ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্যের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হলে প্রথমেই জানতে হবে কি এই ফিজিক্যাল পণ্য? আর এই ডিজিটাল পণ্য-ই বা কি? দৈনন্দিন জীবনে আপনার নিজের জন্য অথবা পেশাগত কারণে, আপনি হরহামেশাই বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনা বেচা করে থাকেন। মুল উদ্দেশ্যটা থাকে পণ্য বিক্রির টাকাটা অথবা ক্রয় করা পণ্যটা ভালো করে বুঝে পাওয়া। তাই, পণ্যটা ফিজিক্যাল না ডিজিটাল; তা ভাবার প্রয়োজন হয় না।
কিন্তু, দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবসা করতে আপনার প্রয়োজন পড়বে মার্কেট রিসার্চের। আর, রিসার্চের কেন্দ্রবিন্দু থাকে পণ্যের ধরন যাচাই।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি পণ্যের ধরন যাচাইয়ের উপর ধারণা লাভ করবেন। জানতে পারবেন ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্য বলতে কি বুঝায়। অতঃপর বিশদভাবে বুঝতে পারবেন ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্যের মধ্যে পার্থক্য। যা আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক পণ্য বাছাইয়ে সাহায্য করবে।
ফিজিক্যাল পণ্যঃ
এক কথায়, যে সকল পণ্য আপনি স্পর্শ করতে পারবেন, সেগুলোই হচ্ছে ফিজিক্যাল পণ্য। যেমনঃ মুদি দোকানের পণ্যসামগ্রী, জামা-কাপড়, গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, স্টেশনারি মালামাল প্রভৃতি।
ফিজিক্যাল পণ্যের বৈশিষ্ট্যঃ
- এ ধরণের পণ্য গুদামজাত করার প্রয়োজন হয়
- ফিজিক্যাল পণ্য ক্রেতার নিকট পৌছাতে নির্দিষ্ট পরিবহণ মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। অথবা, ক্রেতাকে সরাসরি দোকান থেকে সংগ্রহ করতে হয়
- একটি ফিজিক্যাল পণ্য শুধু একবার-ই বিক্রি করা যায়। একাধিকবার বিক্রয়ের জন্য পুনরায় তৈরী করতে হয়। অথবা, যোগান দিতে হয়
ডিজিটাল পণ্যঃ
যে সকল পণ্য কম্পিউটারের মাধ্যমে আপনি দেখতে ও শুনতে পারবেন কিন্তু কোনোভাবে স্পর্শ করতে পারবেন না, সেগুলো হচ্ছে ডিজিটাল পণ্য। যেমনঃ বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার, ছবি, ইবুক, ভিডিও, গান এমনকি এই যে আর্টিকেলটি পড়ছেন, এটাও একটা ডিজিটাল পণ্য।
ডিজিটাল পণ্যের বৈশিষ্ট্যঃ
- ডিজিটাল পণ্য ক্রেতার নিকট ই-মেইল, ডাউনলোড এবং নির্দিষ্ট ওয়েব সাইট লিঙ্ক-এর মাধ্যমে পৌছানো হয়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা নিজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে বা যে কোন জায়গা থেকেই পণ্যটি খুঁজে নিয়ে সাথে সাথেই ব্যবহার করতে পারে।
- একটি ডিজিটাল পণ্য একবার তৈরি করে অনেক বার বিক্রি করা যায়।
- যেহেতু একবার বিক্রির পর পণ্য শেষ হয়ে যায় না, সেহেতু চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে ডিজিটাল পণ্যের গুদামজাতকরণের কোন প্রয়োজন পড়ে না। শুধু একদম শুরুতে ডিজিটাল পণ্য অনলাইন স্টোরেজে আপলোড করে রাখা হয়।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই প্রাথমিক ধারণা হয়ে গেছে। এখন আপনি হয়ত বলতে পারেন- যে এখন তো অনলাইনেও জামা-কাপড়, খাবার, প্রসাধনী বিক্রি করতে দেখা যায়। ইমেইলের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরণের উপহার সামগ্রী, বিভিন্ন উৎসবে জামা-কাপড়ের অফার পাই। তাহলে কি সেগুলোও ডিজিটাল পণ্য হবে?
