এক ডিভাইস থেকে আরেক ডিভাইসে ফাইল ট্রান্সফার করার জন্য দক্ষ সফটওয়্যারের উদ্ভাবন করা ডেভেলপারদের জন্য সব সময় একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র ব্লুটুথ দিয়েই যে কোনো ফাইল ট্রান্সফার করা হতো। কিন্তু যথেষ্ট স্পিড না পাওয়ার কারণে আস্তে আস্তে ফাইল ট্রান্সফার পদ্ধতি হয়ে পড়েছে ওয়াই-ফাই ভিত্তিক। আর এই ওয়াই-ফাই ভিত্তিক ফাইল ট্রান্সফারের মাধ্যম হিসাবে অ্যাপস প্রধান ভুমিকা পালন করছে। আজকের পোস্ট তাই ফাইল ট্রান্সফার অ্যাপস নিয়ে।
ফাইল ট্রান্সফার অ্যাপস
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের মধ্যে ফাইল ট্রান্সফার করার পদ্ধতি সহজ ও বোধগম্য করার লক্ষ্যে ডেভেলপাররা সব সময় বিভিন্ন ধরণের অ্যাপস বানানোর চেষ্টা করে। বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শেয়ারইট ব্যবহার হওয়ার কারণে এবং তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণে অন্যান্য ফাইল ট্রান্সফার অ্যাপসগুলো আড়ালেই থেকে যায়। এই পোস্টে আমরা জানবো শেয়ারইটসহ আরো সে-রকমই আরো ৯টি ফাইল ট্রান্সফার অ্যাপস সম্পর্কে।
১. SHAREit
ফাইল ট্রান্সফার অ্যাপস হিসাবে প্রথমেই যে নামটি উঠে আসে তা হলো এই SHAREit। ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি ডাউনলোড হওয়া এই অ্যাপসটির মাধ্যমে আপনি যে কোন ফরম্যাটের ফাইল যেমন ফটো, ভিডিও, অ্যাপস এবং আরও অনেক কিছু শেয়ার করতে পারবেন।
SHAREit এর মাধ্যমে আপনি ২০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতিতে ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন। এছাড়াও প্রেরক এর ডিভাইস থেকে তথ্য কপি করতে এর “CLONEit” বৈশিষ্ট্যটি খুবই কার্যকরী।
২. Portal
এই অ্যাপসটির মাধ্যমে আপনি ইন্ডিভিজ্যুয়াল ফাইল, মাল্টিপল ফাইল, এমনকি সম্পূর্ণ ফোল্ডার শেয়ার করতে পারবেন। অধিকাংশ অন্যান্য ফাইল শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মতন, পোর্টালকে পিসিতে ফাইল স্থানান্তর করার জন্য পিসি সফ্টওয়্যারের প্রয়োজন হয় না।
Portal এর পিসি সাইডটি একটি ওয়েব ইন্টারফেসের সঙ্গে পরিচালিত এবং QR কোড ব্যবহার করে খুব সহজেই এটিকে সেট আপ করা যায়।
৩. Superbeam
লাইট, ডার্ক এবং AMOLED থিমের একটি অত্যাশ্চর্য অ্যাপস হলো এই সুপারবিম। আপনি তিনটি উপায়ে ফাইল ট্রান্সফার করতে পারেন এর মাধ্যমে। QR কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে, NFC সংযোগের মাধ্যমে কিংবা রিসিভ করার জন্য একটি “কি” প্রবেশ করিয়ে খুব সহজেই ট্রান্সফার করতে পারবেন প্রয়োজনীয় ফাইল।
ওয়েব ইন্টারফেস ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই Superbeam অ্যাপসটি মাধ্যমে পিসিতে ফাইল ট্রান্সফার করা যায়।
৪. Xender
এই অ্যাপসটির সাহায্যে ড্র্যাগিং এবং ড্রপ করার মাধ্যমে আপনার ডিভাইস থেকে খুব সহজেই একাধিক ফাইল স্থানান্তর করতে পারেন। উপরন্তু একইসাথে চারটি ডিভাইসের মধ্যে ট্রান্সফার করতে পারবেন।
আপনি কোনো পিসি সফটওয়্যার ইন্সটলেশন ছাড়াই পিসিতে ফাইল শেয়ার করতে পারেন Xender ব্যবহার করে। চমৎকার গতিতে যে কোন ফাইল ট্রান্সফার করতে পারেন এই অ্যাপসটির মাধ্যমে।
৫. AirDroid
এয়ারড্রোড আপনার পিসি থেকে ওয়্যারলেসলি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেয়। আপনি দ্রুত গতিতে আপনার অ্যান্ড্রয়েড থেকে পিসিতে ফাইল ট্রান্সফার এবং রিসিভ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি আপনার পিসিতে বার্তা পাঠাতে ও গ্রহণ করতে।
