসেন, তাহলে বিফলতা নিশ্চিত।
উপরের আলোচনা থেকে ফেসবুক মার্কেটিং এর ভুল এবং কিভাবে এগুলিকে এড়িয়ে চলতে হবে তা নিশ্চয়ই আপনার বুঝতে পেরেছেন। এ সম্পর্কিত আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে, অর্থাৎ ভুলগুলো সম্পর্কে মনের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
Leave a Reply