এর এক নিমেষে ঊত্তর হলো- না। ওগুলো ফিজিক্যাল পণ্য ডিজিটালভাবে আপনার কাছে প্রদর্শন করা হচ্ছে। অতঃপর, আপনি ডিজিটালভাবেই মূল্য পরিশোধ করে ঘরে বসেই কিনে নিচ্ছেন। ধরুন, আপনাকে বাসায় এসে পণ্যটি দিয়েও গেলো। এরপর তো আপনি সেটা হাত দিয়ে ধরতে পারছেন। তাই, এটা ফিজিক্যাল পণ্য।
কিন্তু কোন ভিডিওর কথা ভাবুন। আপনি ইউটিউবে সার্চ করেই সেটা পেয়ে যাচ্ছেন। তারপর ফ্রিতেই দেখতে পারছেন। প্রিমিয়াম ভিডিও হলে ডিজিটালভাবে মূল্য পরিশোধের পর সেটা দেখতে পারছেন। ভিডিওর গান বা কথাগুলো আপনি চোখ দিয়ে দেখছেন এবং কান দিয়ে শুনছেন। কিন্তু হাত দিয়ে ধরতে পারছেন না। তাই, এটা ডিজিটাল পণ্য।
এখন যদি আপনি কোন সিনেমার ডিভিডি কিনেন (যদিও এখন ডিভিডির যুগ নেই), সেক্ষেত্রে ডিভিডিটা আপনি যেভাবেই কিনুন না কেন, সেটা হবে ফিজিক্যাল পণ্য।
আশা করি, ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্যের মধ্যে পার্থক্য টা ধরতে পেরেছেন।
নিচের টেবিলটা থেকে পার্থক্যটা এক নজরে দেখে নিন।
এবার চলুন দেখে নেয়া যাক ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্যের তুলনামুলক অবস্থান।
ফিজিক্যাল পণ্যের ব্যবসা
তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এখন মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে ই-কমার্স সাইটগুলো ব্যবসা জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এরপরেও ফিজিক্যাল পণ্য নিয়ে ব্যবসার ভালো খারাপ দুটো দিকই রয়েছে।
ভালো দিক
- যেহেতু মানুষ খুব সহজে এ ধরণের পণ্যের মূল্য ও গুণাগুণ বুঝতে পারে তাই এর মার্কেটিং এর পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং এ সফলতার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
- ফিজিক্যাল পণ্য বিক্রির জন্য আপনি বয়স, পেশা, ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে সব ধরণের মানুষকে টার্গেট করতে পারবেন।
- ফিজিক্যাল পণ্যের অফলাইন স্টোরের পাশপাশি আপনার একটি অনলাইন স্টোর থাকলে পণ্যের ব্র্যান্ডিং দ্রুততর এবং দীর্ঘ মেয়াদী হবে।
খারাপ দিক
- পণ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে পুনঃ যোগানের খরচ বহন করতে হবে।
- পণ্যের চালান ব্যবস্থাপনায় আপনাকে লোকবল ও খরচ দুটোরই ঝামেলা পোহাতে হবে।
- পণ্য সরবরাহে কোন দুর্ঘটনাজনিত সমস্যায় আপনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। অতঃপর, আপনার গ্রাহক সেবায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ডিজিটাল পণ্যের ব্যবসা
বিশ্ব অর্থনীতির একটি বড় অংশ পরিচালনা করছে ডিজিটাল পণ্যগুলোর কেনা বেচা। এই ডিজিটাল পণ্যের আবির্ভাবেই প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্যের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের।
ভালো দিক
- মূল্য পরিশোধের সাথে সাথেই আপনার গ্রাহক ডিজিটাল পণ্য হাতে পাবে। এখানে পণ্য সরবরাহে কোন ধরণের সমস্যার অবকাশ থাকে না। তাই, আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকে না।
- ডিজিটাল পণ্য একবার তৈরি করে অসংখ্য বার বিক্রি করতে পারবেন।
- অনলাইন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা সিস্টেম-এর মাধ্যমে বিক্রি মনিটরিং, বিক্রি পরবর্তী গ্রাহক সেবা প্রভৃতি পরিচালনায় আপনার তুলনামুলকভাবে অনেক কম লোকবল প্রয়োজন হবে।
খারাপ দিক
- অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ খুব সহজে এ ধরণের পণ্যের মূল্য ও গুণাগুণ বুঝতে পারে না। তাই, এর মার্কেটিং এর পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং এর জন্য আপনাকে প্রচুর সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে।
- পণ্য তৈরি, মানোন্নয়ন এবং মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনার যথেষ্ট প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হবে
- তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে প্রতিদিন বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত আপনার পণ্যের মানোন্নয়ন করতে হবে।
বর্তমানে অনলাইনে বিক্রির জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্য
এই পণ্যগুলোর মাধ্যমে আপনি ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্যের মধ্যে পার্থক্য এর উপর ব্যবহারিক ধারণা লাভ করতে পারবেন।
ফিজিক্যাল পণ্য
- ওয়্যারলেস ফোন চার্জার
- পোর্টেবল ব্লেন্ডার
- ফোনের লেন্স
- বেবি ক্যারিয়ার
- রিইউজেবল ব্যাগ
ডিজিটাল পণ্য
- অনলাইন কোর্স
- রিজুমি/সিভি টেমপ্লেট
- মেম্বারশীপ সাইট
- ওয়ার্ডপ্রেস থিম
- ওয়েবিনার (অনলাইন সেমিনার)
পরিশেষে একটি কথা বলা বাহুল্য, তা হচ্ছে- ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পণ্যের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, আপনি যে কোন একটি অথবা দুটো ক্যাটাগরির পণ্য নিয়েই ব্যবসায় সফল হতে পারেন। আপনি অবশ্যই অ্যামাজন, আলি এক্সপ্রেস, ওয়ালমার্ট, ইবে মার্কেটপ্লেসগুলোর সাথে পরিচিত আছেন। এগুলোর যে কোনোটিতেই আপনি ফিজিক্যাল বা ডিজিটাল অথবা দু’ধরণের পণ্যই বিক্রি করতে পারবেন।
কোনটি নিয়ে ব্যবসা করলে লাভ হবে বলে আপনার মনে হয়? তা কমেন্ট বক্সে লিখে আমাদের জানাতে পারেন। আর লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে লাভজনক পণ্য নিয়ে ব্যবসার ব্যাপারে আলোচনা করতে পারেন।
Leave a Reply