প্রাকৃতিকভাবেই বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায় আর এটি একটি ফ্যাট-সলিউবল ভিটামিন। স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি, ইমিউন সিস্টেমের স্বাভাবিক কার্য্যকারিতা এবং রি-প্রোডাকশনের জন্যে ভিটামিন ‘এ’ খুবই দরকারি। এটি হার্ট, লাংস্ ও কিডনিসহ শরীরের অন্যান্য অর্গানগুলোকে সচল ও স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে থাকে।
আমাদের শরীরে দুই ধরণের ভিটামিন ‘এ’ এর প্রয়োজন হয়। একটি হচ্ছে রেটিনয়েডস্ আর অন্যটি হল ক্যারোটিনয়েডস্ আর এই দুইটি আমাদের দেহে দুই ধরণের ভূমিকা পালন করে থাকে। দুধ, লিভারসহ প্রাণী জাতীয় খাদ্যে রেটিনল থাকে। আর অরেঞ্জ, শাক-সবজি ও ফলমূলে বিটা-ক্যারটিন থাকে।
সাধারণত আমাদের শরীর লিভার ও ফ্যাটি টিস্যুতে ভিটামিন ‘এ’ সংরক্ষণ করে রাখে। এরপর প্রয়োজন মোতাবেক রক্তনালিলেত সাপ্লাই দিয়ে থাকে, যাতে শরীর তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘এ’ পায়।
ফলে প্রতিদিন মেপে মেপে শরীরের জন্যে ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না। তবে শরীরে যাতে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি তৈরি না হয় সেজন্য যেসব খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে সেগুলো নিয়মিত খাওয়া উচিৎ।
প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন?
প্রতিদিন একজন মানুষের শরীরের জন্যে কতটুকু ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন হয়, এটা নির্ভর করে তার বয়সের উপর। একজন প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের বেলায় ভিটামিন ‘এ’ এর প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন ভিন্ন হয়।
১৪ ও তার থেকে বেশি বয়সের মানুষের জন্যে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘এ’ এর প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে ১২০০ থেকে ১৩০০ মাইক্রোগ্রাম এবং ১৪ বছরের নিচে যারা রয়েছে তাদের জন্যে আরো কম ভিটামিন ‘এ’ দরকার হয়।
ভিটামিনের পরিমাণকে মূলত আই ইউ বা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট দিয়ে মাপা হয়। আবার আর এ ই বা রেটিনল অ্যাক্টিভিটি ইকুইভালেন্ট দিয়েও পরিমাপ করা হয়।
- ১ আই ইউ রেটিনল = ০.৩ আর এ ই
- ১ আই ইউ বিটা-ক্যারোটিন (ডায়েট্রি সাপ্লিমেন্ট) = ০.১৫ আর এ ই
- ১ আই ইউ বিটা-ক্যারোটিন (খাদ্য) = ০.০৫ আর এ ই
- ১ আই ইউ আলফা-ক্যারোটিন বা বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন = ০.০২৫ আর এ ই
৪ বছরের শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যে ৫০০০ আই ইউ ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড স্টেট অব ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। যাইহোক, বিভিন্ন বয়স ভেদে প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন ‘এ’ এর প্রয়োজন হয় তা নিচে দেয়া হল-
- ০-৬ মাস = ৪০০ আর এ ই
- ৭-১২ মাস = ৫০০ আর এ ই
- ১-৩ বছর = ৩০০ আর এ ই
- ৪-৮ বছর = ৪০০ আর এ ই
- ৯-১৩ বছর = ৬০০ আর এ ই
- ১৪-১৮ বছর = ৯০০ আর এ ই
- ১৯-৫০ = ৯০০ আর এ ই
শেষ কথা
আমাদের শরীরের জন্যে দৈনন্দিন কতটুকু ভিটামিন ‘এ’ এর দরকার হয় তা আমরা জেনেছি। সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ না পেলে শরীরে নানা রকম রোগ-ব্যাধি দেখা দিতে পারে। জেনে নিন ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে যেসব রোগ হয় আর এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকতে যথেষ্ট্য পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ করার জন্য এখনই উদ্যোগ নিন।
আপনি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে জেনেছেন যেসব খাবারে ভিটামিন ‘এ’ অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে। কাজেই, ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত খাবার খান আর রাতকানাসহ নানা রোগ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন।
Leave a Reply