AirDroid এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ, উইচ্যাট প্রভৃতির মত ইনস্টল করা অ্যাপস অ্যাক্সেস করতে পারেন। উপরন্তু, আপনি ফোন থেকে কম্পিউটারে ফটো এবং ভিডিও ব্যাকআপ করতে পারেন। এমনকি, যদি আপনার ফোনটি হারিয়ে যায় তাহলে এটি আপনার ফোনটি সনাক্ত করতে পারবে।
৬. Zapya
এটি একটি ক্রস প্ল্যাটফর্ম সফটওয়্যার যা আপনাকে অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ ফোন, উইন্ডোজ পিসি, ম্যাক, ইত্যাদি থেকে ফাইল ট্রান্সফার করতে দেয়। আপনি সব ফরম্যাটের একাধিক ফাইল শেয়ার করতে পারেন এবং একযোগে চারটি ডিভাইসে কানেক্ট করতে পারবেন।
এছাড়াও Zapya আপনাকে QR কোডের মাধ্যমে কন্টেন্ট শেয়ার করার অনুমতি দেয়। আপনি ইন্টারনেট ছাড়াও কাছাকাছি বন্ধুদের সাথে চ্যাট এবং ভিডিও এবং অডিও স্ট্রিমিং করতে পারবেন এই অ্যাপসটির মাধ্যমে।
৭. Send Anywhere
এটি একটি নিরাপদ অ্যান্ড্রয়েড ফাইল শেয়ারিং অ্যাপস যা আপনাকে যে কোন আকারের ফাইল দ্রুত ট্রান্সফার করতে সাহায্য করবে। এটিতে ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবাও রয়েছে যেখানে আপনি আপনার ফাইলগুলোকে ক্লাউডে রাখতে পারবেন।
Send Anywhere এর মাধ্যমে একবার ক্লাউড স্টোরে আপলোড করলে আপনি যে কোনো ডিভাইসের সাথে সেই ফাইলগুলোকে শেয়ার করতে পারবেন। QR কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে কানেক্ট এবং ৬-ডিজিটের কি-কোড প্রবেশ করানোর মাধ্যমে রিসিভ করতে পারবেন।
৮. Mi Drop
Xender এবং SHAREit এর বিকল্প হিসাবে এই অ্যাপসটি খুবই কার্যকরী। অ্যাপ্লিকেশন লাইটওয়েট, ফাস্ট এবং সমস্ত Android ডিভাইসে সমর্থন করে। আপনি সমস্ত ধরণের ফাইল শেয়ার করতে পারেন এবং এটি ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই কাজ করে।
Mi Drop অ্যাপসটির একটি স্বজ্ঞাত ইউজার ইন্টারফেস আছে যেখানে সব বিষয়বস্তু একটি বিভাগে শর্ট করা থাকে। তবে, এটি বর্তমানে মাল্টি-ইউজার বা মাল্টি-ডিভাইস শেয়ারিং সমর্থন করে না।
৯. WeTransfer
এই অ্যাপসে ফাইল ট্রান্সফারের জন্য প্রাপকের ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রয়োজন হয়। প্রথমে আপনি যে ফাইলগুলো শেয়ার করতে চান তা নির্বাচন করুন। নেক্সট বাটনে ক্লিক করে প্রাপকের ই-মেইল অ্যাড্রেসটি দিন। প্রাপক একটি ইমেলের সাথে একটি ডাউনলোড লিঙ্ক পাবেন।
এই ফাইল শেয়ারিং অ্যাপসের মাধ্যমে আপনি ১০ গিগাবাইট পর্যন্ত ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি যে কোন স্থান থেকে ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন।
১০. CM Transfer
এটি এমন একটি ফাইল শেয়ারিং অ্যাপস যা আপনাকে ইন্টারনেট ছাড়াই সকল ধরণের ফাইল রিসিভে সহায়তা করে। ওয়াইফাই ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি ১০ এমবিপিএসের বেশি স্পীডে ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন।
CM Transfer এর ক্রাফটেড ইন্টারফেস রয়েছে যার কারণে এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। ফটো, ভিডিও এবং সমস্ত ধরণের ফাইল খুব সহজেই ট্রান্সফার করা যায় এই অ্যাপসটির মাধ্যমে।
ফাইল শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে অ্যাপসের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ওয়াই-ফাই ব্যবহারে শেয়ারের ফলে খুব দ্রুত এবং সহজেই ফাইল ট্রান্সফার করা সম্ভব হচ্ছে। এখানে এমনই কিছু অ্যান্ড্রয়েড ফাইল শেয়ারিং অ্যাপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুত এবং সহজে যে কোনো আকৃতির এবং যে কোনো ফরম্যাটের ফাইল এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ট্রান্সফার করতে পারবেন।
সোহেল রানা says
অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই অ্যাপসগুলোর বেশিরভাগই জানা ছিল না। লেখককে ধন্যবাদ।